শম্ভু মিত্রের জন্মদিন আজ। ভারতীয় নাট্যজগতের এক কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব শম্ভু মিত্রের জন্মদিনে শম্ভু মিত্রকে স্মরণ করেছেন অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। অনেকে জানিয়েছেন তার সাথে সৃতির কথা। কৃতজ্ঞতা স্বীকার সিনেমা কথকতা,চণ্ডী মুখোপাধ্যায় থেকে উদ্ধৃত করা হল :
শম্ভু মিত্রের জন্মদিন আজ
শম্ভু মিত্র চিত্রনাট্য নিয়ে এসেছেন বোম্বেতে৷ রাজকাপুর তাঁকে ডেকে পাঠালেন,সেই চিত্রনাট্য শোনা হল আর কে স্টুডিয়োয়৷ রাজকাপুর,নার্গিস দুজনেই শুনলেন৷ রাজকাপুর কিছু বলার আগে নার্গিস, শম্ভু মিত্রকে বললেন ‘চোর’ছবির চিত্রনাট্য তিনি রেখে যান,ওই ছবি তারা প্রযোজনা করবেন৷
বারো হাজার টাকার চেক দেওয়া হল শম্ভু মিত্রকে৷
কিন্তু ছবিটি কে পরিচালনা করবেন? রাজকাপুরের কাছে এই প্রশ্ন করতে তিনি শম্ভু মিত্রকে ছবি পরিচালনা করার অনুরোধ করলেন৷ শম্ভু মিত্র রাজি হয়ে বললেন অমিত মৈত্র ও তিনি দুজনে মিলে ছবি পরিচালনা করবেন৷ ডাবল ভার্সান ছবি,হিন্দি অনুবাদ করা হল,রাজকাপুর নায়ক৷ হিন্দিতে ছবির নাম ‘জাগতে রহো’,বাংলায় ছবির নাম ‘একদিন রাত্রে’৷ সঙ্গীত পরিচালক সলিল চৌধুরী৷ কলকাতায় ১৯৫৬সালে ২৪আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল ‘একদিন রাত্রে’,একই সময় বোম্বেতে মুক্তি পেল ‘জাগতে রহো’৷
দুই বন্ধু অর্থাৎ বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্র ও তাঁর বন্ধু অমিত মৈত্র বুঝতে পেরেছিলেন
প্রযোজকের মনের মত চিত্রনাট্য লেখার দরকার আছে, না হলে ছবি তৈরি হবে না,কোনও প্রযোজক অর্থ বিনিয়োগ করবেন না৷ ছবির থিম খুঁজে পেলেন সমাজে অনেক সময় ভাল মানুষদের কপালে চোরের লেবেল এঁটে তাকে অপরাধী প্রতিপন্ন করা হয় সেটা হবে ছবির থিম৷ বেশ মনে ধরে গেল এক প্রযোজকের,ব্যাস শুধুমাত্র তেলেভাজা খেয়ে তারা ২৪ঘন্টায় লিখে ফেললেন ছবির চিত্রনাট্য,ছবির নাম দিয়েছিলেন ‘চোর’৷
গিরিশচন্দ্র ঘোষের পর বাংলা নাটকে সর্বাধিনায়ক অনেকে শম্ভু মিত্রকে বলেন! কাকতলীয় হলেও সত্যি নাট্যজগতের প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্রের নাটকের সঙ্গে পেশাদার সূত্র তৈরি হওয়ার আগে চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল,বিষয়টি কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং তিনি দাঁড়িয়েছিলেন মুভি ক্যামেরার সামনে,সেটাই তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়,ছবিটি একটি ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত তথ্যচিত্র নাম ‘এ নাইমিং থিং ব্রিংস ডেথ’৷
শম্ভু মিত্র একাধারে অভিনেতা, নাট্যপরিচালক, নাট্যকার, নাট্য প্রযোজক এবং নাট্য সংগঠক।গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ করে স্বাধীন ও মুক্তচিন্তা সমৃদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে নিজের নাট্যদল ‘বহুরূপী’ গড়ে তোলেন। বাংলা নাট্যজগতে এই ‘বহুরূপী’কে কেন্দ্র করেই নতুন ধারার নাট্য আন্দোলন গড়ে ওঠে৷
থিয়েটারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতায় শম্ভু মিত্র সিনেমার সাথে হয়ত গভীর ভাবে জড়িয়ে পড়েন নি,জড়ালে হয়ত আমরা শম্ভু মিত্রের অন্য প্রতিভার পরিচয় আরও ভালভাবেই পেতাম৷ যাই হোক শম্ভু মিত্র ও অমিত মৈত্রের মধ্যে গভীর সখ্য তৈরি হয়েছিল ‘পথিক’ছবির সুত্র ধরে৷
পঞ্চাশের দশকর প্রথম দিকে বাংলা বানিজ্যিক ছবির স্বর্ণযুগ সবে শুরু হওয়ার মত আবহ তৈরি হয়েছে,প্রমথেশ বড়ুয়া জীবন সায়াহ্নে,উত্তমকুমার যুগ প্রায় শুরু হতে চলেছে৷দুই বন্ধুর মনে তখন ইচ্ছা নিজেরা ছবি তৈরি করবেন৷চিত্রনাট্য লিখে ফেললেন,ছবির নাম ঠিক করেছিলেন ‘রঞ্জিত’৷ না কোনও প্রযোজক সেই চিত্রনাট্য নিতে রাজি হলেন না৷ দুই বন্ধু মনে-মনে গভীর কষ্ট পেলেও ছবি করার স্বপ্ন হারাতে তখন রাজি নন৷
একটি বিষয় খুব পরিস্কার পঞ্চাশের দশকে নাটকের সঙ্গে সিনেমার প্রতি বেশ আকর্ষণ অনুভব করেছিলেন শম্ভু মিত্র,তিনি অমিত মৈত্র ও আরও কয়েকজন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিলেন ‘চলচ্চিত্র প্রয়াস সংস্থা’৷এই সংস্থার দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন শম্ভু মিত্র, ছবি দুটির নাম ‘কাঞ্চনরঙ্গ’,ও ‘মানিক’৷ ১৯৬৭সালে অমিত মৈত্র পরিচালিত ‘পান্না’ ছবিতে অভিনয় করেছেন,এরপরে আবার অভিনয় ভূপেন রায়ের ‘নিশাচর’ ও বিমল রায়ের ‘বিজ্ঞান ও বিধাতা’ ছবিতে৷
আমাদের অনেকের অজানা নয় পরিচালক রাজা সেনকে জীবন সায়াহ্নে এসে শম্ভু মিত্র দিয়েছিলেন দুর্লোভ সুযোগ,স্বোপার্জিত নির্বাসন ভেঙে রাজা সেনকে তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন তাকে নিয়ে ছবি তোলার,তাঁর ক্যামেরার সামনে মুখোমুখি হয়েছিলেন৷
শম্ভু মিত্র সম্পর্কে অনবদ্য একটি তথ্য হল তিনি থিয়েটারে জড়িয়ে পড়ার অনেক আগে দাঁড়িয়েছিলেন মুভি ক্যামেরার সামনে,সেটাই তাঁর প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়,ছবিটি একটি ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত তথ্যচিত্র নাম ‘এ নাইমিং থিং ব্রিংস ডেথ’৷আর সেই কারণে বলা যায় কাকতলীয় হলেও সত্যি নাট্যজগতের প্রবাদপ্রতিম শম্ভু মিত্রের নাটকের সঙ্গে পেশাদার সূত্র তৈরি হওয়ার আগে চলচ্চিত্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল,বিষয়টি কিন্তু আর যাই হোক বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হতে পারে সবার কাছে৷আজ শম্ভু মিত্রের জন্মদিবস আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী৷
কলমে—অরুণাভ সেন
ভালবাসি বাংলা
#নাট্যকারশম্ভুমিত্র
#বাংলানাটক
#বহুরূপী
#চলচ্চিত্রএকদিনরাত্রে
#রাজকাপুর
#নার্গিস
আরও পড়ুন: