যারা নতুন অভিনয়ে আসতে চান, তাদেরকে অন্তত এই লেখাটি একবার পড়ে নিতে অনুরোধ করবো। এখানে কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নির্মাতার সাথে কথা বলে নতুন অভিনেতাদের জন্য কিছু টিপস দেয়া হলো। এগুলো আপনারা মনে রাখলে ক্যারিয়ারে সফল হবার সম্ভাবনা বাড়বে।
১. ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
অভিনয় হল ঝুঁকি নেওয়ার শিল্প। নিশ্চিত ভাবে সম্ভব নয় আপনি কেমন করবেন। তাই শুরু করলে বোঝা যাবে। আর আপনি যদি শুধুমাত্র নায়ক বা নায়িকা হতে চান, তবে বিষয়টি আরও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ তাতে অপশন আরও কম।
নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন – আপনি অভিনয় দেখা এবং করাতে মজা পান কি না। এটা খুব জরুরী। আপনি যদি অভিনয় দেখা বা করাতে মজা না পান, তবে এই শিল্প আপনার জন্য না। যিনি নিজে অভিনয় দেখা বা করাতে মজা পান না, তিনি ভালো অভিনেতা হওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই নিজের কাছে সততার সাথে প্রশ্নটি করুন এবং দেখুন উত্তর কি পান। তবে বিষয়টি এরকম নয় যে ন্যাচারাল না থাকলে হবে না। আপনি প্রতিনিয়িত চেষ্টা করে এটাকে ডেভেলপ করতে পারেন। সেটির ইচ্ছে থাকলেই আগান।
২. মানুষকে পর্যবেক্ষণ !
আপনি যদি আশপাশের বিভিন্ন মানুষের আচার, আচরণ, ওঠাবসা পর্যবেক্ষণ করতে মজা না পান, তবে আপনার মধ্যে অভিনেতা স্বত্বার কিছুটা হলেও ঘাটতি আছে। চারপাশের মানুষ আপনার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক।
তাই আপনার চারপাশের লোকদের পর্যবেক্ষণ করুন এবং তারা কীভাবে আচরণ করে তা দেখুন। এটি করার জন্য দুর্দান্ত জায়গাগুলি হল: ট্রেন, ক্যাফে বা পার্কের বেঞ্চে বসা। যত তাড়াতাড়ি আপনি সত্যিকারের মানুষদের পর্যবেক্ষণ করা শুরু করবেন, আপনার মধ্যে নানা চরিত্রের ঘোরাঘুরি শুরু হবে। মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা আপনার চরিত্রের অংশ বানিয়ে ফেলতে হবে, যেন একসময় আপনার অবচেতন মন কাজটি করতে থাকে।
৩. লেখাপড়া এবং প্রশিক্ষণ কতটুকু দরকার:
অনেক ভালো প্রতিষ্ঠিত অভিনেতারা একাডেমীক লেখাপড়া করেন নি বা কোন প্রশিক্ষণও নেন নি। একথা সত্য বটে। তবে যুগ পালটেছে। এখন প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। প্রস্তুতি বা প্রি-প্রোডাকশনের সময় কমে গেছে, প্রোডাকশনের সময় কমে গেছে। তাই নুন্যতম লেখাপড়া এবং বেশি খানিকটা প্রশিক্ষণ জরুরী।
একাডেমীক কোন ডিগ্রি আপনার অভিনেতা হবার জন্য জরুরী নয়। তবে আপনি যতি একাডেমীক লেখাপড়াটা করে নেন, তাহলে সেটা আপনাকে এগিয়ে রাখবে। কারণ একাডেমী লেখাপড়ার প্রক্রিয়াতে আপনার কিছু আত্বউন্নয়ন হবে, নতুন জিনিস শেখার প্রক্রিয়া জানতে পারবেন, সেটাই আপনার কাজে দেবে।
তবে যেটা সবচেয়ে জরুরী বিষয় তা হলো প্রশিক্ষণ। আপনি যদি প্রশিক্ষিত না হন, তবে একই রকম মেধা নিয়ে আপনি একজন প্রশিক্ষিত অভিনেতার সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। এই প্রতিযোগিতার যুগে এজন্যই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরী। অভিনয় প্রশিক্ষণের জন্য এখন নানা থিয়েটার গ্রুপ আছে, স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনাকে যেকোনো একটি জায়গায় ভর্তি হয়ে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠান থেকে অভিনয়ের প্রাথমিক সকল কারিগরি বিষয়ের জ্ঞান আপনাকে নিয়ে নিতে হবে। তবে এই জ্ঞান নেয়াই শেষ কথা নয়। আপনি ওসব প্রতিষ্ঠান থেকে যা শিখবেন, সেগুলোর নিয়মিত চর্চা করলেই ক্রমশ আপনি চৌকশ হয়ে উঠবেন। এই প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াতে আপনাকে অন্তত ২ বছর যুক্ত থাকতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আপনার নিজেকে কিছু জিনিস শিখতে হবে। আসুন দেখে নেই তার সংক্ষিপ্ত একটি তালিকা।
নিজের যত্ন নেয়া :
আপনার সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত চেহারা বা ফিগার যেমনই হোক। তার নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। কারন একজন অভিনেতার সুস্থ্যতা এবং গোছগাছ থাকাটা খুবই জরুরী। তবে যত্নটা শুধুমাত্র জিম, ফেশিয়াল নয়। আপনাকে যত্ন নিতে হবে আপনার কণ্টের। যত্ন নিয়ে হবে আপনার চোখের। অর্থাৎ অভিনয়ে গুরুত্বপুর্ন প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের যত্ন নিতে হবে। আর এসব যত্ন নেবার যে নিয়ম আছে সেগুলো অগ্রজ কোন আর্টিস্ট বা অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে জেনে নিন। আমরও আমাদের চ্যানেলে, পেজে বা ওয়েবসাইটে নিয়মিত এসব বিষয়ে টিপস রাখবো।
উচ্চারণ ঠিক করুন:
আমাদের এই প্রজন্মের আর্টিস্টদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নির্মাতারা একটা অভিযোগ নিয়মিত করেন, তা হলো আর্টিস্ট এর উচ্চারণে সমস্যা বা কথায় আড়ষ্টতা। উচ্চারণে সমস্যা বা আড়ষ্টতা আছে এরকম আর্টিস্ট নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রোডাকশনের কোয়ালিটি খারাপ হয়। তাছাড়া তাকে ঠিক করাতে গিয়ে যে সময় নষ্ট হয়, তাতে প্রোডাকশনের খরচ বাড়ে। এজন্য এরকম আর্টিস্ট কেউ বারবার নিতে চাইবে না।
আপনার যদি এরকম সমস্যা থেকে থাকে তবে তা থেকে উত্তরণের উপায় আছে। আপনার বাগযন্ত্রগুলো ব্যায়ামের মাধ্যমে ঠিক করে নিতে হবে। বাগযন্ত্রগুলো হলো ঠোঁট/ওষ্ঠ্য, দন্ত্য/দাঁত [ অগ্রদন্ত্য, পশ্চাৎদন্ত্য পাটি, দন্ত মূল], তালু [ অগ্রতালু/শক্ত তালু, পশ্চাৎতালু/নরম তালু ], নাক/নাসা [ নাসিকা, নাসা-গহ্বর ], জিভ [আলজিভ, জিভ অগ্র, সম্মুখ জিভ, পশ্চাদজিভ , জিভমূল], কণ্ঠ [ স্বরপল্লব, স্বরতন্ত্রী ], ফুসফুস। এর সব গুলোর জন্য আলাদা ব্যায়াম আছে। সেগুলো আমাদের বাংলা এবং আবৃত্তি চ্যানেলে পেয়ে যাবেন। সেগুলো দেখে নিয়মিত চর্চা করুন।
বাংলা শব্দ উচ্চারণের ক্ষেত্রে রূপের অমিল একটা বড় সমস্যা। বাংলা লিখিত-রূপের সঙ্গে উচ্চারিত-রূপ প্রায়শই মেলে না। যেমন: পদ্ম-পদ্দো, বিশ্ব-বিশশো। এই পার্থক্যটা আগের নির্মাতারা খুব ধরতেন। এখন কিছুটা ছাড় দেয়া হয়। তবে আপনি সেরা হতে চাইলে এই বিষয়ক ভিডিও দেখে [ আমাদের বাংলা ও আবৃত্তি চ্যানেলে পাবেন] বা আর্টিকেল পড়ে ঠিক করে নিতে হবে।
এছাড়া সংখ্যাগত অমিল জিনিসটা বুঝে নিতে হবে। লক্ষ্য করবেন বাংলা বর্ণমালার একাধিক বর্ণের উচ্চারণ একটি আবার কখনও দেখবেন একটি বর্ণের উচ্চারণ অধিক। যেমন: শ-ষ-স। তারপর বাংলা উচ্চারণে প্রাণ ঘটিত সমস্যা আছে। উচ্চারণকালে মহাপ্রাণ ধ্বনিগুলো দেখবেন প্রায়ই অল্পপ্রাণ ধ্বনি হিসেবে উচ্চারিত হয়। যেমন ধরুন তারিখ-তারিক। এটির ক্ষেত্রেও উপরে উল্লেখিত সমাধান ফলো করুন।
আঞ্চলিক ভাষা বলতে পারা একটা দক্ষতা। আপনি যদি একাধিক আঞ্চলিক একসেন্ট বলতে পারেন সেটি ভালো। কিন্তু আপনার শুদ্ধ বাংলা ডায়লগের মধ্যে আঞ্চলিক টান আসার সমস্যা থেকে বের হতে হবে। যেমন “কথা” কে “কতা” বলা, বা “প্রার্থনা” কে “প্যারারথনা”, বা “প্রথম” কে “পরথম” বলা যাবে না। এই সব সমস্যার সমাধান কিন্তু খুব কঠিন নয়। আপনাকে শুধুমাত্র ধৈর্য ধরে ১ মাস ১ ঘন্টা করে সময় দিতে হবে।
বাংলা উচ্চারণ নিয়ে আমরা আমাদের গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্কের ইনডেক্স চ্যানেলে একটা সিরিজ করেছি। আমাদের বাংলা গুরুকুল চ্যানেলেও এই বিষয়ক আয়োজন আছে। আপনারা সেগুলো দেখে উচ্চারণ ঠিক করে নিতে পারবেন।
এই লেখাটি এখনো উন্নয়নের কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে বিস্তারিত পাবেন।
[ নতুন অভিনয়ে আসতে চান ? ]
আরও পড়ুন:
আমি তো কোন প্রশিক্ষণ নেইনি তাহলে কি আমি অভিনেতা হতে পারবো না,,,, আর আমাকে ভালো একটা অ্যক্টিং স্কুলের বা একাডেমির মোবাইল নাম্বার দিন যাতে করে আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি