তেরো নদীর পারে চলচ্চিত্র সম্পর্কে জানবো আজ। চলচ্চিত্রটির প্রযোজক রামধনু পিকচার্স। চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন বারীন সাহা। চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, প্রিয়ম হাজারিকা, উমা, কাজল, লিলি, কল্পনা, নিতাই, তাপস, নির্মল, নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল, নন্দ অধিকারী।
তেরো নদীর পারে চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা — রামধনু পিকচার্স।
- কাহিনি – নির্মল ঘোষ।
- চিত্রনাট্য, চিত্রগ্রহণ ও পরিচালনা- বারীন সাহা।
- সংগীত- – জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ।
- সংলাপ – নির্মল ঘোষ, বারীন সাহা, গোবিন্দ, তাপস, দীপক, ওয়াল্টার।
- নৃত্য পরিচালনা – প্রিয়ম হাজারিকা।
- সম্পাদনা – দুলাল দত্ত, বিমল, পারভেজ শাহিদি।
- শব্দগ্রহণ — সত্যেন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
তেরো নদীর পারে চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন-
জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, প্রিয়ম হাজারিকা, উমা, কাজল, লিলি, কল্পনা, নিতাই, তাপস, নির্মল, নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল, নন্দ অধিকারী।
তেরো নদীর পারে চলচ্চিত্রের কাহিনি—
পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম থানায় একটি গল্পে মেলা উপলক্ষে দুটি সার্কাস দল খেলা দেখাতে আসে। রয়্যাল সার্কাস খেলা দেখানোর পাশাপাশি দর্শকদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও রাখে। রিগ্যাল সার্কাসের ওস্তাদ (জ্ঞানেশ) মনে করে খেলার মান উন্নত করেই দর্শকদের মনোরঞ্জন করা সম্ভব।
বাস্তব পরিস্থিতিতে রিগ্যালের দর্শক কমে যায়, ম্যানেজার (নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল) ওস্তাদের আপত্তি সত্ত্বেও একজন নাচনিকে (প্রিয়ম) নিয়ে আসে। শিল্পী হিসাবে ওস্তাদের এই বিষয়টিতে আপত্তি থাকলেও সার্কাসের সহকর্মীদের দিকে তাকিয়ে এই ব্যবস্থাটি মেনে নেয়। নাচনির সাথেও তার ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ ছিল না।
সার্কাসে দর্শক সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ওস্তাদ এটিকে নিজের হার বলে ধরে নিয়ে মদ খেয়ে দুঃখ ভোলার চেষ্টা করে। মাতাল অবস্থায় দুঃসাহসী খেলা দেখাতে গিয়ে ওস্তাদ আহত হয়। নাচনি অক্লান্ত সেবায় তাকে সুস্থ করে তোলে, তাদের মধ্যে এই ঘনিষ্ঠতা ম্যানেজার মানতে পারে না, ওস্তাদের সাথে মারামারি করে সার্কাস ছেড়ে চলে যেতে চায়।
ওস্তাদ ম্যানেজারকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে নর্তকীও তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সার্কাস ছেড়ে চলে যায়। ওস্তাদ তাকে বাধা দেয় না কারণ তার কাছে প্রেমের চেয়ে শিল্প অনেক বড়।
পরীক্ষামূলক এই ছবিতে বারীন সাহা চিত্রভাষা নির্মাণ এবং ক্যামেরার যথার্থ ব্যবহারে, ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ নির্বাচনে এবং সুচিন্তিত কম্পোজিশনে ছবিটিকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করেছেন। ছবিতে সংলাপ খুবই কম এবং ব্যক্তিগত ভাবে অভিনয়ের সুযোগও কম ছিল।
ছবিটির সবটাই বহির্দৃশ্যে তোলা এবং অপেক্ষাকৃত স্বল্প দৈর্ঘ্যের হওয়ার কারণে স্বল্প দৈর্ঘ্যের আর একটি ছবি ‘শনিবার’-এর সাথে একত্রে মুক্তি পায়। শনিবার ছবিটি বাদল সরকারের কাহিনি অবলম্বনে বারীন সাহার পরিচালনায় ছবিটি ১৯৬১ সালে তৈরি হলেও দীর্ঘ আট বছর মুক্তি পায় নি। ১৯৬৬ সালে এই ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়র হয় প্যারিসে এবং ঐ বছরই লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ১৯৬৯ সালে পশ্চিমবঙ্গ চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতি ছবিটি মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

প্রকাশনা—
তেরো নদীর পারে ছবির সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য ও বারীন সাহার অগ্রন্থিত লেখাগুলি নিয়ে মনফকিরা ২০০৬ সালে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে।
আরও দেখুনঃ