ইঙ্গিত নাটকটি নাট্যকার এস এম সোলায়মানের একটি বিখ্যাত নাটক। এই নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ৫ এপ্রিল ১৯৮৪। শেখ মোহাম্মদ সোলায়মান বা এস এম সোলায়মান একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনা করতেন এবং তাতে সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের জগতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।
ইঙ্গিত নাটক নাটক : ১ম পর্ব
প্রযোজক দল : ঢাকা পদাতিক
প্রদর্শনীর স্থান : মহিলা সমিতি মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : আশীয় খন্দকার
ছাত্র : নাদের চৌধুরী, জন মার্টিন, রোকেয়া রফিক বেবী, শিউলী, আখতার, মিজান
শিক্ষাক : এস এম সোলায়মান
আগন্তুক : মজনু
মূর্তি : এস এম সোলায়মান, মাহবুবুর রহমান টনি, জন মার্টিন
নেতা : আখতার, মামুন মোস্তফা
পুরুষ : শাহীন
মহিলা : রোকেয়া রফিক বেবী
মেয়ে : মৌসুমী
সংস্থাপন সচিত্র : তুহিন
এসিসট্যান্ট : মাহবুবুর রহমান টনি
বন সচিব : এস এম সোলায়মান
চাপা পড়া লোক : মোস্তফা
ত্রাণ পুনর্বাসন সচিব : মামুন
বদনা : রোকেয়া রফিক বেবী
বল্টু : জন মার্টিন
দুস্যুরানী : এস এম সোলায়মান
চদুমন্ত্রী : শাহীন
সেনাপতি : নাদের চৌধুরী
নাজির : মোস্তফা
প্রহরী : আখতার
বুভুক্ষু : মামুন, জহির, মওলা
হাওয়া বিবি : রোকেয়া রফিক বেবী
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এ এস এম সোলায়মান
মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা : জামিল আহমেদ
আলোক নিয়ন্ত্রক : কামরুল হাসান স্বপন
সামগ্রী : মোস্তফা
গীত ও সুর : এস এম সোলায়মান
সঙ্গীত : মাসুম আজিজ
মঞ্চ অধিকর্তা : নাদের চৌধুরী
পোস্টার অঙ্কন : অশোক তরু কর্মকার

ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব
কোরাস
জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো
এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো।
নেপথ্যে
ঐ গেলি।
কোরাস
জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে হবে হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ এক সাথে
মিলেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।
নেপথ্যে
ঐ গেলি না পুলিশ ডাকুম ।
কোরাস
প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ
নেপথ্যে
(Commanding voice) হল্ট।
১ম পক্ষ
আমরা বাঙালি বুকে মোদের বাজে ঐকতান
২য় পক্ষ
না না বাংলাদেশী আমরা গাই জীবনের গান।
১ম পক্ষ
বাঙালি-
২য় পক্ষ
বাংলাদেশী-
১ম পক্ষ
চোপ। আমরা বাঙালি-
২য় পক্ষ
চোপ’ আমরা বাংলাদেশী-
সবাই
এবার মারামারি কাটাকাটির কর অবসান
নামে কিবা আসে যায় কাজেতে প্রমাণ
আমরা কাজের মাঝে ডুবে গিয়ে ভুলি নিজের নাম
মোদের পিতার নাম সাহেবজাদা ইয়াহিয়া খান
চল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে গাই জীবনের গান ।
১ম পক্ষ
হেই— যৌবনে মোর আগুন জ্বলে
২য় পক্ষ
চোপ- রূপে আমার আগুন জ্বলে
৩য় পক্ষ
না না-পেটে আমার আগুন জ্বলে।
৪র্থ পক্ষ
ধানের খেতে আগুন জ্বলে
৫ম পক্ষ
পাটের গুদামে আগুন জ্বলে
৬ষ্ঠ পক্ষ
মনে আমার আগুন জ্বলে
নেপথ্যে
Shut up Unity and simplicity জীবনের গান। যৌবনের গান।
কোৱাস
হই হই । Simplicity-র আগুন জ্বলে
Unity-র অঙ্গে
যে যা পার লুটে পুটে খাও
সোনার বাংলার যত সোনা।
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
সূত্রধর
এই চুপ। (দর্শকদের) মাফ করবেন। immatured ছেলে-পেলে। মাথায় বুদ্ধি সুদ্ধি থাকলে কি কেউ এভাবে বলে? তা ওদেরই বা দোষ দেই কেমন করে। চিন্তা করে দেখুন। সেই ১৯৭১ সাল থেকে আজকে ১৯৮৪ সাল। এতগুলো বছর পার হয়ে গেল, অথচ আমাদের Nationality-কি, তাই এখনো নির্ধারিত হলো না। কেউ বলে বাঙালি, কেউবা বলে বাংলাদেশী। তবে আশ্বাসের কথা—বিতর এখনো চলছে । যাক সেসব। আমার নাম থাক।
পেশা? তা ভাই পূর্বে বহুবিধ পেশায় নিয়োজিত ছিলাম । যেমন ধরুন পাটের দালালি, তমুক নেতার দালালি, সরকারের দালালি, বেশ্যা মাগির দালালি । থুকু। মাফ করবেন। জোসের ঠেলায় মাঝে মাঝে মধুর কামদীপ্ত শব্দগুলো মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়। Slip of tongue আরে মশাই, যে দেশে ঠ্যাং দুটোই অনবরত slip করছে সেখানে জিহ্বা ব্যালেন্স করবো কিভাবে? আবার ব্যালেন্স না করলেও বিপদ। আকার-ইঙ্গিতেই সাত বছর ।
জিহ্বা বের করলে তো কথাই নেই। যাবজ্জীবনের জন্য পাইন মেরে ছেড়ে দেবে। আসল প্রসঙ্গেই আসি। সাম্প্রতিককালে পত্র-পত্রিকার পাতা উল্টোলেই দেখে থাকবেন, আজকের দিনটি কেমন যাবে। দেশের প্রধান প্রধান সাপ্তাহিকগুলো নির্ভুল রাশিচক্র গণনা করে বিশেষ সংখ্যা-টংখ্যাও বের করে । অমুক সাল কেমন যাবে । কিছু করে-টরে খাওয়া আর কি । দোষ কি? সবাই তো ওইরকম করে-টরেই খাচ্ছে। মহৎ হতে গেলে বড়সড় কিছু করতে হয়।
তাই চিন্তা করে দেখলাম গুনতে হলে আগামী দশকই গুনবো। ১৯৯৪ সালে কেমন যাবে। প্রথম ধরুন শিক্ষা এবং শিক্ষা ব্যবস্থা। প্রথমেই শিক্ষা। কারণ শিক্ষাই জাতির শিরদণ্ড। অভিজ্ঞ গণকরা ভবিষ্যতের সাথে বর্তমানটাও জুড়ে দেয়। আমি বর্তমান নিয়েই শুরু করলাম যাত্রা। আমাদের শিশুর প্রাথমিক বিদ্যাপীঠ হচ্ছে তার পরিবার এবং পরিবেশ। দেখা যাক সেখানে তারা কি শিখছে। (সমস্ত পরিবেশটা বিদ্যাপীঠে রূপ নিয়েছে। শিক্ষক আসার পূর্ব মুহূর্তে।)

১ম ছাত্র
জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য মায়া বড়ি
আহা মায়া নিৰ্ভয়ে খেতে পারি
এই মায়া বড়ি খেলে
রবে স্বাস্থ্য ভালো সবার।
২য় ছাত্র
ও ছেরি তোর জাম্বুরা গাছে
পাইকাছে ফল কে খাবে
মইরা গেলে পাকা ফল তোর
শিয়াল কুকুর ঠোকরাবে
৩য় ছাত্র
হাঁটু জলে নামি কন্যা হাঁটু মাজন করে
উরু ভূঁইয়া গাংগের পানি ঝরঝরাইয়া পরে।
৪র্থ ছাত্র
আমার মানিকরে
হাহ হা।
রসের নাগর রে
উহ হু
আরো দেবো রে
হু হু হু
হাহ হা।
(শিক্ষক ঢোকে)
শিক্ষক
ঐ ঐ বান্দররা পড়াশোনার নামগন্ধ নেই, সঙ্গীতচর্চা করা হচ্ছে হাহ হা, হুহ হু। এরে কয় সঙ্গীত। (বেদম পেটাতে থাকে)
সূত্রধর
আপনার কচি শিশুর হাতে ‘চরিত্রহীন’ কিংবা ‘খেলারাম খেলে যা’ জাতীয় উপন্যাস দেখলে তেলে-বেগুনে জ্বলে বইখানি কেড়ে নেবেন চাই কি দু’চারটা চড়-থাপ্পড়ও দিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু আপনার একান্ত পারিবারিক পরিবেশে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কল্যাণে যদি সেই শিশু কুরকুরি লাগানো দৃশ্যকল্প সহযোগে ‘হাঁটু জলে হাঁটু মাজন করা কন্যা’কে অবলোকন করে, কি করবেন? মায়া বড়ি আর জাম্বুরা গাছের ছেরি, এই দুটো না হয় বাদই দিলাম- না পারবেন টেলিভিশন বন্ধ করতে, না পারবেন বাচ্চাকে ধমক দিয়ে বের করে দিতে খুব বিব্রতকর ব্যাপার-স্যাপার তাই না? দেখা যাক বিদ্যালয়ের শুরুটা।
শিক্ষক
মুখস্থ হয়েছে?
কোরাস
জি স্যার।
শিক্ষক
বল দেখি।
কোরাস
ঐ বুড়া কই যাও? নাতিন বাড়ি ।
মুখে কি? সাদা দাড়ি
লেখাপড়া করে যে
গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে।
অসাধু ব্যক্তির সংশ্রব ত্যাগ কর
শিক্ষক
বল তো অসাধু ব্যক্তি কাহাকে বলে?
১ম ছাত্র
যিনি সাধু নহেন, তাহাকে অসাধু বলে
শিক্ষক
সাধু নহেন কাহারা?
২য় ছাত্র
যাহারা মিথ্যা কথা বলে, মানুষ ঠকায় এবং জিনিসপত্রের ভেজাল দেয় তাহারা সাধু নহে।
শিক্ষক
ঠিক আছে। পড়ে যাও।
কোরাস
কপোল ভিজিয়া গ্যাল নয়নের জলে
স্যার। কপোল মানে?
শিক্ষক
কপোল মানে হচ্ছে গিয়ে-ইয়ে কপাল। আর নয়ন মানে চোখ।
কোরাস
কপোল মানে কপাল। নয়ন মানে চোখ
কপোল ডিজিয়া গেল নয়নের জলে।
শিক্ষক
গোঁজামিল দিলাম না তো আবার?
কোরাস
কপোল ভিজিয়া গ্যাল নয়নের জলে
কপোল মানে কপাল নয়ন মানে চোখ
১ম ছাত্র
স্যার। চোখ তো নিচে, কপাল উপরে, তাইলে নয়নের জলে কপাল ভিজবে কি করে?
শিক্ষক
কি করে? তাই তো। নয়নের জলে কপাল ভিজে কি করে। শালার আগাগোড়াই ভেজাল। ওহ হো । ঐখানে একটা লাইন বাদ পড়ে গ্যাছে। কপোল মানে কপাল। কপাল ভিজিয়া গ্যাল নয়নের জলে। দুই ঠেং বান্ধা ছিল তমালের ডালে। এইবার বল। একসের দুধের দাম পাঁচ টাকা। একজন গোয়ালা একসের দুধের সহিত তিনসের পানি মিশাইয়া বিক্রয় করিলে মোট কত টাকা লাভ করিবে?
৩য় ছাত্র
বিশ টাকা
৪র্থ ছাত্র
স্যার, ভেজালে এতো টাকা লাভ?
শিক্ষক
কথা নয়। কাজ শুধু কাজ।
৫ম ছাত্র
স্যার, গোয়ালা ভেজাল দিতে গেল কেন? ভেজাল দেওয়া না মহাপাপ?
৬ষঠ ছাত্র
বলে কি। হোক না মহাপাপ। তবু তো বিশ টাকা লাভ ।
শিক্ষক
চোপরাও। কথা নয় কাজ। আদর্শ বিদ্যা পাঠের এই ই রেওয়াজ। এবারে বাংলা রচনা পড় এবং মুখস্থ কর। খবরদার দুষ্টামি করিও না। পথভ্রষ্ট হইও না। নিজ নিজ কর্মে মনোনিবেশ কর। আমি একটু বেশভূষা পরিবর্তন করিয়া আসিতেছি। আমাদের দেশ। রচনা শেখ লুতফুর রহমান।
কোরাস
আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে আমাদের দেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৮৭৫ সালের ২৫শে ডিসেম্বর করাচি শহরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁহার পিতার নাম জিন্নাহ পুঞ্জা। জিন্নাহ পুঞ্জা করাচি শহরে ব্যবসা করিতেন।
সূত্রধর
এই এই চুপ। দেখুন দেখি ব্যাপার-স্যাপার। মরণ। ১৯৭১ সালের পূর্বে ছাপানো শিশুপাঠ্য-পুস্তকগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে এখনো আমাদের শিশুদের হাতে। নিছক অপচয় রোধে আমাদের বোর্ড কর্তৃপক্ষ ছোট্ট একটি সংশোধনী ছাপিয়ে দায়িত্ব সম্পূর্ণ করেছেন।
সংশোধনীটি হচ্ছে— অনুগ্রহপূর্বক পাকিস্তানের পরিবর্তে বাংলাদেশ, ১৯৪৭-এর পরিবর্তে ১৯৭১ এবং কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নার পরিবর্তে শেখ মুজিবুর রহমান পড়ুন। পড়ছে। আমাদের শিশুরাও পরম উৎসাহে পড়ে চলেছে, আমাদের দেশ বাংলাদেশ। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৮৭৫ সালে তিনি করাচি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এইভাবেই তমালের ডালে দুই ঠেং ঝুলাইয়া ঝুলাইয়া তাহারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে এবং সেইখানেও
কোরাস
হায়রে পুড়িল পুড়িল মোদের কপাল পুড়িল
লেখাপড়া করাইল গাড়ি ঘোড়া চড়াইল
উঁচা তালগাছ দেখাইলো
রক্তেতে বিষ ঢুকাইল
অবশেষে ছাগল বানাই ছাড়িয়া দিল।।
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
সূত্রধর
যাক। এতো গেল বর্তমান। কিন্তু আগামী দশক? কি হবে? কি হতে পারে? কিংবা কি হওয়া উচিত?
(কিম্ভুতকিমাকার মার্কা একজন ঢুকে)
আগন্তুক
এই যে দাদা।
সূত্রধর
আমাকে বলছেন?
আগন্তুক
ভালোই তো চালাচ্ছিলেন, থামলেন কেন?
সূত্রধর
আপনি?
আগন্তুক
আপনার মতো একজন ধান্দাল ধান্দাবাজি করে টরে খাই আর কি।
সূত্রধর
তা এখানে?
আগন্তুক
আত্মা হাজির করবো। জীবন্ত আত্মা।
সূত্রধর
আত্মা।
আগন্তুক
হ্যাঁ। একেবারে তরতাজা, জীবন্ত। সশরীরে দর্শন দেবেন। আজকে আমাদের বিজয় দিবস তো।
সূত্রধর
(দর্শকদের) গুল। গুল। স্রেফ গাঁজা। একদম বিশ্বাস করবেন না। ১৯৮৪ সাল-
আগন্তুক
থামুন। কোন সাল বললেন?
সূত্রধর
কেন? ১৯৮৪ সাল
আগন্তুক
কোন গ্রহ থেকে এসেছেন?
সূত্রধর
কি যা-তা বলছেন ।
আগন্তুক
রাগছেন কেন দাদা। সত্যিই বলছি।
সূত্রধর
দ্যাখেন, রাস্তা মাপেন। ওসবে আমি বিশ্বাস করি না।
আগন্তুক
বেশ তো। করলেন না। কিন্তু ১৯৮৪-তে দাঁড়িয়ে আগামী দশকের সম্ভাবনা তো যাচাই করছেন।
সূত্রধর
হ্যাঁ। করছি। তাতে হলোটা কি?
আগন্তুক
একটু কষ্ট করে দেখুন। যদি আপনার সম্ভাবনার সাথে মিলে টিলে যায়। সত্যিই এটা ১৯৯৪ সাল। দেখুন দেখুন।
সূত্রধর
কি?
আগন্তুক
ঐ যে
(ইতিমধ্যেই মঞ্চে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়ে গেছে। তার পাশে ময়লা ডাস্টবিন, স্মৃতিসৌধের উপরে কাঁথা, জামা কাপড় ইত্যাদি শুকানোর জন্য দেয়া হয়েছে।
তিনজন সাদা মূর্তিধারী ঢোকে।)
১ম বক্তা
এই! কেমন দুর্গন্ধ ।
২য় মূর্তি
রাস্তাটা খুব চেনা চেনা লাগছে।
৩য় মূর্তি
আহ্ । কদ্দিন পরে এলাম।
আগন্তুক
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী।
৩য় মূর্তি
কে?
আগন্তুক
মাফ করবেন। আমিই আপনাদের ডেকে পাঠিয়েছি।
১ম মূর্তি
কেন?
আগন্তুক
আজ আমাদের শহীদ দিবস যে।
২য় মূর্তি
আমরা কি করবো?
আগন্তুক
যা করবার সেতো করেই ফেলেছেন। নতুন করে কিছু করার প্রয়োজন নেই। আজ আপনাদের দেখার পালা।
৩য় মূর্তি
দেখবোটা কি?
আগন্তুক
আমাদের শ্রদ্ধা। আপনাদের জন্য আমাদের বুক উজাড় করা ভালোবাসা।
১ম মূর্তি
সত্যি?
আগন্তুক
হ্যাঁ।
৩য় মূর্তি
হুঁ! প্রস্তাবটা মন্দ না।
সূত্রধর
অনুগ্রহ করে বলবেন কি, আপনারা কে কোথায় শহীদ হয়েছেন?
১ম বক্তা
আমি ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পুলিশের গুলিতে। আচ্ছা ঢাকার পুলিশরা কি এখনো হাফ প্যান্ট পরে থাকে?

সূত্রধর
জি না। ওরা এখন ফুলপ্যান্ট পরা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আপনি?
২য় মূর্তি
আমি ২১ নভেম্বর, ১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ।
সূত্রধর
ও গণ্ডগোলের বছর। তা ভাইজান আপনি?
৩য় মূৰ্ত্তি
আমি ১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারি, পুলিশের গুলিতে।
সূত্রধর
ও! আপনিই সে ছাত্র?
আগন্তুক
আরে না। ইলেকট্রিশিয়ান ।
সুত্রধর
কে বলেছে ইলেকট্রিশিয়ান। আমি নিজের চোখে দেখেছি। ও ছাত্র।
আগন্তুক
চোপ। আমি বলছি ইলেকট্রিশিয়ান। সরকারি প্রেসনোটে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে ও একজন ইলেকট্রিশিয়ান।
সুত্রধর
আমি বারবার বলছি ছাত্র
আগন্তুক
প্রেসনোট ।
সুত্রধর
আমার নিজের চোখ।
আগন্তুক
চোপ। প্রেসনোট।
সুত্রধর
নিজের চোখ।
আগন্তুক
প্রেসনোট।
সুত্রধর
ঠিক আছে। ও নিজের মুখেই বলুক।
আগন্তুক
বলুক।
সুত্রধর
শহীদ ভাই। সত্যি করে বলবেন কি? আপনি ছাত্র? না, ইলেকট্রিশিয়ান?
৩য় মূর্তি
আরে মশাই। আপনিই বলেন- বাংলাদেশে কি শহীদদের জন্যও সেন্সরশিপ আছে?
১ম মূর্তি
আমাদের স্মৃতিসৌধটা কোথায়?
আগন্তুক
ঐ তো আপনার ঠিক পাশেই।
২য় মূর্তি
একি! এতো নোংরা কেন?
৩য় মূর্তি
কারা যেন ময়লা কাপড় শুকোতে দিয়েছে।
১ম মূর্তি
(ময়লা কাপড় হাতে নিয়ে) এমা। দেখো দেখো। (২য় মুখ চেপে ধরে। বলতে দেয় না।)
৩য় মূর্তি
ছিঃ ছিঃ ছিঃ এ কি অনাসৃষ্টি!
আগন্তুক
ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। সমস্ত নোংরা জাল দেখবে তোমাদের চোখের সামনে বিলীন হয়ে যাবে (শ্লোগানের শব্দ) আসছে। ঐ আসছে ওরা। কণ্ঠে গগন বিদারী হুংকার। প্রতিজ্ঞায় দীপ্ত ত্যাগী সাহসী মানুষ। বিজয় যুদ্ধের মহান শহীদ বন্ধুরা। আমরা তোমাদের ভুলি নি। ভুলতে পারি না। আমাদের চেতনার সূর্যে তোমরা যুগ যুগ ধরে অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলছো।
তোমাদের ত্যাগ, তোমাদের তিতীক্ষা অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (পরিচালনা-সুভাষ দত্ত)। তোমাদের দেশপ্রেম নিষ্ঠা আর সাহসের রণতূর্যে দাঁড়িয়ে আছে রক্তাক্ত বাংলা। (মূল ভূমিকায় কবরী, বিশ্বজিৎ)। তোমরা এক একজন আমাদের চিন্তায় এক একটি সজীব কলমীলতা। নাম ভূমিকায় সোহেল রানা।
(বক্তৃতার ঢং-এ বলে যেতে থাকে। মূর্তি তিনটি স্তম্ভের আড়ালে চলে যায়। মিছিল ঢোকে।)
শ্লোগান
শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।
মুক্তিদ্ধের বীর শহীদরা Welcome Welcome
শহীদ স্মৃতি শহীদ স্মৃতি Long live Long live
১ম বক্তা
সমবেত বন্ধুগণ। আপনারা শান্তি শৃংখলার সাথে historically famous দিনটি celeberate করুন। উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলুন। আমরা সবাই এখন শহীদদের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান জানাবো। বড়ো আশা ভরসা নিয়ে তারা আজ আমাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
২য় বক্তা
স্মৃতি! স্মৃতি তুমি বেদনা । বন্ধুগণ, সেই স্মৃতির মণিকোঠায় বার বার হানা দিয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধের সেই exciting দিনগুলো। সেদিনও পর্তুগাল দস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা –
৩য় বক্তা
ইতিহাসকে যারা বিকৃত করে তাদের বিরুদ্ধে ধিকার প্রদর্শন করে বলতে চাই, ১৯৭১-এর গণ্ডগোলের বছরে যারা হানাদার বাহিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল তারা পর্তুগিজ ছিল না, ছিল ওলন্দাজ।
১ম বক্তা
আমি তীব্র কন্ঠে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৭১-এর গণ্ডগোলের বছরে কাদের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল তা পাঠ্যপুস্তকে, নথিপত্রে উল্লেখ নেই। কাজেই এই অবস্থায়,
৩য় বক্তা
নিশ্চয়ই আমরা ওলন্দাজ বাহিনীকে দোষারোপ করতে পারি না।
২য় বক্তা
তবে কি বাতাসের সাথে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল?
১ম বক্তা
বন্ধুগণ। আবারো বলছি উত্তেজনা ঝেড়ে ফেলুন। অধিক উত্তেজনা হাইব্লাড প্রেসারের জন্ম দিতে পারে। ইত্যাদি ধরনের বহুবিধ কারণে আমাদের এ জাতীয় সব রেকর্ডপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। তবে ১৯৭১-এ যে দেশে চরম গণ্ডগোল হয়েছে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আমি আপনাদের আশ্বাস দিচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য পঁচিশ বছর মেয়াদী একটি গবেষণা স্কিম হাতে নেয়া হবে।
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
সবাই
হিয়ার হিয়ার
১ম বক্তা
এবার শুরু হবে দৌড় প্রতিযোগিতা। শহীদের বেদীমূলে শ্রদ্ধা নিবেদন প্রতিযোগিতা।
২য় বক্তা
স্মৃতিসৌধ থেকে ২০০ গজ দূরত্ব বজায় রেখে ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা। যিনি সবার আগে পৌঁছে মিনারের ঘাড়ে চড়ে মালা ঝুলিয়ে আসতে পারবেন তাকে এ বছরের শ্রেষ্ঠ শহীদ প্রেমিক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার প্রদান করা হবে।

৩য় বক্তা
আপনারা মালকোঁচা মেরে যার যার প্রস্তুতি নিতে থাকুন।
(সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। পুরুষ ও মহিলা এগিয়ে আসে। পুরুষটি আগে থেকেই অন্য এক মেয়ের সাথে ইশারায় কথা বলছিল।)
মহিলা
হ্যাঁ গা!
পুরুষ
কি গা
মহিলা
তোমার কেমন লাগছে গো?
পুরুষ
ভীষণ দুঃখ দুঃখু লাগছে গো।
মহিলা
দুঃখ ক্যান গো!
পুরুষ
Competition-participate করতে পারছি না যে?
মহিলা
কি করবে। তোমার যে heart disease.
পুরুষ
হ্যাঁ
মহিলা
জানো?
পুরুষ
কি?
মহিলা
আজকের এই দিনটি তোমার আমার জন্য কতো আনন্দের। তোমার মনে পড়ে?
বারো বছর আগে, এইখানে, এইদিনে, হাতে হাত রেখে-
পুরুষ
নয়নে নয়ন রেখে।
মহিলা
যাহ্ দুষ্টু।
পুরুষ
তুমি যে আমার
তুমি যে আমার
কানে কানে শুধু বল না গো
আর একবার।
মহিলা
স্মৃতিসৌধের ঠিক বাম দিকে ছিলে তুমি—
পুরুষ
তুমি আছ অগণিত শোকাহতা মহিলার মিছিলে।
মহিলা
তোমার পরনে ছিল ক্রিম কালারের পাঞ্জাবি
পুরুষ
তুমি পরেছিলে কালো জর্জেট
মহিলা
জর্জেট নাগো অর্গান্ডি।
পুরুষ
অর্গান্তি।
মহিলা
তুমি না কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়েছিলে
পুরুষ
(চোখ টিপে) এভাবে?
মহিলা
যা অসভ্য। এই তুমি এত ছটফট করছো ক্যানগো?
পুরুষ
কই নাতো।
মহিলা
বলোনা? আজ আমায় কেমন লাগছে গো?
পুরুষ
ঠিক যেন মুক্ত বিহঙ্গ।
মহিলা
(গান) ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে
আমি মুক্ত বিহঙ্গ গো
বাসন্তিকা অঙ্গে আমার
মরমে শহীদ স্মৃতি গো
অন্যমেয়ে
পথিক ভ্রমর শুধায় মোরে
সোনার মেয়ে নাম কি তোর
মহিলা
বলি ফুলের দেশের কন্যা আমি
চম্পা বরণ নামটি মোর
পুরুষ
বনের পরী আমার সনে
খেলতে আসে সঙ্গোপনে
মহিলা
এই। আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো-
পুরুষ
হ্যাঁ। দিনটাই যে কান্নার।
মহিলা
আমি কিন্তু সত্যি সত্যি ভ্যা করে কেঁদে দেবো।
পুরুষ
কেন? কেন? গ্যাস্ট্রিকের ব্যথাটা কি আবার
মহিলা
তুমি কিন্তু অন্য মেয়েছেলের সাথে ফিল্ডিং মারছো।
আগন্তুক
ভাইসব। মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে এক বিরাট মিনাবাজার ও বিচিত্রানুষ্ঠান। অংশগ্রহণে–ববিতা, রাজ্জাক, বানজারান শাবানা, নাগরাণী রোজিনা, নাগরাজ ওয়াসিম ও আরো অনেকে। বুক কাঁপানো নৃত্যাংশে প্রিন্সেস বেহায়া, প্রিন্সেস সোনিয়া ও প্রিন্সেস খুলিয়া। আসুন। দেখুন। বিউটি কুইনদের ঝুমুর ঝুমুর নাচ। টিকিটের দাম ৫০ টাকা, ১০০ টাকা ও ২০ টাকা মাত্র।
(প্রস্থান)
১ম বক্তা
এবারে শুরু হচ্ছে, ২০০ মিটার মাল্যদান প্রতিযোগিতা। আপনারা প্রস্তুত থাকুন। হুইসেল বাজলেই শুরু করবেন প্রতিযোগিতা।
(হুইসেলে ফু দেয় । সবাই হুড়োহুড়ি করে মিনারের উপর চড়াও হয়। এক পর্যায়ে মিনার ভেঙ্গে তিন শহীদ মূর্তির উপরে গিয়ে পড়ে।)
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
১ম মূর্তি
আল্লাগো, মাগো, গেলাম গো।
২য় মূর্তি
আমার হাড্ডিটাই ভর্তা হয়ে গেছে রে।
৩য় মূর্তি
হায় হায়। আমি বোধ হয় সেকেন্ড টাইমের জন্য শহীদ হয়ে গেলাম গো ।
১ম বক্তা
বন্ধুগণ আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন এবং ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করুন। হই-চই করবেন না।
২য় বক্তা
ভাইয়েরা। শহীদের আত্মারা আমাদের আশেপাশেই ঘুরঘুর করছে। সাংঘাতিক কেলেংকারি হয়ে যাবে বলে দিচ্ছি।
৩য় বক্তা
মিনার যে ভেঙ্গে গেল।
১ম বক্তা
শালার কন্ট্রাকটার, খালি বালি দিয়ে মিনার বানালে কি মিনার টেকে?
২য় বক্তা
এক কাজ করা যায়।
৩য় বক্তা
প্লিজ। যা করার জলদি করুন। শহীদের আত্মারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে ক্ষেপে গেছেন ।
২য় বক্তা
করবেনটা কি?
১ম বক্তা
গান ধরুন ।
২য় বক্তা
গান?
৩য় বক্তা
কোন গানটা।
১ম বক্তা
কোনটা আবার। ঐটা আর কি।
২য় বক্তা
ঐটা কোনটা ।
১ম বক্তা
ঐ যে। “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা তোমাদের ভুলবো না”, বুঝলেন না? পাম্পপট্টি মাইরা বিদায় করে দেয়া আর কি ।

২য় বক্তা
ঠিক ঠিক।
৩য় বক্তা
স্টার্ট।
গান
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলবো না
তিন মূর্তি
(অনেক দুঃখ অভিমানে )
এবারের মতো মোদের মাফ করে দাও তোমরা আমাদের ভুলে যাও।
তিন বক্তা
আমরা তোমাদের ভুলবো না
তিন মূর্তি
তোমরা আমাদের ভুলে যাও
তিন বক্তা
আমরা তোমাদের ভুলবো না
তিন মূর্তি
পায়ে ধরি ভুলে যাও
তিন বক্তা
জীবনেও ভুলবো না।
কোরাস
হায়রে পুড়িল পুড়িল তাদের কপাল পুড়িল শহীদ হইয়া ছিল তারা বড় আশা নিয়া ঘরে ঘরে সুখের হাসি উঠিবে ভরিয়া গণতান্ত্রিক ধ্যান ধারণায় দেশ হবে মহীয়ান সার্থক হবে লক্ষ শহীদানের আত্মদান এমন হওয়ান হওয়াইল রাম ধোলাই লাগাইল শহীদ স্মৃতির পাইন মারিয়া ছাড়িয়া দিল। (সবাই চলে যায়, সূত্রধর ঢুকে)
সূত্রধর
সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা আমাদের এই সোনার বাংলা। চতুর্দিকে কুলকুল রবে বয়ে চলেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা। উত্তরে আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিমে পশ্চিম বঙ্গ, পূর্বে বার্মা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রকৃতির এই অপূর্ব লাস্যময়ী নতুন বাংলার ঠিক মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রাণস্পন্দন বাংলাদেশ সচিবালয় আমার এক বন্ধু, ব্যক্তিগত জীবনে প্রচণ্ড নাস্তিক, বহু চেষ্টা তদবির করেও তাকে আল্লাহ খোদায় বিশ্বাসী করানো যায় নি।
মাঝখানে শুনলাম, বন্ধুটি ঘন ঘন সেক্রেটারিয়েটে যাতায়াত করছে। হঠাৎ একদিন খবর এলো- বন্ধুটি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়ছে। চিন্তা করে দেখুন—একজন কট্টর মার্কসবাদী নাস্তিক এভাবে আস্তিকে রূপান্তরিত হয়ে গ্যাল। কৌতূহল দমনে ব্যর্থ হয়ে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
তার উত্তরটা ছিল এই রকম—দোস্ত! সারাটা জীবন তো একজন নাস্তিক হিসেবেই কাটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু যখনি সচিবালয়ে ঢুকেছি, মনে হয়েছে, সত্যি আল্লাহ নামে কেউ একজন আছেন। নইলে দেশটাই অচল হয়ে যেতো। কি এমন বিপ্লবী রূপান্তর ঘটলো আমাদের প্রশাসনে? বিখ্যাত উপন্যাসিক কিম্বা উন্নাসিক কৃষণ চন্দরের ভাষায় ….
(হৈ চৈ করে কিছু লোক প্রবেশ করে। একটা ভারী বুটের তলে চাপা পড়ে আছে জনৈক ।)
১ম জন
হায় হায়। কি করে এই সর্বনাশ হলো?
২য় জন
কালকের রাতের ঝড়ে নিশ্চয়ই।
৩য় বক্তা
আমগাছটা গেল।
৪র্থ জন
বেঁচে আছে।
৫ম জন
মনে তো হয় আছে।
৬ষঠ জন
তাহলে চল। ধরাধরি করে লোকটাকে তুলে ফেলি।
১ম জন
অত সহজ না।
৬ষঠ জন
কেন?
১ম জন
গাছটা Ministry of Establishment এর permission ছাড়া হাত দেয়ার উপায় নেই।
২য় জন
খবর গেছে?
এসিসটেন্ট
Deputy Secretary সাহেব আসতি লাগিছে ।
৩য় জন
আশ্চর্য। লোকটা সত্যি সত্যি বেঁচে আছে?
৪র্থ জন
হ্যাঁ
৫ম জন
কথায় বলে না? বিড়াল আর গরিব। জানটা বড় শক্ত।
লোক
আল্লাগো। মাগো। বাঁচাও ।আমারে বাঁচাও।
১ম জন
তোমার নাম কি?
লোক
আদম আলী। ভাইজান। আমারে বাঁচান। ঘরে আমার একগাদা পোলাপান।
এসিসটেন্ট
চুপ চুপ। মিনিস্ট্রি অব স্টাবলিশমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি সায়েব আইতে লাগছে। চুপচুপ। একদম চুপ।
কোরাস
চিল্লাইও না আদম আলী আসিছে হুজুর
চুপ চুপ চুপ একদম চুপ
রাশভারী লোক তিনি আমলা
তুমি বেহুদাই করো ঘাপলা
সিস্টেম ফাইলিং প্রোসিডিউর
তুমি শিখবে আরো কতো কি প্রচুর
শিখেপড়ে হয়ে যাবে পণ্ডিত
বুঝবে সিস্টেম কি মধুর
চুপ চুপ চুপ একদম চুপ।
(স্টাবলিশমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি ঢোকে )
ডে, সে
দেখি, দেখি। ভিড় ছাড়েন না। বেঁচে আছে?
এসিসটেন্ট
জি স্যার
ডে, সে
আশ্চর্য। নাম কি তোমার?
লোক
আদম আলী।
ডে. সে.
পিতা?
লোক
জাহান আলী।
ডে, সে
পেশা?
লোক
বেকার
ডে. সে.
এসিসটেন্ট দ্রুত নোট করে নাও। আদম আলী, পিতা- জাহান আলী, পেশা-বেকার। এই তোমার Date of birth?
লোক
আমারে বাঁচান স্যার। আর পারিনা গো।
ডে. সে.
চিন্তা করো না। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তোমার বায়োডাটাটা আগে দরকার।
লোক
আগে আমারে বাঁচান স্যার। শুধু আমারটা না, আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর বায়োডাটা
দিয়া দিমু।
ডে সে
আই এম সরি। গাছ-গাছড়ার ব্যাপার তো। মিনিস্ট্রি অব ফরেস্ট-এর অ্যাপ্রোভাল দরকার। চিন্তা করো না, ফাইল অলরেডি মুভ করিয়ে দিয়েছি। ওদের অ্যাপ্রোভালটা পেলেই তোমাকে সাথে সাথে উদ্ধার করা হবে।
লোক
হায় আল্লা। ততক্ষণ বাঁচুম তো।
ডে. সে.
চিন্তা করো না। সব হয়ে যাবে। বুকে সাহস রাখ। এতক্ষণ যখন মরনি-এসিসটেন্ট । আমি একটু বাইরে গেলাম । আচ্ছা আসি। বাই (প্রস্থান)
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
লোক
আল্লারে। আর তো পারি না। ও এসিসটেন্ট ভাই। একটু জলদি করেন না।
এসিসটেন্ট
হয়ে যাবে। সব হয়ে যাবে। মিনিস্ট্রির ব্যাপার তো। প্রচুর ফরমালিটিস।
১ম জন
আপনিও মশাই আর জায়গা পেলেন না। পড়লেন পড়লেন মিনিস্ট্রির গাছতলে কেন? অন্য কোথাও গাছ-গাছড়া পেলেন না?
এসিসটেন্ট
চুপ চুপ। মিনিস্ট্রি অব ফরেস্ট-এর ডেপুটি সেক্রেটারি সাহেব আইতে লাগছে। এই যে চাপাপড়া ভাই আর দেরি নাই। এবার সত্যি সত্যি হয়ে যাবে। হায়রে ছুটিয়া চলিছে ফাইল রথখোলা দিয়া
কোরাস
ধোলাই খাল ঘুইরা সোজা যাবে কুতুবদিয়া
কুতুবদিয়া পার হইয়া ছাগলনাইয়া ঘুরে
ফিরিয়া আসিবে ফাইল সোজা পঞ্চগড়ে
পঞ্চগড় থেইকা তিনি গরুর গাড়ি চড়ে
হেলিয়া দুলিয়া যাদু পৌঁছিবে রংপুরে
তালপট্টির কাছাকাছি লক্ষ ঝক্ষ করে
অবশেষে দিবেন দেখা পিয়নের দপ্তরে।
(মিনিস্ট্রি অব ফরেস্ট-এর ডেপুটি সেক্রেটারি ঢুকে)
ফরেস্ট
মিনিস্ট্রি অব স্টাবলিশমেন্ট-এর কে আছেন এখানে?
এসিসটেন্ট
এই যে স্যার আমি ।
ফরেস্ট সে.
এই ফাইলটা আমার ডিপার্টমেন্টে কেন? এটা কি আমার কাজ?
এসিসটেন্ট
এই গাছটাতো কাটাছেড়া করতে হবে। কাটাছেড়ার ব্যাপারটাতো স্যার…..
ফরেস্ট সে
এখানেতো কাটাছেড়ার কথা বলা হয় নি। আপনারা নোট দিয়েছেন উদ্ধারের । কাজেই ব্যাপারটা পুরোপুরি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। ফাইলটা আগে ওখানে মুভ করান। তারপর আসবে এটা আমার কাছে। যত্তোসব!
আর শোনেন, এর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটটাও সংগ্রহ করে রাখুন।
লোক
এই যে ভাই। যাবেন না। দয়া করে শুনুন। আপনাগো শরীরে কি একটু দয়ামায়াও নাই?
এসিসটেন্ট
চিন্তা করো না হয়ে যাবে। সব হয়ে যাবে। আমি ফাইল নিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে যাইতাছি, তারপর সব হয়ে যাবে। (প্রস্থান)
(স্টাবলিশমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি ঢোকে)
ডে, সে
কি ব্যাপার৷ এখনো হয় নি? সাংঘাতিক। এখনো বেঁচে আপনি? সিকিউরিটি? কড়া প্রটেকশন দাও। কেউ যেন ঢুকতে না পারে। বিশেষ করে সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার। এই কিছু খাবে?
লোক
স্যার আপনি আমার ধর্মের বাপ আমারে বাঁচান। ফাইল নাড়াচাড়া পরে করেন।
ডে, সে
আই এ্যাম সারি। আমি তা পারি না। কারণ ব্যাপারটা হচ্ছে সিস্টেম। বুঝলে? সিস্টেম হচ্ছে এমন একটা ব্যাপার। অর্থাৎ সেই রকম। যাকে কিনা বলে তোমার ইয়ে—তুমি বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই।
লোক
হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছি।
কোরাস
সিস্টেম কারে কয় কত প্রকার কি কি
বুঝিতে আর আদম আলীর নাইকো বাকি
ব্যাখ্যা সহকারে দিতে বিবরণ
এবারে হইলেন হাজির আরো একজন
বিলাইর হাড্ডি খাওয়া মাইনষের হয় না ক্যান মরণ
সন্ধানে হবে গঠন তদন্ত কমিশন।
(ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এডিশন্যাল সেক্রেটারি ঢোকে)
ত্রাণ সে.
কি ব্যাপার হায়দার সাহেব?
ডে সে
আর বলবেন না। ঝামেলার উপরে ঝামেলা। আর কি। এই লোকটা গতরাতে চাপা পড়েছে।
ত্রাণ সে.
হু। সেতো দেখতেই পাচ্ছি। আছে না গেছে?
ডে সে
এখনো আছে।
ত্রাণ সে.
আমি মিনিস্ট্রি অব ফরেস্ট-এর এডিশ্যানাল সেক্রেটারিকে টেলিফোন করে দিয়েছি। এক্ষুণি এসে পড়বেন।
ডে সে
ঝামেলা। কি করা যায় বলুন তো?
ত্রাণ সে.
উনি আসুক। একসাথে একটা মিটিং করে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবো।
লোক
ওরে বাপরে। আবার মিটিং।
ত্রাণ সে.
এই তো। উনি এসে গেছেন। (ফরেস্ট-এর এ-এস ঢোকে)।
ফরেস্ট সে
কোথায়
ত্রাণ সে.
ঐ তো।
ডে. সে.
চলুন, তাহলে শুরু করা যাক। আজকের এই জরুরি সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য আমি ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নাম প্রস্তাব করছি।
ফরেস্ট
আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি। একই সাথে তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও তার নাম প্রস্তাব করছি। (তালি)
ডে. সে
তাহলে কি করা যায় এখন?
ত্রাণ সে
হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে। তিন মন্ত্রণালয় যখন একসাথে বসেছি। একটা কিছু ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে। তারপর ময়েজ সাহেব। বলেন, ট্যুর কেমন হলো?
ফরেস্ট সে
আর বলবেন না। এতো তাড়াহুড়ো করে ফিরতে হলো।
ডে. সে.
মার্কেটিং কি কি করলেন স্যার?
ফরেস্ট
আর মার্কেটিং। কারেন্সি কই।
ত্রাণ সে.
আমার সামনের মাসে একটা ট্যুর পড়েছে। একটা মক্কেল দেন না, মালদার।
ফরেস্ট সে
আপনার বুঝি মক্কেলের অভাব। হাত বাড়ালেই তো—
ত্রাণ সে.
আরে না মশাই। যে দিনকাল পড়েছে—
ফরেস্ট সে
রহিম সাহেব, কিছু খাওয়াবেন টাওয়াবেন নাকি ।
ডে. সে.
কি খাবেন স্যার? চা না কফি?
ফরেস্ট সে
আপনার ইচ্ছা।
ডে. সে.
এসিসটেন্ট। এসিসটেন্ট।
এসিসটেন্ট
ইয়েস স্যার।
ডে. সে.
কফি।
লোক
ওরে বাপরে। আর কতোক্ষণ।
ত্রাণ সে.
যাড়ের মতোন চিল্লাচ্ছে। এই শালাদের কোনো পরিবেশ জ্ঞান নেই।
ফরেস্ট সে,
চলেন। এই ফাঁকে ডিসিশনটা নিয়ে নিই।
ডে. সে.
স্যার, ঘটনাস্থল সরেজমিনে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিলে কি ভালো হয় না?
ত্রাণ সে.
প্রস্তাবটা মন্দ না। চলেন তাহলে।
কোরাস
হায়রে ছুটিয়া চলিল মোদের তদস্ত মিশন
ঢাক ঢোল পিটাইয়া তারা করে আয়োজন।
তিনজন মেম্বার দেখিতে কি চমৎকার
কারো আছে বাতের ব্যথা ব্রেইন টিউমার
তারা লিখিবে, তারা দেখিবে, তারা কাটিবে, ছিঁড়িবে।
তারা হেলিয়া দুলিয়া কাশিয়া কাশিয়া সময় কাবার করিবে
তারা বছরের পর বছর ধরিয়া খসড়া তৈরি করিবে
এই অবসরে পুরনো মন্ত্রিসভার পতন ঘটিবে।
নতুন করিয়া আরো একদল ক্ষমতা দখল করিবে
সূত্রধর
সবই বুঝিলাম। কিন্তু রিপোর্টের কি হইবে?
কোৱাস
চিনাবাদামের ঠোংগা হইয়া দত্ত খুলিয়া হাসিবে ।
ত্রাণ সে.
হুঁ। অবস্থাটা বেশ গুরুতর বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
ডে. সে.
এসিসটেন্ট, নোট করেন। অবস্থা গুরুতর।
ত্রাণ
চাপা পড়েছে আমগাছের তলে। ৪৫ ডিগ্রি অ্যাংগেল। মাথাটা চিৎ হয়ে।
ডে. সে.
এসিসটেন্ট। ৪৫ ডিগ্রি অ্যাংগেল। মাথাটা চিৎ হয়ে।
ত্রাণ সে.
কোমরটা বাঁকা । হাঁটু ভাজ করা ।
ডে. সে.
এসিসটেন্ট। কোমরটা বাঁকা। হাঁটু ভাঁজ করা।
ত্রাণ সে.
মিনিস্ট্রি অব স্টাবলিশমেন্ট, কবে এই আমগাছ রোপণ করা হয়?
ডে. সে.
এসিসটেন্ট । কবে এই গাছটি রোপণ করা হয়?
এসিসটেন্ট
স্যার, ১৯৫১ সালে।
ত্রাণ সে.
কে রোপণ করেছিলেন?
এসিসটেন্ট
গণপ্রজাতন্ত্রী আদাবিস্তানের মহামান্য রাষ্ট্রদূত মিস্টার ভেনকাটারও।
ফরেস্ট সে,
সর্বনাশ!
ডে. সে.
কেন?
ফরেস্ট
বিদেশী রাষ্ট্রদূতের স্বহস্তে রোপণ করা গাছ।
ডে. সে.
তাতে কি?
ত্রাণ সে.
কাটাছেঁড়া করতে গেলে বৈদেশিক সম্পর্কের ব্যাপারটা এসে যায় না কি?
ফরেস্ট
তাই তো!
ডে. সে.
তাহলে?
ত্রাণ সে.
এক কাজ করা যেতে পারে।
ফরেস্ট সে,
কি?
ত্রাণ সে.
পরিস্থিতির জরুরি দিকটা ইংগিত করে আমরা বরং ফাইলটা মিনিস্ট্রি অব ফরেন এফেয়ার্স-এ পাঠিয়ে দেই। কারণ ব্যাপারটা এখন পুরোপুরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। কি বলেন?
ফরেস্ট সে,
হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাই ভালো।
ডে সে.
এসিসটেন্ট।
এসিসটেন্ট
ইয়েস স্যার।
ত্রাণ সে.
জরুরি ফাইল। কুইক মুভ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহেবের রুম। (এসিসটেন্ট চলে যায়)।
লোক
ও ভাইজানেরা। এবার হাতটা একটু লাগান না। মেহেরবানি কইরা বাঁচান না আমারে।
ফরেস্ট সে.
সিস্টেম। বুঝলে? সিস্টেম। জন্ম, মৃত্যু, দেশ, জাতি সবাইকে একটা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। না হলে হয় না। চিন্তা করো না, হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
[ইঙ্গিত নাটক ১ম পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
লোক
এদিকে যে আমার লাল সুতো বেরিয়ে আসছে।
ডে. সে.
এই সাট-আপ। তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে।
ত্রাণ সে.
এই তোমার ক্যারেকটার সার্টিফিকেট কই ।
লোক
কি?
ত্রাণ সে.
তোমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স রিপোর্ট কই।
লোক
কি?
ফরেস্ট
তোমার ন্যাশনালিটি সার্টিফিকেট কই? ও যে দেখছি ন্যাশনালিটি সার্টিফিকেটও জমা দেয় নি।
(এসিসটেন্ট ঢোকে)
এসিসটেন্ট
স্যার। কাম সারছে। মাননীয় মুখ্য সচিব কাম পররাষ্ট্র সচিব মহোদয় এইদিকে আইতে লাগছে। তিনি স্বহস্তে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট গ্রহণ করবেন বইলা কইছে।
কোরাস
তিনি পিতলা ঘুঘু সোনার চাঁন
কায়দা করে খুলিবেন জবান
সাত পুরুষের তপস্যার ধন আমলাতন্ত্রের অবদান
ডাগর আঁখি সুরমা মাখি হুজুর যখন চোখ ফিরায়
মানুষের বদলে দেখেন লক্ষ বলদ চইড়া খায়
কোটি গরুর হাম্বা ডাকে সিস্টেমের বাজনা বাজান।
মুখ্য সচিব
রিপোর্ট নিশ্চয় Complete.
ত্রাণ সে.
ইয়েস স্যার ।
ডে. সে
এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রদান করবেন মিনিস্ট্রি অব ফরেস্টের অতিরিক্ত সচিব মহোদয়। (রিপোর্ট মুখ্য সচিবকে দেয়) এখন তদন্ত কমিশনের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বাণী দেবেন, মাননীয় মুখ্য সচিব কাম পররাষ্ট্র সচিব মহোদয়।
মুখ্য সচিব
আসসালামু আলাইকুম। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার অপার অনুগ্রহে আজকের এই আনন্দঘন মুহূর্তে আপনাদের সবাইকে জানাই হাজারো সালাম। যে মাল্যদান করে, যে মোহাব্বতের নজরানা দিয়ে আপনারা আমায় সরফরাজ করার চেষ্টা করেছেন, সে মোহাব্বতের নজরানা মূলত আপনাদেরই প্রাপ্য। কারণ বহু তকলিফ সহ্য করে, প্রচুর কৌশিশ করে আপনারা যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, কওম সেজন্য আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার পক্ষ থেকে দেশের লাখো তাওহিদি জনতার পক্ষ থেকে আপনাদের জানাই মোবারকবাদ। খোদা হাফেজ।
পাকিস্তান-
ডে. সে.
স্যার। বাংলাদেশ।
মুখ্য সচিব
Sorry! বাংলাদেশ পায়েন্দাবাদ ।
ফরেস্ট সে,
স্যার, লোকটাকে কি তাহলে?
মুখ্য সচিব
দেখি। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টের একটা কপি আমরা আমাদের রিসার্চ সেলে পাঠাচ্ছি। ওখান থেকে যাবে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে।
ডে. সে.
স্যার, ততক্ষণ কি লোকটা-
মুখ্য সচিব
System! Nothing to do. We must obey our own system,
ফরেস্ট সে
Right sirl
ডে সে.
কিন্তু এদিকে যে আমার-
মুখ্য সচিব
Relax বুঝতেই পারছেন। একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের স্বহস্তে রোপণ করা গাছ, It is a question of our international relations, আপনি better এক কাজ করুন। তদন্ত কমিশনের রিপোর্টটা immediately রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠিয়ে দিন। আমি পরে স্যারের সাথে আলাপ করে নোবো, ok

ডে. সে
Thank you sir’ এসিসট্যান্ট। জরুরি ফাইল, quick move, রাষ্ট্রপতির দপ্তর।
লোক
বুঝছি। সময় আমার শেষ হইয়া আইছে। এসিসটেন্ট ভাই। আর রাষ্ট্রপতি কইরা লাভ নাই। আপনি বরং ফাইলটা আর আমার পকেটের কিছু কাগজ, আমার ভগ্নীপতির কাছে পাঠাইয়া দিয়েন।
ত্রাণ সে.
এসিসটেন্ট।
এসিসটেন্ট
ইয়েস স্যার।
ত্রাণ সে.
দ্রুত ডেসপাস ।
এসিসটেন্ট
ও কে স্যার, আর একটা কাজ করি
ত্রাণ সে.
কি?
এসিসটেন্ট
ফায়ার ব্রিগেডকে বিদায় করে দিই?
ত্রাণ সে.
দাও।
এসিসটেন্ট
আঙ্গুমানে মফিদুল ইসলামকে কন্ট্রাক্ট করি?
কোরাস
তোমরা দেখগো আসিয়া
ডিসকো নাচে আদম আলী কোঁতাইয়া কোঁতাইয়া
তোমরা সারা দেশে গ্রামে গঞ্জে উঠরে জাগিয়া
আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম গঠন করিয়া
নাচিয়া কুদিয়া আদম আলীর লাল সুতা উড়িছে বেড়াইয়া।
ইঙ্গিত নাটক নাটক : ২য় পর্ব
প্রযোজক দল : ঢাকা পদাতিক
প্রদর্শনীর স্থান : মহিলা সমিতি মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : আশীয় খন্দকার
ছাত্র : নাদের চৌধুরী, জন মার্টিন, রোকেয়া রফিক বেবী, শিউলী, আখতার, মিজান
শিক্ষাক : এস এম সোলায়মান
আগন্তুক : মজনু
মূর্তি : এস এম সোলায়মান, মাহবুবুর রহমান টনি, জন মার্টিন
নেতা : আখতার, মামুন মোস্তফা
পুরুষ : শাহীন
মহিলা : রোকেয়া রফিক বেবী
মেয়ে : মৌসুমী
সংস্থাপন সচিত্র : তুহিন
এসিসট্যান্ট : মাহবুবুর রহমান টনি
বন সচিব : এস এম সোলায়মান
চাপা পড়া লোক : মোস্তফা
ত্রাণ পুনর্বাসন সচিব : মামুন
বদনা : রোকেয়া রফিক বেবী
বল্টু : জন মার্টিন
দুস্যুরানী : এস এম সোলায়মান
চদুমন্ত্রী : শাহীন
সেনাপতি : নাদের চৌধুরী
নাজির : মোস্তফা
প্রহরী : আখতার
বুভুক্ষু : মামুন, জহির, মওলা
হাওয়া বিবি : রোকেয়া রফিক বেবী
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এ এস এম সোলায়মান
মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা : জামিল আহমেদ
আলোক নিয়ন্ত্রক : কামরুল হাসান স্বপন
সামগ্রী : মোস্তফা
গীত ও সুর : এস এম সোলায়মান
সঙ্গীত : মাসুম আজিজ
মঞ্চ অধিকর্তা : নাদের চৌধুরী
পোস্টার অঙ্কন : অশোক তরু কর্মকার

ইঙ্গিত নাটক ২য় পর্ব
(বিরতি)
কোৱাস
সিস্টেম তোর পায়ে পড়ি বলনা তোরে
কোন কারিগর বানাইয়াছে,
সিস্টেম তোর পায়ে পড়ি
সিনিয়র জুনিয়র মিইল্যা হবেন তারা বিশ হাজার
ঊর্ধ্বতন নিম্নমান মিইল্যা বাদবাকি আশি হাজার
সচিব যখন বিদেশ ঘুরে, উপ-সচিব লন্ডন ট্যুরে
মুখ্য সচিব জার্মানিতে সেমিনারে লাফাইতাছে।
সূত্রধর
সেই লোকটির কি হয়েছিল আমাদের জানা নেই। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের সংবাদে জানা গেছে ফাইলটি এখনও প্রচণ্ডতম গতিতে সচিবালয়ে ছোটাছুটি করছে। তা করুক। আমরা বরং এই ফাঁকে অন্যদিকে দৃষ্টি ফিরাই। একটা জাতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার শিল্প, সাহিত্যে। আগামী দশকে আমাদের শিল্প- সাহিত্য নতুন মুখের সন্ধানে এবং আগমনে অভাবনীয় গুণে সমৃদ্ধ হইয়া ফুলিয়া ফাঁপিয়া উঠিবে। ১৯৯৪ সালে বাগোয়াজ মহান ঘেন্টু নামক এক ব্যক্তি অস্কার পুরস্কার পাইবে ৷ বর্তমান কস্ট্যুম ফ্যান্টাসি চলচ্চিত্রের নর্তন কুর্দন এক পর্যায়ে মানবজাতির পূর্বপুরুষ ওরাং ওটাং বা বান্দর সংস্কৃতির সংমিশ্রণে বিশ্বে নতুন দিকদর্শনের জন্ম দেবে (নায়ক-নায়িকার প্রবেশ)
নায়িকা
চাকভুম চাকভুম আমায় জীনে ধরিছে
চাকভুম চাকভুম আমায় ভূতে ধরিছে
পাঠার প্রেমে পড়ি আমার কপাল পুড়িছে।
নায়ক
চাকভুম চাকভুম আমায় পেত্নী ধরিছে
হাবুডুবু খেতে খেতে ইশকে জ্বলিছে
আমার ইশকে জ্বলিছে ।
সূত্রধর
স্টার্ট। দৌড়। (দৌড়াচ্ছে) স্টপ। এগেইন গান।
নায়িকা
আম খেয়েছে জাম খেয়েছে পান খেয়েছে
বিচিকলা খেয়ে তোমার পেট ফুলি গ্যাছে।
নায়ক
ফুল সুপারী কাটি আমায় পান খাওয়াইছে
সেই পান খেয়ে আমার হাউশ ধরিছে
আমার হাউশ ধরিছে।
নায়িকা
বল্টু । বল্টু । হামারা ইশকের রোশনাই। কি হয়েছে তোমার? পেট খারাপ? না মন খারাপ
নায়ক
মন খারাপ বদনা ।
নায়িকা
কেন বল্টু?
নায়ক
বদনা। হামারে মোহাব্বত। হামারে জান। আমি এখন কি করি, বল? সত্যি করে বল তুমি আমাকে মোহাব্বত কর, না হয় তোমার ঐ দস্যুরাণী মার্কা চাকু দিয়ে হামার এ জান ফালি ফালি কর।
নায়িকা
কাঁদে না বল্টু । কাঁদে না। আমার কোরবান। আমাদের নসিবটাই খারাপ। আমার আম্মা হুজুর, দস্যুরাণী। গুলবদন তোমার মোহাব্বতে দিওয়ানা। তুমি চিন্তা করো না বল্টু । মা যদি তোমাকে ছিনিয়ে নিতে আসে। তবে আমিও তাকে ছেড়ে দেবো না। আমিও তরবারি খুলে তার সাথে ফাইট করবো ।
[ইঙ্গিত নাটক ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
নায়ক
কথা দাও বদনা। কথা দাও। আমাকে কোনোদিন ঐ দস্যুরাণী গুলবদনের হাতে তুলে দেবে না।
নায়িকা
না বল্টু, না। কথা দিলাম। যদ্দিন আসমান জমিন থাকবে।
নায়ক
যদ্দিন চাঁদ সুরুজ থাকবে।
নায়িকা
মোহাব্বতের ঝাণ্ডা ঐ অত্যাচারীর তখত-তাউসকে ভেঙ্গে খানখান করে দেবে। মেরে বল্টু ।
নায়ক
বলো বদনা।
নায়িকা
আবার বলো।
নায়ক
মেরে বদনা।
নায়িকা
তুমি বর সাজবে গো
কতো সুন্দর লাগবে গো
নায়ক
বলো বলো আরো বলো
লাগছে মন্দ নয়।
একত্রে
জীবনের এই স্বপ্নগুলো
সত্যি যেন হয় ।
(দস্যুরাণীর প্রবেশ)
রাণী
হাঃ হাঃ হাঃ।
নায়ক
কে? কে? একি। বদনা।
নায়িকা
ভয় পেয়ো না বল্টু। আমি আছি।
রাণী
বল্টু। তোমার এত সাহস। আমার রাজত্বে বাস করে, আমারি মোহাব্বতে নারাজ হয়ে, আমারই কন্যার সাথে? আমি তোমাকে….
বল্টু
বদনা।
বদনা
আম্মাজান। বল্টু এখন আমার মোহাব্বতে দিওয়ানা ।
রাণী
চোপরাও বেত্তমিজ। বল্টুকে আমি—
বদনা
আম্মাজান তোমার ঐ জুলুমে সর্বহারা পুরুষকুল একদিন জেগে উঠবে। একদিন জুলুমের জিঞ্জির ভেঙ্গে তারা দুনিয়াতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য জেহাদ করবে। সেদিন তুমি-
রাণী
বল্টু । হাঃ হাঃ হাঃ। বল্টু করবে জেহাদ। এদিকে এসো বল্টু ।
বল্টু
আমি কিন্তু কেঁদে ফেলবো।
রাণী
এদিকে এসো।
বদনা
সাবধান আম্মাজান বন্টুর ইজ্জতের উপর হাত দেবেন না। ফুলের মতো নিষ্পাপ পুরুষের উপর এত বড় অত্যাচার আল্লায় সইবে না।

রাণী
সরে দাঁড়াও না।
বদনা
না।
রাণী
সরে যাও, যাও বলছি।
বদনা
আম্মা হুজুর। বল্টুর শরীর স্পর্শ করবেন না। না হলে আমি বাধ্য হবো আপনার সাথে ফাইট করতে।
রাণী
এ্যা। ফাইট করবে? আমার সাথে। তুমি? বেশ বের কর তরোয়াল।
বল্টু
এ্যায় পরওয়ারদিগার। তুমি আমার বদনাকে রক্ষা করো। (শূন্য থেকে তলোয়ার আসে। বল্টু লুফে নিয়ে তলোয়ার দেয় বদনাকে।)
রাণী
এখনো সময় আছে বদনা। আমার পথ থেকে সরে দাঁড়াও।
বদনা
না।
রাণী
বদনা।
বদনা
না।
(মা-মেয়ে ফাইট শুরু করে। বল্টু গান ধরে।)
বল্টু
দোজাহানের মালিক তুমি এ্যায় পরওয়ারদিগার
বদনারে তুমি শক্তি দাও সহ্য না হয় আর
পরওয়ারদিগার। হে পরওয়ারদিগার, পরওয়ারদিগার
(ফাইটে বদনা মারাত্মক আহত হয়। দস্যুরাণী বল্টুর দিকে এগিয়ে যায় )
বল্টু
দস্যুরাণী।
রাণী
বল্টু। হামারে মোহাব্বত কি তারানা ।
বল্টু
আম্মা হুজুর। আমার সতিত্ব নষ্ট করবেন না । আপনার দুটি পায়ে পড়ি ।
রাণী
বল্টু
বল্টু
আম্মা হুজুর।
রাণী
আমিও যে তোমার মোহাব্বতে ফানা ফানা হয়ে যাচ্ছি।
বল্টু
কিন্তু আম্মা হুজুর। আমি যে বদনা ছাড়া….
রাণী
চোপরাও বেত্তমিজ। আবার ঐ কমবাখত নাম মুখে এনেছো তো আমি তোমাকে-
বল্টু
(কেঁদে) আম্মা হুজুর।
রাণী
মেরে জান।
বল্টু
না
রাণী
মেরে মোহাব্বত ।
বল্টু
না।
রাণী
হাঃ হাঃ হাঃ
বল্টু
(প্রচণ্ড চিৎকারে) না।
(রাণী বল্টুকে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এক পর্যায়ে বল্টু খালি গায়ে ছুটে গিয়ে গান ধরে।)
বল্টু
এ্যায় মালিকে জাহান আমি বড় অসহায়
ইজ্জতের সওয়ালে মোরে দাও গো রেহাই
আল্লারে আরা রহম কর
দস্যুরাণীরে কতল কর
সতীত্ব মোর রক্ষা কর
বদনারে তুমি জয়ী কর। আল্লারে আল্লা
(গান শুনে দরবেশ ঢুকে ছোবল মেরে দস্যুরাণীকে হত্যা করে। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বদনাকে জাগিয়ে তুলে।)
কোরাস
উঠরে উঠরে কন্যা উঠরে জাগিয়া
ধীরে ধীরে উঠ তুমি আড়মোড়া ভাঙ্গিয়া ।
কন্যা উঠরে জাগিয়া।
কান্দিয়া কান্দিয়া বল্টুর চক্ষু হইল লাল
এই না দেখি বেহেশত হইতে দরবেশ বাবার ফাল
ফোঁপাইয়া ফোঁপাইয়া বল্টুর মুখ গেছে শুকাইয়া
উঠ কন্যা দেখ তুমি নয়ন মেলিয়া
(বদনা আয়েশ করে ঘুম থেকে উঠে। দরবেশকে বল্টু ভেবে জড়িয়ে ধরে। পরে ভুল বুঝে বল্টুর কাছে ফিরে আসে।)
[ইঙ্গিত নাটক ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
বদনা
হায় হায় বল্টু, এই কি অবস্থা তোমার।
বল্টু
শোকরিয়া বদনা। দরবেশ বাবার বদৌলতে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে নি।
বদনা
কোথায়। কোথায় দরবেশ বাবা ।
বল্টু
ঐতো। ওখানে ।
বদনা
দরবেশ বাবা । আপনি আমার বন্টুর পুরুষত্ব রক্ষা করেছেন। আপনি আমার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। দরবেশ বাবা, আপনি আমাদের প্রাণ ভরে দোয়া করুন।
দরবেশ
হক মাওলা। আল্লাহ তোকে সুখী করুক। কিন্তু তোর মতো সুন্দর একটি ফুল তো এই নোংরা পৃথিবীতে মানায় না। তুই হলি বেহেশতের মেওয়া। বেহেশতেই খোশবু ছড়াবি। চল তোকে বেহেশতেই নিয়ে যাই।
(বল্টুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে দরবেশ বাবা বদনাকে নিয়ে বেহেশতের অভিমুখে যাত্রা শুরু করে)
কোরাস
বানাইলো বানাইলো তারা ফিলিম বানাইলো
নেপাল থেইক্যা নাগরাজা করিল আমদানী
ফুলন দেবীর ইস্টাইলে বানায় দস্যুরাণী
আরব সাগর পাড়ি দিয়া আইলো সিন্দাবাদ
আসমান ফাইট্যা হাজির হইলো দৈত্য মহারাজ
দারুণ ফাইটিং করিল পলিমাটি মাড়াইল
ঢিসুম ঢিসুম করিল পাবলিক বেকুব বানাইল
নাচাকুদা কইরা পরে উড়িয়া গ্যাল।
সূত্রধর
চলিয়া গেল। তাহারা চলিয়া গেল। মাধ্যাকর্ষণ এবং মহাকর্ষণের হাওয়া খাইতে খাইতে তাহারা এই পাপাচার কদর্য পৃথিবী ছাড়িয়া বেহেশতের শোভা বর্ধন করিতে চলিয়া গেল। content. presentation Gas development-এর এক অভূতপূর্ব নিদর্শন ছায়াছবি ‘নারীস্থান’, পরিচালনায় বাগোয়াজ মহান ঘেন্টু। শ্রেষ্ঠাংশে ববিতা, রাজ্জাক, বিউটি কুইন শাবানা। দস্যুবাণীর ভূমিকায় নৃত্যপটিয়সি রোজিনা। সঙ্গীত পরিচালনায় মিত্র সাহা। হাঃ হাঃ হাঃ। ১৯৯৪ সালের অস্কার প্রাপ্ত ছায়াছবি নারীস্থান আপনার সূক্ষ্ম অনুভূতিতে জাগিয়ে তুলবে কামনার কুরকুরি। না-রী-স্থা-ন।
(আগন্তুক ঢোকে)
আগন্তুক
এই যে দাদা, এখনো আছেন?
সূত্রধর
হ্যাঁ আছি।
আগন্তুক
আর কতোক্ষণ।
সূত্রধর
যতোক্ষণ চান্স পাবো।
আগন্তুক
এবারের বিষয়।
সূত্রধর
খুঁজে বেড়াচ্ছি।
আগন্তুক
এখনো পান নি।
সূত্রধর
না
আগন্তুক
তা আমি কি আপনার সাহায্যে আসতে পারি?
সূত্রধর
না। ধন্যবাদ। আপনি এবার আসতে পারেন।
আগন্তুক
আরে আরে ক্ষেপেছেন কেন? সত্যি বলছি।
সূত্রধর
আপনি তো মশাই দেখছি কাঠালের আঠা। বলছেনটা কি?
আগন্তুক
বদু রাজা আর চদু মন্ত্রীর গপপো শুনেছেন?
সূত্রধর
বিদু রাজা চদু মন্ত্রী?
আগন্তুক
হ্যাঁ।
সূত্রধর
না।
আগন্তুক
দেখুন। সালটা মনে আছে তো?
সূত্রধর
১৯৯৪ ।
আগন্তুক
হ্যাঁ। (দ্রুত প্রস্থান। কোরাস ঢোকে।)

কোরাস
আমরা হলাম পালের গোদা
গাইমু আজকে পালাগান
ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে
গাইমু বদু রাজার গান, রাজার গান।
হে আমরা গাইমু আজকে পালাগান।
দেশ জুইড়া ভাসতাছে গণতন্ত্রের বানা
যেমন রাজা তেমন মন্ত্ৰী
আরো দক্ষ সেনাপতি
উজির নাজির সেপাই সান্ত্রী
সবাই সাচ্চা গণতন্ত্রী, চদু মন্ত্ৰী
হে আমরা গাইমু বদু চদুর গান
দেশ ফাইট্যা ভাসতাছে গণতন্ত্রের বান
(বদু রাজা, চদু মন্ত্রী, নাজির ও সেনাপতির প্রবেশ)।
রাজা
চদু মন্ত্ৰী।
মন্ত্ৰী
বদু রাজা।
রাজা
এসব কি শুনছি চারদিকে?
মন্ত্ৰী
কি শুনছেন রাজা?
রাজা
পত্রিকায় নাকি কি কি সব বেরিয়েছে?
মন্ত্ৰী
(পত্রিকা খুলে) মাতার হস্তে সন্তান বধ। ক্ষুধার যাতনা সহ্য করিতে না পারিয়া মাতা তিন পুত্রকে স্বহস্তে জবাই করিয়াছেন ।
রাজা
ক্ষুধার যাতনা কেন মন্ত্রী ?
মন্ত্ৰী
খাদ্যাভাবের কারণে রাজা।
রাজা
খাদ্যাভাব কেন?
মন্ত্ৰী
খাদ্যাভ্যাস বদলায়নি যে।
রাজা
কিন্তু হত্যাযজ্ঞ কেন?
সেনাপতি
question of violence সৈন্য পাঠাব?
রাজা
ওখানে কি কোন বিদ্রোহ-টিদ্রোহ,
সেনাপতি
মেরে তক্তা করে দেবো না?
নাজির
হাড় গুঁড়ো করে দেবো না?
মন্ত্রী
উহু। এভাবে হবে না।
রাজা
কেন? কেন হবে না ।
মন্ত্রী
হত্যাযজ্ঞ হয়েছে। সন্দেহ নাই। আমি মনে করি দমনের আগে কারণ অনুসন্ধান নিতান্তই প্রয়োজন ।
রাজা
প্রয়োজন। প্রয়োজন।
সেনাপতি
অনুসন্ধান নয় রাজা। বিদ্রোহ দমন।
রাজা
হুঁ ঠিক ঠিক। বিদ্রোহ দমন।
নাজির
দমন। দমন। বিদ্রোহ দমন।
মন্ত্রী
বিদ্রোহ তো সমষ্টিগত নয় রাজা। পারিবারিক পর্যায়ে। একান্ত ব্যক্তিগত।
রাজা
হ্যাঁ। তাও ঠিক। একান্ত ব্যক্তিগত। ঠিক ঠিক।
সেনাপতি
নিতান্তই বেঠিক। বিদ্রোহ ব্যাপারটাই অমার্জনীয়। হোক ব্যক্তিগত। ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়বে সমষ্টিতে। সেই জন্যই প্রয়োজন অনুসন্ধান। তারপর বধ করবো যে বিদ্রোহের হোতা।
[ইঙ্গিত নাটক ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
মন্ত্রী
এ জন্যই পাবলিকে বলে, আপনাদের মাথাটা একটু মোটা।
সেনাপতি
সাবধান মন্ত্রী। ঘোতা মুখ করে দেবো ভোতা।
মন্ত্রী
হাঁটুতে বুদ্ধি থুয়ে মুখে বড় কথা।
রাজা
চোপ রাও মন্ত্রী। যত বড় মুখ নয় ততো বড় কথা। জানো ও আমার সেনাপতি। লেজ আছে। এক হাত লম্বা। বাড়াবাড়ি করলে? হেঃ হেঃ। ডাণ্ডা। করে দেবে ঠাণ্ডা। মাফ চাও। মাফ চাও।
মন্ত্রী
ওহ হো । ভুলেই গিয়েছিলাম। ভাই সেনাপতি । এবারের মতো করে দাও মাফ?
সেনাপতি
উঁহু। সম্বোধনটা নিতান্তই খারাপ।
মন্ত্রী
সম্বোধন। এ্যা। তবে মাফ করে দাও চাচা ।
সেনাপতি
আরও একটু উপরে উঠো বাছা।
মন্ত্রী
আরো উপরে? মাফ করে দাও বাপ।
সেনাপতি
এইবার শুরু করা যায় কাজ।
রাজা
যায় যায়। শুরু করা যায়। যেহেতু সন্তুষ্ট আমার সেপাই।

মন্ত্রী
সেনাপতি।
সেনাপতি
উঁহু হু।
মন্ত্রী
ভগ্নীপতি।
সেনাপতি
উঁহু হু।
মন্ত্রী
মহান সেনাপতি ।
সেনাপতি
হু
রাজা
কি করা যায় ভাই?
সেনাপতি
কেটে ফেলা যায়।
নাজির
ছিঁড়ে ফেলা যায়।
সেনাপতি
মেরে ফেলা যায়। ধরে আনা যায়।
রাজা
তাই তাই ।ধরে আনা চাই।
মন্ত্রী
ধরে আনা চাই।
রাজা
অতএব, আমি বদু রাজা এই মর্মে নির্দেশ জারি করিতেছি যে, তিন পুত্র এক কন্যা হত্যার দায়ে অভিযুক্ত মাতাকে অবিলম্বে রাজদরবারে হাজির করা হোক।
মন্ত্রী
হোক হোক।
নাজির
হোক। হোক।
কোরাস
ধনু রাজা চদু মন্ত্ৰী সবাই সাচ্চা গণতন্ত্রী
বন্ধু রাজা চদু মন্ত্রী সেনাপতির ঊর্ধ্বচাপ
বনু রাজার হা হুতাশ সেনাপতির নিম্নচাপ
চদু মন্ত্রীর সর্বনাশ। (প্রহরী ঢোকে )
প্রহরী
রাজা গেটে দু’জন ব্যক্তি। বদু রাজার সাক্ষাৎপ্রার্থী।
মন্ত্রী
পরিচয় ।
প্রহরী
ছাত্র, শিক্ষক।
নাজির
নিবাস ?
প্রহরী
মহানগর ।
সেনাপতি
সাক্ষাৎ অসম্ভব।
মন্ত্রী
কেন অসম্ভব মহান সেনাপতি।
সেনাপতি
কারণ উহারা বিদ্রোহী।
রাজা
তাই? বিদ্রোহী?
মন্ত্রী
বিদায় করে দেব?
নাজির
মহান সেনাপতি ও বদু রাজা। গণতান্ত্রিক উত্তরণে আমাদের নিষ্ঠা প্রমাণার্থে তাহাদের দেখা করার সুযোগটা দেওয়া হউক।
সেনাপতি
ঠিক আছে তাহাদের ডাকিয়া আনিয়া একটা মিটিং দেওয়া হোক।
রাজা
চদু মন্ত্রী।
মন্ত্রী
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা প্রমাণার্থে মহান সেনাপতির সাথে একমত।
রাজা
নাজির ।
নাজির
আমি তো রাজি-ই।
কোরাস
ডাণ্ডারে ডাণ্ডা
তেরে মেরে ডাণ্ডা
করে দেবে ঠাণ্ডা
গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা
সেনাপতির ডাণ্ডা
করে দেবে ঠাণ্ডা
আণ্ডা আণ্ডা
গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা
সেনাপতির ডাণ্ডা
আণ্ডা আণ্ডা
(ছাত্র শিক্ষককে নিয়ে কোরাস ঢোকে )
মন্ত্রী
ছাত্র এবং শিক্ষক। এক বৃত্তে দুটি ফুল। একজন দিচ্ছে। অন্যজন নিচ্ছে। একেবারে উজাড় করে দেয়ানেয়ার পালা চলছে। আহারে। কী ভালোবাসা। কিন্তু আপনারা সেই গোলাপের বাগান ছেড়ে রাজদরবারে কেন? ছিঃ ছিঃ। এ কিন্তু আপনাদের মানায় না। কথায় বলে না? পখিরা বনে সুন্দর। শিশুরা মাতৃক্রোড়ে । তা কি চাই?

ছাত্র
চাই তো অনেক কিছু। গণমুখী শিক্ষা চাই।
শিক্ষক
শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই।
ছাত্র
শিক্ষা বৈষম্যের অবসান চাই।
শিক্ষক
সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই।
ছাত্র
পাশ করে চাকরি চাই।
রাজা
নাই নাই। কিচ্ছু নাই ।
রিক্ত আমি নিঃস্ব আমি দেবার কিছু নাই।
আছে শুধু ভালবাসা, দিয়ে দিলাম তাই।
মন্ত্রী
সাবাস জোয়ান। আর কি চাই?
ছাত্র
ধোকাবাজির অবসান চাই।
সেনাপতি
Symbol of vilence.
শিক্ষক
দুঃশাসনের মৃত্যু চাই।
সেনাপতি
প্রকাশ্য বিদ্রোহ।
ছাত্র
মানুষ রূপে বাঁচতে চাই।
মন্ত্রী
লেজ আছে? নাই। অতএব ?
সেনাপতি
Action.
মন্ত্রী
এখনি?
রাজ
সেনাপতি?
নাজির
ঝগড়া বিবাদে কাজ নাই। গণতন্ত্রের সময় ভাই।
রাজা
বুঝায়ে কর বিদায় না কি কও সবাই।
নাজির
সেনাপতি ভাই।
মন্ত্রী
সেনাপতি ভাই।
সেনাপতি
আমি নাই।
মন্ত্রী
নাই?
রাজা
হায় হায়।
নাজির
এখন উপায়?
সেনাপতি
উপায় একটাই। Direct Action চাই।
রাজা
অন্যথায় ?
সেনাপতি
ডান্ডার নাম শোনেন নাই?
নাজির
নির্দ্বিধায়।
মন্ত্রী
সন্দেহ নাই।
নাজির
অতএব ?
মন্ত্রী
Direct Action চাই।
রাজা
কিন্তু গণতন্ত্রের যে তেষ্টা মারা যায়?
সেনাপতি
যায় যাক। তবু Direct Action চাই।
রাজা
বুঝছি। সিংহাসন বেশি দিন আমার কপালে নাই। অতএব, রাজ্যপাল অনতিবিলম্বে এই দুই বিপথগামী বিদ্রোহীকে ডাণ্ডা-পেটা করিয়া গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ প্রদান করিতেছে।
[ইঙ্গিত নাটক ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
(সেনাপতি ডাণ্ডা নিয়ে এগিয়ে যায়)
কোরাস
ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা
বদু রাজা ঠাণ্ডা
ডাণ্ডা ডাণ্ডা
তেরে মেরে ডাণ্ডা করে দেবে ঠাণ্ডা
সেনাপতির ডাণ্ডা
গণতন্ত্রের ঝাণ্ডা
আতা আণ্ডা
গণতন্ত্রের আণ্ডা
সেনাপতির ঝাণ্ডা
প্রহরী
কিছু লোক বদু রাজার দর্শন প্রার্থী।
সেনাপতি
উহারা কি সম্ভ্রান্ত জাতীয় কেউ?
প্রহরী
না।
মন্ত্রী
তাহারা কি মোটা তাজা?
প্রহরী
নিতান্তই শীর্ণকায় । অস্থিচর্মসার।
নাজির
পেশা?
প্রহরী
তাদের ভাষায় অন্নহীন বুভুক্ষু মানুষ।
নাজির
অন্নহীন। আবার বুভুক্ষু অশুভ সঙ্কেত।
মন্ত্রী
কেন? অস্থিচর্মসার মানুষ। তারা কি হতে পারে বিপদের কারণ?
সেনাপতি
শুধু বিপদ নয় চদু । সর্বনাশের বান। ওদের নিশ্বাসে নিশ্বাসে কম্যুনিজমের ঘ্রাণ।
মন্ত্রী
এ্যা। তাহলে উপায়?
রাজা
নাই। বদু রাজা নাই ।
সেনাপতি
আছে। বদু রাজা আছে। খেলাটা জমুক আগে।
রাজা
কিভাবে। সেনাপতি কিভাবে।
সেনাপতি
সাক্ষাতের প্রয়োজন আছে। আজকে করিব প্রমাণ, বুদ্ধি আমার যথেষ্ট আছে।
মন্ত্রী
হ্যাঁ হ্যাঁ। সাক্ষাতের প্রয়োজন আছে। অন্যথায় রাজ্য শাসন উঠিবে লাটে
নাজির
ঠিক তাই। খামাখা পাবলিক খেপায়ে লাভ নাই।
সেনাপতি
প্রহরী, এক্ষুণি তাদের ডাকিয়া আনো সেনাপতির নির্দেশে। বদু রাজা সাক্ষাতে প্রস্তুত আছে।
বদু
আমি বরং একটু রাণীর কাছে যাই থাকিয়া থাকিয়া মনটা খালি করে আইচাই। অনেকক্ষণ রাণীকে দেখিনি কি না, তাই। যাই?
সেনাপতি
ভয় নাই। যতক্ষণ এই সেনাপতি আছে। কারো বাপেরও সাধ্য নাই, বদু রাজার ধারে কাছে ঘেঁষে। প্রহরী। তারা বদু রাজার সাক্ষাৎ পাবে, তবে ৫০০ গজ বিপদমুক্ত দূরত্বে।
(একদল বুভুক্ষু লোক ঢোকে )
১ম ব্যক্তি
মহারাজ। ঘরে এক ফোটা অন্ন নাই। ক্ষিধার জ্বালায় পরাণ যায়। কিচ্ছু না, খালি চাইরটা ভাত চাই ।
মন্ত্রী
বাজান রাজা বাজান। কলের গানটা বাজান।
সেনাপতি
প্যাথোস সুরে বাজান।
রাজা
চোখ ফেটে আসে জল। এমনি করিয়া জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?
২য় ব্যক্তি
অপদেবতার অভিশাপে বিরান গাও, খাল, বিল। পানির অভাবে শস্যক্ষেত ফেটে চৌচির। ভিক্ষা চাই না, কাজ চাই। খেয়ে পরে বাঁচতে চাই। দরিদ্রতা থেকে মুক্তি চাই।
রাজা
নাই। কিছু নাই।
মন্ত্রী
বাজান রাজা বাজান।
প্যাথোস সুরে বাজান
রাজা
নাই। কিচ্ছু নাই
সোনার বাংলায় সোনা নাই
শস্য ক্ষেতে শস্য নাই
কবির কণ্ঠে ভাষা নাই।
সেনাপতি
বাজান রাজা বাজান
প্যাথোস সুরে বাজান
রাজা
ভাইয়েরা, আর নাই বেশি দিন
বিশ্বব্যাংকে বাড়িতেছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।
দূরে দূরে কেন? কাছে আসো ভাই। গলাগলি করি সিনায় সিনা মিলাই। সমস্বরে গেয়ে উঠি সেই গান। হে দারিদ্র, তুমি মোদের করেছ মহান। তুমি মোদের দানিয়াছ খৃষ্টের সম্মান।
৩য় ব্যক্তি
পরনে মোদের বস্ত্র নাই।
১ম ব্যক্তি
পেটে মোদের অন্ন নাই।
রাজা
হায় হায়।
৩য় ব্যক্তি
পাটের ক্ষেতে পার্ট নাই-
রাজা
হায় হায়।
২য় ব্যক্তি
কাজ খুঁজি কাজ নাই।
রাজা
হায় হায়।
১ম ব্যক্তি
ঘর নাই বাড়ি নাই।
সেনাপতি
অস্ত্র মজুদ শেষ প্রায়।
২য় ব্যক্তি
মাথা গোজার ঠাঁই নাই।
মন্ত্রী
কবির কণ্ঠে ভাষা নাই।
৩য় ব্যক্তি
এ দুঃখের কি শেষ নাই?
নাজির
ঘি ছাড়া পোলাও খাওয়া যায়?
সৰাই
বদু রাজা অন্ন চাই।
বদু রাজা বস্ত্র চাই
চদু মন্ত্রী জবাব চাই ।
রাজা
হায় হায়
কিচ্ছু নাই। কিচ্ছু নাই
মন্ত্রী
বাজান রাজা বাজান
প্যাথোস রাগে সাজান
রাজা
(গান) আমার দ্বারে কেন দিলে নাড়া
ওগো, ওগো, ভিখারিণী
চাহনা ভালোবাসা, চাহ ভাতের থালা
আমার ভাঁড়ার ঘরে লেগেছে তালা
পরজনমে আবার হবে দেখা
সেদিন খাওয়াবো তোমায় কোরমা বিরানি
৩য় ব্যক্তি
এ দুঃখের কি শেষ নাই?
বদু রাজা জবাব চাই।
রাজা
নাই নাই কিচ্ছু নাই ।
কবির কণ্ঠে ভাষা নাই
আবেগ যেখানে গম্ভীর, ভাষা সেখানে স্টপ। (মুর্ছা যায়)
মন্ত্রী
হায় হায়, কি হলো কি হলো
সেনাপতি
হলো কি, হলো কি, রাজা মশাই?
৩য়জন
বদু রাজা জবাব চাই
নইলে কিন্তু রক্ষা নাই।
নাজির
নাই নাই। বদু রাজা আর নাই।
মন্ত্রী
হায় হায়। কবির কণ্ঠে ভাষা নাই। সমবেত বন্ধুরা, তোমাদের দুঃখ কষ্টে ব্যথিত হয়ে বদু রাজা তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
নাজির
চিরদিনের মত হারিয়ে ফেলেছে।
সেনাপতি
এখন তা হলে উপায়?
মন্ত্রী
(গান) কথা কও বদু রাজা। থাকিও না চুপ করে
মৌন গগনে হের কথার বৃষ্টি ঝরে।
কোরাস
বদু মান করেছে এবার যাবে কুটুম বাড়ি
আড়ি আড়ি আড়ি
মন্ত্রী
আর আশা নাই। কবির কণ্ঠে ভাষা নাই
আর কি, এবার যাও বিদায় বন্ধুরা বিদায়।
৩য় ব্যক্তি
অন্ন চাই, বস্ত্র চাই
দুঃশাসনের মৃত্যু চাই (প্রস্থান)
সেনাপতি
যাক। একটা সম্ভাবনাময় বিদ্রোহ দমন করা গেল। বদু রাজা। ও বদু রাজা।
মন্ত্রী
বদু রাজা।
নাজির
উঠেনাতো। ও বদু রাজা। তবে কি সত্যি সত্যি গেল?
মন্ত্রী
ভুখা নাংগারা গিয়াছে চলিয়া
বদু রাজা কথা বলো।
কোরাস
বসুর মান ভেঙেছে এবার যাবে শ্বশুর বাড়ি আড়ি আড়ি।
রাজা
সত্যি সত্যি গেল?
মন্ত্রী
জন্মের মত গেল।
রাজা
কিন্তু-
নাজির
কি?
রাজা
আমি যে এখনও শুনতে পাই।
সেনাপতি
কি?
রাজা
অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, দুঃশাসনের মৃত্যু চাই।
সেনাপতি
সবাই তো চায়। চাইলেই কি আর পাওয়া যায়?
রাজা
নাহ্। মনে আমার শান্তি নাই। সেকি হুঙ্কার। দুঃশাসনের মৃত্যু চাই। এখন আমি কোথায় যাই?
সেনাপতি
আমি আছি রাজা ভয় নাই।
রাজা
বিশ্বাস নাই। কাউরে আমার বিশ্বাস নাই। বিশ্বাস কর। এখনো শুনতে পাই। কি গর্জন। দুঃশাসনের মৃত্যু চাই। উপায় বাতলাও মন্ত্ৰী উপায় ।
সেনাপতি
সন্দেহ নাই। এই শালার পেটে কৃমি হয়েছে। আর রক্ষা নাই।
রাজা
চোপরাও হারামজাদা। জানো? জানো? আমি কে? হুঁ হুঁ হুঁ। আমি এই রাজ্যের রাজা।
সেনাপতি
শালায় বলে কি!
রাজা
কি! আমি শালা! যত বড় মুখ নয় ততো বড় কথা। ভুলে গেছো; আমি এই রাজ্যের রাজা। আমিই তোমারে বানায়েছি সৈন্যপাল। ইচ্ছা করিলেই পারি—
সেনাপতি
ছিড়িতে দু’একখানা বাল। শালা তোমার চাকরি নট। ছাড় সিংহাসন।
রাজা
আমাকে কিন্তু অপমান করা হচ্ছে।
সেনাপতি
এ্যা। বদু রাজার আবার মান অপমান। এই মাজা ভাঙ্গা রাজায় আমার দরকার নাই। শালার পাছায় লাথি মার। তারপর কর বিদায়।
রাজা
এবার কিন্তু সত্যি সত্যি আমার অপমান হচ্ছে।
সেনাপতি
(কলার ধরে যাও। তুমি রাণীর কাছে ফিরে যাও। আপাতত কিছুদিন আরাম করো । খাও দাও । বিশ্রাম নাও। যাও রাণীর কোলে যাও। (রাজার প্রস্থান) অতএব ব্যাপক গণমানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বদু রাজার দুঃশাসন খতম করা হইল এবং বদু রাজার পরিবর্তে চদু মন্ত্রীকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করা হইলো।(মন্ত্রী সেনাপতির পা সালাম করে সিংহাসনে বসে)।
নাজির
আমার কোনো প্রমোশন নাই?
সেনাপতি
নাই। তুমি আবার একটু বেশি বোঝ কিনা তাই ।
নাজির
আমার কিন্তু প্রমোশন চাই। অন্যথায়—
সেনাপতি
অন্যথায় ?
ছেড়ে দেব চাকুরি চলে যাব। গঠন করিব নতুন দল । হব তার দলপতি।
সেনাপতি
বুঝেছি। ধরেছে ভীমরতি। রাজ্য জুড়ে ঢল। দল, উপদল। প্রতি বছর অন্তর আবার দল বদল আসে আমার কাছে। দাবি দাওয়া, টুকিটাকি, আসল কথা তো বুঝি। হতে চায় মন্ত্রী। খারাপ কি। দু’বছর আগে আর পরে। অতএব, এই মর্মে ফরমান জারি করা যাইতেছে যে, বর্তমান নাজিরকে অস্থায়ীভাবে রাজ্যের মন্ত্রী নিযুক্ত করা হইল।
প্রহরী
সুসংবাদ সেনাপতি।
সেনাপতি
সুসংবাদ।
প্রহরী
তিন সন্তানের হত্যাকরী মাতাকে বন্দি করে আনা হয়েছে।
সেনাপতি
অবিলম্বে নিয়ে আসো তাকে আমার কাছে।
(জরাজীর্ণ বেশে একজন উদ্ভান্ত মহিলা ঢুকে)
সেনাপতি
নাম ?
মহিলা
হাওয়া বিবি।
সেনাপতি
স্বামী?
মহিলা
আদম আলী।
সেনাপতি
পিতা?
মহিলা
জাহান আলী।
সেনাপতি
তুমি সজ্ঞানে তোমার তিন সন্তানকে করেছ হত্যা?
মহিলা
হ
সেনাপতি
কিন্তু কেন!
মহিলা
কতক্ষণ সহ্য করা যায়। ক্ষিধার জ্বালায় মাথা ঘুরে ভন ভন। নিত্যদিন কানের কাছে বাজে একসুরে কান্দন কয় । খাওন চাই খাওন। বলেন, কতক্ষণ চুপ করে থাকা যায়? মুখেতে জবাব নাই। বলেন, কতক্ষণ সহ্য করা যায়? ঘরেতে খাওন নাই। বলেন, কতোক্ষণ মিছা কথা কওয়া যায়? পরনে কাপড় নাই। ক্ষেতেতে ফসল নাই। গাংগেও পানি নাই। বেবাক গিয়াছে শুকায়। ভাবিলাম। উপায় একটাই রাজা, উপায় একটাই। তিন পুতে ডাকিয়া আনি মাটিতে শোয়াই। আল্লার নাম নিয়া করিনু জবাই। দেখি ফিনকি দিয়া উঠে লউ। লাল, টকটকে লাল। নাক বরাবর টানি লইলাম ঘ্রাণ। ঘ্রাণ নয়, আচমকা শুনি তিন পুতের গান। বড় ক্ষিধা ডুখ লাগিছে, খাওন চাই মা জান ।
নাজির
খালি খাওন আর খাওন। অন্য কোনো কথা নাই?
মহিলা
ক্ষিধা তো। চাইরটা খাওন চাই।
সেনাপতি
খাবে?
মহিলা
(উৎসাহে) খামু
সেনাপতি
বুদ্ধি এসেছে ঘটে ।
নাজির
এসেছে। এসেছে।
চদু
এবার একটা কিছু হবে। (সেনাপতি কানে কানে বলে) বলেন কি? বদনাম না হয়ে যায় পাছে।
সেনাপতি
চিন্তা কি? ডান্ডাটা এখনো আমাদের কাছে।
(আগের তিনজন ঢোকে)
৩য় জন
অন্ন চাই বস্ত্ৰ চাই
দুঃশাসনের মৃত্যু চাই
শস্য ক্ষেতে শস্য নাই
চদু রাজা জবাব চাই
সেনাপতি
এবং অপদেবতার পতন চাই। কে সেই অপদেবতা? আমরা কি চিনি?
৩য় জন
মনে তো হয় চিনি। শুনেছি অতি জ্ঞানী ।
সেনাপতি
না। তোমরা চিনো না। আমি কিন্তু চিনি এবং নামটাও তার জানি।
৩য় জন
নাম কি তার রাজা?
সেনাপতি
নাম হল তার ক্ষুধা । বড় অপয়া, বড় কুচক্রী সে অপদেবতা। আমরা দেশ বাঁচাব। জান বাঁচাব। সেই দেবতার নির্বাসন দেব। দুঃখের কথা। সেই অপদেবতা তর করেছে এই মহিলার ঘাড়ে। হাওয়া বিবি, স্বামী আদম আলী, পিতা জাহান আলী। যে কিনা স্বহস্তে নিজের তিন সন্তানদের ধরি জবাই করে।
১ম জন
ধিক্কার ধিক্কার।
২য় জন
লজ্জা। লজ্জা!
সেনাপতি
প্রমাণ আছে। আমরা হাতেনাতে ধরেছি তারে। মনুষ্যবৃত্তি লোপ পেয়েছে। পশুবৃত্তি বসেছে চেপে ঘাড়ে।
(একখও রুটি হাওয়া বিবির সামনে দেয়। হাওয়া বিবি লাফ দিয়ে খাবার ধরার চেষ্টা করে।)

সেনাপতি
দেখেন ভাইসব । আলামতটা এইখানেতেই পাই। মানুষ হয়েও পশুর মতো কেমন করে লাফায়? মানুষ নয় সে পশু আপন হস্তে বধ করে কচি তিনটি শিশু।
(রুটিটি ওদের মধ্যে ছুড়ে দেয়। রুচি নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যায় চারজনের মধ্যে।)
ঝাপিয়ে পড়েন ঝাপটে ধরেন। একে অন্যের ঘাড়ে।
আজকে কিন্তু দেখবো আমরা কে জিতে কে হারে।
(প্রহরী মোটা ডান্ডা নিয়ে ওদের পেছনে দাঁড়ায়)
প্রহরী
সাবধান। জিততেই হবে। ক্ষুধা নামক অপদেবতার বিরুদ্ধে আমরণ সংগ্রাম চালিয়ে যাও। রণেভঙ্গ দেওয়া অমার্জনীয় অপরাধ। নিজেদের মধ্যে আপোস প্রচেষ্টা শাস্তিমূলক অপরাধরূপে বিবেচিত হইবে।
আগন্তুক
এবং এই খেলা অনন্তকাল ধরিয়া চলিতে থাকিবে। বর্তমানে যেই ডাণ্ডাটি আপনারা দেখিতে পাইতেছেন, ক্রমান্বয়ে ইহা আরও হৃষ্টপুষ্ট হইয়া রাষ্ট্রীয় শোভা বর্ধন করিবে। অন্য দিকে বদু চদু রাজারা আরও অধিক মাত্রায় চদু হইয়া মিলিয়া ঝুলিয়া রাজ্য শাসন করিবে। তবে আদম হাওয়ারা যদি এক হইয়া, কামড়া-কামড়ি বন্ধ করিয়া, সত্যিকার অপদেবতাকে চিহ্নিত করিতে পারে সে ক্ষেত্রে, ডান্ডাধারীর সাথে তাহাদের প্রবল সংঘর্ষের সৃষ্টি হইবে।
সূত্রধর
তাহা হইলে বদু চদুর কি হইবে?
আগন্তুক
বদু একবার চদু হইবে, চদু একবার বদু হইবে।
বদু চদু
(গান) আমি বদু আমি চদু আপনাদের জানাই
মোদের মতন অভাগা আর ত্রিভুবনে নাই।
গুরুর কথায় উঠি বসি গুরুর কথায় কান্দি হাসি
তবু গুরু হয় না খুশি, নিত্য মারে লাথি ঘুষি
তবু তেলাই বাপ বলিয়া কখনো বা দুলাভাই
এত কিছুর পরেও মোদের ক্ষমতার ভাগ নাই।
সূত্রধর
সামগ্রিক অর্থে এই হচ্ছে অবস্থা। এই ধারায় চলতে থাকলে সামনের অবস্থা বা ব্যবস্থাটা কি? আমরা কেউ চাইনা আরো ভয়াবহ হোক। কিন্তু যেটুকু দেখছি কিংবা দেখেও না দেখার ভান করছি। যদি হয়? কি করবেন? কিছু ভাবছেন কি?
কোরাস
মানুষ ভাবিতে কি দোষ
শুরুতে তোর রইলে গলদ শেষটা হবে কি
তুই আর কতকাল হয়ে বেহুস মুখ বুজে সইবি
সোনার দেশে হাজার শকুন দিতাছে গা ঝাড়া
তুই একবার শুধু শক্তি নিয়ে সাহস করে দাঁড়া
তোরা প্রতিরোধে দে নাড়া
একবার সাহস করে দাঁড়া
ভাত্তরে গলদের গোড়া
একবার সাহস করে দাঁড়া
কইরে সিস্টেমটাকে খোঁড়া
একাত্তুরের যোদ্ধারা তোরা
একবার সাহস করে দাঁড়া
আরও দেখুনঃ