দেবকীকুমার বসু

দেবকীকুমার বসুঃ বর্ধমান জেলার অকালপৌষ গ্রামে জন্ম। বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময় শিশিরকুমার ভাদুড়ীর সংস্পর্শে আসেন। কলেজ ছেড়ে স্বদেশি আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। বর্ধমান জেলার ‘শক্তি’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন (১৯২৭ ২৮)।

 

দেবকীকুমার বসু । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

দেবকীকুমার বসু । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

১৯২৭ সালে ধীরেন গাঙ্গুলীর সাথে যোগাযোগ হয় এবং গল্প লেখক ও চিত্রনাট্যকার হিসাবে ব্রিটিশ ডোমিনিয়ান ফিল্মসে যোগ দেন। ব্রিটিশ ডোমিনিয়ান প্রযোজিত প্রথম ছি কামনার আগুন (১৯৩০)-এর গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি একটি ছোট চরিত্রে অভিনয়ও এদের দ্বিতীয় ছবি পঞ্চশর (১৯৩০) ছবির গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা দেবকী বসুর। এই ছবিতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন।

১৯৩০ সালে যোগ দেন বড়ুয়া ফিল্ম ইউনিট-এ। এই সংস্থার প্রথম ছবি অপরাধী (১৯৩১), গল্প, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা দেবকী বসুর। ছবিটি কৃত্রিম আলোর সাহায্যে তোলা হয়েছিল।

বাংলা ছবিতে এই প্রথম কৃত্রিম আলোর ব্যবহার হয়। পরবর্তী ছবি নিশির ডাক (১৯৩২)।

১৯৩২ সালেই নিউ থিয়েটার্সে যোগ দেন। নিউ থিয়েটার্সের প্রথম বাণিজ্যসফল ছবি। চণ্ডীদাস (১৯৩২) দেবকী বসুর পরিচালনায় তৈরি। ছবিটি তৎকালীন সময়ে বক্স অফিসে আলোড়ন সৃষ্টি করে একাদিক্রমে ২৭ সপ্তাহ প্রদর্শিত হয়েছিল। পরবর্তী, হিন্দী ছবি পুরাণ ভক (১৯৩৩) নিউ থিয়েটার্সকে সর্বভারতীয় পরিচিতি এনে দেয়।

 

দেবকীকুমার বসু । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

দ্বিভাষিক ছবি বাংলা মীরাবাই (১৯৩৩), হিন্দী রাজরানী মীরা পরিচালনার পর দেবকীবাবু বোম্বাইতে জয়ন্ত পিকচার্সের প্রযোজনায় তৈরি করেন ‘লাইফ ইজ এ স্টেজ’ ছবি। কলকাতায় ফিরে তৈরি করেন After the Earthquake’ (১৯৩৫)। ছবিটি বিহারের ভূমিকম্পর উপর তোলা।

১৯৩৪ সালে দেবকী বসু ইষ্ট ইন্ডিয়া ফিল্ম কোম্পানিতে যোগ দেন এবং দ্বিভাষিক ছবি সোনার সংসার (১৯৩৬) এবং হিন্দী সীতা (১৯৩৪) ছবি পরিচালনা করেন। সোনার সংসার ছবিটি একাদিক্রমে ৫০ সপ্তাহের বেশি প্রদর্শিত হয়েছিল। হিন্দী সীতা ছবিটি ১৯৩৫ সালে ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং Certificate of Merit লাভ করে। নিউ থিয়েটার্সে ফিরে এসে তিনি তিনটি দ্বিভাষিক ছবি বিদ্যাপতি (১৯৩৮), সাপুড়ে (১৯৩১), নর্তকী (১৯৪০) পরিচালনা করেন।

মাঝখানে কিছু হিন্দী ও মারাঠি ছবি করার পর বঙ্কিমচন্দ্রের কাহিনি অবলম্বনে পরিচালনা করেন চন্দ্রশেখর (১৯৪৭)। ছবিটি তৎকালীন সময়ে বিতর্ক তৈরি করেছিল।

পরবর্তী কালে দেবকী বসু পরিচালিত উল্লেখযোগ্য ছবি কবি (১৯৪৯), রত্নদীপ (১৯৫১), পথিক (১৯৫৩), ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য (১৯৫৩), চিরকুমার সভা (১৯৫৬) এবং সাগর সঙ্গমে (১৯৫৯)। সাগর সঙ্গমে ঐ বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে ভারতের রাষ্ট্রপতির স্বর্ণ এবং রৌপ্য পদক লাভ করে।

 

দেবকীকুমার বসু । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

কবি ছবিটিও তৎকালীন সময়ে চলচ্চিত্র সমালোচকদের প্রশংসা লাভ করে। শেষ ছবি রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রযোজিত অর্থ (১৯৬১)। রবীন্দ্রনাথের চারটি কবিতা পূজারিণী, দুই বিঘা জমি, অভিসার ও পুরাতন ভৃত্য অবলম্বনে ছবিটি তৈরি।

ছাত্র অবস্থায় ‘শক্তি’ পত্রিকা সম্পাদনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যচর্চা তার চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিল, তাঁর চলচ্চিত্রের মধ্যে দেশজ সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রভাব লক্ষ করা যায়। মধ্য যুগের বৈষ্ণব ভাবধারা, ঊনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণ এবং বিংশ শতাব্দীর জাতীয়তাবোধ তার চলচ্চিত্রকে শিল্পকর্ম হিসাবে উন্নীত করেছে।

বাংলা, হিন্দী ছাড়াও মারাঠি ও তামিল ভাষায় ছবি তৈরি করেছেন। ১৯৫৬ সালে সাহিত্য অকাদেমির পুরস্কার লাভ করেন, ১৯৬৫ সালে ভারত সরকার পদ্মশ্রী দিয়ে তাঁকে সম্মান জানায়।

 

Google News দেবকীকুমার বসু
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি —

  • ১৯৩০ পঞ্চশর, কামনার আগুন,
  • ১৯৩১ অপরাধী;
  • ১৯৩২ নিশির ডাক, চণ্ডীদাস, মীরাবাই,
  • ১৯৩৬ সোনার সংসার
  • ১৯৩৮ বিদ্যাপতি
  • ১৯৩৯ সাপুড়ে,
  • ১৯৪০: অভিনব
  • ১৯৪১ নর্তকী,
  • ১৯৪৪ সন্ধি:
  • ১৯৪৭ চন্দ্রশেখর, অলকানন্দা:
  • ১৯৪৮ স্যার শঙ্করনাথ:
  • ১৯৪৯ কবি,
  • ১৯৫১ রত্নদীপ
  • ১৯৫২ মন্দির,
  • ১৯৫৩ পথিক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, সবুজ পাহাড়,
  • ১৯৫৫ ভালোবাসা
  • ১৯৫৬ চিরকুমার সভা, নবজন্ম;
  • ১৯৫৮ সোনার কাঠি
  • ১৯৫৯ সাগর সঙ্গমে
  • ১৯৬১ অর্ঘ্য।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment