তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র হল ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ১৯৭৩ সালের বাংলাদেশী নাট্যধর্মী চলচ্চিত্র। বাঙালি ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ রচিত উপন্যাস তিতাস একটি নদীর নাম অবলম্বনে চলচ্চিত্র উপযোগী করে নির্মিত হয়েছে। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন হাবিবুর রহমান খান, এটি তার প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র। ছবিটিতে শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেছেন প্রবীর মিত্র, রোজী সামাদ, কবরী ও গোলাম মুস্তাফা।

 

 

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা — পূর্ব প্রাণ কথাচিত্র, বাংলাদেশ।
  • কাহিনি—অদ্বৈত মল্লবর্মণ।
  • শীর্ষ সংগীত, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা – ঋত্বিককুমার ঘটক।
  • চিত্রগ্রহণ – বেবী ইসলাম।
  • সংগীত — বাহাদুর খান।
  • সম্পাদনা – বসির হুসেন।
  • কণ্ঠসংগীত— ধীরাজউদ্দিন ফকির, রথীন্দ্রনাথ রায়, নীনা হামিদ, আবেদা সুলতানা, ধর্মেধন বড়ুয়া।

 

অভিনয় :

রোসি সামাদ, কবরী চৌধুরী, রৌসন জামিল, রানী সরকার, সুফিয়া রুস্তম, প্রবীর মিত্র, গোলাম মুস্তাফা, ঋত্বিককুমার ঘটক, ফকরুল হাসান বৈরাগী, সফিকুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম।

 

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

কাহিনি:

বাংলাদেশের তিতাস নদীর পাড়ে মৎস্যজীবী মালোদের বাস, এই মালো সম্প্রদায়ের মানুষদের সুখ দুঃখ জীবন জীবিকা, তাদের সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ইত্যাদিকে নিয়ে অদ্বৈত মল্লবর্মণের উপন্যাস অবলম্বনে এই ছবি। তিতাসের পাড়ে গোকর্ণঘাট গ্রামের বাসন্তী (রোসি) মেঘমণ্ডল ব্রত উদযাপনের পর কিশোরকে (প্রবীর) স্বামী হিসাবে প্রার্থনা করে।

কিশোর এবং তার বন্ধু সুবল মাছ ধরার জন্য অনেক দূর যায়, সেখানে একটি গ্রামে রাজার ঝিকে (কবরী) দেখে কিশোর মুগ্ধ হয় এবং তাকে বিয়ে করে গ্রামের পথে যাত্রা করে, পথে তারা ডাকাতদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। বাঁচার জন্য রাজার ঝি নদীতে ঝাঁপ দেয়, একদল মাঝি তাকে দেখতে পেয়ে গ্রামে দিয়ে আসে। অন্যদিকে কিশোর নতুন স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে পাগল হয়ে যায়।

গ্রামে ফেরার পর সুবলের সাথে বাসন্তীর বিয়ে হয়, বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই বাসন্তী বিধবা হয়। দশ বছর পর রাজার ঝি পুত্র অনন্তকে নিয়ে গোকর্ণঘাটে আসে। রাজার ঝি পাগল কিশোরের দেখাশোনা করার চেষ্টা করলেও কিশোর প্রথমে তাকে চিনতে পারে না।

 

তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

দোলের দিন হঠাৎ কিশোর তাকে চিনতে পারে, দুজন যখন দুজনের খুব কাছে তখন এক মানুষের আক্রমণে রাজার ঝি মারা যায়। বাসন্তী পুত্রস্নেহে অনন্তকে মানুষ করার চেষ্টা করে। মহাজনরা মালোদের ধার দেয়, তাদের ধার উসুল করার জন্য তাদের উপর মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মালোরা একত্রিত হয়, মহাজনরাও নানা উপায়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি করে।

আবার অন্যদিকে কালের নিয়মে তিতাস শুকিয়ে যায়। নদীর চরে শুরু হয় ধান চাষ। মহাজনরা জমির দখল নেওয়ার জন্য মালো পাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেয়, তাদের বাড়ি লুট করে। অপর দিকে অনন্তও বাসন্তীর কাছ থেকে চলে যায়, কিছুদিন উদয়তারার কাছে থাকার পর শহরে চলে যায় বাবুদের সাথে। বাসন্তী মালোর মেয়ে, মালোর স্ত্রী, তিতাসের সুখ দুঃখের সাথে, মালোদের সুখ দুঃখের সাথে সে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল। মালোরাও জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র চলে যায়, বাসন্তীর মৃত্যুর দৃশ্যায়নের মধ্য দিয়ে ছবি শেষ হয়।

অদ্বৈত মল্লবর্মণ নিজে মালো সমাজের লোক ছিলেন, তাদের সুখ, দুঃখ তাঁকে নাড়া দিয়েছে, তিতাসের শুকিয়ে যাওয়া এবং তার পাড়ে বসবাসকারী মালোদের স্থানত্যাগ, তাদের ঐক্য, তাদের সম্প্রদায়ের কিছু মানুষের টাকার কাছে বিক্রি হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নিয়ে এই উপন্যাসের মূল সুর অনেকটাই এই ছবির মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।

 

Google News তিতাস একটি নদীর নাম চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

প্রকাশনা:

রজত রায় সম্পাদিত ঋত্বিক ও তাঁর ছবি গ্রন্থের প্রথম পর্বে অজয় বসু এবং গৌতম ভদ্রের দুটি প্রবন্ধ (পূর্ব প্রকাশিত) সংকলিত হয়েছে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment