নাট্যজন জামালউদ্দিন হোসেনের জন্মদিনে অভিনয় গুরুকুলের শ্রদ্ধার্ঘ্য

বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র, মঞ্চ ও টেলিভিশনের অগ্রগামী অভিনেতা, পরিচালক এবং সংগঠক জামালউদ্দিন হোসেন ২০২৪ সালের ১১ অক্টোবর কানাডার ক্যালগেরির রকভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১০ অক্টোবর। আজ, তাঁর জন্মদিনে অভিনয় গুরুকুল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে এক মহান নাট্যসাধককে—যিনি সারাজীবন নাটক ও অভিনয়কলার বিকাশে নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন।

চট্টগ্রাম কলেজ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ শিক্ষালাভের সময় থেকেই তাঁর মন ছিল শিল্প ও অভিনয়ের প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী। সহপাঠী ছিলেন বিখ্যাত অভিনেতা আবুল হায়াৎ। প্রকৌশলের ছাত্র হয়েও নাট্যমঞ্চের আলো-ছায়াই হয়ে উঠেছিল তাঁর জীবনের পথচিহ্ন।

১৯৭৫ সালে তিনি যোগ দেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে, যা বাংলাদেশের আধুনিক নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথপ্রদর্শক সংগঠন। সেখানে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে তিনি হয়ে ওঠেন নাট্যচর্চার এক প্রতীকী মুখ। ১৯৯৭ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন নাগরিক নাট্যাঙ্গন এনসেম্বল, যার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি আজীবন দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ছিলেন বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বেতার টেলিভিশন শিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক।

তাঁর নির্দেশিত ও অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটকের মধ্যে রয়েছে— ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘চাঁদ বনিকের পালা’, ‘আমি নই’, ‘বিবিসাহেব’ ও ‘জুগলবন্দী’। এসব নাটক শুধু দর্শককে মুগ্ধ করেনি, বরং বাংলাদেশের নাট্যজগতে নতুন চিন্তার ধারা এনেছিল।

২০১৩ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক লাভ করেন নাট্যকলায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে—একজন সৃষ্টিশীল শিল্পীর আজীবন সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ১৯৭৫ সালে সহশিল্পী ও অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের একমাত্র সন্তান তাফসিন হোসেন তপু বর্তমানে কানাডার ক্যালগেরির মাউন্ট রয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির সহযোগী অধ্যাপক।

জামালউদ্দিন হোসেন ছিলেন এমন একজন নাট্যজন, যিনি অভিনয়, নির্দেশনা ও নাট্যচিন্তায় এক অনন্য ভারসাম্য সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল—নাটক কেবল বিনোদনের জন্য নয়, বরং সমাজ পরিবর্তনের এক শক্তিশালী মাধ্যম। তাঁর প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি মঞ্চনাটক ছিল সেই বিশ্বাসের জীবন্ত প্রকাশ।

আজ, তাঁর জন্মদিনে অভিনয় গুরুকুল গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে এই প্রবাদপ্রতিম শিল্পীকে। তাঁর কর্ম, তাঁর দর্শন, তাঁর আবেগ ও দায়বদ্ধতা আগামী প্রজন্মের অভিনেতা ও নাট্যকর্মীদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে যুগের পর যুগ।