এলেকশান ক্যারিকেচার নাটক – এস এম সোলায়মান

এলেকশান ক্যারিকেচার নাটকটি  এস এম সোলায়মান এর একটি বিখ্যাত নাটক। এই নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ তারিখে। শেখ মোহাম্মদ সোলায়মান বা এস এম সোলায়মান একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনা করতেন এবং তাতে সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের জগতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান
প্রযোজক দল : ঢাকা পদাতিক

প্রদর্শনীর স্থান : মহিলা সমিতি মিলনায়তন, ঢাকা

কুশীলব

জনগনঃ শাহীন-১, মজনু, মামুন, মাওলা, হীরা, জহির, জর্জ

ঘোষকঃ আহমেদ সিদ্দিকী

রাজবাহাদুরঃ  কাওসার চৌধুরী

১ম নেতাঃ আমিনুল ইসলাম

২য় নেতাঃ হারুন-অর-রশীদ

৩য় নেতাঃ গোলাম মোস্তফা

৪র্থ নেতাঃ কাজী আমিনুর

নেত্রীঃ রোকেয়া রফিক বেবী

রফিক উদ্দিন: এস এম সোলায়মান

রাণীঃ শিউলী রহমান

কলাকুশলী

নির্দেশনাঃ এস এম সোলায়মান

মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনাঃ  জামিল আহমেদ

আলোক নিয়ন্ত্রণঃ  কামরুল হাসান স্বপন

গীত ও সুরঃ  এস এম সোলায়মান

সংগতঃ মাসুম আজিজ

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

 

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

কোৱাস

আমরা জনগণ-

এই ধন্যি রাজার পুণ্যি দেশে আমরা জনগণ

কেমন কইরে বাইচ্যা আছি শোনেন দিয়া মন

আমরা আছি ভীষণ সুখে

ভাতের বদল ভাষণ শুনে

লাফাই হেসে হেসে

দুঃখ কষ্ট মহামারী, সেই সে ভাষণ শুনে

দেশ ছেড়ে ভাই পালিয়ে গেছে গহীন গভীর বনে ।।

১ম জন

পত্রিকাতে গতকাল খবর বেরিয়েছে, খিদের জ্বালায় ২০০ লোক পটল তুলেছে।

২য় জন

ওসব হলো অপপ্রচার আসল খবর বলি, অপুষ্টিতে মরেছে সব, ছিল না দুধ বার্লি ।

৩য় জন

খিদের জ্বালায় মা বোনেরা গলায় দিচ্ছে দড়ি, কেউ কেউ আবার গেরাম ছেড়ে শহরে জমায় পাড়ি, দুধের খোকা হচ্ছে বিক্রি জলের মতো দরে, আমরা তবু দিচ্ছি তালি ঘুমিয়ে ঘুমের ঘোরে।

২য় জন

গলায় যারা দিচ্ছে দড়ি, সব খেয়েছে ছ্যাঁক। প্রেমের মালা ঝুলিয়ে গলে ছাড়ছে তারা দেশ।

সবাই

খাবার বিনে খিদের জ্বালায় হচ্ছে মানুষ শেষ। সবাই বলো বাহ্ বাহ্ বাহ্, চলছে ভালোই দেশ।

(ঘোষকের প্রবেশ)

ঘোষক

সবুজ দেশের বীর জনগণ শোনেন দিয়া মন
চৈত্র বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে হবে দেশে ইলেকশান
সুখী সুন্দর দেশ গড়ে ভাই আনতে হলে নতুন দিন
কাচ্চা বাচ্চা বাদ দিয়ে ইলেকশানে অংশ নিন
দুঃখ কষ্ট থাকবে নাকো অংশ নিলে ভোটে
ছেলে বুড়ো জোয়ান মরদ সবাই পাবে খেতে
আসছেন স্বয়ং রাজ বাহাদুর নিজেই দেবেন ঘোষণা
ধৈর্য্য ধরুন, সবুর করুন, সাফ করুন তো কান খানা
(কোরাসের প্রস্থান, রাজার প্রবেশ)

রাজা

ঘোষক গোলমাল আলি খান-

ঘোষক

ইয়েস বস্

রাজা

রাজদরবারে এতো ভিড় করেছিল কারা?

ঘোষক

স্যার। জনগণ খাবারের দাবি নিয়ে এসেছিল।

রাজা

তাদেরকে নির্বাচনের সঠিক দিন-তারিখ জানিয়ে দাও নি?

ঘোষক

ইয়েস স্যার।

রাজা

কি রকম সাড়া পড়েছে বলে মনে হচ্ছে?

ঘোষক

কি যে বলবো স্যার, নির্বাচন ঘোষণার আধঘণ্টার মধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। তাদের বজ্রকণ্ঠের তুর্য-নিনাদে এ পর্যন্ত ৩৮ জন তাদের শ্রবণ শক্তি হারিয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই আবার শিশু এবং মহিলা স্যার।

রাজা

হ্যাঁ । ফিরবার পথে দেখলাম, আমার দলের লোকজন উৎকৃষ্ট কণ্ঠে শ্লোগান দিচ্ছে, প্রাতক্রিয়ার দুর্গে আঘাত হানো এক সাথে।

ঘোষক

এক্সকিউজ মি স্যার, কথাটা প্রাতক্রিয়া নয়, প্রতিক্রিয়া।

রাজা

ও একই কথা।

ঘোষক

ভয়ঙ্কর বিপদ হয়ে যাবে স্যার।

রাজা

বিপদ।

ঘোষক

জি স্যার। কারণ প্রতিক্রিয়ার দুর্গে আঘাত হানা যায় কিন্তু প্রাতঃক্রয়ার দুর্গে আঘাত হানলে সমস্ত পৃথিবী দুর্গন্ধ হয়ে যাবে স্যার।

রাজা

চোপ! সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবাদ দিয়েছো?

ঘোষক

তারা ২/১ মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন স্যার।

(চারজন নেতা উকি ঝুঁকি মারে)

রাজা

আসুন আসুন

সবাই

আমাদের সশস্ত্র অভিনন্দন গ্রহণ করুন ।

ঘোষক

এক্সকিউজ মি, সশ্রদ্ধ ।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

 

রাজা

হু! (ধমক) বন্ধুগণ, একটা তীব্র উৎকট মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা ইলেকশানের ডিকলারেশন দিয়েছি, আপনারা খুশি হলে আমি সুখী হবো।

১ম নেতা

মহান রাজা! ইলেকশান মানেই হচ্ছে আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা, ও ব্যাপারে আপনি কিছুই ভাববেন না।

২য় নেতা

মোটেই না, আহা কি আনন্দ, মনে হচ্ছে—

৩য় নেতা

মনে হচ্ছে, কি যেন মনে হচ্ছিল ভুলে গেলাম।

(একজন নেত্রীকে দেখে)

রাজা

আপনি এতো বিলম্বে যে।

নেত্রী

মহারাজ। কিছু উচ্ছৃংখল জনতা ঘিরে ফেলেছিল।

১ম নেতা

ঘিরে ফেলেছিল। আহা। কোনো ধরনের আঘাত-টাঘাত লাগে নি তো?

২য় নেতা

ইস। কপালের দিকটা একদম কালো হয়ে গেছে।

৪র্থ নেতা

শালারা ইদানীং বড্ডো বেড়ে গেছে।

৩য় নেতা

আমি থাকলে কিন্তু এ সাহস করতো না।

রাজা

আপনার আঘাত কি গুরুতর?

নেত্রী

কি আশ্চর্য! আমাকে আঘাত করলো কখন?

১ম নেতা

তবে কি বাক্যবাণে জর্জরিত হয়েছেন দেবী?

নেত্রী

না। তাও না। ওরা শুধু রাজবাহাদুরকে জানিয়ে দিতে বলেছে, ভোট চাই না ভাত চাই। ইলেকশান দিয়ে নাকি ওদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন আসবে না।

১ম নেতা

মহারাজ! ওদের কথায় কান দেবেন না। সবগুলো কম্যুনিস্ট, দেশদ্রোহী, সমাজ বিরোধী, দুষ্কৃতকারী, এনটি সোশ্যাল এলিমেন্ট এবং এবং-

রাজা

আমাদের লজ্জা নেই একথা বলতে। অতীতে আমরা সবাই দফাওয়ারী রাজনীতি করে জনগণকে ব্যাপকভাবে ধাপ্পা দিয়েছি। ঘোষক, এ পর্যন্ত জনগণকে দেওয়া আমাদের সর্বমোট ওয়াদা কিংবা দফার পরিমাণ কতো হবে?

ঘোষক

স্যার, বড়ো পার্টি মেঝো পার্টি খুচরো পার্টিগুলো মিলিয়ে সর্বমোট দফার পরিমাণ ১ লক্ষ ২৬ হাজার ২ শত ৬১টি।

রাজা

কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার একটিও আমরা পূরণ করতে পারি নি। সুতরাং জনগণের খেপে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

২য় নেতা

স্যার, ইলেকশনের বিরুদ্ধে যারা খেপেছে, তারা সব কম্যুনিস্ট, জনগণ নয়। জনগণ এবং কুম্যুনিস্ট এক কথা নয়।

রাজা

ঐ জনগণই যদি সবাই দলবেঁধে কম্যুনিস্ট হয়ে যায় তাহলে আমাদেরকেও গাঁট- ছড়া বেঁধে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। অতএব, এবারের নির্বাচনে আর দফা নয়। এবারের স্লোগান মতবাদ।

সবাই

মতবাদ।

রাজা

বিশ্বজুড়ে চলছে মতবাদের সংগ্রাম। আসুন, এ সংগ্রামে শরিক হয়ে আমরাও সবাই বেহেস্ত নসীব করি।

ঘোষক

মতবাদ। মতবাদ।

(নেতাদের স্থান পরিবর্তন, কোরাসের প্রবেশ)

কোরাস

এবার শুরু মতবাদের নতুন খেলা। ভাইরে ভাই, সাথে দেখুন মধ্যবিত্তের পুরনো প্যাচাল।

রফিক

নামটি আমার রফিক উদ্দিন, পদবিটা বি. এ.

কোৱাস

নামটি তাহার রফিক উদ্দিন, পদবিটা বি. এ রাজনীতির ঐ গোলক ধাঁধায় ঘুরে ফিরে মরে। মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত (কোরাসের গ্রস্থান)

রফিক

আমি রফিক উদ্দিন বি.এ ঘুরে ফিরে মরি .

আ…আ…আ… মি… মি… (রাণীর প্রবেশ)

রাণী

রফিক-

রফিক

বলো। শুনতে পাচ্ছি ।

রাণী

এভাবে আর কতো দিন চলবে?

রফিক

যা চলার তাতো চলবেই ।

রাণী

সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলার মানে হচ্ছে

রফিক

বুদ্ধিমানের কাজ। নিজে বাঁচি তো বাপের নাম ।

 

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

 

রাণী

আমার দিকটা একবারও ভাববে না?

রফিক

স্ত্রী হিসেবে সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছি, এই তো যথেষ্ট।

রাণী

তোমার এ ধরনের আত্মকেন্দ্রিকতাকে আমি ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না।

রফিক

তাই করো। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে ওটা ভীষণভাবে সাহায্য করবে ।

রাণী

রফিক তুমি বুঝতে পারছো না, এভাবে হয় না। এখনও সময় আছে, ফিরে এসো।

রফিক

কোথায়?

রাণী

আমাদের সেই জীবনে, নাইবা রইলো সোনালি সুখের প্রাচুর্য, দু’জনের আয়ের ছোট্ট একটি সংসার, একটি কুঁড়েঘর।

রফিক

এবং ডজন খানেক কাচ্চা বাচ্চা ইত্যাদি।

রাণী

তুমি—

রফিক

একটা অমানুষ । (রাণীর প্রস্থান)

আমার স্ত্রী। একটু খিটখিটে মেজাজের। তবে মনটা ভালো। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাকে মনপ্রাণ জীবন দিয়ে ভালবাসে। যেমন আমি ভালবাসি, বড় ছোট মাঝারি, যে কোনো সাইজের জনগণের কাঁধে পা রেখে পাকা ফলটা পেড়ে খেতে। মূল্যবোধ। আদর্শ। শালা। ল্যাং মারা নতুন কৌশল। এটা বিংশ শতাব্দী। সব পাল্টে গেছে। উপরে উঠতে হবে যেভাবে হোক এবং যেমন করেই হোক। আধুনিক বিশ্বের এটাই সর্বজনস্বীকৃত রণনীতি। (প্রস্থান। কোরাসের প্রবেশ)

১ম জন

রাজবাহাদুর। চালের দাম হু-হু করে বাড়ছে। ঘরে চাল বাড়ন্ত। এভাবে চলতে থাকলে অচিরে সবাই মারা পড়বো।

রাজা

৬০ লক্ষ টন চালের অর্ডার পাঠিয়ে দিয়েছি। জাহাজে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না বলে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

২য় জন

বাচ্চাগুলো আজ তিনদিন ধরে উপোস মারছে। ঘরে এক ফোটা খাবার নেই।

রাজা

সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি আরো জোরদার করার কঠিন সঙ্কল্প প্রকাশ করছে।

৩য় জন

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম আকাশচুম্বী। প্রতিকার চাই।

রাজা

ইতোমধ্যে ৪০০ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। আমরা তাদের রিপোর্টের অপেক্ষা করছি।

৪র্থ জন

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যুব সমাজের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ,আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি, পরিণতিতে জনজীবন হচ্ছে বিপর্যস্ত।

রাজা

চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ সমস্ত ব্যাপার সমাধানের জন্য আরও ৪ জন মন্ত্রী, ৬ জন উপমন্ত্রী এবং ২৪ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ করা হবে।

৫ম জন

রাজবাহাদুর, দুর্ভিক্ষ সমাগত। অবিলম্বে এই নির্বাচনী প্রহসন বন্ধ করুন।

রাজা

ভোট প্রদান প্রত্যেকটি নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব। অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, ইলেকশান দেবে সমাধান। সমস্যার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্যই এই মহান নির্বাচন।

৬ষ্ঠ জন

খিদিরপুর থেকে খাবারের দাবি নিয়ে ৭০০০ লোকের মিছিল আসছে। রাজবাহাদুর এখনও সময় আছে।

রাজা

যাহারা সমাজের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি করে, তাহারা শয়তানের ভাই। সমাজের অভ্যন্তরে গোলযোগ সৃষ্টি হত্যার চাইতেও মারাত্মক অপরাধ। আল হাদিস।

কোরাস

রাজা কানে দিয়েছেন তুলো
আর পিঠে বেঁধেছেন কুলো
আবেদনে হবে না কাজ রাজপথে চলো।
বলো বলো বলো সবে সমস্বরে বলো
আবেদনে হবে না কাজ রাজপথে চলো। (প্রস্থান)

১ম নেতা

সাহস দেখলেন? রাজবাহাদুরের সামনে…মহারাজ।

২য় নেতা

সব শালা সি আই এর এজেন্ট।

নেত্রী

ওরা আবার খেপে যাবে নাতো?

রাজা

ওদের মুখ আছে দাবি জানাবে। আমাদের আছে কান কেবল শুনেই যাবো। আসুন, পূর্ব প্রসঙ্গে ফিরে যাই।

বন্ধুগণ, আমাদের ঘোষক গোলমাল আলি খাঁ, একজন মতবাদ বিশেষজ্ঞ রূপে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। গোলমাল Start.

ঘোষক

মানবসভ্যতার জন্মলগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত অসংখ্য মতবাদের মধ্যে যে মতবাদগুলো সারা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলছে, তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট মতবাদগুলো হচ্ছে…

রাজা

Attention Please, বাছাই করুন।

ঘোষক

এই যেমন ধরুন, সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, পুঁজিবাদ, উপনিবেশবাদ, হায়দ্রাবাদ, জিন্দাবাদ, মুর্ণাবাদ, আগ্রাসনবান, আধিপত্যবাদ এবং সর্বশেষে বরবাদ।

রাজা

অকসান, অকসান, আমি বরবাদ choice করলাম।

ঘোষক

বরবাদ ১,২,৩

১ম নেতা

এ্যা। বরবাদ আপনি? অসম্ভব। আমি বরবান নেবো।

২য় নেতা

না। বরবাদ আমি নেবো।

৩য় নেতা

না। আমি বরবাদ।

(ভীষণ হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়)

রাজা

Stop talking, Stop talking, কি শুরু করেছেন। আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন বরবাদ মতবাদে আমি কল দিয়েছি। অতএব বরবাদ আমার। আপনারা অন্য মতবান ভাগ করে বাছাই করে নিন।

(ঘোষক ভাগ করে দেয়। বরবাদ, সাম্রাজ্যবাদ, আধিপত্যবাদ, জিন্দাবাদ,মুর্দাবাদ, হায়দ্রাবাদ।)

বন্ধুগণ এবার প্রতীক বরাদ্দের পালা। ঘোষক, প্রতীক ভাগ করে দাও।

ঘোষক

সুষ্ঠু এবং গণমুখী ইলেকশানের লক্ষ্যে জনাব রাজবাহাদুরের প্রতীক বোতল।(১ম নেতাকে) আপনি গাধা।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

 

১ম নেতা

এ্যা? আমি গাধা?

ঘোষক

মানে আপনার প্রতীক গাধা। গাধা একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট জন্তু। একমাত্র বেগার খাটুনির জন্য পৃথিবীখ্যাত। গাধার তুলনা গাধাই। এবার আপনি (২য় নেতাকে) আপনি তো বাঁদর।

২য় নেতা

এ্যাঁ। বাঁদর?

ঘোষক

মানব জন্মের ইতিহাস গবেষণা করে দেখা গেছে যে, একমাত্র বানর জাতির সাথেই আমাদের সাদৃশ্য বিরাজমান। অতএব, সেই ঐতিহ্যকে স্মরণ করে আমরা সবাই-

রাজা

গর্ভধারণ করছি।

ঘোষক

গর্ববোধ করছি স্যার। এবার আপনি। (৩য় নেতাকে)।
আপনার প্রতীক গাভী।

৩য় নেতা

কি বললেন? গাভী

ঘোষক

গাভী একটি অত্যন্ত উপাদেয় জন্তু। গাভীর পিউর দুধ থেকে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট মানের ঘি। আপনাকে অভিনন্দন। (৪র্থ নেতাকে), আপনার প্রতীক কাঁচকলা।

৪র্থ নেতা

নাউজুবিল্লাহ্

ঘোষক

(নেত্রীকে) এবার আপনি, আপনার প্রতীক ঢোল।

নেত্রী

এ্যা। অসম্ভব। ঢোল-

রাজা

নো গণ্ডগোল। বন্ধুগণ, চলুন ভাগ্য অন্বেষণে বের হয়ে পড়ি। চলুন জনগণের দুয়ারে দুয়ারে, দেখি জয়ের মালা কার ভাগ্যে লেখা আছে। চলি, খোদা হাফেজ।

(প্রস্থান)

১ম নেতা

এ অন্যায়।

২য় নেতা

এ অত্যাচার।

৩য় নেতা

এ সিদ্ধান্ত আমরা মানি না।

নেত্রী

বললেই হলো। নিজে বেছে নিলেন সবচেয়ে ভালো মতবাদ। আর আমাদের কিনা… (কান্না)

১ম নেতা

কাঁদবেন না। বন্ধুগণ, কাঁদবেন না। কান্না কাপুরুষের লক্ষণ। এ অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম করতে হবে। আমাদের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। আমাদের ইতিহাস রাজপথকে রক্তে রঞ্জিত করার ইতিহাস। আপনারা সবাই আমার সাথে শ্লোগান ধরুন।

লড়াই লড়াই লড়াই চাই

লড়াই করে বাঁচতে চাই।

লড়াই লড়াই লড়াই চাই

৪র্থ নেতা

পুলিশ থাকলে আমি নাই ।

২য় নেতা

এ্যা। পুলিশ? আমি আবার প্রেসারের রোগী। আমি যাই।

সবাইস ইলেকশান ইলেকশান বর্জন বর্জন

ইলেকশান ইলেকশান বর্জন বর্জন।

(প্রস্থান কোরাসের প্রবেশ।)

কোরাস

হলো হলো ভালোই হলো

নেতার দল খেপে গেলো

নির্বাচনটা পণ্ড হলো

এক সাথে জোট বাঁধবো ভালো।

নেতা জনতা এক হলো

হলো হলো ভালই হলো।

(প্রস্থান। রফিকের প্রবেশ, হাতে সংবাদপত্র।)

রফিক

নির্বাচন বর্জন। রাজনৈতিক অস্থিরতা। ইলেকশান আসছে। ইউরেকা, পেয়ে গেছি। রাণী, রাণী, আরে জলদি এসো।

রাণী

কি ব্যাপার। এতো চিৎকার করছো কেন?

রফিক

বুঝলে রাণী? এইবার, কলের চাকা পই করে ঘুরে যাবে।

রাণী

কোনো ভালো চাকরির বিজ্ঞাপন বুঝি?

রফিক

ধুৎ চাকরি। ওসব করে কোনোদিন কিছু হয়েছে? আরে ইলেকশান আসছে, এবার দেখবে চাকা শোঁ করে ঘুরে গেছে।

রাণী

একটা কথা বলবো রফিক? তুমি কি সত্যি রাজনীতি করবে?

রফিক

ন্যাকামো বাদ দিয়ে যা বলবার সুস্পষ্ট করে বলো। রফিক

রাণী

তোমার পথ পরিবর্তন করো।

রফিক

পথ পরিবর্তন।

রাণী

হ্যাঁ। কারণ আমি চাই না কেউ তোমাকে জাতীয় টাউট হিসেবে চিহ্নিত করুক।

রফিক

আর কিছু বলার আছে?

রাণী

রফিক তুমি কেন বুঝতে চাইছো না

রফিক

আমাকে নতুন করে বোঝাতে এসো না। রাজনীতির চোরা বাঁকা গুপ্ত সব পথেই আমি চলতে অভ্যস্ত। Politics for people’s sake, ওসব মান্ধাতা আমলের থিওরি এখন সম্পূর্ণ অচল। Politics for own sake, নিজের উপরে ওঠ পথকে প্রশস্ত করার জন্য প্রয়োজনে আমি নিজের স্ত্রীর কাঁধে পা রাখতে এতোটুকু বিব্রত বোধ করি না। যাও, নিজের চরকায় তেল দাওগে।

রাণী

তুমি একটা জঘন্য, নীচ-

রফিক

আমি একটা কুত্তার বাচ্চা। তুমি যাও। (রাণীর প্রস্থান)

আমার সহধর্মিনী। পেতনি, একটা আস্ত ডাইনি। Women freedom! মামার

বাড়ির আব্দার। আমিও রফিক উদ্দীন বি. এ। মন্ত্রী হয়ে আমিও প্রমাণ করবো কি করে ঘরের গৃহিণীকে রাধুনীতে demotion করা যায়।

(ভেতর থেকে সাইনবোর্ড নিয়ে প্রবেশ করে। সাইনবোর্ডের ভাষা এখানে ভোটযুদ্ধের পরামর্শ দেওয়া হয়।)

(নেতাদের প্রবেশ, শ্লোগান দিতে দিতে)

১ম নেতা

রফিক উদ্দীন বি. এ. সাহেব কি বাড়ি আছেন?

রফিক

জি

২য় নেতা

তাকে একবার ডাকুন তো।

রফিক

রফিক জি, আমিই রফিক উদ্দিন বি. এ ।

৩য় নেতা

ওহ্। আপনিই সেই রফিক উদ্দিন বি এ। আপনিই নির্বাচনী পরামর্শ দান কেন্দ্র খুলেছেন।

রফিক

জি। আপনারা?

সবাই

আমরা নেতা।

রফিক

ও! বলুন, আপনাদের কি খেদমত করতে পারি?

নেত্রী

দেখুন, আমরা ঠিক নির্বাচনী পরামর্শের ব্যাপারে আসি নি। এসেছি অন্য একটা কাজে।

রফিক

বলুন।

৪র্থ নেতা

জনাব রাজাবাহাদুর এবারের নির্বাচনে মতবাদ বরাদ্দের ব্যাপারে যে জঘন্য দুর্নীতির পথ গ্রহণ করেছেন সে ব্যাপারে একটা পরামর্শ চাইতে এসেছিলাম।

রফিক

ব্যাপারটা একটু খোলাসা করে বলুন তো?

১ম নেতা

ব্যাপারটা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মতবাদগুলোর মধ্যে নতুন মতবাদ বরবাদটা রাজা নিজের নামে নিয়ে জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদের মতো যতো সব বস্তা পচা মতবাদগুলো আমাদের দিয়েছেন।

রফিক

বরবাদ। নতুনত্ব আছে এবং চমকও আছে। পার পেয়ে যাওয়ার Every possibilities, তা এখন আপনারা কি করতে চান?

১ম নেতা

আপনিই বলুন, কি করা যায়। আমরা আবার এদিকে নির্বাচন বয়কট করে চলে এসেছি।

রফিক

ভালো করেছেন। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে এই, আপনারা চান বরবাদ মতবাদটা জনাব রাজাবাহাদুর ছাড়া আপনাদের মধ্যে অন্য যে কেউ একজন পাক।

৩য় নেতা

তা ধরুন তাই।

রফিক

আন্দোলন আন্দোলন করতে হবে। প্রয়োজনে হাঙ্গার স্ট্রাইক।

২য় নেতা

ওরে বাবা, হাঙ্গার স্ট্রাইক। আমি আবার প্রেসারের রোগী। অন্য কোনো স্ট্রাইক করলে হয় না?

রফিক

আরে ধুর। হাঙ্গার স্ট্রাইক আপনারা করবেন কেন, আমিই করবো। আরে মশাই পকেটের যা অবস্থা আমি তো এমনিতেই হাঙ্গার স্ট্রাইক করে থাকি। শোনেন, ও কাজ আমিই করবো। আপনারা শুধু আমার সমর্থনে রাস্তায় নেমে শ্লোগান দেবেন, ব্যাস। বরবাদ হয়ে যাবেন।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ১ম পর্ব

 

সবাই

এ্যা।

রফিক

সরি। বরবাদ পেয়ে যাবেন। তবে ক্ষমতায় যেই যান, তাকে আমার তিনটা নতুন Project বাস্তবায়নে পরিপূর্ণ অর্থ সাহায্য করতে হবে।

৩য় নেতা

তাহলে এখন ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে.. ।

রফিক

আমি করবো হাঙ্গার স্ট্রাইক, আপনারা করবেন আন্দোলন।

৪র্থ নেতা

আসলে কি এ মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়াটা ঠিক হবে?

নেত্রী

এ্যা। হ্যাঁ। আন্দোলনে আমি নাই ।

১ম নেতা

তবে আমরা মুক্তি চাই।

রফিক

এ্যা’ কি বললেন? আন্দোলনে আমরা নাই, তবে আমরা মুক্তি চাই। (স্বগতোক্তি) শালারা তো দেখছি আমার চাইতেও এক ডিগ্রি উপরে।

নেত্রী

কিছু বলছিলেন?

রফিক

না মানে। দেখুন, এক কাজ করুন। আমাকে একটু ভাবতে দিন, আপনারা বরং কালকে ঠিক এ সময়ে আর একবার আসুন।

৩য় নেতা

হ্যাঁ। তাই ভালো। কালকে না হয় আর একবার আসা যাবে। কি বলেন সবাই?

সবাই

হ্যাঁ। তাই ভালো।

রফিক

আসসালামালেকুম ।

সবাই

ওয়ালাইকুম আসসালাম। (নেতাদের প্রস্থান, কোরাসের প্রবেশ)

কোৱাস

হলো হলো ভালোই হলো

নেতার দল খেপে গেল

নির্বাচন নির্বাসন হলো।

এক সাথে জোট বাধবো ভালো ।

নেতা জনতা এক হলো

হলো হলো ভালোই হলো।

রফিক

এই যে স্নেহের জনগণ বন্ধুরা। আমাকে চিনতে পারছেন। আমিই আপনাদের সেই বহুকাঙ্ক্ষিত দেশপ্রেমিক জনদরদী রফিক উদ্দীন বি. এ. যে শুধু আপনাদের দুঃখ কষ্টের কথা মর্মে মর্মে অনুধাবন করে আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

কোরাস

রফিক উদ্দীন বি, এ?

রফিক

হ্যাঁ বন্ধুরা, আমিই সেই রফিক উদ্দীন বি. এ। যে কোন মুহূর্তে হয়ে যেতে পারি এদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের কিংবদন্তী নায়ক কিংবা নেতা। কিন্তু আমি নেতা হতে চাই না। আমি আপনাদের সেবায় আপনাদের একজন হয়ে আমার জীবন উৎসর্গ করতে চাই। আমার হৃদয় সরোবরে বিরাজ করছে আপনাদের জন্য পর্বতপ্রমাণ ভালবাসা। আপনাদের দুঃখ কষ্টের কথা ভেবে রাত্রে আমার ঘুম হয় না।

আপনাদের দুশ্চিন্তায় ভুগে ভুগে আমি আজ গ্যাস্ট্রিকের রোগী। দীর্ঘশ্বাসে ফুলে আছে আমার পেট । যে কোনো মুহূর্তে blast হয়ে মারা যেতে পারি। কিন্তু বন্ধুরা, তবু আমি থেমে নেই। সমস্ত নেতাদের আমি আপনাদের কথা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তারা সবাই আপনাদের সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আমার সাথে একমত হয়েছেন। আপনারা এগিয়ে যান। বুলেটের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ান, বুক পেতে দিন। ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ, আমি আপনাদের পিছনেই আছি।

কোরাস

নির্বাসনে নির্বাচন

রফিক বি. এ-র অনশন

এক হয়েছে জনগণ

রফিক ভাইয়ের অনশন

নির্বাসনে নির্বাচন (প্রস্থান)

রফিক

রাজনৈতিক অস্থিরতা, নেতৃবৃন্দের গণ্ডগোল। বিক্ষুব্ধ জনগণ। গণ্ডগোলটা ভালো করে লাগিয়ে দিতে পারলে Ministry form করার কলটা আসাও বিচিত্র কিছু নয়। ইতোমধ্যে নিজের নামটাও বিশেষজ্ঞ রূপে চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। Tha’s idea—কাজ তাহলে ওভাবেই চালাতে হবে।

রাণী, এই রাণী, জলদি এসো।

রাণী

কি ব্যাপার, এতো চিৎকার করছো কেন?

রফিক

যাও আয়নাটা নিয়ে এসো তো।

রাণী

আয়না আয়না দিয়ে কি করবে?

রফিক

আহ। সব সময় মুখে মুখে কথা, যাও। যা বলছি তাই কর। (প্রস্থান এবং আয়না নিয়ে পুনঃ প্রবেশ। রফিকের বক্তৃতা।)

এখানটায় ধরে দাঁড়াও। বন্ধুগণ, জাতির এই দুর্যোগঘন মুহূর্তে আমি আপনাদের অনুরোধে দেশের মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আজ জাতির ভাগ্যাকাশে সাইক্লোনের ঘনঘটা আকাশে বাতাসে বিজলির চমক। মনে পড়ে সেই ১৮৯৫ সালের কথা। সেদিনও এমনি এক ধরনের পরিস্থিতির মুখে আমি আপনাদের…. দূর শালা তখন তো আমার বাপেরও জন্ম হয় নি। যা হোক বন্ধুগণ, আপনারা একবার স্মরণ করুন সেই ১৯৬২ সনের কথা, ‘৬৯ সালের কথা। আজ আমি একটি কথাই বলবো, সেই কথাটিই বলবো, আমি চিৎকার করে বলবো। আমি তারস্বরে বলবো। আমি শুধুই বলবো (রাণীও নেই; আয়নাও নেই) আমি ঘণ্টা বলবো। আমি এখন ঘুমাবো

(প্রস্থান। মঞ্চ অন্ধকার। লাইট জ্বললেই দেখা যাবে নেতাদের ঘাড়ে রফিক অনশনরত। পিছনে কোরাস।)

কোরাস

বরবাদ বরবাদ দিতে হবে

ইলেকশন ইলেকশন বর্জন বর্জন

বোতলের বিরুদ্ধে আমরাও প্রস্তুত।

রফিক

রফিক ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।

রফিক ভাইয়ের কিছু হলে

জ্বলবে আগুন সারা দেশে।

(মিছিলের প্রস্থান, ঘোষক মিছিল দেখে দৌড়াতে থাকে। ব্যস্তভাবে রাজাবাহাদুরের প্রবেশ)

রাজা

হোয়াটস্ দা মেটার, এতো গোলমাল কিসের?

ঘোষক

সর্বনাশ হয়ে গেছে বস ।

রাজা

সর্বনাশ।

ঘোষক

নির্বাচন বয়কট ।

রাজা

নির্বাচন বয়কট।

ঘোষক

নেতৃবৃন্দ ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচন বয়কট করেছেন।

রাজা

(স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে) ও নেতৃবৃন্দ নির্বাচন বয়কট করেছেন। হাঃ হাঃ হাঃ

ঘোষক

একি মহারাজ? আপনি হাসছেন?

রাজা

হাসবো না। এ্যা। হাসবো না? হাঃ হাঃ হাঃ

ঘোষক

মহারাজ। শান্ত হোন। সুস্থ হোন, এ ধরনের জাতীয় দুর্যোগের মুহূর্তে-

(নেপথ্যে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ)

রাজা

ঘোষক গোলমাল আলী খান এই সিংহাসন। ডোমাসের ইতিহাসে ট্রয় নগরীর মাংসের মূল হিসেবে বর্ণিত হয়েছে হেলেন। সবই ভুল, আসলে সব কিছুর মূল এই সিংহাসন। ইংরেজ, পদাজ দস্যুরা সাত সমুদ্দুর পাখি দিয়ে এ সিংহাসনের লোভেই ছুটে এসেছিল ভারতবর্ষে মীর মা জগৎশেঠের অধঃপতনের মূল এ সিংহাসন। গোলমাল, তোমার নথিপরের ইতিহাসে বর্ণিত মানব সভ্যতা থেকে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা, সব কিছুর মূল এ সিংহাসন।

আমার মাঝে মাঝে কি মনে হয়, জানো? মনে হয়, আমি এ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। কারণ আমিই এ সিংহাসনকে সামনে রেখে পৃথিবীর সবচেয়ে নগ্ন সত্য কথাটা বুক ফুলিয়ে উচ্চারণ করতে পারি। তাকাও, ভালো করে তাকাও। কেমন টকটকে লাল। অদ্ভুত গন্ধ, নেশা ধরে যায় রক্তের অণু- পরমাণুতে। আসলে আমি নিজেই বুঝি না কেন এমন হয়। কেন এ সিংহাসনে বসলে জগৎশেঠ মিটান আর রাজবরকের প্রেতাত্মারা আমার কাঁধে ভর করে দাড়ায়

ঘোষক

মহারাজ। এদিকে যে ওরা নির্বাচন বয়কট করে বসে আছে।

রাজা

তুমি রোম নগরীর একাচ্ছত্র অধিপতি মহারাজ নীরোর বাশির সুর কখনো শুনেছো? আমি এখন সেই বাঁশির সুর শুনছি। আমার মাতরুর নির্দেশ। আমি এখন সেই বাশি বাজাবো। বাঁশি বাজাবেন।

ঘোষক

বাঁশি বাজাবেন।

রাজা

হ্যাঁ! আমার রাধারা যে অভিমান করেছে। কিন্তু কৃষ্ণের বাঁশি তো আর অভিমান করে থাকতে পারে না। মান ভাঙ্গানোর জন্যেই যে কৃষ্ণের বাঁশির জন্ম। আমি আজ সেই বাঁশি বাজাবো। ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, আফগান কিংবা ইরান সীমান্তের যেখানেই থাক, গুরা ছুটে আসবে। পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে এমনি করে ছুটে এসেছে সবাই। বড়ো ভয়ঙ্কর এ বাঁশির সুর। রক্ত কণিকা অতিক্রম করে ঠিক মস্তিষ্কের মধ্যবিন্দুতে গিয়ে আঘাত করে। আমি এখন সেই বাঁশি বাজাবো।

(বাশি বাজানো শুরু হয়। একে একে নেতাদের প্রবেশ।)

ঘোষক

মহারাজ, ও মহারাজ ভাঙুন, ধ্যান ভাঙুন, দেখুন কারা এসেছে। মহারাজ ও মহারাজ।

রাজা

আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা ফিরে এসেছেন।

সবাই

মহারাজের জয় হোক

রাজা

আল্লাহ আপনাদের বেহেস্ত নসীব করুক। আসুন বন্ধুগণ, এ সিংহাসনের সামনে মাড়িয়ে আমরা ভুলে যাই পূর্বের সমস্ত মান-অভিমান এবং পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী কাঁপিয়ে পড়ি ভোটযুদ্ধে ।

সবাই

উত্তম, উত্তম।

রাজা

বন্ধুগণ, আমাদের দেশের সর্বমোট পার্টির সংখ্যা, ঘোষক ?

ঘোষক

স্যার, আজকের হিসেব পর্যন্ত ৪২১।

রাজা

একটা সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে সবাইকে বাদ দিয়ে আমি বৃহত্তর দল হিসেবে আপনাদের পাঁচজনকে ভোটযুদ্ধে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

নেত্রী

আমরা আনন্দিত।

১ম নেতা

পুলকিত।

২য় নেতা

রোমাঞ্চিত।

৩য় নেতা

শিহরিত।

৪র্থ নেতা

গর্ভিত।

ঘোষক

আমি দুঃখিত। কথাটা গৰ্ভিত নয়, গর্বিত।

৪র্থ নেতা

চোপ! বন্ধুগণ, একটা দৃষ্টান্ত এবার আমরা স্থাপন করতে চাই। আগামী দিনগুলোতে যাতে কোনো খুচরা পার্টি অর্থাৎ যাদের কোন জনসমর্থন নেই, তাদের ভোটযুদ্ধের অঙ্গন থেকে উৎখাত করবার লক্ষ্যে আমরা এবার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। ঘোষক

ঘোষক

এবারের ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে যে দল শতকরা ৮-এরও কম ভোট পাবে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে নতুন অবদান তৈরি করার লক্ষ্যে তাকে প্রকাশ্য দিবালোকে বাঁশ প্রদান করা হবে।

সবাই

এ্যা

রাজা

হ্যাঁ এবং তিনি সেই বংশদণ্ড ধারণ করে সমগ্র রাজপথ প্রদক্ষিণ করবেন।

সবাই

অতি উত্তম, অতি উত্তম।

(প্রস্থানোদ্যত )

 

google news logo

 

রাজা

এবার আমি পেশ করছি নির্বাচনী বাজেট। (সবাই ফিরে দাঁড়ায়) এবারের নির্বাচনে আমাদের খরচের পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে জাতীয় টাউটদের জন্য ২০০ কোটি টাকার উৎকৃষ্ট মানের পোস্টার পেপার, ১০০ কোটি টাকার রং, বাকি টাকা ভোটারদের সম্মানি, ব্যানার, ফুলের মালা ইত্যাদি হাবিজাবি।

ঘোষক

মহারাজ, আমি নির্বাচনী যুদ্ধে সফলতা এবং দলগুলোর সত্যিকার শক্তি পরীক্ষার জন্য ১০০ কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র আমদানির প্রস্তাব করছি।

রাজা

তার প্রয়োজন হবে না। কারণ আমাদের জনগণ ঐতিহ্যের দিক থেকে অস্ত্র-শস্ত্রের পরিবর্তে ভাঙা ইট, লোহার রড এবং দা ছুরি ব্যবহারে অভ্যস্ত। আমরা জনগণকে প্রচুর পরিমাণে ভাঙ্গা ইট সরবরাহ করবো।

সবাই

যথার্থ যথার্থ ।

রাজা

আমাদের মতো দরিদ্র দেশে প্রতি নির্বাচনী যুদ্ধের পরে সৃষ্টি হয় গণদুর্ভিক্ষ। কারণ প্রতি বছর আমাদের উন্নয়ন বাজেটই হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী যুদ্ধে ১২০০ কোটি টাকা ব্যয় হলে ঘাটতি দেখা দিতে বাধ্য। কিন্তু আমাদের মহান পার্টিগুলোর কাছে না খেয়ে মরার চাইতে অধিক পবিত্র ইলেকশান।

সবাই

ইলেকশান ইলেকশান

রাজা

অতএব আমরা কোনো অবস্থাতেই পিছপা হতে পারি না।

সবাই

না না না, নিশ্চয়ই না।

রাজা

অতএব আসুন বন্ধুগণ। সবাই বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ি ভোটযুদ্ধে

(ঘোষকসহ প্রস্থান)

১ম নেতা

প্রয়োজনে শহীদ হবো

সবাই

ভোটযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বো।

২য় নেতা

সামনে আছে ভোট লড়াই

সবাই

এ লড়াইয়ে ইট চাই ।

নেত্রী

দা কুড়াল চুরির দাম

সবাই

কমাতে হবে কমাতে হবে।

৩য় নেতা

ন্যায্যমূল্যে হকিস্টিক

সবাই

সরবরাহ করতে হবে।

(১ম নেতা ছাড়া বাদবাকি সকলের প্রস্থান। ঘোষকের প্রবেশ)

১ম নেতা

গোলামাল ভাই—

গোলমাল

বলুন।

১ম নেতা

বড়ো গোলমালে পড়ে আছি।

ঘোষক

বলুন আমি কি করতে পারি।

১ম নেতা

না মানে দেখুন। এমনিতে আমার প্রতীক হচ্ছে গাধা। তার উপর মতবাদ পড়েছে। সাম্রাজ্যবাদ। জিন্দাবাদ কিংবা মুর্দাবাদ হলে কথা ছিল না। ও সম্পর্কে আমার প্রচুর পড়াশুনা আছে। কিন্তু এই সাম্রাজ্যবাদ ব্যাপারটা কেমন যেন

ঘোষক

আমাকে বর্বরতার সাথে ক্ষমা করবেন। দেখুন, আমি সরকারি কর্মচারি। যে পারে পড়ি সে পাত্রের আকার ধারণ করি। যাই। আপনার সাথে কথা বলছি দেখলে। রাজবাহাদুর আবার রাগ করবেন।

(প্রস্থান। নেপথ্যে কোরাস সুর ভেসে আসে ইলেকশানের। একে একে সব নেত নিজেদের প্রতীক এবং ভয়ার্তভাবে বাঁশ শব্দ উচ্চারণ করতে করতে মঞ্চ ত্যাগ করবে। প্রথম নেতা এসে প্ল্যাটফরমে উপবেশন করে। রফিকের প্রবেশ।)

রফিক

একি। নির্বাচনী যুদ্ধে সমস্ত আকাশ বাতাস প্রকম্পিত আর আপনি এখনো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন? এই যে শুনছেন। আমি রফিক উদ্দিন বি. এ. কথা বলছি।

১ম নেতা

রফিক উদ্দিন বি. এ. সাহেব, আপনি? আমাকে বাঁচান ভাই। চোখের সামনে কেবলি ভাসছে চকচকে ধারালো বাঁশ।

রফিক

চিন্তার কোনো কারণ নেই। দি পরামর্শ হাউসের প্রোপাইটার রফিক উদ্দিন বি.. আপনার পাশে এসে দাঁড়াবেন। তবে

১ম নেতা

তবে?

রফিক

এতে আমার লাভ?

১ম নেতা

জিততে পারলে আপনি যা চান তাই দেবো । বলুন কি চাই ।

রফিক

আপনার সুন্দরী স্ত্রীকে-

১ম নেতা

এ্যা!

রফিক

বোঝা গেল, আপনার জেতার সম্ভাবনা প্রচুর। পরামর্শ আপনাকে আমিই দেবো। তবে, জেতার পরে আপনাকে আমার তিনটা নতুন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ করতে হবে।

১ম নেতা

বলতে হবে না, বলতে হবে না, সব হয়ে যাবে।

রফিক

প্রজেক্ট না শুনেই বলে ফেললেন হয়ে যাবে।

১ম নেতা

ও আমি ঠিকই ভুলে যাবো।

রফিক

এ্যা!

১ম নেতা

না মানে বলছিলাম। অতশত কি আর মনে থাকবে? অর্থের ব্যাপার-স্যাপার। আপনাকে না হয় অর্থমন্ত্রীই বানিয়ে দেবো।

রফিক

অর্থমন্ত্রী। অর্থের ব্যাপার-স্যাপার। হু। So let us start শুনুন, নির্বাচনে জেতার প্রথম এবং প্রধান উপায় হচ্ছে নাগালের বাইরে কথা বলা। প্রয়োজনে আপনাকে ঘোষণা করতে হবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ডাক দিয়েছিলেন আপনি ।

১ম নেতা

কিন্তু সত্যিকার অর্থে তখন তো আমার জন্মই হয় নি ।

রফিক

ওসব কোনো ব্যাপারই না। আমাদের দেশে, বুঝলেন, আমাদের দেশে স্বয়ং রাবণরাজ্য জয়ের দাবিদারও অনেক আছেন। দ্বিতীয়ত জ্বালাময়ী বক্তৃতা চাই। বিপ্লব শুধু কণ্ঠে নয়, হাতে পায়ে চোখে মুখে। বক্তৃতার সময় হাত পা খুঁড়ুন, চোখগুলো আগুনের মতো টকটকে লাল করে তুলুন। এতে করে দুটো লাভ।

এক বিচিত্রতা থাকবে। দুই, কিছু বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলে, যদি ঐ জনগণের বাচ্চারা খেপেও যায়, আপনার হাত পায়ের নর্তন কুর্দনে আপনার কাছে ঘেঁষা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। Now practice. এখানটায় দাঁড়ান (নেতা দাঁড়ায়), সোজা হয়ে দাঁড়ান। মাইকে টোকা দিন, এবার বলুন বন্ধুগণ, আজ জাতির আকাশে বাতাসে দুর্যোগের ঘনঘটা। হ্যাঁ, হ্যাঁ। এবার বলুন। তেতুলিয়া থেকে টেকনাফ পর্যন্ত গণমানুষের নাকি কান্নার বিদ্রোহ, আমি প্রতিনিয়ত বিবেকের দংশনে দংশিত হচ্ছি।

১ম নেতা

বিবেকের ধর্ষণে ধর্ষিত হচ্ছি।

রফিক

আরে ধুর। বিবেকের দংশনে দংশিত হচ্ছি। ক্ষমা চান। বলুন Slip of tongue,

১ম নেতা

এক্সকিউজ মি. স্লিপ অব টাং।

রফিক

হ্যাঁ, ছুড়ুন, হাত পা ছুড়ুন, জোরে, আরো জোরে। বাঘের বাচ্চা।

১ম নেতা

ওরে বাবা। সমস্ত শরীর ব্যথা হয়ে গেল।

রফিক

ওকে, আজকের মতো রেস্ট। কাল ঠিক এ সময়ে আর একবার আসবেন। (নেতার প্রস্থান, নেত্রীর প্রবেশ)

নেত্রী

রফিক ভাই, আমি কিন্তু সব দেখে ফেলেছি।

রফিক

সব দেখেছেন মানে?

নেত্রী

আপনি একটু আগে গাধা ভাইকে ট্রেনিং দিচ্ছিলেন না? ওরকম ট্রেনিং আমাকেও দিতে হবে। আমার পপুলারেটিও কিন্তু খুব খারাপ না। কি দেবেন না?

রফিক

দেবো না মানে? নিশ্চয়ই দেবো। কিন্তু

নেত্রী

না, কোনো কিন্তু শুনবো না।

রফিক

না দেখুন। ইয়ে, একটা প্রশ্ন করবো, কিছু মনে করবেন না তো?

নেত্রী

কিছু মনে করবো না। বলুন।

রফিক

ইয়ে, আপনি কি বিবাহিতা?

নেত্রী

না। সময় পেলাম কই।

রফিক

ভেরি গুড।

নেত্রী

এ্যা।

রফিক

আপনার পিছনে কাজ করার প্রচুর inspiration পেয়ে গেলাম। এক মিনিট। একটু চিন্তা করি। (এগিয়ে) ক্ষমতা দখলের নতুন strategy জননেত্রী এখনও বিয়ে করেন নি। পপুলারিটিও বলছেন ভালো। যদি জিতে যায় তবে নিশ্চিতভাবে হয়ে যাচ্ছে সম্রাজ্ঞী। ভালোভাবে line up করতে পারলে আমি হয়ে যাবো সম্রাজ্ঞীর স্বামী অর্থাৎ রাজা। একে অবলা মেয়েমানুষ, সবদিক দিয়ে dominate করা গেলে মূল চাবিকাঠি চলে আসবে আমার হাতে। শালার really আমি একটা talent-

নেত্রী

কিছু বলছিলেন?

রফিক

না বলছিলাম ঐ ব্যাটা গাধার কথা। একেবারে গবেট। মাথায় বুদ্ধি বলতে কিছু নেই। আপনাকে দেখেই আমি বুঝতে পেরেছি, ভালোভাবে guidence পেলে আপনি হবেন ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।

নেত্রী

সত্যি বলছেন রফিক ভাই। আপনার guidence পেলে-

রফিক

পেলে মানে? পেয়ে গেছেন অলরেডি।

নেত্রী

আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আপনার মত ট্যালেন্টকে হাতছাড়া করা যায় না। জেতার পরে আপনিই হবেন আমার প্রধান রাজনৈতিক সহযোগী।

রফিক

শুধু রাজনৈতিক কেন, প্রশাসনিক, সামাজিক এমনকি আপনার জীবন-সহযোগী হলেও আমি আনন্দিত হবো। কারণ আপনার ট্যালেন্টের proper utilization আমার পক্ষেই সম্ভব।

নেত্রী

সত্যি আপনার তুলনাই হয় না।

রফিক

দেখুন। আমি চিন্তা করলাম, আপনার নামের প্রথমেই একটা বিশেষণ দরকার। আপনি, আপনি হবেন এদেশের প্রথম বারু কন্যা।

নেত্রী

Wonderful! What a splendid idea!

রফিক

Idea is splendid, Executionটাই problem. কিছু নামকরা দার্শনিকের নাম মুখস্থ করে ফেলুন এবং তাদের বাছাই করা কোটেশন বারুদের মতো ছুঁড়ে দিন জনতার কাছে। দেখবেন সবাই হটকেকের মতো গিলে খাচ্ছে। ঐ জনগণের বাচ্চারা এসে পড়লো । এভাবে, হ্যাঁ। এভাবেই দাঁড়ান। (নেত্রী ফ্রিজ। কোরাসের প্রবেশ।)

কোরাস

ভাতের দাবি নির্বাসনে

ব্যস্ত নেতা নির্বাচনে

আমরা পালাই বৃন্দাবনে

ব্যস্ত নেতা নির্বাচনে।

রফিক

দাঁড়ান জনগণ বন্ধুরা। আমি রফিক উদ্দিন বি. এ. বলছি। আমি জানি আপনারা কি চান। যুগ যুগ ধরে ভোটই দিয়ে এসেছেন। কিন্তু আপনাদের সমস্যার সমাধান জীবনেও হয় নি।

কোরাস

খাঁটি কথা সত্যি কথা।
একেবারে মনের কথা।

রফিক

কিন্তু এখানেই ভুল করেছেন। আপনারা ভাত চান। আজ পর্যন্ত কোথাও শুনেছেন, কোথাও কোনো মাতৃজাতি তার সন্তানের মুখে অন্ন না দিয়ে নিজের মুখে তুলে দিয়েছেন?

কোরাস

কখনো না, কখনো না।

রফিক

এই সেই বারুদ কন্যা। মাতৃজাতিরই একজন। আমরা প্রমাণ করতে চাই, স্ত্রী জাতি শুধু ঘরেরই শোভা নয়, দেশেরও শোভা। আমি বলবো, আপনারা এই মাতৃজাতির ওপর বিশ্বাস আনুন। আপনাদের মূল্যবান ভোটটা ঢোল মার্কায় দিন। 1 মনে রাখবেন, নারী জাতির অপমান, নিজের অপমান। আপনারা বারুদ কন্যার নেতৃত্বে এগিয়ে যান ৷ মাতৃজাতির মধুর বচন শ্রবণে ইনশাআল্লা ভুলে যাবেন দুঃখ, কষ্ট, ক্ষুধা। জয় আপনাদের সুনিশ্চিত।

(মিছিল সহকারে বারুদ কন্যার প্রস্থান। আলো নিভে যায়। আলো জ্বলতেই দেখা যায় রফিক ঘরে ফিরে বসে পড়েছেন। রাণীর প্রবেশ।)

রাণী

রফিক, তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে।

রফিক

রাণী আই এম টায়ার্ড। পরে শুনবো।

রাণী

সে সময় হয়তো নাও আসতে পারে। আমি আজকেই তোমার সাথে চূড়ান্ত বোঝাপড়ায় উপনীত হতে চাই ।

রফিক

চূড়ান্ত বোঝাপড়া!

রাণী

আমি জানতে চাই তুমি তোমার নোংরা কদর্য পিচ্ছিল পথ পরিহার করবে কিনা।

রফিক

ওহ। এই কথা? আচ্ছা রাণী, একটা ব্যাপার কেন তুমি বুঝতে পার না। আমার এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, রাজনীতির চোরা বাঁকা গুপ্ত পথে আনাগোনা—সবই তো তোমার জন্য। তোমার দিকে তাকালে দুঃখে বুকটা যেন ফেটে যায় আমার কি অজস্র ভালবাসা বুকে নিয়ে শুধু তোমার জন্য।

রাণী

দয়া করে ঐ পবিত্র শব্দটাকে অপমান করতে এসো না।

রফিক

মাঝে মাঝে আমার ভাবতেই অবাক লাগে, তুমি আমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলে।

রাণী

তোমার সাথে ঐ ভালবাসাই আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

রফিক

রাণী, এ মুহূর্তে তোমার সহযোগিতা আমার একান্তই প্রয়োজন। এবার আমি যে প্রজেক্ট-এ হাত দিয়েছি, নিশ্চিত থাকতে পারো, মন্ত্রী আমি হবোই। তখন তুমি হবে ….

রাণী

ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে যারা লাখ টাকার স্বপ্ন দেখে, আমি তাদের পদার্থ বলি না। বলি অপদার্থ । (প্রস্থান)

রফিক

তুমি রাণী আহমেদ। রফিক উদ্দীন বি, এ-র স্ত্রী। আজীবন কেরানি ছিলে এবং কেরানিই থাকবে। মন্ত্রীর স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা তোমার নেই। (দর্শকদের) শালা, এই মেয়েমানুষই হচ্ছে সমস্ত অধঃপতনের মূল। এরা ট্রয় নগরী ডুবিয়েছে। সম্রাট অষ্টম এডওয়ার্ডকে ডুবিয়েছে। এখন দেখছি আমাকেও ডুবাবে।

কথাটা কি খারাপ বলেছিলাম? একজন ভাবী মন্ত্রীর স্ত্রীর যোগ্যতা অর্জনের কথা বলে কি ভুল করেছি? শালার বাচ্চা জনগণ, বলে কি না মন্ত্রীদের কোনো চরিত্র নেই। আরে, এরকম দজ্জাল স্ত্রী থাকলে স্বয়ং ফেরেস্তার চরিত্র পাল্টে যায়। মন্ত্রীরা তো মানুষ। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি এ ঘরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সেই ভালো, যে যার পথ বেছে নিই।

ঘোষক

এই যে, রফিক উদ্দিন বি.এ। অমন হন হন করে কোথায় চললেন?

রফিক

ইলেকশন।

ঘোষক

ইলেকশন। কিন্তু আপনি তো নেতা নন।

রফিক

Campaign এ যাচ্ছি।

ঘোষক

তা আপনার candidate.

রফিক

চুপ। এখন নয়, এখন interval. (লাইট আউট, পর্দা পড়বে)।

 

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান
এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান

বিরতি

[বিরতির পর বিরাট ব্যালট বাক্সকে ঘিরে নেতা কোরাস বন্দনা গাইছে।]

 

কোরাস

ব্যালট বাক্সের গুণকীর্তনে আমরা রাজা প্রজা
এর গুণেতে আমির ফকির, ফকির হচ্ছে রাজা
এই ব্যালটের গুণে সবাই আসছে মোদের কাছে
ঘাড়ে তুলে সবাই মোদের ধিতাং ধিতাং নাচে।
সারা জীবন পিঠে যারা মারে কঠিন লাখি
এ সময়ে মোদের দুঃখে ফাটে তাদের ছাতি ।
ধোপ কাপড়ে লাগিয়ে দাগ মোহব্বতের সুরে
জনগণের লাগি নেতা আনচান আনচান করে।
সবাই বলো সবাই বলো
ব্যালট বাক্সের অপর নাম ভালোবাসা
ব্যালট বাক্সের অপর নাম অপরিণাম আশা।
বহু গুণের অধিকারী ব্যালট তুমি ভাই
তোমায় পেয়ে আমাদের খুশির সীমা নাই ।
সারা বছর থেকে ব্যালট সেতু বন্ধন হয়ে
দেশবাসীর ঘরে ঘরে প্রেমের বার্তা বয়ে।
ধন্য ব্যালট ধন্য তুমি শুধু তোমার গুণে
কয়েকটা দিন কাটবে ভালো আশ্বাসের গান শুনে।

(সবার প্রস্থান। ব্যানার, প্রতীক, মতবাদ ইত্যাদি নিয়ে ১ম নেতার প্রবেশ।)

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

১ম নেতা

এক দুই তিন, চার পাঁচ ছয়
এবার হয়ে যাবে জয়।
দুর্মুখেরা যতই বলুক মার্কা আমার খাসা
ওদের মুখে ছাই দেবে আমার প্রতীক গাধা।
এক দুই তিন, চার পাঁচ ছয়
এবার হবে আমার জয়, এবার হবে গাধার জয়।

বন্ধুগণ, গাধা দেখে আমাকে অবহেলা করবেন না। শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, বিদ্যাবলে সুধীজন সবার প্রধান, বিদ্যাহীন ব্যক্তি হয় গাধার সমান। বন্ধুগণ, আমাদের দেশের বন্ধুগণ, বিশ্বজুড়ে চলছে সাম্রাজ্যবাদের মহান সংগ্রাম। সাম্রাজ্যবাদের এই মহান সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আমাকে গাধা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন । শতকরা ৮০ জন লোকই হচ্ছে অশিক্ষিত। শাস্ত্রের সংজ্ঞানুসারে এই ৮০ জন লোকই হচ্ছে গাধা। অতএব আমার বিশ্বাস, স্বজাতির প্রতি স্বজাতির আকর্ষণ, আপনাদের গাধা মার্কায় ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করবে। জয় সাম্রাজ্যবাদ, জয় গাধা ।

(২য় নেতার প্রবেশ)

২য় নেতা

ছয় পাঁচ চার তিন দুই এক
জয় বাদরের জয়।
আরে ব্যাটা গাধা বলিস কি তুই যা তা,
ব্যাটা জাতির কুলাঙ্গার।
বোনাইর কাছে কইতে আসিস বোনের সমাচার?

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব

 

১ম নেতা

চোপ ব্যাটা চোপ

শালার ব্যাটার বাদর এক নম্বরের ত্যাঁদড়।

চড়লে মাথায় খুন

এই ইটের বাড়ি খেয়ে ছুটবে ইলেকশনের ধুন-

২য় নেতা

মুরোদ কি তোর আছে?
আয় না দেখি কাছে-

২য় নেতা

তবে রে-

১ম নেতা

তবে রে-

২য় নেতা

৬.৫,৪.৩. ২.১.

১ম নেতা

১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ( আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে দুজনের প্রস্থান। ৩য় ও ৪র্থ নেতার প্রবেশ। উভয়েই এতক্ষণ দুই নেতার যুদ্ধ দেখছিল)

৩য় নেতা

আল্লাহ আল্লাহ করিতে, ভোট দিবেন গাভীতে।

৪র্থ নেতা

যাহা করে আল্লায়, ভোট দিবেন কাঁচকলায়।

৩য় নেতা

জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ, গাভী মার্কা জিন্দাবাদ।

৪র্থ নেতা

থাক থাক থাক শালার ব্যাটার ভাজা গাই, ভোটের আগে বিয়োন চাই। নইলে এবার ভোট নাই ।

৩য় নেতা

চোপ ব্যাটা চোপ, খাবি কুড়ালের কোপ।

৪র্থ নেতা

বন্ধুগণ, আজ এক বিশেষ মুহূর্তে আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার বিপ্লবী মতবাদ জিন্দাবাদ।

৩য় নেতা

এই জিন্দাবাদের সংগ্রামে জিন্দাবাদ বলতে গিয়ে শত শত লোক শহীদ হয়েছে।

৪র্থ নেতা

এই মুর্দাবাদের সংগ্রামে মুর্দাবাদ বলতে গিয়ে হাজার হাজার লোক পুলিশের ঠ্যাঙানি খেয়েছে।

৩য় নেতা

বন্ধুগণ, আপনারা অপপ্রচারে বিধ্বস্ত না হয়ে জিন্দাবাদের পতাকাতলে সমবেত হোন।

৪র্থ নেতা

বন্ধুগণ, আপনারা খেমটা প্রচারকে তালাক দিয়ে মুর্দাবাদের আশীর্বাদ গ্রহণ করুন।

৩য় নেতা

ভায়েরা আমার।

৪র্থ নেতা

বোনেরা আমার।

৩য় নেতা

চোপ। ভায়েরা তোমার বোনেরা আমার, আমার প্রতীক গাভী।

৪র্থ নেতা

আমার প্রতীক কাঁচকলা

৩য় নেতা

গাভী একটি উৎকৃষ্ট জন্তু। গাভী দান করে মানব শরীরের জন্য উপাদেয় প্রোটিন দুধ।

৪র্থ নেতা

বাঙালির ঐতিহ্যের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে কাঁচকলা, কাঁচকলায় রয়েছে ভিটামিন বি।

৩য় নেতা

এই ব্যাটা কাঁচকলা একজন জাতীয় বিশ্বাসঘাতক

৪র্থ নেতা

এই ব্যাটা গাড়ী একজন জাতীয় টাউট।

৩য় নেতা

এই ব্যাটা বাটপার।

৪র্থ নেতা

এই ব্যাটা রাজাকার।

৩য় নেতা

এই ব্যাটা ম্যানকিলার।

৪র্থ নেতা

ই ব্যাটা ক্রিস্টেন কিলার।

৩য় নেতা

চোপ ব্যাটা চোপ, খাবি কুড়ালের কোপ।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব

 

৪র্থ নেতা

যা ব্যাটা যা, খাবি রডের মা।

(যুদ্ধরত দু’জনেই। ১ম ও ২য় নেতার পুনঃপ্রবেশ যুদ্ধরতভাবে, নেপথ্যে ঢোলের আওয়াজ। নেত্রীর প্রবেশ।)

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

নেত্রী

চাই না গণ্ডগোল, মার্কা আমার ঢোল
তাক ধুমাধুম তাক ধুমা ঘুম, দুধের ভাতে ঘোল।
ওস্তাদ আমার রফিক উদ্দিন মাস্টার হলেন কেষ্ট
সাতশো পৃষ্ঠায় লেখা আছে ভোটের ম্যানিফেস্ট ।
ভোট যুদ্ধে যদি এবার জিতে যেতে পারি
বিমান বোঝাই পাউন্ড আসবে ডলার কাড়ি কাড়ি ।
চাই না গণ্ডগোল, মার্কা আমার ঢোল।
(বিশেষ ভঙ্গিমায় নেত্রীর প্রস্থান, ঘোষক এবং রাজাবাহাদুরের প্রবেশ)

রাজা

মাংস রুটি গোস্ত পোলাও ইলিশ মাছের ভাজা
আরো খেতে ভালোবাসি অর্থনীতির খাঁচা।

ঘোষক

খাবো খাবো খাবো খাবো

রাজা

খাবার খুঁজি লোকালয়ে খাবার যত্রতত্র
বেশি খুশি খেতে পেলে সংবাদপত্র ।

গণতন্ত্র-

ঘোষক

খাবো খাবো।

রাজা

অর্থনীতি –

ঘোষক

খাবো খাবো।

রাজা

সংবাদপত্র-

ঘোষক

খাবো খাবো।

রাজা

সমাজতন্ত্র-

ঘোষক

ছেড়ে দেবো?

রাজা

তাও খাবো-

ঘোষক

তাও খাবো তাও খাবো।

রাজা

মার্কা আমার বোতল

মনটা করে শীতল।

নবীন মতবাদের স্রোতে

পেলাম নতুন প্রাণ।

আসুন সবে এক সাথে গাই

বরবাদের গান।

(রাজার প্রস্থান)

ঘোষক

এই বোতল সেই বোতল নয়, এই বোতল স্যামপল। এই বরবাদ সেই বরবাদ। নয়, এই বরবাদ মতবাদ। এই বরবাদের গুণে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড খাড়া করে দেয়া যায়, ১২ ঘণ্টার মধ্যে জনগণের মনে খুশির বন্যা আনয়ন করা যায়, ৬ ঘণ্টার মধ্যে আমিরকে ফকির বানানো যায়, ফকিরকে আমির বানানো যায়।

পূর্বে জিন্দাবাদ মুর্দাবাদ দেখেছেন। এবার আপনাদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন জিনিস এনেছি । টেষ্ট করে দেখুন কোনো ভেজাল নেই। ইনশাআল্লাহ বিফলে যাবে না। বিফলে ভোট ফেরৎ বরবাদের পতাকাতলে সমবেত হোন। বোতল মার্কায় ভোট দিয়ে দেহমন শীতল করুন। জয় রাজ বাহাদুর, জয় বোতল ।

রাজা

(নেপথ্যে) সমাজতন্ত্র—

ঘোষক

খাবো খাবো তাও খাব।

(ঘোষকের প্রস্থান। রাজা এবং নেতাদের প্রবেশ এবং পরিবর্তিত আলোকে ব্যালট বাক্স নিয়ে প্রস্থান। জনতার প্রবেশ)

১ জনতা

নামটি আমার কলমিলতা
বয়স মোটে বারো,
গুণে গুণে ভোট দিয়েছি
সঠিক সংখ্যা তের।

২ জনতা

রহিম, ছলিম, কলিমুখি
আমরা তিন ভাই
ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখি
ঢোকার রাস্তা নাই।
অজানা এক পরম সুহৃদ
মোদের দুঃখ দেখে
ছাপ মেরেছেন ইচ্ছে মতো
আমরা আসার আগে।

৩ জনতা

আজ দিনেতে নেতারা সব
ছিলেন দরাজ দিল।
খসিয়েছেন পকেট ফেঁড়ে
পান তামুকের বিল।

সবাই

ধনা ভূমি ধন্য বাবা আজব ইলেকশান
তোমার গুণে এই একটি দিন সবাই দরাজ প্রাণ।

(প্রস্থান। ঘোষকসহ রাজা, বিষাক্ত গাধা ও ৪ নেতার প্রবেশ)

ঘোষক

নির্বাচনী জয়ীত, বাঁচিয়ে জামানত, গরীবে বন্ধুত্ব, কুদরুতে বাহার জনাব রাজ বাহাদুর

রাজা

বন্ধুগণ, এবারের নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছি। এজন্য আমি প্রথমেই অভিনন্দন আপন করছি আমাকে এবং পরে আপনাদেরকে।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব

 

ঘোষক

তালি।

রাজা

আপনারা যারা এই নির্বাচনে হেরে গিয়েছেন, আমি শ্রদ্ধার সাথে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি বিশ্বাস করি এটাই আমাদের শেষ নির্বাচন নয়, ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় ইনশাআল্লা আগামীতে আরো জৌলুসের সাথে নির্বাচন হবে এবং আমার বিশ্বাস সে নির্বাচনে আপনারা কামিয়াবি হলেও হতে পারেন।

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

ঘোষক

তালি

রাজা

কিন্তু নির্বাচনের পূর্বে ঐতিহাসিক প্রয়োজনে আমরা ঘোষণা করেছিলাম, যে ব্যক্তি শতকরা আট-এরও কম ভোট পাবে, রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে নতুন অবদান রাখার লক্ষ্যে তাঁদের বাঁশ প্রদান করা হবে। (গাধার উচ্চস্বরে কান্না) এই ব্যাটা গাধা নেতা জাতির কলঙ্ক। ভোট পেয়েছে মাত্র শতকরা ৭ ভাগ। অতএব পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুসারে তাকে বংশদণ্ড প্রদান করা হবে। (গাধার কান্না)

৩য় নেতা

স্যার, দেশের শতকরা ৭ জন লোক তার পক্ষে রায় দিয়েছে। এক্ষেত্রে বাঁশ প্রদান করার মানে হচ্ছে, দেশের শতকরা ৭ জন লোককে আপনি ইয়ে দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে

রাজা

প্রয়োজনে আমরা শতকরা ১০০ জনকে বাঁশ প্রদানে কার্পণ্য করবো না। ভুলে যাবেন না এই সিংহাসনের সামনে দাঁড়িয়েই বৃহত্তর প্রয়োজনে আমরা এ ধরনের অঙ্গীকার করেছিলাম

সবাই

তাতো বটেই, তাতো বটেই।

৪র্থ নেতা

স্যার, শোনা যাচ্ছে উৎকৃষ্ট মানের বাঁশের অভাবে দেশের কাগজের কলগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এক্ষেত্রে এতোগুলো বাঁশ অপচয় করা কি জাতীয় স্বার্থে উচিত হবে?

রাজা

ঘাবড়ানোর কিংবা ভয় পাবার কিছু নেই। একটা স্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা বিশেষ স্কিমে বিদেশ থেকে সাইজ মতো বাঁশ আমদানির বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। আপাতত দেশী বাঁশ দিয়ে আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করবো। আমার বিশ্বাস, ইতিহাসে এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যে, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অন্তত এই একটি ব্যাপারে আমরা দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করেছিলাম । অতএব শুরু করুন প্রক্রিয়া।

ঘোষক

ফাঁটা বাশ, নলী বাঁশ, মুলি বাঁশ, গিরা বাঁশ, বড় বাঁশ, ছোট বাশ যে যেখানে পান নিয়ে আসুন।
(নেতারা দৌড়াদৌড়ি করে একটা বাঁশ নিয়ে ফিরে আসবে)

রাজা

সাব্বাস, সাব্বাস। এই বাঁশেই চলবে। বন্ধুগণ এরই সাথে আমরা আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, কার্য সমাধা হওয়ার পরে বিশ্ব রাজনীতিতে অসামান্য অবদান। রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ এই বাঁশ আমাদের কেন্দ্রীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে।

নেতারা

সাধু সাধু, সাধু।

রাজা

এবার শুরু হবে আমাদের প্রক্রিয়া।

(ঘোষক শোভাযাত্রার প্রস্তুতি সম্পন্ন করে)

৪র্থ নেতা

মহামান্য রাজবাহাদুর। কাজ শুরু করার পূর্বে আমি জনাব গাধা সাহেবের স্মৃতির প্রতি অ্যাডভান্স সম্মান প্রদর্শন হিসেবে কিছুক্ষণ নীরবতা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

নীরবতা শুরু)

৩য় নেতা

স্যার, আগামী ইলেকশানে কি এ ধরনের বাঁশ প্রদানের ব্যবস্থা থাকবে?

রাজা

এবার শুরু হবে আমাদের বংশদও শোভাযাত্রা।

(শোভাযাত্রা শুরু)

ঘোষক

(বিলাপ করে) ফাঁটা বাশ, মুলি বাঁশ, হায় বাঁশ-

১ম নেতা

ইলেকশানে হইলাম খুন

(গাধা হার্টফেল করে। সবাই গাধার পতন ঠেকায় এবং বলে ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্ন ইলাইহে রাজেউন।)

(আলো নেভে রফিক উদ্দিন বি.এ.-র বাড়ি। ভগ্ন হৃদয়ে রফিক প্রবেশ করে। বসে। রাণীর প্রবেশ)

রাণী

তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন।

রফিক

একটু ব্যস্ত ছিলাম কাজে।

রাণী

আর এদিকে আমরা ঘর শুদ্ধ লোক চিন্তায় অস্থির। অবশ্য আমি জানতাম তুমি ফিরে আসবেই। কি ব্যাপার, কিছু বলছো না যে?

রফিক

রাণী, পৃথিবীটাকে নতুন করে দেখলাম। নিজের মধ্যে একটা প্রচণ্ড পরিবর্তন অনুভব করছি। আসলে যতই বলি, রাজনীতির জন্যই আমার জন্ম হয়েছে; ও তুমি বোধহয় জান না, এবারের নির্বাচনে আমার একজন প্রার্থী বিপুল ভোটে….

রাণী

ওসব থাক । অন্য কিছু বলো।

রফিক

রাণী আমি স্পষ্ট অনুভব করছি, আমার মধ্যে একটা প্রচণ্ড বিপ্লবী প্রক্রিয়া করছে। আসলে তোমার কথাই ঠিক। ঐ সমস্ত চরিত্রবিহীন নেতাদের পিছনে ঘুরে কোনো লাভ নেই। রাণী আমি মানুষের মাঝে ফিরে আসতে চাই-

রাণী

রফিক। তুমি সত্যি সত্যি ফিরে আসছো? নাকি

রফিক

বিশ্বাস করো রাণী, আমি গত কয়েকদিন ধরে একটা মারাত্মক আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি।

রাণী

তোমার আত্মজিজ্ঞাসাই তোমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে রফিক।

রফিক

মোটামুটি একটা Concrete plan আমার মাথায় এসেছে। আমাকে একটু ভাবতে দাও।

রাণী

তুমি ভাবো। আমি রান্নার জোগাড় দেখি। (প্রস্থান)

রফিক

বিদ্রোহ, বিপ্লব, Proletariat revolution ভালো। তবে মাঝে মধ্যে নাকি ফুটপাথ, পার্ক, স্টেশানের প্লাটফরমেও ঘুমিয়ে থাকতে হয়। শালার শহরে আবার যা মশা। অবশ্য চেষ্টা করে দেখা যায়। খুব একটা খারাপ হবে বলে মনে হয় না। আসলে ব্যক্তিগত জীবনে কিন্তু আমি সমাজতন্ত্রের একনিষ্ঠ ভক্ত। চে গুয়েভরা ভুল করেছে, ট্রটস্কি ভুল করেছে। কিন্তু রফিক উদ্দিন বি. এ ভুল করতে পারে না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা যদি কারো থাকে, তবে আমারই আছে।

(জনতার প্রবেশ)

এই যে জনগণ বন্ধুরা, আপনারা দেখছি সবাই এসে পড়েছেন, বসুন। আজকে প্রথমেই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঠিক বিশ্লেষণ। আজকে সমগ্র বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে সাম্রাজ্যবাদ এবং তার দোসররা। অন্যদিকে সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণের বিপ্লবী সংগ্রাম। আপনাদেরকে এখন থেকেই বুর্জোয়া মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ধারণ করতে হবে বিপ্লবী চরিত্র। গ্রহণ করতে হবে সঠিক রণনীতি । বন্ধুরা একবার স্মরণ করো ঐ চিলির আলেন্দের কথা, স্মরণ করো ল্যাটিন আমেরিকার মুক্তি সংগ্রামীদের কথা আজকে তোমাদের শক্তি অর্জন করতে হবে স্যান্ডিনিস্টদের কাছ থেকে। প্রেরণা গ্রহণ করতে হবে মার্কসের কাছ থেকে। আসুন সবাই বিপ্লবের লাল কেতন উড়িয়ে বুর্জোয়া সমাজের ভিত্তি নড়িয়ে দিই। এখনই সময়, আঘাত হানার প্রস্তুতি নিন। মনে রাখবেন, এটাই চূড়ান্ত সময় আপনারা যান, আমি আসছি।

(জনতার প্রস্থান। রফিক ভিতর থেকে একটা ফেস্টুন নিয়ে আসে। ফেস্টুনে লেখা ‘গলা কাটা চলছে, চলবে’। রফিক লেখাটা দেখে সন্তুষ্ট হয় এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে ওটা নিয়ে বেরুতে যায়। নেপথ্যে রাণীর গলা—’এ্যাই খেতে এসো।’)

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

রফিক

(চমকে) এ্যা, খাবো। খেয়েই যাই। (ঘুরে ঘরমুখো এগোয়। আলো নেভে।)

(গণকান্না সভায় রাজবাহাদুর, ঘোষক এবং চার নেতা উপবিষ্ট)

রাজা

নাই, নাই, নাই । তিনি আজ আমাদের মধ্যে নাই। বন্ধু স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ (ফুঁপিয়ে উঠে) ঘোষক, আমি কান্না সংবরণ করতে পারছি না। তুমি কিছু বিশেষণ যোগ করো।

 

এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব
এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব

 

ঘোষক

গরীবের বন্ধু, ইতিহাসের মহান পথ প্রদর্শক, দার্শনিক, কবি, এক মহান আত্মা। চাইলে তিনি কি না হতে পারতেন, রাজা হতে পারতেন কিন্তু সেই ত্যাগী

রাজা

খুব বেশি হয়ে যাচ্ছে গোলমাল। কম করে বলো।

ঘোষক

একজন ভন্ড, প্রতারক, একজন ন্ত্রৈণ।

রাজা

চোপ।

ঘোষক

মহারাজ, বললেন কম করে বলতে।

রাজা

তাই বলে এতো কম করে বলতে বলেছি নাকি ।

ইস্টার্ট কান্না (সকলের কান্না)।

৩য় নেতা

(চিৎকার করে কাঁপে) এমন দেশপ্রেমিকের কি আর জন্ম হবে? আমি যে এতিম হয়ে গেলাম। কে আমাকে আশা দেবে? কে আমাকে ভরসা দেবে। (বিকট শব্দে কেঁদে ৪র্থ নেতাকে জড়িয়ে ধরে )

৪র্থ নেতা

কাঁদে না, সোনা আমার কাঁদে না। কাঁদলেও একটু আস্তে কাঁদো। ওর আত্মা এখানেই আছে। কাঁদছি দেখলে অতৃপ্ত হয়ে ফিরে যাবে। বড়ো ভালো ছিল। আল্লাহ তার নেক বান্দাদের এভাবেই কাছে টেনে নেন। (৩য় নেতা আরও জোরে কাঁদে) ব্যাটা খাচ্চর, দেবো মাথা ফাটিয়ে। কান ঝালাপালা হয়ে গেল। এতো বেশি কান্নার কথা ছিল নাকি। দরদ যেন সব ওর।

নেত্রী

ঝগড়া করো না বাছারা ঝগড়া করো না। শোকের দিনে ঝগড়া করতে নেই। জাতির এই দুর্যোগে গাধা ভাই নেই সত্যি৷ কিন্তু আমি তো আছি। আমার উপর ভরসা রাখো।

২য় নেতা

মুরব্বীগিরি দেখাও। জাতীয় এই দুর্যোগে খালি তুমি আছ, আমরা সবাই ঘাস কাটতে এসেছি। মাইয়া মানুষের সবখানেই খালি ফটফটানি ।

নেত্রী

চোপ।

২য় নেতা

চোপ।

রাজা

চোপ। কি শুরু করেছেন আপনারা। আজকের গণকান্না দিবসের পবিত্রতা রক্ষা করা আপনার আমার সকলের পবিত্র দায়িত্ব। ইস্টার্ট কান্না। (কান্না শুরু হয়) কাঁদবেন না। বন্ধুগণ কাঁদবেন না। আজ সমগ্র দেশবাসী কাঁদছে। আমরা তার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য এ মুহূর্তে কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করবো। গোলমাল ইস্টার্ট।

ঘোষক

এক-আমরা প্রতি বছর এ দিনটি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবো এবং এ দিনটি প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বাঁশ প্রদান হিসেবে উদযাপিত হবে। দুই—তার স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। তিন—যে ঐতিহাসিক বাঁশ হাতে নগর প্রদক্ষিণ করার সময় গাধা ভাই জান্নাতবাসি হয়েছেন, তা ঐতিহ্যের সাথে কেন্দ্রীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে এবং শৌর্য বীর্য প্রমাণের জন্য তা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় প্রদর্শন করা হবে। চার—ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটানোর জন্য অধিক হারে বাঁশ উৎপাদনের ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে। তালি । (সবাই তালি দেয়)

রাজা

এ বছরের জন্য এতটুকু থাকবে। আগামীতে আরও চেষ্টা করবো ইনশা-আল্লাহ। কর্মসূচি আজকের মতো এখানেই শেষ, চলি, খোদা হাফেজ।

(রাজা ও ঘোষকের প্রস্থান। নেতারা সবাই সিংহাসনের কাছে সমবেত হয়।)

২য় নেতা

আহ! কি সুন্দর। কেমন টকটকে লাল। নেশা। ভীষণ নেশা আহ্। যদি একটু বসতে পারতাম? একটু বসি।

৩য় নেতা

না। আমি আগে।

৪র্থ নেতা

আমি আগে।

নেত্রী

আমি আগে।

৪র্থ নেতা

আহ গোলমাল করো না। বসবো, একদিন সবাই বসবো। আজ না হয় কাল। কাল না হয় পরশু বসতেই হবে। রক্তের স্বাদ যখন একবার পেয়েছি, তখন বসতেই হবে। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাক । সভ্যতা নিপাত যাক। আপত্তি নেই। কিন্তু সিংহাসন আমাদের চাই।

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

নেত্রী

আমি বলি কি, এরকম সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। চলো সবাই অল্প অল্প করে বসি। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ করা কি ভালো? কি বলো ।

২য় নেতা

তাই ভালো। এসো সবাই বসি ।

নেতারা

(আস্তে আস্তে সবাই সিংহাসনের দিকে এগিয়ে যায়। রাজা, ঘোষক এবং রফিকের প্রবেশ।)

 

google news logo

 

নেতারা

এক দুই তিন চার পাঁচ ছয়, এবার আমার হলো জয়-

রাজা

সাট আপ অল ব্ল্যাক ক্রিমিনাল ।

ঘোষক

স্যার এ যে দেখছি রীতিমত ক্যু।

রাজা

শেষ পর্যন্ত ক্যু করে ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত। ছিঃ ছিঃ ছিঃ!

২য় নেতা

মহামান্য রাজবাহাদুর, আমরা ঠিক-

রাজা

যাক, শাক দিয়ে মাছ ঢাকবার চেষ্টা করে লাভ নেই। রাতের অন্ধকারে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র।

ঘোষক

শুধু প্রাসাদ ষড়যন্ত্র নয় স্যার। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি বৈধ সরকার উৎখাতের জঘন্য প্রচেষ্টা।

রাজা

ঘোষক। সব চক্রান্তকারীদের রাজ কারাগারে প্রেরণের ব্যবস্থা করো।

ঘোষক

আসুন। প্রাসাদ রক্ষীরা আপনাদের অভ্যর্থনার জন্য দাঁড়িয়ে আছে।

নেতারা

স্যার।

রাজা

যান। অন্ধ প্রকোষ্ঠে বসে বসে স্মৃতি রোমন্থন করুন ।

(ঘোষকসহ নেতাদের প্রস্থান। একটু পরে ঘোষক ফিরে আসে।)

রাজা

সত্যিই রফিক উদ্দিন বি. এ. সাহেব আপনার তুলনা হয় না। আপনার সাহায্য না পেলে আজকে আমি হয়ে যেতাম নির্বাসিত দেশদ্রোহী। আমার ভাবতেও অবাক লাগছে প্রগতি শিবিরের একজন রাজনীতিবিদ হয়েও আপনি আমার সাহায্যে এগিয়ে আসলেন।

রফিক

কি যে বলেন স্যার । আরে ওসব প্রগতি মগতি আমি বুঝি না। আমি বুঝি উপরে ওঠার প্রশস্ত পথ। যার জন্য পৃথিবীর যে কোন শ্রেষ্ঠ মতবাদকে আমি সের মাপা দরে বিক্রি করতে এতটুকু দ্বিধা করি না। স্যার, আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন?

রাজা

অবশ্যই।

রফিক

তবে স্যার আমার একটা আবেদন আছে।

রাজা

বলুন।

রফিক

আমার কাজের পুরস্কার স্বরূপ গোলমাল আলি খানের পদে আমি অভিষিক্ত হতে চাই।

ঘোষক

এ্যা, অসম্ভব।

রফিক

আমি কথা বলছি রাজবাহাদুরের সাথে।

রাজা

রফিকউদ্দীন বি. এ.. তা সত্যিই অসম্ভব।

রফিক

অসম্ভব!

রাজা

হ্যাঁ। কারণ এ পদে অভিষিক্ত হওয়ার পেছনে রয়েছে ওর পিতৃপুরুষ থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রচণ্ড বিশ্বাসের সঞ্চয়। যা আপনার নেই।

রফিক

এতো বড় একটা কাজের পরেও নেই।

রাজা

হ্যাঁ, নেই । রফিক সাহেব, আপনার উপরে ওঠার পথকে প্রশস্ত করার জন্য আপনি আমার সাথে হাত মিলিয়েছেন। কাল যে আমার সর্বনাশ করবেন না, তার নিশ্চয়তা দেবে কে?

রফিক

স্যার, আপনি বলতে পারলেন একথা?

রাজা

আমি সব পারি। যখন এই রক্তিম সিংহাসন তার আদিম গন্ধ…..

(জনতার প্রবেশ)

১ম জন

না। উঠিয়ে নাও ঐ নোংরা হাত সিংহাসন থেকে, ভন্ড প্রতারক। আর কতকাল নিজেকে লুকিয়ে রাখবে ওই মুখোশের নিচে। তোমাদের মুখোশ টেনে ছিড়ে ফেলবো আমরা।

রাজা

আপনারা? কারা?

১ম জন

জনগণ।

রাজা

জনগণ? হাঃ হাঃ জনগণ, ওরা জনগণ হাঃ হাঃ জনগণ, আন্দোলন, হাঃ হাঃ হাঃ (জনগণ ভীতচিত্তে রাজদরবার ছেড়ে চলে যায়। যুদ্ধের সঙ্গীত বেজে উঠে। নেতারা আবছা আলো আঁধারি পরিবেশে সিংহাসন নিয়ে লড়াই শুরু করে। এক একবার একেকজন বসে। বিভিন্ন জনের ওপর বিভিন্ন রংয়ের আলো পড়ে। এক পর্যায়ে রাজবাহাদুর ঘোষকের কানে কানে কিছু বলে। স্বাভাবিক আলোতে ঘোষক চিৎকার করে উঠে।)

[এলেকশান ক্যারিকেচার ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]

ঘোষক

এলেকশান এলেকশান
কামড়া-কামড়ির অবসান
আবার হবে এলেকশান।

[নেতারা সবাই এলেকশান শব্দে মেতে উঠে। জনগণ প্রবেশ করে একদিকে এগোতে থাকে। নেতারা অন্যদিকে এগিয়ে যেতে থাকে।]

জনগণ

ভাতের দাবি নির্বাসন।

নেতারা

আবার হবে এলেকশান।

জনগণ

পেটে নেই ভাত শুনি ভাষণ।

নেতারা

হবেই হবে এলেকশান।

জনগণ

আমরা পালাই সুন্দরবন।

নেতারা

তবুও হবে এলেকশান ।

(১ম জন এগিয়ে যায়)

১ম জন

সুধীজনরা, দেখলেন তো, কেমন ধারায় চলছে খেলা। এ খেলা চলছে হাটে, এ খেলা চলছে মাঠে, এ খেলার দাম দিতে ভাই আমাদের রক্ত ফাটে। তবে আমরা জনগণের বাচ্চারা, অন্তত কিছু সময়ের জন্য পরিচিত মুখগুলোকে ধ্বংস করে মঞ্চে বিপ্লব ঘটাতে পারতাম। কিন্তু এতেই কি সমস্যার সমাধান হবে? ৪৭ থেকে ৮০ পর্যন্ত আমরা বহু ক্ষমতার রদবদল প্রত্যক্ষ করেছি। ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ায় এক শোষকের পতনের সাথে সাথে তার স্থান দখল করে নিয়েছে অন্য শোষক। দুর্ভাগ্য, পরিবর্তন হয় নি আমাদের ভাগ্যের। আপনাদের কাছে একটিই প্রশ্ন—এভাবেই কি সব চলতে থাকবে? যুক্তির একমাত্র বিকল্প পথরূপে বর্তমান সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে নতুন সমাজ গড়ার প্রক্রিয়ায় আমরা কি কোনো ভূমিকাই রাখবো না?

সবাই

ভাঙতে গেলেই লড়তে হবে, ভেঙেই তবে গড়তে হবে।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment