আশিস গোস্বামীর “বাংলা নাট্য সমালোচনার কথা” বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে “এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত” নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি লিখেছেন:
এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত
১৯০১ সালের আগে নাট্যপত্র না থাকলেও নাট্য সমালোচনা ছিল। সেই সমস্ত সমালোচনাগুলি পড়লে বোঝা যায় কোন দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা প্রয়োগ শিল্পের সমালোচনা করা উচিত বলে মনে করতেন তাঁরা। বিশেষত নাট্যশিল্পের মতো এক প্রয়োগ শিল্প— যা একাধারে সমসাময়িক ও দেশকাল নির্ভর। তাই তার সমালোচনা কালে নাটকের সময়, দর্শকদের প্রতিক্রিয়া, নাটকের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটকেও বিচার করতে হবে। তবেই সেই সমালোচনা শুধুমাত্র প্রযোজনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না তা অগ্রগতির বাহনও হয়ে উঠবে।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
এই সমালোচকের স্ত্রী চরিত্রের অভিনয় ভালো লেগেছিল এটা বোঝা যায়। সেই সঙ্গে বাংলা নাটকে নারীদের দিয়ে নারীচরিত্র অভিনয় করানোর কথাটাও জরুরি। কারণ মঞ্চে নারীদের আগমন সমাজ অগ্রগতির নিদর্শন। এই সমালোচকের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গিকে অবশ্য ইংলিশম্যান অ্যান্ড মিলিটারি ক্রনিকাল’ পত্রিকা ভালো চোখে দেখেনি। সেখানে এর বিরোধিতা করে লেখা হল, “এই সকল ন্যাট্যাভিনয়ে হিন্দুদিগের মানসিক বা নৈতিক কোনোপ্রকার উন্নতি হয়ই না। বরং লোকহিতৈষী ব্যক্তি মাত্রেরই এই সকল অভিনয়ের বিরুদ্ধাচারণ করা উচিত। এই সকল অভিনয়ে কোনো নূতনত্ব, উপকার, এমনকি শালীনতাও নাই।”
কখনো কখনো এই বিরূপ সমালোচনার মধ্যে পড়তে হলেও তৎকালীন সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি মূলত ছিল থিয়েটারকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথে অত্যন্ত সহায়ক। যেমন সতু বাবুর বাড়িতে প্রথম নাটক ‘শকুন্তলা’র অভিনয় প্রসঙ্গে হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকায় (৫/২/১৬০৭) লিখল—“এই নাটকটি অভিনয়ের পক্ষে খুব উপযুক্ত। ইহার প্রকৃষ্ট প্রমাণ আমরা পাই গত মাসের ৩০-এ তারিখের রাত্রে যে অভিনয় হয়, তাহা হইতে। যে যুবকটি শকুন্তলার ভূমিকা গ্রহণ করেন, তাঁহার অঙ্গভঙ্গি ও চলাফেরা সত্যই রাণীর মত এবং যে চরিত্র তিনি অভিনয় করিয়াছিলেন তাহার উপযুক্ত হইয়াছিল।” এই অকপট প্রশংসার মধ্যে অতিরঞ্জন থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু সমালোচকের প্রশংসাসুলভ মানসিকতা আমাদের নাট্যধারাকে সদর্থ করে তুলতে সাহায্য করেছিল অবশ্যই।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
….এ ধরনের উদ্ধৃতি আরও অনেক দেয়া যেতে পারে। কিন্তু ইংরেজি পত্রিকাগুলি অন্যতর ভূমিকাও পালন করেছিল। এই ইংলিশম্যান’ পত্রিকা মারফতই আমরা প্রথম ন্যাশনাল থিয়েটার প্রতিষ্ঠার কথা জানতে পারি। দি ক্যালকাটা ন্যাশনাল থিয়েট্রিক্যাল সোসাইটি’-র সংক্ষিপ্ত নামকরণই যে ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’ এটাও প্রথম জানা যায় এই পত্রিকার মাধ্যমেই।
ন্যাশন্যাল থিয়েটারে প্রথম অভিনয় হয় ‘নীলদর্পণ’ ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর। এই থিয়েটারের সবচেয়ে বড়ো পৃষ্ঠপোষকের ভূমিকা নিয়েছিল ‘অমৃতবাজার পত্রিকা”, ১২ ডিসেম্বর ওই অভিনয়ের সমালোচনায় লেখা হয়েছিল—“অভিনয় সুচারু হইয়াছিল, আমরা পরিতৃপ্ত হইয়াছি।…নীলদর্পণ নাটক দেশপ্রসিদ্ধ। ইহার গল্পভাগ অনেকেই জানেন। কিন্তু একথাও বলিতে হয় যে গত শনিবারে নীলদর্পণের ‘নবযৌবন’ হইয়াছে। শ্বেতাঙ্গ গণের পক্ষপাতিত্ব ও অত্যাচার অনেকেই মধ্যে মধ্যে দেখিতেছেন কিন্তু তথাপি সেই সকল কার্য্য রঙ্গভূমিতে অভিনীত দেখিলে এক রূপ অপরূপ মনোভাব মনোমধ্যে প্রকটিত হইতে থাকে।
…অভিনেতৃগণের মধ্যে আমরা তোরাপেরই সম্যক প্রশংসা করি। তেজস্বী, প্রভুভক্ত তোরাপের চরিত্র সুন্দর প্রদর্শিত হইয়াছিল। গোলোক বসু ও গোলোক বসুর গৃহিণীর চরিত্র একজন কর্তৃকই অভিনীত হইয়াছিল। ইনি একটি পাকা লোক। কিন্তু আমাদের বিবেচনায় ইনি গৃহিণীর চরিত্র তেমন সুন্দর রূপে দেখাইতে পারেন নাই। সাবিত্রী ও রেবতী অতি উত্তম, সৈরিন্ধ্রী তত ভাল হয় নাই কিন্তু তাহার রোদন স্বর অপূর্ব
বলিতে হইবে। সরলা অতি সুশীলা, প্রকৃত ছোট বউ বটে। আদুরি উত্তম। আর অধিক সমালোচনার প্রয়োজন নাই। সকলেই আমাদিগকে সন্তুষ্ট করিয়াছেন। অভিনয় ক্রিয়াও সর্বাঙ্গসুন্দর হইয়াছে।…কিন্তু সঙ্গীত ভাগে কেহই তৃপ্ত হন নাই।… দেশের একটি প্রকৃতির স্ফূর্তি পাইতে চলিল। এমন সকল কার্য্যের আমরা নিয়ত মঙ্গলাকাঙ্খী। অভিনয় সমাজ চিরস্থায়ী হউক এবং দিন দিন উন্নতি লাভ করিতে থাকুক।”
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
‘এডুকেশন গেজেট’ কিন্তু এতটা নির্ভেজাল প্রশংসা করতে পারেনি। অমৃতবাজার অভিনেতাদের সমালোচনা করলেও সংগীত সম্পর্কে সামান্য উক্তিই করে। কিন্তু ‘এডুকেশন গেজেট’ এ বিষয়ে যথেষ্ট কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। সেখানে লেখা হয়েছে— “ঐকতান বাদ্যটি আমাদের বঙ্গীয় হয় নাই। কতগুলি চুনোগলির ফিরিঙ্গি দ্বারাই সম্পন্ন হইয়াছিল। কিন্তু তাহাতে বোধহয় কেহই কিছু মাত্র আনন্দানুভব করেন নাই। ইহা অপেক্ষা যদি কতিপয় আমাদের ভদ্র যুবা দ্বারা কয়েকখানি আবশ্যকীয় যন্ত্র সহযোগে ঐকতান বাদন হইত, তাহা বোধহয় সকলেরই শ্রুতি মধুর হইত।”
এ ছাড়াও মঞ্চসজ্জা সম্পর্কেও আলাদা করে সমালোচনা করা হয়েছে— “পরিশেষে অভিনয়াগারের দৃশ্যগুলিন সম্বন্ধে কিছু বলা আবশ্যক। অধিকাংশ দৃশ্যগুলি ‘ন্যাশনাল থিয়েটার’-এর উপযুক্ত হয় নাই। কারণ জাতীয় চরিত্রের আদর্শ সকল স্থাপন করাই কর্তব্য। ‘গোলাঘরের সম্মুখ’ ও ‘কুটির দপ্তরখানার সম্মুখ’-এর চিত্র দুইখানি মন্দ নহে। অনেক গৃহের পার্শ্ববর্তী দৃশ্য (wing) না থাকাতে গৃহের সৌন্দর্যের হ্রাস হইয়াছিল। এবং কোন কোন গৃহের দৃশ্যও অভিনয়ের উপযুক্ত হয় নাই।” নাটক কেবলমাত্র বিষয়গত দিক থেকেই ‘জাতীয়’ চরিত্র হয়ে উঠতে পারে না, তার প্রয়োগ-শৈলীটাও জরুরি। সুতরাং মঞ্চসজ্জাকেও ‘জাতীয়’ চরিত্রানুসারী হতে হবে এমন দাবি করা হয়েছে এই অংশে। সমালোচক মনেপ্রাণে যে ন্যাশনাল থিয়েটারের পক্ষপাতী সে প্রমাণও এই সমালোচনার মধ্যেই রয়েছে।
“উপসংহারে বঙ্গবাসীদিগের নিকট সানুনয় নিবেদন যে, তাঁহারা এই জাতীয় নাট্যালয়কে অবজ্ঞা না করিয়া ইহা ক্রমশঃ উৎসাহ ও যোগ সংস্থাপন করেন।…যাহাতে বঙ্গদেশের মধ্যে অশ্লীল অসভ্য ও আমোদ সকল দূরীভূত হইয়া বিশুদ্ধ ও নির্দোষ আনন্দ প্রচলিত হয়, তজ্জন্য আমাদের সর্ব্বতোভাবে যত্ন করা কর্তব্য। অভিনেতৃবর্গের নিকটেও আমাদের নিবেদন এই যে তাঁহারা যাহাতে নাট্যালয়ে জাতীয় সকল প্রকার রীতিনীতি রক্ষা করিতে পারেন, তাহার জন্য যেন বিশেষ যত্নশীল হন।” এখানে কেবলমাত্র নির্ভেজাল সমালোচকের ভূমিকা নেই। থিয়েটারের পৃষ্ঠপোষকেরও ভূমিকা রয়েছে। সমালোচকের এই ভূমিকাটি অত্যন্ত জরুরি। তিনি যেমন একাধারে সমালোচক অন্যদিকে বর্তমান থিয়েটার আরও কীভাবে ফলপ্রসু হয়ে উঠতে পারে, পৌঁছোতে পারে মানুষের কাছে, ভিত্তিভূমি যাতে মজবুত হয় সেই চেষ্টাটাও জরুরি।
প্রসঙ্গত ওই ন্যাশনাল থিয়েটারের ‘জামাই বারিক’ নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর ১৮৭২ ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’য় যে-সমালোচনাটি প্রকাশিত হয়েছিল তা উল্লেখ করা প্রয়োজন। এখানে মূল নাটকের সঙ্গে অভিনীত নাটকের তুলনা করে সমালোচনাটি করা হয়েছে। মঞ্চের প্রয়োজনে মূল নাটকের সম্পাদনা পরিচালককে করতেই হয়। সেই সম্পাদনার কাজটি কতখানি সার্থক হয়ে উঠল সেটা দেখানোও সমালোচকের অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করেছেন আলোচক। এই আলোচনাটি সেদিক থেকে ভীষণ জরুরি। “জামাই বারিক।
![এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত - আশিস গোস্বামী 5 অমৃতবাজার পত্রিকা amrito bazar potrika [ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত - আশিস গোস্বামী ]](http://actinggoln.com/wp-content/uploads/2021/11/অমৃতবাজার-পত্রিকা-amrito-bazar-300x169.jpg)
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
-ন্যাশনাল থিয়েটারে নীলদর্পণের অভিনয় দেখিয়া আমরা যেমন ক্রন্দন করি, গত শনিবারে জামাই বারিক দেখিয়া তেমনি হাসিয়াছিলাম।.. এবারকার অভিনেতৃগণ এক একটি রত্ন বিশেষ। সকলের বিশেষত পদ্মলোচন, বগলা ও বিন্দুর অংশ বড় অপূর্ব হইয়াছিল, ইহারা এক একটি বিষয় অভিনয় করিলেন। আর আমাদের অত্যন্ত আনন্দ হইতে লাগিল। কিন্তু ইহারা একটি বিষয়ের অভিনয় না করিয়া আমাদের বিশেষ মনঃক্ষুণ্ণ করেন। কামিনীর স্বামীর ভিটার উপরে পড়িয়া স্বামীর নিমিত্ত রোদন করা গ্রন্থের একটি অত্যুৎকৃষ্ট অংশ এবং সেইটা কামিনীর দ্বারা অভিনয় না করাইয়া ময়রাণীর মুখে বলাতে একেবারে মাটি হইয়াছে।” একবার এই ‘জামাই বারিক’ নাটকের পর ‘ভারতমাতা’ নামে একটি রূপক নাট্যও অভিনীত হয়।
১৫ ফেব্রুয়ারির এই অভিনয়ের সমালোচনা ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৭২ ‘অমৃতবাজার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেই সমালোচনায় রঙ্গমঞ্চের সমাজ সংস্কারক ভূমিকাই বড়ো করে এবং প্রশংসার চোখে দেখানো হয়েছে–“ন্যাশনাল থিয়েটার।—গত শনিবার ন্যাশনাল থিয়েটারে ‘জামাই বারিক’ প্রহসন অভিনয়ের পর ‘ভারতমাতা’র একটি দৃশ্য প্রদর্শিত হইয়াছিল। দৃশ্যের কৃতকার্য্যতা সম্বন্ধে আমরা এই বলিতে পারি যে, উহা দেখিয়া শ্রোতৃবর্গ প্রকৃত প্রস্তাবে মোহিত হইয়াছিলেন। কোন অভিনয়ে পঞ্চাশ শতাধিক লোকের ১৫ মিনিট কাল পর্যন্ত এরূপ আগ্রহ ও স্তম্ভিতভাব আমরা কখন প্রত্যক্ষ করি নাই। শ্রোতৃগণের দীর্ঘনিঃশ্বাস ও রোদন ধ্বনিতে কেবল মধ্যে মধ্যে নিস্তব্ধতা ভঙ্গ হইয়াছিল।
সে দিন ন্যাশনাল থিয়েটারে যাহারা উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁহারা যেখান হইতে এমন একটি ভাব অর্জন ও এমন একটি শিক্ষালাভ করিয়া আসিয়াছেন, যাহা কস্মিনকালে বিনষ্ট হইবে না। রঙ্গভূমি যেরূপ সমাজের সংস্কারক, সেইরূপ আবার উহা সমাজের শিক্ষক।” এই শেষ লাইনটিই বর্তমান সমালোচকের সবচেয়ে বড়ো ভূমিকাকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আলোচনাটির গুরুত্ব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বড়ো ভূমিকা নিয়ে নেয়।
ন্যাশনাল থিয়েটারের পাশাপাশি আরও দুটি থিয়েটার সমসাময়িক কালে অভিনয় শুরু করে। ন্যাশনাল থিয়েটার ১৮৭২ সালের ডিসেম্বরে অভিনয় আরম্ভ করে; আর ১৮৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘ওরিয়েন্টাল থিয়েটার’ প্রথম প্রযোজনা করে রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘মালতী মাধব’ এবং ১৮৭৩ সালের ১৬ আগস্ট ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ অভিনীত হয় মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘শর্মিষ্ঠা’।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
এই সময়ে ‘মধ্যস্থ’ পত্রিকায় বাংলা নাটক প্রযোজনাকারী দলগুলির ইংরেজি নামকরণ নিয়ে কটাক্ষ করা হয়, “কিন্তু আশ্চর্য এই এবং দেশের লোক ইংরেজির এত গোঁড়া, যে, বাঙ্গালাতে অভিনয় করিয়াও নাট্যসমাজের নাম ইংরেজি না রাখিলে নয়! এত বড় বাঙ্গালা ও সংস্কৃত ভাষার মধ্যে একটা নাম কি ফুটিয়া উঠিল না?” ‘মালতী মাধব নাটক’ এর সমালোচনা ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৩-এ ‘এডুকেশন গেজেট’-এ প্রকাশিত হয়, “এরূপ একখানি উৎকৃষ্ট নাটক আমরা যে দিবসে একেবারে পদদলিত হইতে দেখিয়া অতিশয় ক্ষুব্ধ হইয়াছিলাম, সে দিবসের অভিনেতৃবর্গের মধ্যে বোধহয়, কেহই মালতী মাধবের কোন অঙ্গ সুচারুরূপে অভিনয় করিবার উপযুক্ত নহেন।… দৃশ্যগুলি আরও সুন্দর ও উপযোগী হওয়া উচিত।”
১৮৩৫ সালের ২২ অক্টোবর ‘হিন্দু পাইওনিয়র’ নবীন চন্দ্র বসুর বাড়িতে অভিনীত ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাটকের চমৎকার সমালোচনা প্রকাশ করেছিলেন। সেই দীর্ঘ সমালোচনার এক জায়গায় লিখেছেন, “এই নাটকে বিশেষ করিয়া স্ত্রী চরিত্রে অভিনয় খুব চমৎকার হইয়াছিল। রাজা বীরসিংহের কন্যা ও সুন্দরের প্রণয়িনী বিদ্যার ভূমিকায় রাধামণি বা মণি নামে ষোল বৎসরের বালিকা অভিনয় করিয়াছিল। সে আগাগোড়া খুব নৈপুণ্য দেখাইয়াছিল।” এর আগেই কলকাতায় ১৮২৬ সালে মণিপুর থেকে মেয়ে যাত্রার দল ‘কৃষ্ণলীলা’ যাত্রাভিনয় করে গেছে।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
সংবাদমাধ্যমের কাছেও দীর্ঘদিন জুড়ে অভিনেত্রী সমস্যা ছিল আলোচ্য বিষয়। ইংলিশম্যান অ্যান্ড মিলিটারি ক্রনিক্যাল’ অভিনেত্রী নিয়োগের বিরোধিতা করে লিখেছিলেন, “এই সকল নাটক অভিনয়ে হিন্দুদিগের মানসিক বা নৈতিক কোনো প্রকার উন্নতি তো হয়ই না বরং লোকহিতৈষী ব্যক্তি মাত্রেরই এই সকল অভিনয়ের বিরুদ্ধাচরণ করা উচিত।” তবে এ কথা সত্য যে সংবাদপত্রের পক্ষে-বিপক্ষের মতামতের মধ্য দিয়েই অভিনেত্রী গ্রহণের কৌতুককর পরিবেশ শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছিল। এবং বহুদিন ধরে এই অবস্থা চলেছিল।
বহুকাল পরে ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ অভিনেত্রী নিয়োগ করেছিল বলে, তখন সংবাদমাধ্যম বিরূপ ভূমিকা যেমন নিয়েছিল তেমনি শঙ্কিতও ছিল। যেমন ভারত আগস্ট ১৮৭৩-এ লিখল, “আজিকাল কলিকাতায় বড় নাটকের প্রাদুর্ভাব দেখা যাইতেছে।…অভিনেতাদিগের মধ্যে দুইজন বেশ্যাও ছিল।…ভদ্র সন্তানেরা আপনাদিগের মর্যাদা আপনারা রক্ষা করেন ইহাই বাঞ্ছনীয়।” আবার ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ ১৫ জানুয়ারি ১৮৭৪-এ লিখল, “বেঙ্গল থিয়েটার সম্ভ্রান্ত বাঙালি সমাজে একটি নতুন জিনিষ। রঙ্গভূমিতে স্ত্রীলোকের অংশ স্ত্রীলোকের দ্বারা অভিনীত হইলে অভিনয় সব্বাঙ্গসুন্দর হয়। কিন্তু এই স্ত্রীলোকের অংশ সকল সমাজ পরিত্যক্ত ধর্ম্ম-ভ্রষ্টা স্ত্রীলোকের দ্বারা অভিনীত হইলে জনসমাজে পাপ ও অমঙ্গল বৃদ্ধি হয় কি না, তা পরীক্ষা সাপেক্ষ। ‘বেঙ্গল থিয়েটার’ কোম্পানী এই দুরূহ পরীক্ষায় প্রবৃত্ত হইয়াছে।” বাংলা থিয়েটারে ‘বেঙ্গল থিয়েটার’-এর ঐতিহাসিক কৃতিত্ব—
অভিনেত্রী নিয়োগ করেছিলেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যম তৎকালীন সেই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। থিয়েটারের সমালোচক কেবলমাত্র প্রযোজনার সমালোচনা করেই নিশ্চিন্ত হতে পারেন না থিয়েটারের অগ্রগতিতেও তাঁর ভূমিকা থাকে। আজকের দৃষ্টিতে কোনো কোনো আলোচনা সঠিক মনে না হলেও তৎকালের বিচারে সেই মন্তব্যগুলিকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ সেই মন্তব্যগুলি ছিল সে সময়েরই সামাজিক প্রতিফলন। শুধু সামাজিক কেন সেই সময়ের থিয়েটারেরও প্রতিফলন।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
এই থিয়েটারে ‘বিদ্যাসুন্দর’, ‘যেমন কর্ম তেমনি ফল’, ‘মায়াকানন’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রথম দুটি প্রযোজনার বিষয়ে ‘ইংলিশম্যান’ ১৪ মার্চ ১৮৭৪-এ লিখল, “সেদিন সুপরিচিত ‘বিদ্যাসুন্দর’ নাটক এবং ‘যেমন কর্ম্ম তেমনি ফল’ নামে একখানি প্রহসন অতি নৈপুণ্যের সহিত অভিনীত হয়। প্রত্যেক চরিত্রেরই অভিনয় স্বাভাবিক হইয়াছিল।” অমৃতবাজার পত্রিকাও ২৮ আগস্ট ১৮৭৩-এ অর্থাৎ ইংলিশম্যান’ পত্রিকার আগেই অভিনেত্রীদের অভিনয়ের প্রশংসা করে লিখেছিল, “অনেকের বিশ্বাস পুরুষ দ্বারা স্ত্রীর অংশ সকল সম্পাদিত হয় না। বেঙ্গল থিয়েটারের অভিনেতৃগণ এইটা পরীক্ষা করিবার নিমিত্ত তাঁহাদের দলে দুইটি স্ত্রীলোক প্রবিষ্ট করাইয়াছেন। ‘শর্মিষ্ঠা’ অভিনয়ে ইহারা একজন দেবযানি ও আর একজন শর্মিষ্ঠার সঙ্গী দেবিকা সাজিয়াছিল।…আমরা অভিনয় দেখিয়া অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইয়া আসিয়াছি।”
ক্ষণস্থায়ী দৃশ্যগুলির পরিবর্তন কালে দর্শকগণকে প্রতিবারই বহুক্ষণ ধরিয়া যবনিকা সম্মুখীন করিয়া থাকিতে হয়। এস্থলে এই সকল দোষ সংঘটিত হওয়াতে দর্শকগণকে বিরক্ত হইতে হইয়াছিল। এই প্রযোজনার পরে সেখানে ‘বিধবা বিবাহ’, মনোমোহন বসুর ‘প্রণয় পরীক্ষা’, ‘কৃষ্ণকুমারী’; ‘কপালকুণ্ডলা’ প্রভৃতি নাটক প্রযোজিত হয়। এই সমস্ত প্রযোজনাগুলির সমালোচনা প্রকাশ করে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল তৎকালীন পত্রিকাগুলি। অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ‘ভারত সংস্কারক’-ই এই প্রযোজনাগুলির সমালোচনা সবচেয়ে বেশি এবং গুরুত্ব সহ প্রকাশ করে। যেমন ‘বিধবা বিবাহ’-র সমালোচনা করেছিল ‘সোমপ্রকাশ’ ও ‘অমৃতবাজার পত্রিকা। অন্যগুলির সমালোচনা ‘ভারতসংস্কারক’ ছাড়া পাওয়াই যায়নি।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
“বিধবা বিবাহ’ সমালোচনা প্রসঙ্গে সোমপ্রকাশ ১২ জানুয়ারি ১৮৭৪-এ লিখেছিলেন “অভিনয়টি সব্বাঙ্গসুন্দর হইয়াছে। পূর্বোক্ত কাম্যকাননের ন্যায় এ নাটকখানি নিরস নহে। ইহার অভিনয় দৃষ্টে বোধ হয়, বিধবা বিবাহের পক্ষপাতী হইতে অন্তত একবার সকলেরই ইচ্ছা হইয়াছিল। দৃশ্যপটগুলি ‘লুইস অপেরা হাউসের’ ন্যায় উৎকৃষ্ট হইয়াছিল।”
‘প্রণয় পরীক্ষার’ সমালোচনা ‘ভারত সংস্কারক’ ২৩ জানুয়ারি ১৮৭৪-এ প্রকাশিত হয়েছিল, “…প্রথমোক্ত কালীবাড়ির দৃশ্যাভিনয়ে যে মত দর্শকমণ্ডলীর সহানুভূতি উৎপাদিত হইয়াছিল। চতুর্থ অংকের দৃশ্যাবলীর সুন্দর অভিনয়ে লোকের কল্পনাকে তদ্রুপ আকর্ষণ করিয়াছিল। তৃতীয়াংকের রামগিরি দৃশ্যের সঙ্গীতাবলী যেমন কবিত্বপূর্ণ, তেমনি সুমধুর লাগিয়াছিল।” ওই একই পত্রিকায় ৩০ জানুয়ারি ১৮৭৪-এ ‘কৃষ্ণকুমারী’ প্রযোজনা সম্পর্কে লিখেছিল, “প্রথম কতিপয় দৃশ্যের অভিনয়ে ভীমসিংহ কিছুই জীবন সঞ্চার করিতে পারেন নাই বটে, কিন্তু পঞ্চমাংকের প্রথম দৃশ্যে, ভীমসিংহ যতদুর চমৎকার বোধ হইল তাহা বলিবার নহে। এই দৃশ্যে তাহার প্রকৃত অভিনয় শোভন স্বগতবাক্যে আমাদিগের চিত্তাকর্ষণ করিয়াছিল। তাহার অভিনয় কুশলতা অপূর্ব বলিয়া বোধ হইল।
তবে এই পত্রিকায় ‘কপালকুণ্ডলা’র দীর্ঘ সমালোচনাটি অন্য সমস্ত সমালোচনাকে ছাপিয়ে গেছে। অসাধারণ এই সমালোচনাটি পূর্বোক্ত পত্রিকাতেই ১৩ মার্চ ১৮৭৪-এ প্রকাশিত হয়। এই সমালোচনাটির বিশেষত্ব এই যে মূল উপন্যাসের নাট্যরূপ কেমন হয়েছে, মূল রস তাতে বজায় রয়েছে কি না এবং সেই রস পরিবেশনে অভিনেত্রীগণ কতখানি সমর্থ; সর্বোপরি প্রযোজনাটি কতখানি সার্থক, এসবের কোনো একপেশে প্রশংসা বা নিন্দা করা হয়নি। যেমন— “এই নাটকে মূল কাব্যের অংশ বিশেষ পরিত্যাগ করাতে নাট্যকার সদ্বিচার করিয়াছেন, কিন্তু মূল গ্রন্থখানি যেরূপ আদিরস ও বীররস প্রধান, অভিনয়ে প্রধান নায়ক হেমচন্দ্র ও প্রধান নায়িকা মৃণালিনীর মধ্যে তদুপযোগী অবিচলিত প্রণয় ও ঐকান্তিক অনুরাগের মুগ্ধকর ভাব প্রকটিত হয় নাই।
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
…অভিনেতা হেমচন্দ্র অবস্থা বিশেষে কখন বা বিষাদে অভিভূত হইয়াছিলেন, কখন বা উদ্যোগপরায়ণ হইয়া সাহসপূর্বক বিপক্ষ পক্ষকে পরাস্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু অসিচালন কার্য্য বিশেষ বিশারদ না হওয়াতে এবং প্রকৃত শৌর্য বীৰ্য সম্পন্ন ব্যক্তির স্বভাবসুলভ বীরদর্প সম্যক প্রকাশ করিতে অসমর্থ হওয়াতে দর্শকবর্গের অন্তরে প্রকৃত বীররসের উদ্রেক হয় নাই।”
এইভাবে নাট্য সমালোচনার ধারা যেমন এগিয়েছে তেমনি সেই সমালোচনাকে কেন্দ্র করে নাটকের গতি প্রকৃতির চিত্রটাও পেয়ে যাই আমরা। বস্তুতপক্ষে সেই সমস্ত সমালোচনা নাটকের গতি প্রকৃতিকেও বহুভাবে নিয়ন্ত্রিত করেছে। উল্লেখিত সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্র যে-সমস্ত সমালোচনাগুলি প্রকাশিত করেছেন, তার অনেকগুলিই ছিল বাংলায় এবং ইংরেজিতে। বাংলা সমালোচনার কথা উল্লেখ করা হলেও ইংরেজিগুলি অনুল্লেখিত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি ইংরেজি সমালোচনার উদ্ধৃতি দেওয়া হল।
Theatre (26th April) several farces were played. The ‘Jut Kinchit Jalayog’ was first acted on the stage. It elicited great cheers from the visitors, Other farces were also successfully acted… we wish all references to the rival party were avoided on the stage.”
গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারে ‘আনন্দ কানন’ ও ‘মদনের দিগ্বিজয়’ অভিনয়ের সমালোচনা ইংলিশম্যান কাগজে ২৪ নভেম্বর ১৮৭৪ সালে প্রকাশিত হয়, “The opera Ananda Kanan (The bower of Bliss), or Madaner Digbijaya, was performed at the National Theatre for the second time on Saturday last before a good, though not a crowded house. The performance was fairly done, the actors and actresses acquitting themselves creditably. Among them the following deserve special mention. Rati and Santi represented by Jadumani, Kabita and Kamala by Rajkumari Ahamika by Khatoo…..
[ এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী ]
ঊনিশ শতকের নাট্য সমালোচনার ধারা এভাবেই সাধারণ পত্রপত্রিকা এবং সাময়িক পত্রের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছিল। আজকের বিচারে সেই সমস্ত সমালোচনা যথেষ্ট অনাধুনিক মনে হলেও আধুনিক সমালোচনার মান নির্ণয়ে সেই অতীত আলোচকদের গুরুত্ব অসীম। তৎকালীন সমালোচনার আলোচকদের কোনো নাম পাওয়া যায় না। স্বনামধন্য কোনো নাট্যপুরুষ যদি কখনও কোনো আলোচনা করতেন তাহলেই তা উল্লেখ হত। কিন্তু সেসময়ের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা এ বিষয়ে অনীহাই হয়তো দেখিয়েছিলেন। তার কারণ মঞ্চ সেবার সঙ্গে সাহিত্যের সেবাকে একাসনে বসাননি তাঁরা। আবার এটাও হতে পারে পত্রিকার সম্পাদকেরা এই সমস্ত মানুষকে তাঁদের উপযুক্ত নাও ভাবতে পারেন। ‘বাবুদের বিলাস’-এর জন্য অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের সাহিত্যে সেবার মান ও যোগ্যতা নিয়ে সন্দিহান থাকতে পারেন। তবে এসবই অনুমান মাত্র।
নীচে এসময়ে প্রকাশিত কয়েকটি নাট্যপত্রের তালিকা দেওয়া হল, যাতে নাট্য বিষয়ক সংবাদ ও আলোচনা থাকত। এই তালিকা প্রস্তুতির জন্য নৃপেন্দ্র সাহার ‘আঞ্চলিকতার বিকাশ সাধন না আন্তর্জাতিক সম্পর্কপাত’ প্রবন্ধটির সহায়তা নিয়েছি।
নাট্যপত্রের তালিকা [ পত্রপত্রিকার নাম ও প্রকাশকাল ] :
১. বেঙ্গল গেজেট – ২৯ জানুয়ারি ১৭৮১
২. ক্যালকাটা গেজেট – ৪ মার্চ ১৭৮৪
৩. ক্যালকাটা ক্যুরিয়ার – ১৭৯৫ এবং পরে দৈনিক হিসাবে ১৮৩২
8. বেঙ্গল হরকরা – ১৭৯৮
৫. ইন্ডিয়ান ডেইলি নিউজ – জানা যায়নি
৬. সমাচার দর্পণ – ২৩ মে, ১৮৯৮
৭. ক্যালকাটা জানাল – ২ অক্টোবর ১৮১৮
৮. সমাচার চন্দ্রিকা- ৫ মার্চ ১৮২২
৯. বঙ্গদূত – ১০ মে ১৮২৯
১০. সংবাদ প্রভাকর – ২৮ জানুয়ারি ১৮৩১
১১. জ্ঞানান্বেষণ – ১৮ জুন, ১৮৩১
১২. ইন্ডিয়া গেজেট – ১৮৩১
১৩. ইংলিশম্যান অ্যান্ড মিলিটারি ক্রনিকাল – ১৮৩৩
১৪. সংবাদ পূর্ণচন্দ্রোদয় – ১০ জুন ১৮৩৫
১৫. হিন্দু পাইয়োনিয়ার – ১৮৩৫-এর আগস্ট
১৬. সম্বাদ ভাস্কর – ১৮৩৯-এর মার্চ
১৭. বেঙ্গল স্পেকটেটর – ১৮৪২-এর এপ্রিল
১৮. বিবিধার্থ সংগ্রহ – ১৮৫১-এর অক্টোবর
১৯. হিন্দু পেট্রিয়ট – ১৮৫৩
২০. এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্তাবহ – ৪ জুলাই ১৮৫৬
২১. সোমপ্রকাশ – ১৫ নভেম্বর ১৮৫৮
২২. ইন্ডিয়ান মিরার – ১ আগস্ট ১৮৬২
২৩. রহস্য সন্দর্ভ – ১৮৬৩-র জানুয়ারি
২৪. দ্য ন্যাশনাল পেপার – ৭ আগস্ট ১৮৬৫
২৫. নব প্রবন্ধ – ১৮৬৬-র সেপ্টেম্বর
২৬. বেঙ্গলি – ১৮৬৬
২৭. অমৃত বাজার পত্রিকা – ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬৮
২৮. সুলভ সমাচার – ১৮৭০
২৯. মধ্যস্থ – ১৮৭২
৩০. ভারত সংস্কারক – ১৮৭৩
৩১. সাধারণী – ১৮৭৩
৩২. দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকা – ১৮৭৫
৩৩. ভারতী – ২৯ জুলাই ১৮৭৭
৩৪. নব্য ভারত – ১৮৮৩
৩৫. অনুসন্ধান – ১৮৮৭
৩৬. মজলিস – ১৮৯০-এর মে
৩৭. এশিয়াটিক জার্নাল – ১৮৩২
আরও পড়ুন:
“এদেশীয় নাট্য সমালোচনার অতীত – আশিস গোস্বামী”-এ 1-টি মন্তব্য