ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্র

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- এটি বাংলা হাস্যরসাত্মক রোমান্টিক চলচ্চিত্র। এই ছবির সুরকার ছিলেন নচিকেতা ঘোষ।এই সিনেমার চিত্রগ্রহণ হয় হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুরে। চলচ্চিত্রটিতে উত্তমকুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জয়া ভাদুড়ী, পার্থ মুখোপাধ্যায়, জহর রায় অভিনয় করেছেন। এই ছবিটি অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ১৯৭১ সালে মুক্তি পায়।

গল্পটি দুটি গ্রামের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। কলকাতার সচ্ছল ব্যবসায়ী কালিগতি দত্ত একজন ফুটবল পাগল মানুষ। তার নিজের ক্লাব সর্বমঙ্গলা স্পোর্টিং ক্লাবের প্রধান খেলোয়াড় তার ভাই বগলা। তার দল হাড়ভাঙ্গা গ্রামে শিল্ড ফাইন্যাল খেলতে যায়। ম্যাচ জিতলেও গ্রামের জিমিদার ও হাড়ভাঙা ক্লাবের সভাপতি গোবর্ধন চৌধুরী তার ভাগ্নি মনসার সাথে জোর করে বগলার বিয়ে দিয়ে দেয়।মনসাকে জোর করে ফেরত পাঠিয়ে দেন কালিগতি। শিল্ড ফাইন্যালের বদলা নিতে দলবল নিয়ে তিনি আবার যান হাড়ভাঙা গ্রামে ম্যাচ জিতে আসার জন্যে।

 

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্র

  • প্রযোজনা — শ্রী প্রোডাকসন্স।
  • চিত্রনাট্য ও পরিচালনা — অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়।
  • কাহিনি- – দেবাংশু মুখোপাধ্যায়।
  • সংগীত পরিচালনা নচিকেতা ঘোষ।
  • চিত্রগ্রহণ — বিজয় ঘোষ।
  • শিল্প নির্দেশনা—সত্যেন রায়চৌধুরী।
  • সম্পাদনা— অমিয় মুখোপাধ্যায়।
  • শব্দগ্রহণ—নৃপেন পাল, অনিল নন্দন, বাবু সেন, সত্যেন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • গীত রচনা-প্রণব রায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • নেপথ্য কণ্ঠ— হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, আরতি মুখোপাধ্যায়।

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

উত্তমকুমার, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, জয়া ভাদুড়ী, পার্থ মুখোপাধ্যায়, জহর রায়, রবি ঘোষ, তপেন চট্টোপাধ্যায়, সুখেন দাস, হরিধন মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় রায়, নৃপত্তি চট্টোপাধ্যায়, তরুণকুমার, তপতী দেবী, অনুভা ঘোষ।

 

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

ধন্যি মেয়ের কাহিনি—

কালীগতি দত্ত (উত্তম) ফুটবলঅন্ত প্রাণ, তার নিজের একটি ফুটবল টিমও আছে। তার ভাই বগলা (পার্থ) এই টিমের ক্যাপ্টেন। কালীগতির টিম হাড়ভাঙা গ্রামে শীল্ড টুর্নামেন্টে ফাইনাল খেলার জন্য যায়। প্রতিপক্ষ দল হাড়ভাঙা স্পোর্টিং ক্লাব। হাড়ভাঙা ক্লাবের প্রধান কর্মকর্তা ভূতপূর্ব জমিদারের ছেলে গোবর্ধন (জহর)। গোবর্ধনের ভাগ্নি মনসা (জয়া) একটু ডানপিটে ধরনের। খেলায় কালীগতির দলের কাছে গোবর্ধনের দলের হার হয়, বগলা একাই বারোটি গোল দেয়।

গোবর্ধন হারের প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে জোর করে ভাগ্নি মনসার সাথে বগলার বিয়ে দেন। এই বিয়েতে বগলা বা মনসা কারুরই আপত্তি ছিল না। কালীগতি এই বিয়ে মানতে রাজি নন। বগলাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেও মনসা জোর করেই বাড়িতে প্রবেশ করে। কালীগতির স্ত্রী স্নেহময়ী (সাবিত্রী) মনসার ব্যবহারে মুগ্ধ, স্বামীকে এই বিয়ে মেনে নেওয়ার জন্য বোঝাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ। মনসা শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে হাড়ভাঙায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পরের বছর শীশু ফাইনালে আবার কালীগতি এবং গোবর্ধনের দল মুখোমুখি।

 

ধন্যি মেয়ে চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

গোবর্ধন কলকাতার বড় দল থেকে কিছু ভালো প্লেয়ারকে ভাড়া করে আনার ব্যবস্থা করেন। মনসা এবং গ্রামের পুরোহিতের (রবি) মিলিত চক্রান্তে ভাড়াটে প্লেয়াররা গ্রামে না এসে মাঝপথ থেকেই কলকাতায় ফিরে যায়। গোবর্ধন বিষয়টি জানতে পেরে মনসাকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। খেলায় আবার বগলার নেতৃত্বে কালীগতির দলের কাছে গোবর্ধনের দলের পরাজয় হয়। মনসাই যে তার দলের জয়ের নেপথ্যে আনতে পেরে কালীগতি যথাযোগ্য মর্যাদায় তাকে বাড়ি নিয়ে যান।

কমেডি ছবি হিসাবে অরবিন্দবাবুর এই ছবি দর্শকদের সাথে সাথে সমালোচকদেরও প্রশংসা পেয়েছিল। উত্তমকুমার, সাবিত্রী চ্যাটার্জী, জহর রায়ের অভিনয়ে কমেডি সিচুয়েশনগুলির উল্লেখযোগ্য ব্যবহার লক্ষ করা যায় ছবির চারটি গানই যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল।

 

 

google news logo

 

ধারাভাষ্যকার হিসাবে সুখেন দাস, মনসার চরিত্রে জয়া এবং স্নেহময়ীর ভাই-এর চরিত্রে তপেন চট্টোপাধ্যায় উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেন। হিমানীশ গোস্বামী ছিলেন এই ছবির সহ চিত্রনাট্যকার, তাঁর সহযোগিতায় অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের জমাট চিত্রনাট্য এবং অমিয় মুখোপাধ্যায়ের সুযোগ্য সম্পাদনা এই ছবিকে বক্স অফিসে সাফল্য এনে দেয়।

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment