আজ অভিনেত্রী শীলা আহমেদের জন্মদিন : জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮২

আজ বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শীলা আহমেদ-এর জন্মদিন। তিনি কেবল একজন প্রতিভাবান শিল্পী নন, বরং বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের একটি পরিচিত নাম—কারণ তিনি প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও লেখিকা গুলতেকিন খান এর কন্যা।

 

শীলা আহমেদ

 

প্রাথমিক জীবন ও পরিবার

বিষয়তথ্য
পূর্ণ নামশীলা আহমেদ
জন্ম৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮২, ঢাকা, বাংলাদেশ
পিতাহুমায়ূন আহমেদ (কথাসাহিত্যিক)
মাতাগুলতেকিন খান (লেখক)
ভাইবোন৩ জন: বিপাশা আহমেদ, নোভা আহমেদ, নুহাশ হুমায়ূন
চাচাড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আহসান হাবীব
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানহলিক্রস গার্লস কলেজ

ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি তার ঝোঁক ছিল, এবং খুব অল্প বয়সেই তিনি টেলিভিশন নাটকে কাজ শুরু করেন।

 

অভিনেত্রী শীলা আহমেদ

 

অভিনয় জীবন

শীলা আহমেদ শিশুশিল্পী হিসেবে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন বহুব্রীহি’ নাটকের মাধ্যমে। এরপর তিনি একে একে বেশ কিছু জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করেন—

জনপ্রিয় নাটক:

  • কোথাও কেউ নেই (১৯৯০) – মিমির ছোট বোন চরিত্রে
  • হিমু (১৯৯৪)
  • ওইজা বোর্ড (১৯৯৫) – বিপাশা হায়াতের সঙ্গে
  • আজ রবিবার (১৯৯৮) – ‘কংকা’ চরিত্রে (সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র)

চলচ্চিত্র:

  • আগুনের পরশমণি (১৯৯৪, পরিচালনায়: হুমায়ূন আহমেদ)
    এখানে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

এটাই তার একমাত্র চলচ্চিত্র হলেও, তিনি সেই একটি কাজেই প্রমাণ করেন যে তিনি একজন পরিপূর্ণ অভিনেত্রী।

 

Google News আজ অভিনেত্রী শীলা আহমেদের জন্মদিন : জন্ম: ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৮২
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

পুরস্কার

বছরপুরস্কারবিভাগচলচ্চিত্র
১৯৯৪জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারশ্রেষ্ঠ শিশু শিল্পীআগুনের পরশমণি

 

 

অভিনেত্রী শীলা আহমেদ
অভিনেত্রী শীলা আহমেদ

 

ব্যক্তিগত জীবন

বিষয়তথ্য
বর্তমান স্বামীড. আসিফ নজরুল (আইন বিভাগের অধ্যাপক ও লেখক)
বিয়ের সময়ডিসেম্বর ২০১৩
সন্তানের সংখ্যাতিন (প্রথম সংসারে দুটি, দ্বিতীয় সংসারে একটি কন্যা)
প্রথম বিয়েনাম অপ্রকাশিত
দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম৭ মে ২০১৫
আসিফ নজরুলের প্রাক্তন স্ত্রীরোকেয়া প্রাচী (অভিনেত্রী)

 

সংক্ষিপ্ত তথ্য টেবিল

বিষয়তথ্য
ডাক নামতথ্য জানা নেই
জাতীয়তাবাংলাদেশী
ধর্মইসলাম
পেশাঅভিনেত্রী
সক্রিয়তার সময়কাল১৯৮৮–১৯৯৮ (মূলত শৈশবে ও কিশোর বয়সে)
সর্বশেষ জনপ্রিয় নাটকআজ রবিবার (১৯৯৮)
শিক্ষাগত যোগ্যতাকলেজ পর্যায় পর্যন্ত (হলিক্রস গার্লস কলেজ)

 

শীলা আহমেদ ছিলেন ৯০ দশকের অন্যতম জনপ্রিয় শিশুশিল্পী এবং তরুণ অভিনেত্রী। তিনি ছোট পর্দা বড় পর্দাদুটিতেই নিজের অভিনয় দক্ষতা দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন সাহিত্যপ্রেমী পরিবারের সন্তান হওয়ায় শৈল্পিক পরিবেশে বড় হয়েছেন। আজ তাঁর জন্মদিনে আমরা তাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করি।

 

অভিনেত্রী শীলা আহমেদ

 

বাবা হ‌ুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে শীলা:

হ‌ুমায়ূন আহমেদের লেখার পদ্ধতিটি কেমন ছিল? জনপ্রিয় এ কথাসাহিত্যিকের মেয়ে শীলা আহমেদ। তিনি বলেন –

আমাদের ভাইবোনদের ভেতরে বাবা আমাকে খুব বেশি আদর করতেন। আমি ছিলাম সবচেয়ে দুষ্টু আর অবাধ্য। বাবা তাই হয়তো আমাকে বেশি আদর করতেন। বিদেশ থেকে আমার জন্য কোনো না কোনো স্পেশাল গিফট আনতেন, তাঁর অন্য সন্তানেরা এতে দুঃখ পাবে কি না, এটাও ভাবতেন না।

বাবা কোনো লেখা শেষ করার পর মাসহ আমাদের তিন বোনকে তা পড়তে হতো। এটা ছিল আমাদের বাড়ির নিয়ম। লেখালেখির সমালোচনা শুনলে তিনি অবশ্য রেগে যেতেন। তবে মুখে যা-ই বলতেন না কেন, আমাদের কথা শুনে তিনি অনেক সময় তাঁর লেখার ছোটখাটো কিছু দিক বদলাতেন। প্রয়োজনে সেটা নতুন করে সাজিয়ে লিখতেন।

 

অভিনেত্রী শীলা আহমেদ
অভিনেত্রী শীলা আহমেদ

 

আমরা তো জ্ঞানী-গুণী মানুষ ছিলাম না। ছিলাম স্কুলে পড়া বাচ্চা মেয়ে—সাধারণ পাঠক। এমন সাধারণ পাঠকের কাছে লেখাটা কেমন লাগে, বাবা সেটাই বুঝতে চাইতেন। লেখা হয়ে গেলেই আমাদের সেটা পড়তে দিতেন, আর আমাদের সামনে গম্ভীর মুখে পায়চারি করতেন। বারবার তাকাতেন আমাদের মুখের দিকে, পড়ে কেমন লাগছে, তা বোঝার চেষ্টা করতেন। যেমন লেখাটা যদি দুঃখের হয়, তবে সেটা পড়ে আমরা কাঁদছি কি না, তা খেয়াল করতেন। ধরেন, কোনো দুঃখের কাহিনি পড়লাম, পড়ার পর চোখে পানি এল না। তখন তিনি খুব রেগে যেতেন—দুঃখের কাহিনি পড়ার পরও আমার চোখে পানি আসছে না কেন? যেন আমি একটা বড় অপরাধ করে ফেলেছি!

লেখার আগে পায়চারি করতে করতে চিন্তা করতেন। প্রচুর সিগারেট খেতেন। লেখার মাঝখানে উঠে হাঁটতেন। আর পাঁচ মিনিট পর পর চা চাইতেন। লেখা যখন শুরু করতেন, একমনে গড় গড় করে লিখে যেতেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি নীরব বাসায় লিখতে পারতেন না। ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা, চিৎকার–চেঁচামেচি—এসবের মধ্যে তিনি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।

 

শীলা আহমেদ

 

অনেক সময় সারা রাত জেগে একটা পুরো উপন্যাস লিখে ফেলতেন। লেখা শেষ হলে, সেটা কখনোই আর পড়তেন না। আমাদের পড়তে দিতেন।

শুনেছি, আগে যে সময় তাঁর লেখা আটকে যেত, প্রচণ্ড রেগে থাকতেন, যাকেই সামনে পেতেন, তাকেই ধমকাতেন। কিন্তু আমি নিজে তাঁকে আটকে যেতে দেখিনি, তবে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ লেখার সময় দেখেছি তিনি অনেক দিন চেষ্টা করেও শুরু করতে পারছিলেন না। কিন্তু শুরু করার পর একটানে লিখে গেছেন।

তিনি প্রচুর কবিতা পড়তেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল আর জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়তেন। কতশত কবিতা যে মুখস্থ বলতে পারতেন! তাঁর আবৃত্তি খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু তাঁর খুব শখ ছিল কবিতা আবৃত্তির। আমাদের দিয়ে নিজের কবিতা আবৃত্তি রেকর্ড করাতেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা আবৃত্তি করার সময় নজরুলের মতো করে সাজতেন। আমি আর আমার ছোট বোন বিপাশা তাঁকে সাজাতাম।

Leave a Comment