দেবী চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- ১৯৬০ সালের সত্যজিৎ রায় পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। ছবিটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শর্মিলা ঠাকুর, ছবি বিশ্বাস, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনিল চট্টোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানুষের ধর্মীয় আবেগ, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে এই কাহিনিকে সত্যজিৎ অসামান্য দক্ষতায় চলচ্চিত্রায়িত করেন, বিশেষ করে ছবির প্রথম দৃশ্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং চিত্রভাষার প্রয়োগের দিক থেকেও ছবিটি আলোচনার দাবি রাখে, এই ছবির অভিনয়, ক্যামেরার কাজ, শিল্পনির্দেশনা ছবিটিকে সার্থক শিল্প হিসাবে উত্তীর্ণ করেছে।
দেবী চলচ্চিত্র
- প্রযোজনা—সত্যজিৎ রায় প্রোডাকসন্স।
- কাহিনি—প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।
- চিত্রনাট্য ও পরিচালনা — সত্যজিৎ রায়
- সংগীত – ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ।
- চিত্রগ্রহণ – সুব্রত মিত্র।
- শিল্প নির্দেশনা—বংশী চন্দ্রগুপ্ত।
- শব্দগ্রহণ — দুর্গাদাস মিত্র, সত্যেন চট্টোপাধ্যায়।
- সম্পাদনা— দুলাল দত্ত ।
- গীতিকার—রামপ্রসাদ সেন, সত্যজিৎ রায়।
দেবী চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —
ছবি বিশ্বাস, শর্মিলা ঠাকুর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, শ্ৰীমান অর্পণ চৌধুরী, অনিল চট্টোপাধ্যায়, কালী সরকার, মহম্মদ ইস্রাইল, খগেশ চক্রবর্তী, শান্তা দেবী, নগেন্দ্রনাথ কাব্যব্যাকরণতীর্থ, ভোলানাথ কয়াল, অনিল মিত্র, তারাপদ নন্দী, অরবিন্দকুমার চৌধুরী।
প্রসঙ্গত সত্যজিৎ রায় এবং অমিয়নাথ মুখোপাধ্যায় যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেন।
দেবী চলচ্চিত্রের কাহিনি—
চণ্ডীপুরের জমিদার কালীকিঙ্কর রায় (ছবি বিশ্বাস) স্বপ্নে জানতে পারেন যে তাঁর ছোট পুত্রবধূ দয়াময়ী (শর্মিলা) মাকালীর অবতার, তিনি দয়াময়ীকে দেবিত্বে অভিষিক্ত করে তার পূজা শুরু করেন। দয়াময়ীর স্বামী উমাপ্রসাদ (সৌমিত্র) কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করে, বিষয়টি জানতে পেরে সে বাবার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে এবং দয়াময়ীকে নিয়ে কলকাতা চলে যেতে চায়।
দয়াময়ীও প্রথমে বিষয়টি বিশ্বাস না করলেও শশুরের কুসংস্কারের প্রতিবাদ করতে পারে না, ক্রমশ তারও মনে হয় সে স্বামীর সাথে চলে গেলে স্বামীর অকল্যাণ হতে পারে। উমাপ্রসাদ একাই কলকাতা চলে যায়। কালীকিঙ্করের বড় ছেলে তারাপ্রসাদের (পূর্ণেন্দু) ছেলে খোকা (অর্পণ) অসুস্থ হয়।
তারাপ্রসাদের স্ত্রী হরসুন্দরীর (করুণা) বারংবার অনুরোধেও খোকাকে ডাক্তার না দেখিয়ে দয়াময়ীর পায়ের কাছে শুইয়ে রাখা হয়। দয়াময়ীর দেবিত্বে হরসুন্দরীর বিশ্বাস ছিল না। কালীকিঙ্করের ধারণা দয়াময়ীর দয়াতেই খোকা সুস্থ হয়ে উঠবে।
খোকা মারা যায়। উমাপ্রসাদ আবার বাড়ি আসে, সে তার স্ত্রীকে জোর করে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চায়, এদিকে খোকার মৃত্যুতে দয়াময়ী বুঝতে পারে মানুষ কখনও অবতার হয় না. শোকাহত দয়াময়ী পাগল হয়ে যায়, তার মৃত্যুতে ছবি শেষ হয়।
পুরস্কার—
১৯৬১ সালে বাংলা ভাষায় নির্মিত বছরের শ্রেষ্ঠ ছবি হিসাবে রাষ্ট্রপতির পুরস্কার লাভ করে।
আরও দেখুনঃ