বার্থ ফ্যান্টাসি নাটকটি এস এম সোলায়মান এর একটি বিখ্যাত নাটাক। এই নাটকটির প্রথম প্রদর্শনী হয়েছে ১৮ মে ১৯৯৬ তারিখে। ‘বার্থ ফ্যান্টাসি’ এস এম সোলায়মানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নাটক, যা আধুনিক বাংলা নাটকের মধ্যে বিশেষভাবে চিহ্নিত। নাটকটি জন্ম এবং অস্তিত্বের জটিলতা, মানুষের অন্তর্নিহিত আকাঙ্ক্ষা, এবং জীবনের প্রকৃত অর্থের সন্ধানের উপর আলোকপাত করে।
বার্থ ফ্যান্টাসি নাটক : ১ম পর্ব
শেখ মোহাম্মদ সোলায়মান বা এস এম সোলায়মান একজন বাংলাদেশী অভিনেতা। তিনি ১৯৫৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনা করতেন এবং তাতে সঙ্গীত পরিচালনাও করতেন। তাকে বাংলাদেশের থিয়েটারের জগতে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে একুশে পদক লাভ করেন তিনি।
নাটকের কাহিনি
‘বার্থ ফ্যান্টাসি’ মূলত একটি পরিবারকে কেন্দ্র করে, যেখানে বিভিন্ন প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক, সংঘাত, এবং বোঝাপড়ার গল্প বলা হয়েছে। নাটকটি মানুষের জীবনের সূচনা ও মৃত্যু, জীবনের মূল্য এবং ব্যক্তি স্বাধীনতার খোঁজ করে। কাহিনীতে দর্শকরা বিভিন্ন চরিত্রের মধ্য দিয়ে তাদের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক সংকটের প্রতিফলন দেখতে পায়।
মূল থিম
এই নাটকটির মূল থিমগুলোর মধ্যে আছে:
- জন্ম এবং মৃত্যু: নাটকটি জন্মের উৎস এবং মৃত্যুর পরিণতি নিয়ে আলোচনা করে। এটি প্রশ্ন তোলে, “জন্মের সার্থকতা কী?” এবং “জীবন এবং মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক কী?”
- মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দিক: চরিত্রগুলোর মানসিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেখানে তারা নিজেদের অন্ধকার দিক এবং মনের ভিতরের দ্বন্দ্বগুলোকে নিয়ে চিন্তা করে।
- পরিবারের সম্পর্ক: নাটকটি পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, প্রজন্মের সংঘাত এবং সম্পর্কের স্বার্থকতা নিয়ে আলোচনা করে।
নাটকের শৈলী
এস এম সোলায়মানের লেখার স্টাইলটি আধুনিক এবং সংবেদনশীল। তিনি শব্দের নির্বাচনে খুবই যত্নবান, যা নাটকের আবেগ ও মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলোর গভীরতা বাড়িয়ে দেয়। নাটকের ভাষা সাধারণ মানুষের কথ্যভাষার সাথে সংযুক্ত, ফলে এটি দর্শকদের কাছে আরো কাছে আসে।
মঞ্চায়ন ও দর্শক প্রতিক্রিয়া
‘বার্থ ফ্যান্টাসি’ নাটকটি মঞ্চে একটি অভিনব উপস্থাপনার মাধ্যমে দর্শকদের সামনে আসে। নাটকটির মঞ্চায়নে সৃজনশীলতা, আলোকসজ্জা এবং সঙ্গীতের ব্যবহার দর্শকদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। নাটকটি সমালোচক ও দর্শকদের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছে, বিশেষ করে এর গভীর থিম এবং মানবিক আবেগের জন্য।
প্রযোজক দল : থিয়েটার আর্ট (থিয়েটার আর্ট ইউনিট)
প্রদর্শনীর স্থান : কচিকাঁচা মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : সাজু মোনায়েম
ডা. নবী : মোহাম্মদ বারী
ডা নমু : সেলিম মাহবুব
নার্স : লেমন
আয়া : নাসিমা নওশাদ
কুতকুতি বেগম : শিমুল খান
ডা. মার্টিন : আশরাফ কবীর
ডা. ডেভিল : এজাজ
ডা. গুড়গুড়িয়া : ফেরদৌস আমিন বিপ্লব
আশা : সানজিদা পশারী ইভা
মাস্তান-১ : মেহেদী (বড়)
মাস্তান-২ : পলক রহমান
ভাংচুরকারী-১ : সফিকুজ্জামান সিদ্দিকী ফুয়াদ
ভাংচুরকারী- ২ : জিলানী আখন্দ
ভাংচুরকারী-৩ : জুয়েল
পুলিশ অফিসার : চন্দন রেজা
হুজুর : এস এম সোলায়মান
সহকারী সচিব : কামাল রায়হান
ভগিজগি-১ : কামরুজ্জামান মিল্লাত
ভগিজগি-২ : প্রশান্ত হালদার
ভগিজগি-৩ : মাসুম
* মাদার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : মনোয়ারুল আজিজ দোলন
* সিস্টার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : চন্দন রেজা
* আঙ্কেল ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : আবুল হাসনাত প্রদীপ
* ইবলিশ ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : প্রশান্ত হালদার
কোরাস দলনেতা : স্বর্ণা সরকার, বাবু, শিমুল খান
যন্ত্র-সঙ্গত : সুজন, ওয়ালিউল্লাহ আকন্দ, নাজিমুজ্জামান নিশাত
কোরাস দল : মাসুম, মিল্লাত, সাজু, দোলন, শাহীন, জিলানী, সুকান্ত দে, মিজান, শুভ্র, সারোয়ার, ফুয়াদ, জুয়েল, পলক, আমিন ও মেহেদী(বড়)
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এস এম সোলায়মান
সহকারী নির্দেশক : মোহাম্মদ বারী
মঞ্চ পরিকল্পনা : কামালউদ্দিন কবির
আলোক পরিকল্পনা : ঠাণ্ডু রায়হান
কোরিওগ্রাফি : রিপন
(* চিহ্নিত চরিত্রগুলো মূল পাণ্ডুলিপিতে নেই, পরিচালকের সৃষ্টি)

বার্থ ফ্যান্টাসি ১ম পর্ব
[একটা হাসপাতাল। রোগীর বেড, চেয়ার এবং নানা রকমের যন্ত্রপাতিতে অপারেশন টেবিল সাজানো রয়েছে: হাতুড়ি, কুড়াল, করাত ইত্যাদি। মঞ্চে চিন্তাযুক্ত হয়ে বসে আছেন ডাক্তার নবী, ডাক্তার নমু, নার্স, আয়া এবং একজন গর্ভবর্তী নারী ।]
গান
মানুষ বলো কি উপায়
দুঃখে কইলজা ফাইটা যায়
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়
তিরিশ লক্ষ শহীদের স্বপনেরই সোনার দেশ
মাথা উঁচু করে রবে অতীত গৌরবে
সোনালি ধানের আশে ঘরে ঘরে সুখ আসে
প্রতি নিশ্বাসে মাটি হাসে সৌরভে
এমন আশার প্রাণে ছিদ্র করে
বলো কোন সে ঘুণ পোকায়।
প্রথমে বন্দনা আমার সৃষ্টির সেরা জীব
তারপর বন্দনা জাতির পিতা শেখ মুজিব
তারপর বন্দনা আমার রক্তের বন্যায়
এই আসরে সকল হত্যার বিচার আমি চাই
তারপর বন্দনা করি মুসকিল আসানী
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী
সালাম জানাই আমি লক্ষ হাজার বার
মুক্তিযুদ্ধের সব সেক্টর কমান্ডার
বন্দনা ধর্ষিতা তিন লক্ষ জননী
আল্লাহর আদালতে যার হইবে শুনানি
বন্দনা ফজলুল হক শেরে বাংলা শের
বন্দনা ফাঁসির কাষ্ঠে কর্নেল তাহের
তারপর বন্দনা করি জয়জয়কার
শোষিত মানুষের নেতা সিরাজ শিকদার
নূর হোসেন শহীদ ডাক্তার মিলনের চরণে
হাজার ছালাম জানাই এই অধমে
আশা ছিল সোনার এই দেশ হবে মহীয়ান
সার্থক হবে লক্ষ শহীদানের আত্মদান
এমনি দেশের হাল পদে পদে গোলমাল
ছিনতাই ভাংচুর চলে চাদাবাজি
দেহ আছে মাথা নাই
হাত আছে ঠ্যাং নাই
আছে শুধু নেতা-নেত্রীর চাপাবাজি
এই রক্ত লাশের রাজনীতিতে হলো লক্ষ ভ্রূণ জবাই
মানুষ বলো কি উপায়
দুঃখে কইলজা ফাইটা যায়
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়।
সূত্রধর
সমস্যা সমস্যা এবং সমস্যা। আমাদের গর্বিত এই দেশে সব কিছুরই একটা শেষ আছে। জীবনের শেষ আছে। উত্থানের শেষ আছে। খ্যাতির শেষ আছে। ক্ষমতার শেষ আছে। শেষ নেই শুধু সমস্যার। অপদার্থ নাট্যকার নাটকের নাম সমস্যা ফ্যান্টাসি না রেখে কেন যে বার্থ ফ্যান্টাসি রাখতে গেলেন তা তিনিই জানেন।
আর কি- সমস্যার কথা শুনে যদি দর্শক সমাগম না হয়? ঠিকই তো, আমাদের প্রত্যেকের জীবন এত সমস্যা আক্রান্ত সত্যি কথা বলতে কি আমরা প্রত্যেকেই এক একটি সমস্যা। তাই বার্থ ফ্যান্টাসির নামে নাট্যকার দর্শকদের আর একটি সমস্যার মুখোমুখি দাঁড় করবার জঘন্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। জ্বি? কি বললেন? সমস্যাটা কি?
ঐ যে ডাক্তার নবী, ডাক্তার নমু, নার্স, আয়া আর রমণী মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগম । মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগমের গর্ভে রয়েছে একটি মানব সন্তান, তবে মেয়ে। কুতকুতি বেগমের বড় সাধ ছিল একটি ছেলের। কিন্তু এমনই পোড়াকপাল পেটে এলো মেয়ে। তা এলো এলো, এখন সমস্যা হচ্ছে তিনি বের হচ্ছেন না। এক মাস আগে তার ভূমিষ্ঠ হবার কথা অথচ
[সূত্রধরের আলো নিভে যায়, মূল মঞ্চে আলো জ্বলে চিৎকার করে ওঠে ডাঃ নবী ]

নবী
ইয়ার্কি, মসকরা, ফাজলামি করা হচ্ছে আমার সাথে। একমাস হয়ে গেল বের হবার কোন নাম-গন্ধ নেই। ডাক্তার হিসাবে আমার মানসম্মান আর কিছুই থাকলো না।
কুতকুতি
আপনি ঐ রকম চিৎকার করে আমার সাথে কথা বলবেন না। বাচ্চা পেটে এনেছি আমি, বের করার দায়িত্ব আপনার। আয়া, আমাকে আরো পাঁচটা মোয়া দাও ।
আয়া
আপনি আধা ঘণ্টা আগে দশটা মোয়া খাইছেন। এখন আবার পাঁচটা?
কুতকুতি
আমি খাইনাতো। এ খায় (পেট দেখিয়ে)।
আয়া
এইডা ঠিক কইছেন। মাইয়া মানুষে খায় বেশি।
নমু
স্যার আমার একটা সন্দেহ হচ্ছে।
নবী
কি সন্দেহ?
আয়া
আমাদের ক্লিনিকের এত সুনাম দেখে পাশের ক্লিনিকের ডাক্তার চুবানি হয়তো রোগিনীকে কিছু খাইয়ে দিয়েছে।
নবী
গুড, অপূর্ব ব্রেন আপনার। এভাবে তো আমি ভাবিনি। আপনি একটু ইন্টারোগেট করে দেখবেন নমু?
কুতকুতি
আয়া, আমাকে আরো পাঁচটা মোয়া দাও।
আয়া
সে কি, আপনে এই মাত্র পাঁচটা মোয়া খাইলেন।
নমু
আয়া, তুমি উনাকে দশটা মোয়া দাও।
নার্স
স্যার, আমি একটা মোয়া খাই?
নমু
আয়া, নার্সকে একটা মোয়া দাও। আর আমাকে দুইটা। আপনাকে দেবো একটা,স্যার? খুব ভালো মোয়া।
নবী
শুনুন, আপনি এত মোয়া খাবেন না। অপারেশনের সময় পর্যন্ত আপনি মোয়া খান। আর সেই মোয়ার দানা গিয়ে পড়ে রোগীর পেটে।
নমু
এতে আর এমন দোষ কি হলো স্যার। আমাদের দেশে তো অপারেশনের পরে রোগীর পেটে কাঁচি পর্যন্ত পড়ে থাকে। সেখানে আমার দু একটা মোয়ার দানা পড়ায় এমন কি ক্ষতি হয়েছে স্যার?
নবী
আপনি বড্ড বেশি বকবক করেন, আপনাকে যে কাজ দিয়েছিলাম ওটা করুন।
নমু
ও হ্যাঁ ইয়ে- মোসাম্মাৎ কুতকুতি বেগম—
কুতকুতি
আমাকে আর পাঁচটা মোয়া দেবেন?
নমু
নিশ্চয়ই। আয়া উনাকে পাঁচটা মোয়া আর আমাকে পাঁচটা মোয়া দাও ।
নার্স
(নবীকে) স্যার, আমিও পাঁচটা মোয়া খাই?
নবী
সিওর, সিওর। তোমার যে কয়টা খেতে মন চায়, খাও।
নার্স
আপনি খুব ভালো স্যার।
নবী
তুমিও খুব ভাল মেয়ে। আয়া, অন্যান্য ওয়ার্ডে মোয়া দিয়ে এসো।
নার্স
আপনি একটা মোয়া খান না স্যার।
নবী
তুমি বললে কি আমি না করতে পারি। দাও খাইয়ে দাও।
[নার্স খাইয়ে দেয়, দু’জনের প্রেমের মাইম]
নমু
খবর শুনেছেন স্যার? সরকার তো মোয়ার দাম অনেক কমিয়ে দিয়েছে।
নবী
যে কাজ দিয়েছি ঐটা শেষ করেন।
নমু
আমি শুনেছি সরকার খুব সহসা বিনামূল্যে মোয়া বিতরণ কর্মসূচী হাতে নিতে যাচ্ছে।
কুতকুতি
সত্যি বলছেন? বিনামূল্যে মোয়া।
নমু
হ্যাঁ, দেবেই তো। বুঝতে পারছেন না? এই মোয়া খেয়ে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কতো শান্ত সুবোধ হয়ে আছে। সেই ৭১-এর তেজ মেজ সব হাওয়া।
গান
কথা বলতে গেলে কথা বাড়ে
আরও বাড়ে দুর্গতি
এই হলো এই দেশের রাজনীতির তেলেসমাতি
নিয়ে বস্তুবাদীর শিক্ষা সাম্যবাদীর ত্যাগ-তিতিক্ষা
আবার আধ্যাত্মবাদের নিলেন দীক্ষা
তাইলে জনগণের দোষটা কি
৭৩ এর গণতন্ত্রী ৭৬ এর সমাজতন্ত্রী
৭৮ এর মধ্যপন্থী ৮৪তে স্বৈরতন্ত্রী
সেই গণতন্ত্রের ভ্রাতুষ্পুত্র এখন শুনি
তলে তলে জামাতি
এই হলো এই দেশের রাজনীতির তেলেসমাতি
কথা বলতে গেলে কথা বাড়ে
আরও বাড়ে দুর্গতি
এই হলো এই দেশের রাজনীতির তেলেসমাতি।
[নমু স্যার বলে চিৎকার দিয়ে উঠলে নবী এবং নার্স হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে। নার্স বুকেত থুথু দেয় ]

নবী
কি?
নমু
মোয়া।
নবী
কি?
নমু
মোয়া স্যার, মোয়া। আমি নিশ্চিত, মোয়ার কারণেই এটা হচ্ছে।
নবী
হচ্ছেটা কি?
নমু
মোয়া স্যার, মোয়া ।
নবী
আপনার মুও আর আমার মাথা ।
নমু
না স্যার, আপনার না আমার মাথা। আমার মাথা থেকেই এই ঐতিহাসিক আবিষ্কারটা বের হয়েছে। এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণ আমার। নোবেল প্রাইজ এবার আমার চিকিৎসা শাস্ত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য ডাক্তার নমুর নোবেল প্রাইজ লাভ।
[ছুটে গিয়ে নার্সের কপালে চুমু খায়, তুমি আর আমি হানিমুন, হনুলুলু]
নবী
এসব কি হচ্ছে? বলি হচ্ছেটা কী?
নমু
মোয়া স্যার, মোয়া
নবী
আবার বলে মোয়া।
নমু
হ্যাঁ। মোয়াই তো। মায়ের পেটে একটা শিশু পরিণত হলে সে বের হবার চেষ্টা করে । তখন তাকে আমরা স্বাভাবিক অথবা সিজার করে বের করি।
নবী
তো?
নমু
এক মাস ওভার হয়ে গেছে। কুতকুতি বেগমের গর্ভের শিশুকে বের করা যাচ্ছে না।
নবী
কিন্তু কেন?
নমু
কারণ মোয়া।
নবী
মোয়া?
নমু
হ্যাঁ স্যার। মোয়া। আপনার চারদিকটা একবার দেখেন, তাহলেই বুঝবেন মোয়ার অবাধ বিতরণের সুফল। বাঁশনগর স্কুলের সাথে গাছনগর স্কুলের খেলায় এক গোলে বাঁশনগর হারলো, এর প্রতিবাদে চার ঘণ্টার জন্য সড়ক অবরোধ। হাজার হাজার আটকে পড়া যাত্রী একেবারে নিশ্চুপ।
পাবনার নবাবজাদা, বরিশালের মখদুমজাদা, রংপুরের হারামজাদা ভাই নমিনেশন পায়নি, প্রতিবাদে হরতাল, জনগণ চুপ। পরিবহন নেতাদের গুঁতোগুঁতিতে ১৩ জন বাস যাত্রী জীবন্ত পুড়লো, জনগণ চুপ। আর ঐযে স্যার জীবননগরের মস্তান আকবর আলী এক অষ্টাদশী বালিকার একটি ডুমা দাবি করেছিল, বালিকাটি মস্তান ভাইকে চুমা দিতে অস্বীকার করে।
এর প্রতিবাদে মস্তান ভাইয়ের আহ্বানে ৫০০ গাড়ি ভাংচুর হলো, জনগণের মুখে রা নেই । এগুলো হচ্ছে সরকারের অবাধ মোয়া বিতরণ কর্মসূচীর কুফল । এই মোয়া খেয়ে জনগণের তেজ কমে গেছে। এমন কি স্যার আমাদের মাননীয় প্রোটেকশন মিনিস্টার পর্যন্ত তেজহীন হয়ে গেছেন। উনি নিজেই স্বীকার করেছেন দেশে অবৈধ অস্ত্রের সংখ্যা এক লাখ।
আপনি ভাবতে পারেন স্যার? তেনার বাড়িতে বৈঠক শেষে সন্ত্রাসীরা পুলিশের জীপে সওয়ার হয়ে আলিশানে মার্ডার করে আসলো । অথচ প্রোটেকশন মিনিস্টার পদত্যাগ করলেন না। মোয়া শুধু মানুষের তেজই কমায় না, মানুষের লজ্জাবোধও কমিয়ে দেয়।
নবী
তো এর সাথে কুতকুতি বেগমের গর্ভের সন্তানের কি সম্পর্ক?
নমু
আপনি বুঝতে পারছেন না? গর্ভাবস্থায় মোয়া খেয়েছে কুতকুতি বেগম। সেই মোয়া খেয়েছে গর্ভের শিশু। আর খেয়ে তার তেজ নষ্ট হয়ে গেছে। এজন্য মায়ের গর্ভ থেকে বের হবার সমস্ত আগ্রহ সে হারিয়ে ফেলেছে।
নবী
আপনি একটা গর্দভ।
নমু
রাইট স্যার। রিয়েলি আমি একটা ট্যালেন্ট। স্যার কি আমাকে কিছু বলেছিলেন? বলেছি, আপনি গর্দভ। যান, আপনাকে যে এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে ওটা শেষ করুন। কুতকুতি বেগমের সাথে কথা শেষ করুন। নার্স, এদিকে এসো। আমি লিটেল বিট আপসেট স্যার। এই দেশে প্রতিভার মূল্যায়ন হয় না।
নবী
যান।
নমু
যাচ্ছি স্যার।
[নমু রোগীর কাছে যায়। নবী এবং নার্সের প্রেমের মাইম ।]
নমু
ও ইয়ে, মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগম।
কুতকুতি
আপনি খুব ভালো।
নমু
আমি বড় হতাশ।
কুতকুতি
কেন?
নমু
এই দেশে প্রতিভার কোন দাম নেই ।

কুতকুতি
আমার কাছে আছে।
নমু
সত্যি?
কুতকুতি
পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
নমু
থ্যাংকস, থ্যাংকস কৃতকৃতি। ও ইয়ে,
কুতকুতি
বলো।
নমু
এ্যা? বলো? আহা, কি সুখ। ও ইয়ে—
কুতকুতি
কি?
নমু
তুমি করে বলি?
কুতকুতি
বলো।
নমু
তুমি কি ডাক্তার চুবানিকে চেনো?
কুতকুতি
ডাক্তার চুবানি-চুবানি- হ্যাঁ, চিনিতো।
নমু
চেনো?
কুতকুতি
হ্যা
নমু
তুমি এর মধ্যে ডাক্তার চুবানির সাথে দেখা করেছো?
কুতকুতি
হ্যাঁ, প্রায় পাঁচ মাস আগে ।
নমু
পাঁচ মাস আগে?
নমু
কি ওষুধ দিয়েছিলেন তিনি?
কুতকুতি
এক গামলা খৈল তুষির সাথে ৫০টা ক্যাপসুলের গুঁড়া দিয়েছিলেন।
নমু
স্যার, পেয়ে গেছি। চক্রান্ত। সুগভীর চক্রান্ত ।
নৰী
কি?
নমু
হ্যাঁ স্যার, আমার অনুমানই ঠিক। ডাক্তার চুবানির সাথে ওর সাক্ষৎ হয়েছে। এবং এক গামলা খৈল ভুষির সাথে উনি ৫০টি ক্যাপসুলের গুঁড়া খেয়েছেন।
নবী
কি? খৈল ভুষির সাথে ৫০টি ক্যাপসুলের গুঁড়া?
নমু
হ্যাঁ স্যার।
নবী
কুতকুতি বেগম, আপনি ডাক্তার চুবানিকে চেনেন?
কুতকুতি
হ্যাঁ।
নবী
উনি আপনাকে কি ওষুধ দিয়েছেন।
কুতকুতি
বললামই তো ।
নবী
এক গামলা খৈল ভূষির সাথে ৫০ ক্যাপসুল? ডাক্তার চুবানি?
কুতকুতি
হ্যাঁ।
নবী
আপনি এক গামলা খৈল ভুষি খেয়েছেন?
কুতকুতি
আমি খাবো কেন? ওতো খেয়েছে আমার ধবলি।
নবী
কি সব উল্টাপাল্টা বলছেন? আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি গাইনি স্পেশালিস্ট ডাক্তার চুধানির কথা।
কুতকুতি
আমি আপনাকে বলছি গরুর ডাক্তার চুরানির কথা। ৫/৬ মাস আগে আমার দুধের গাই ধরলির অসুখ হলে গরুর ডাক্তার চুবানি থৈইল ভূমির সাথে ক্যাপসুলের গুঁড়া মিশিয়ে নিয়েছিলেন।
নবী
(নমুকে) আপনি একটা গর্দভ।
নমু
কেন স্যার?
নবী
আপনি একটা স্টুপিড।
নমু
রাইট স্যার।
[নবী এবং নার্স পূর্বের অবস্থায়]
নমু
আমি এদেশে থাকবো না।
কুতকুতি
কেন?
নমু
এই দেশে প্রতিভার কোন মূল্যায়ন হয় না।
কুতকুতি
নিন মোয়া খান। আয়া, আরো পাঁচটা মোয়া দিয়ে যাও।
আয়া
আপনে ক্যামনে যে এতো মোয়া খান ।
কুতকুতি
বললাম না? আমি খাই না, হে খায় ।
নমু
জানেন? আমার না মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। তবে এই মোয়া খাওয়ার পরে রাগটা নেমে আসে।

কুতকুতি
আয়া, একটু শোন তো?
[আয়া আসে। কুতকুতি ওকে কানে কানে কিছু বলে। আয়া নমুর কানে কিছু বললে নমু লাফ দিয়ে ওঠে।]
নমু
স্যার, স্যার-
নবী
কি হয়েছে আবার আপনার?
নমু
আমার কিছু হয়নি । আপনাদের দোয়ায় আমি ভালো আছি।
নবী
আপনি কি ডাক্তার? নাকি ষাঁড়? ঐরকম ষাঁড়ের মত চেঁচান কেন?
নমু
মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগমের পেইন হচ্ছে।
নবী
এ্যা, পেইন হচ্ছে? কুইক মনিটর অন করেন। বাচ্চার পজিশন দেখেন।
[নমু দৌড়ে গিয়ে মনিটর অন করে]
নমু
স্যার, এসে গেছে। পজিশনে এসে গেছে।
নবী
নার্স, আয়া জলদি অপারেশনের যন্ত্রপাতি নিয়ে এসো। নমু, রোগীকে এনেস্থেশিয়া দিন, কুইক ।
[নমু এনেস্থেশিয়া দিচ্ছে। নার্স আয়া মিলে কোদাল, কুড়াল, রামদা এবং করাত নিয়ে হাজির হয়। অপারেশনের চেষ্টা। দুই ডাক্তার এবং নার্সের হাতের লুকোচুরি খেলা। সময় নষ্ট । এক সময় নমুকে ধমক দেয় দবী, মধু মাসের হাত ছেড়ে ‘ইয়া আমি বলে কুড়াল তোলে। নবী হাত ধরে ফেলে]
নবী
ইডিয়ট, লম্পট, স্টুপিড।
নমু
কে স্যার?
নবী
বেয়াক্কল। আপনি মনিটর দেখেন না? ঐ যে দেখেন, বাচ্চার পজিশন আবার উল্টে গেছে।
নমু
সর্বনাশ, তাইতো?
আয়া
বাচ্চার আর দোষ কি, আপনাগো হাতের কারুকাজ দেইখ্যা বাচ্চা আবার মত পাল্টাইয়া ফেলছে।
নবী
পাগল হয়ে যাবো । এই একটি কেস আমার সর্বনাশ করে ছাড়লো।
[অন্ধকার। সূত্রধরের আলো জ্বলে ওঠে।
সূত্রধর
হলো না। ঘটনা ঘটতে গিয়েও ঘটলো না। মুহূর্তের ভুলে বাচ্চার পজিশন নষ্ট হয়ে গেল আর সর্বনাশ হয়ে গেল ডাঃ নবীর কেরিশমা। একটা ঘটনা নিশ্চয়ই জানেন, ক্লিনিকে যত বাচ্চা হয় তার ৯৫ পারসেন্ট হয় সিজারিয়ান। এই দেশে অব্যাহত সন্ত্রাসের অন্যতম কারণ— আমার ধারণায় সিজারিয়ান বেবী।
আপনি ভাবুন, সুন্দর সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশের বিপক্ষে একটা শিশু মাতৃগর্ভ থেকে বের হওয়ার পূর্বমুহূর্তে দেখছে চুরি, চাকু, কাঁচি। তো সেই শিশু পরবর্তীতে সন্ত্রাসী হবে না তো কি যিখ্ৰীষ্ট হবে? যা হোক, যা বলছিলাম- ইতিমধ্যে আরো তিনটি মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগমের গর্ভস্থ সন্তানের ভূমিষ্ঠ হবার কোন নাম- গন্ধ নেই। এই নারী শিশুটি মাতৃগর্ভে দিব্যি আছে—মোয়া খাচ্ছে। হ্যাঁ ভালোই আছেন কুতকুতি।
হাসছেন, কথা বলছেন, গল্প করছেন। পত্র-পত্রিকায় এই সংবাদ ফলাও করে ছাপা হয়েছে। টনক নড়লো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের। যোগাযোগ হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। আশা করছি একটা কিছু সমাধান হবে। হ্যা ভাই, আসছেন, এসে গেছেন, ইউরোপ আমেরিকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আ জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ডাক্তার মার্টিন, ডাক্তার ডেভিল এবং ডাক্তার গুড়গুড়িয়া।
গান
জাগো জাগো পুরবাসী
আরতো কোন চিন্তা নাই
এসে গেছে তোমার আমার
অ্যান্ড ফাদারের দুলাভাই
নেই কি দেশে মানুষ সাচ্চা
নইলে কেন মহারানীর বাচ্চা
সাদা প্রেমে গদগ
নেতা নেত্রীর ঘুম নাই
জাগো জাগো পুরবাসী
আরতো কোন চিন্তা নাই ।
[তিনজন বিদেশী ডাকার মার্টিন, ডেভিল ওড়িয়া ঢুকে কৃতকৃতিকে দেখতে থাকে। কুতকুতি ওদের দেখে ফিক করে হেসে ফেলে।]
মার্টিন
স্ট্রেঞ্জ’
ডেভিল
রিপোর্টগুলো কোথায়?
নবী
এই যে স্যার।
মার্টিন
আপনার নাম?
কুতকৃতি
মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগম।
নমু
নার্স, স্যারদের মোয়া দাও। স্যারেরা কি মোয়া খাবেন?
গুড়গুড়িয়া
কোয়া?
নমু
কোয়া না স্যার, মোয়া। অত্যন্ত সুস্বাদু। রসালো, দয়ালু।
গুড়গুড়িয়া
রাবিশ।
কুতকুতি
আয়া আমাকে পাচটা মোয়া দাও ।
নবী
স্যার, আমরা তাহলে কাজ শুরু করে দিতে পারি?
মার্টিন
সিওর। ডাঃ ডেভিল আপনার কি মনে হচ্ছে?
ডেভিল
ইটস্ এ্যান এবনরমাল কেস ডাঃ মার্টিন। আমার এত বছরের চিকিৎসা জীবনের অভিজ্ঞতায় এটা একটা নতুন সমস্যা। এক্স-রে রিপোর্ট আলট্রাসনোগ্রাম এবং এখনকার মনিটরিং রিপোর্টে বাচ্চাকে বের করে আনা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার।
মার্টিন
আমার আরো একটা বিষয় মনে হচ্ছে। মাতৃগর্ভ থেকে বের হওয়ার কোন আগ্রহই এই বাচ্চার নেই।
নমু
[চিৎকার করে] মোয়া, মোয়া, স্যার। আমি বলবো এটা সরকারের বিনামূল্যে মোয়া বিতরণ কর্মসূচীর কুফল। এই মোয়াই বাচ্চার তেজ নষ্ট করে দিয়েছে।
গুড়গুড়িয়া
রাবিশ।
নবী
শুধু রাবিশই না স্যার, ওটা একটা খবিশ।
মার্টিন
আমার মতে ডাঃ নমুর বক্তব্য একেবারে ফেলনা না। যে কোন কারণেই মাতৃগর্ভ থেকে এই বাচ্চার ভূমিষ্ঠ হবার কোন আগ্রহই দেখা যাচ্ছে না। এবং শিশুর নিজস্ব আগ্রহ ছাড়া তাকে বের করা দুঃসাধ্য ব্যাপার ।
গুড়গুড়িয়া
কাজেই শিশুর মধ্যে সেই আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। সেক্ষেত্রে শিশুর সাথে মনস্তাত্ত্বিক যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই।
মার্টিন
আমি শিশু মনস্তাত্বিক বিশারদ ডাঃ গুড়গুড়িয়াকে অনুরোধ করবো ফরমুলা জিরো টু ফোর প্রয়োগে মোসাম্মৎ কুতকুতি বেগমের গর্ভস্থ শিশুর সাথে মনস্তাত্ত্বিক যোগাযোগ সম্পন্ন করার জন্য।
গুড়গুড়িয়া
ওকে। তাই করছি। কিন্তু তার আগে শিশুটির একটা নাম দরকার। নার্স—
নার্স
আপনি বাচ্চার নাম ঠিক করেছেন?
কুতকৃতি
হ্যা।
নার্স
কি নাম রাখবেন?
কুতকুতি
মোসাম্মৎ আশা বেগম।
মার্টিন
আশা বেগম?
নমু
সুন্দর নাম স্যার। আশা মানে এক্সপেক্টেশন। স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা। আমাদের মনে অনেক আশা স্যার। সুখের আশা, শান্তির আশা, দু’মুঠো ভাতের আশা। নিশ্চিত জীবনের আশা। সমৃদ্ধির আশা, গণতন্ত্রের আশা, একটা উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আশা।
গুড়গুড়িয়া
এই লোকটা এতো বকবক করে কেন বলুনতো?
নমু
পাগল স্যার, পাগল।
গুড়গুড়িয়া
পাগল আবার ডাক্তার হলো কেমন করে?
নার্স
শুধু পাগলই না স্যার, একেবারে বদ্ধ উন্মাদ ।
গুড়গুড়িয়া
দেন হোয়াই ডু নট ইউ সেন্ট হিম মেন্টাল হসপিটাল
নমু
রাইট স্যার। আমি পাগল। এই দেশের যে গুটিকয় মানুষ সুন্দরের স্বপ্ন দেখে, তাদের সবাইকে মেন্টাল হসপিটালে পাঠানো উচিত।
গুড়গুড়িয়া
ননসেন্স ।
মার্টিন
ডাঃ গুড়গুড়িয়া, এ্যাপলাই ফরমুলা জিরো টু ফোর
বার্থ ফ্যান্টাসি নাটক : ২য় পর্ব
প্রযোজক দল : থিয়েটার আর্ট (থিয়েটার আর্ট ইউনিট)
প্রদর্শনীর স্থান : কচিকাঁচা মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : সাজু মোনায়েম
ডা. নবী : মোহাম্মদ বারী
ডা নমু : সেলিম মাহবুব
নার্স : লেমন
আয়া : নাসিমা নওশাদ
কুতকুতি বেগম : শিমুল খান
ডা. মার্টিন : আশরাফ কবীর
ডা. ডেভিল : এজাজ
ডা. গুড়গুড়িয়া : ফেরদৌস আমিন বিপ্লব
আশা : সানজিদা পশারী ইভা
মাস্তান-১ : মেহেদী (বড়)
মাস্তান-২ : পলক রহমান
ভাংচুরকারী-১ : সফিকুজ্জামান সিদ্দিকী ফুয়াদ
ভাংচুরকারী- ২ : জিলানী আখন্দ
ভাংচুরকারী-৩ : জুয়েল
পুলিশ অফিসার : চন্দন রেজা
হুজুর : এস এম সোলায়মান
সহকারী সচিব : কামাল রায়হান
ভগিজগি-১ : কামরুজ্জামান মিল্লাত
ভগিজগি-২ : প্রশান্ত হালদার
ভগিজগি-৩ : মাসুম
* মাদার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : মনোয়ারুল আজিজ দোলন
* সিস্টার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : চন্দন রেজা
* আঙ্কেল ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : আবুল হাসনাত প্রদীপ
* ইবলিশ ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : প্রশান্ত হালদার
কোরাস দলনেতা : স্বর্ণা সরকার, বাবু, শিমুল খান
যন্ত্র-সঙ্গত : সুজন, ওয়ালিউল্লাহ আকন্দ, নাজিমুজ্জামান নিশাত
কোরাস দল : মাসুম, মিল্লাত, সাজু, দোলন, শাহীন, জিলানী, সুকান্ত দে, মিজান, শুভ্র, সারোয়ার, ফুয়াদ, জুয়েল, পলক, আমিন ও মেহেদী(বড়)
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এস এম সোলায়মান
সহকারী নির্দেশক : মোহাম্মদ বারী
মঞ্চ পরিকল্পনা : কামালউদ্দিন কবির
আলোক পরিকল্পনা : ঠাণ্ডু রায়হান
কোরিওগ্রাফি : রিপন
(* চিহ্নিত চরিত্রগুলো মূল পাণ্ডুলিপিতে নেই, পরিচালকের সৃষ্টি)

[ভয়ঙ্কর যন্ত্রের শব্দ হয়। মাতৃগর্ভের আকৃতির একটি বিশাল ট্রান্সপারেন্সি পেপারের মোড়কে ১২/১৩ বছর বয়সী একটি মেয়ে। এটা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন ইলাস্টিক ফাঁক করে মেয়েটি মাথা বের করতে পারে]
নার্স
ওঁয়া ওঁয়া ওয়া ওয়া, তু তু তু তু । স্বাগতম স্বাগতম, মোসাম্মৎ আশা বেগম।
আশা
আশা বেগম, কেডা আশা বেগম?
নার্স
তুমি। তুমিই হচ্ছো আশা বেগম। তোমার মা এবং আমরা সবাই মিলে তোমার নাম রেখেছি মোসাম্মৎ আশা বেগম।
আশা
আশা! বাহ, সুন্দর নাম ।
নমু
আশা, মাগো তুমিই আমাদের আশা ভরসা। তুমি বের হয়ে আসো মাগো। আমরা বড় হতভাগা জাতি মাগো আমাদের কোন আশা নাই। ভরসা নাই। একটা সং নেতা নাই। নেত্রী নাই। চোখের সামনে একটা আদর্শ পর্যন্ত নাই, যা দিয়ে স্বপ্ন দেখি। এই দুর্ভিক্ষ দুর্নীতি আর অনাচারের দেশে তুমি আমাদের আশা হয়ে বের হয়ে আসো মাগো।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
নবী
নার্স? ডাঃ নমুকে থামাও।
[নার্স ডাক্তার নমুর মুখ চেপে ধরে]
মার্টিন
স্বাগতম মামণি আশা। কি সুন্দর নাম তোমার। আশা, মানে এক্সপেক্টেশন। স্বপ্ন কিন্তু মামণি, তুমি বের হচ্ছো না কেন? তিন মাস আগে তোমার ভূমিষ্ঠ হবার কথা ছিঃ মামণি । বেরিয়ে আসো, আমরা সবাই তোমার প্রতীক্ষায় উদগ্রীব। এসো ভূমিষ্ঠ হও আশা।
(আশা মুখ বের করে]
আশা
আপনে কোন দেশের লোক গো ভাইজান?
মার্টিন
আমি ডাঃ মার্টিন ক্যাম্ব্রিজ, আমার দেশ হচ্ছে আমেরিকা
আশা
ভাইগো, আমার মায়ের একখান আমেরিকান ভিসা দেন। আমি মার্কিন মুলুকে জন্ম নিমুগো ভাইজান, এই দেশে জন্ম নিমু না।
নবী
ছিঃ ছিঃ, এসব কি কথা বলছো আশামণি। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা সাগর মেখলা দেশ।
আশা
ধুর, ফিইক্যা মারেন আপনার শ্যামলা মেখলা। চব্বিশ ঘন্টা মারামারি, কাটাকাটি, গুঁতাগুঁতি, চাঁদাবাজি। এইখানে হরতাল, ঐখানে অবরোধ। মায়ের পেটেই আমি শান্তিতে আছি। গ্যাঞ্জামের মধ্যে গিয়া আমার কোন কাম নাই।
ডেভিল
কিন্তু মায়ের পেটে তো তুমি আর এক সপ্তাহের বেশি থাকতে পারবে না। তুমি এর মধ্যে ভূমিষ্ঠ না হলে তোমার মা এবং তুমি দু’জনেই মারা যাবে ।
আশা
তাও ভালা। মায়ের পেটে শান্তিতেই মরুম। বাইরে আইয়া তো গুল্লি আর চাকুর খোঁচায় মরণ লাগবো।
গুড়গুড়িয়া
পৃথিবীতে তোমাকে আসতেই হবে, এটাই জগতের নিয়ম।
আশা
আমার এক কথা— আমি আমু না।
নার্স
আশা, তুমি একটু বুঝবার চেষ্টা করো। এভাবে কেন নিজের এবং আপন মায়ের জীবন বিপন্ন করছো? সব দেশেই তো একটু আধটু অশান্তি থাকে।
নবী
আমরা তোমাকে তোমার জীবনের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
নার্স
কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না তোমার।
আশা
আপনেরা কথা দ্যান, কিন্তু কথা রাখেন না।
নবী
তুমি আমাদের বিশ্বাস করো, আমরা সবাই তোমার পক্ষে দাঁড়াবো। শুধু আমরা কেন, ইউরোপ আমেরিকার এই তিনজন খ্যাতনামা ডাক্তারও তোমার পক্ষে দাঁড়াবে।
গুড়গুড়িয়া
নিশ্চয়ই, একশোবার দাঁড়াবো। তোমার নিরাপত্তার জন্য বিশ্ব জনমত তৈরি করবো।
ডেভিল
প্রয়োজনে আমরা তোমার জন্য স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করবো।
মার্টিন
আমি তোমার আমেরিকান ভিসার ব্যবস্থা করে দেবো, আমেরিকাতে তোমার পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেবো। তুমি বের হও মামণি ।

আশা
কথা দিতাছেন?
গুড়গুড়িয়া
একশো বার।
নবী
হাজার বার।
আশা
কথার বরখেলাপ করবেন নাতো?
ডেভিল
প্রশ্নই উঠে না ।
আশা
ঠিক আছে, যন্ত্রপাতি রেডি করেন, আইতাছি।
[হৈ চৈ পড়ে যায়। সবাই ছোটাছুটি করে যন্ত্রপাতি রেডি করছে। দু’জন মাস্তান ঢুকে নিমুর কপালে পিস্তল ধরে ]
আশা
ভাইজান গো, আমি মত পাল্টাইছি। আমি বাইর হমু না।
মার্টিন
সেকি, আবার কি হলো? আমরা তো কথা দিয়েছি।
আশা
কোন কথামথায় এই দেশে পোষাইবো না। ভাগেন।
ডেভিল
কি?
আশা
কইতাছি জান নিয়া ভাগেন।
গুড়গুড়িয়া
কেন? কি হলো? তুমি হঠাৎ করে এত ভয় পেয়ে গেলে কেন?
আশা
দেখেন না?
গুড়গুড়িয়া
কি?
আশা
আরে পিছন দিকে চাইয়া দেখেন না ।
[উজ্জ্বল আলোতে নমু এবং দুই মাস্তান দৃশ্যমান]
মাস্তান-১
চোপ শালা, এক্কেরে ভুড়ি ফাসাইয়া দিমু। শালা ক্লিনিক ব্যবসা করবা আর হাদিয়া দিবা না।
নমু
পরশু দিনই তো দিলাম ভাইজান ।
মাস্তান-১
চোপ, সমুন্দির পো। পরশু দিছ, গতকাইল আর আইজকার চান্দা দিবো কি তোর বাপে?
নবী
বিশ্বাস করেন ভাইজান, গতকাল আর আজ আমাদের ক্লিনিকে একটা বাচ্চাও হয় নি। ঐ এক মহিলাকে নিয়েই আমাদের দিন কাবার।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
মাস্তান -২
মিছা কথা কবি তো শালা এই চাকু তোর পেট বরাবর হান্দাইয়া দিমু। আমাগো কাছে পাক্কা খবর আছে, গতকাইল ১০টা বাচ্চা হইছে । ঐ বাদশা, মোট কত ট্যাকা হয়রে?
মাস্তান-১
প্রতিজন বাচ্চা পয়দায় ডাক্তারের চান্দা ১০০০ আর রুগিনীর ১৫০০, মোট ২৫০০। ২৫০০-রে ১৫ দিয়া গুণ করলে দাঁড়ায় ১৫ দু গুণে ৩০, ৫০০তে হয় ৭৫০০। মোট ৩৭,৫০০ ট্যাকা।
মাস্তান-২
দাও, ৫০০ ট্যাকা মাপ, ৩৭০০০ ট্যাকা দাও ।
মার্টিন
হোয়াট ননসেন্স। এসব কি হচ্ছে? হাসপাতালের ভিতরে ভায়োলেন্স, হাউ কাম?
মাস্তান-২
এই পোলা হালায় কেডারে?
নার্স
ছিঃ ছিঃ ভাইজান। ওনাদের সাথে এভাবে কথা বলা কি ঠিক হচ্ছে? ওনারা হচ্ছেন মেহমান, ইয়োরোপ আমেরিকার নাম করা ডাক্তার।
মাস্তান-২
অ ডাক্তার । কোন ক্লিনিকে কাম করেন, নাম ঠিকানা দ্যান। বিলাত আমরিকা যেই জায়গারই হন, মাফ নাই। চান্দা দেওয়া লাগবো। এক বাচ্চা পয়দা করতে এক হাজার টাকা আপনের চান্দা, আর রোগীর দেড় হাজার দ্যান নাম ঠিকানা। শালার বাচ্চারা, বাচ্চা পয়দা করবা আর চান্দা দিবা না, মামার বাড়ির আবদার?
মাস্তান-১
ঐ বাদশা, ছাড়।
মাস্তান-২
ক্যান বে, কি অইছে?
মাস্তান-১
খাড়া, নতুন একখানা বুদ্ধি পাইছি। মিয়া ভাই, কোন দেশে আপনের বাড়ি কইলেন?
মার্টিন
আমেরিকা।
মাস্তান-১
মাসে বেতন পান কত?
মার্টিন
বছরে এক লাখ ডলার ।
মাস্তান-১
আমি আপনেরে মাসে ৫ লাখ ডলার আয়ের ব্যবস্থা কইরা দিমু, আমারে লগে নিয়া যান। খালি ঐ দেশে কোন জায়গায় ক্লিনিক আর ডাক্তার বহে দেহাইয়া দিবেন। বাস, প্রোফিট ফিফটি-ফিফটি।
মার্টিন
এইসব কি হচ্ছে এখানে?
ডেভিল
ডাক্তার নবী, হোয়াই ডোন্ট ইউ কল পুলিশ? জলদি পুলিশ কল করুন ।
মাস্তান-২
এই হুমুন্দির পুতে কয় কি। পুলিশ আইবো এইহানে? কি করতে? পুলিশরে ট্যাহা দিই না? চান্দা যা আদায় করি হের ফরটি পার্সেন্ট খায় পুলিশে। ফরটি পার্সেন্ট খায় প্রোটেকশন মিনিস্টারের দপ্তর। টুয়েন্টি পার্সেন্ট পাই আমরা। পুলিশ কল করবা? কর, পুলিশ উল্টা তোমার পুটকি মারবো। হালার পুতরে মনে কয়- [চাকু বের করে]
মাস্তান-১
ঐ বাদ দে, বাদ দে। (মার্টিনকে) মিয়া ভাই, বুদ্ধিখান কিন্তু খারাপ দেই নাই । যদি রাজি থাকেন খবর দিয়েন। থানার ওসিরে গিয়া কইলে পুলিশ দিয়া আপনেরে আমার আখড়ায় পাঠাইয়া দিবো। ল বাদশা যাই। নবী ডাক্তার কই? ঠিক আছে। আরো ৭০০০ টাকা কনশেসন দিলাম। ৩০ হাজার ট্যাহা কাইল বিয়াল বেলায় রেডি রাইখেন। আইসা নিয়া যামুনে।
মাস্তান-২
[গুড়গুড়িয়াকে] এই হালার পোয়ে দেহি কোন কথাই কয় না। বান্দির পুতে এত কাঁপে ক্যান?
গুড়গুড়িয়া
দেখুন আমি একজন শান্তিপ্রিয় ভীতু মানুষ। তার উপরে হার্ট এবং বহুমূত্রের রোগী । দয়া করে আমাকে কিছু করবেন না।
মাস্তান-১
নাম কি?
গুড়গুড়িয়া
ডঃ গুড়গুড়িয়া ।
মাস্তান-২
কোন দ্যাশ?
গুড়গুড়িয়া
বরন ইন্ নাইজেরিয়া, সেটেলড ইন কানাডা ।
মাস্তান-২
তোমার চশমাটা খুব সুন্দর। সুদূর নাইজেরিয়া থেইক্যা এই দেশ ভিজিটের চান্দা হিসাবে নিলাম।
[মাস্তানরা চলে যায়। সবাই এক ধরনের গন্ধে একে অন্যের দিকে তাকায়। সবার সন্দেহ গিয়ে পড়ে গুড়গুড়িয়ার প্রতি। গুড়গুড়িয়া কম্পিত দেহে পিছাতে থাকে]
গুড়গুড়িয়া
এক মিনিট, আমি একটু আসছি ।
গান
প্রেস্টিজ পাংচার, হলো দেন-দরবার
উন্নত শিরে ভোজবাজি চাঁদাবাজি
বিদেশী সে মেহমান
কাপড়ে ছড়ালো ঘ্রাণ
হায়রে বহুমূত্রের রুগী
সঙ্কটে সন্ত্রাসে নাহি পরিত্রাণ
জন্মে অনীহা দেখায় মানব সন্তান
মানবে অভক্তি আর দানবে সম্মান
নমস্য নমঃ নমঃ বাবাজি মাস্তান।
আশা
কি ভাইজান চাচা খুড়ারা? এ্যাবায় কেমন বুঝতাছেন? আর বাইর অইতে কইবেন আমারে?
নবী
মা আশামণি । তোমার দুইখান পায়ে পড়ি, তুমি বাইর হও। নিজের চোখেই তো সব দেখলে। কাল সকালের মধ্যে ৩০ হাজার টাকা না দিলে ওরা আমার মাথা কেটে নিয়ে যাবে। ক্লিনিকে আমার ২০ জন ইমারজেন্সি অপারেশনের রোগী। অপারেশন না করতে পারলে টাকা দেবো কোত্থেকে?
আশা
আপনের চিন্তা কি? প্যাট কাটলেই ট্যাকা। কিন্তু মায়ের প্যাট থেইক্যা বাইর হইলে তারা যখন আমার কাছে চাঁদা চাইয়া বইবো, আমি দিমু কইথেইকা?
ডেভিল
অসম্ভব, ওরা তোমার ধারেকাছে ঘেঁষতে পারবে না। আমরা তোমাকে পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিচ্ছি।
আশা
ধুর মিয়া, চাপা মাইরেন না। আপনেগো নিজের নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নাই আর আপনেরা আমারে দিবেন নিরাপত্তা। দেখলেন না, আপনাগো আর এক জ্ঞাতি ভাই বহুমূত্রের রোগী কাপড়-চোপড় নষ্ট কইরা বাথরুমে হান্দাইছে।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
নার্স
কিন্তু বের তোমাকে হতেই হবে। তোমার জন্য আমরা এতগুলো লোক পথে বসতে বসেছি, তোমার কি একটুও মায়াদয়া হয় না?
আশা
হয় । জীবনের আশা বাঁচনের আশা আমি ছাইড়া দিছি। কিন্তু আমি শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই । আপনাগো দেশে শান্তিপূর্ণ মৃত্যুর কোন নিশ্চয়তা নাই ।
মার্টিন
দাঁড়ান, এক মিনিট। আমাদের এতো বছরের চিকিৎসা অভিজ্ঞতা এভাবে বৃথা যেতে দেবো না। বের তোমাকে আমরা করবোই। কথা শোন, তুমি বের হও।
আশা
হইলাম।
মার্টিন
ক্লিনিক থেকে আমরা সোজা তোমাকে নিয়ে যাবো এয়ারপোর্টে।
আশা
নিলেন।
মার্টিন
এয়ারপোর্ট থেকে প্লেনে করে স্ট্রেট আমেরিকা।
আশা
হাছাই?
মার্টিন
প্রমিজ।
আশা
আমার মায়েরেও লগে নিবেন?
মার্টিন
যীশু খ্রীষ্টের দিব্যি।
আশা
ঠিক আছে। ব্যবস্থা করেন, আইতাছি।
মার্টিন
অপারেশন ক্রু এলার্ট’ মনিটর চালু করুন। অপারেশনের সরঞ্জাম নিয়ে সবাই রেডি হোন। [মেকানিক্যাল সাউন্ড ইফেক্ট। হৈ চৈ দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। দা কুড়াল করাত নিয়ে সবাই ছুটে আসে আশার কাছে]
আশা
খাড়ান, এক মিনিট ।
মার্টিন
আবার কি?
আশা
এই ক্লিনিক থেইক্যা এয়ারপোর্টের দূরত্ব কত?
মার্টিন
ডাক্তার নমু। এই ক্লিনিক থেকে এয়ারপোর্টের দূরত্ব কত?
নমু
১০ কিলোমিটার।
আশা
পৌঁছাতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে
মার্টিন
কত আর বড় জোর পাঁচ মিনিট।
নমু
না, পাক্কা পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগবে।
মার্টিন
হোয়াট? ১০ কিলোমিটার পথ, পাঁচ ঘণ্টা?
নমু
হ্যাঁ, ট্রাফিক জ্যাম।
মার্টিন
তাই বলে ১০ কিলোমিটার পথ পার হতে ৫ ঘণ্টা লাগবে?
নমু
আমাদের দেশে ১২ ঘণ্টায় ১ কিলোমিটার পথ পার হবার ইতিহাসও আছে
মার্টিন
স্ট্রেঞ্জ’
ডেভিল
ঠিক আছে আশামণি, তোমার কোন কষ্ট হবে না? আমরা তোমাকে সম্পূর্ণ এয়ার কণ্ডিশন গাড়ি করে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবো। দেখবে, এই পাঁচ ঘণ্টায় তোমার কোন কষ্টই হবে না।
আশা
আমি নাই।
নবী
কেন?
আশা
পাঁচ ঘণ্টা
নার্স
অসুবিধা কি? এয়ার কণ্ডিশন কার।
আশা
কিন্তু এই পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে যদি গাড়ি ভাংচুর শুরু হয়ে যায়?
নার্স
আরে না না, ওসব কিছু হবে না।
আশা
না। আমার মা যখন পত্রিকা পড়ছিল, আমি শুনছি, এই দেশে প্রতি পাঁচ মিনিটে। একটি গাড়ি ভাংচুর হয়। পাঁচ ঘণ্টায় এয়ারপোর্ট বাপরে, এই রিস্ক আমি নিবার পারুম না।
নবী
[চিৎকার করে। গাড়ি ভাঙচুর হয় তাতে তোমার কি? ওসব পলিটিক্যাল ব্যাপার। সরকারি দল আর বিরোধী দলের ব্যাপার। তোমার তাতে কি?
আশা
আমার কি মানে? মাতৃগর্ভ থেইক্যা ভূমিষ্ঠ হইয়াই আমি ভাঙচুরের শিকার হয়? এই দেশের হাল-হকিকত বুঝলাম না, নেতা-নেত্রীর বিরোধ বুঝলাম না, এমনকি সংবিধান কারে কয় তাও জানলাম না। এর মধ্যেই আমার কাঁচা শরীলে কাচের টুকরা ঢুকামু? আমার এই নিষ্পাপ শরীল রক্তাক্ত করমু? এইডা কইতে চান?
আয়া
মা জননী গো? তোমারে আমার সালাম। যেই কথা তুমি কইলা । এই রহম কথা আইজতক কেউ কয় নাই। আমরা বড় সাধারণ মানুষ গো মা জননী। রাজনীতির ঘোর-প্যাঁচ বুঝি না। খোঁজ খবরও রাখি না। কাটাসুরে গোলাগুলি হইলো, সবাই কয় দুই পার্টির কাইজা। হেরা কেউ মরলো না, মরলো আমার পোলা ইমান। সরকারি দল কয় হে তাগোর লোক। বিরোধী দল কয় তাগোর লোক। মা রে আমি তো জানি আমার পুতের প্যাডে সাতটা বোমা মারলেও রাজনীতির রও বাইর অইবো না।
পুত্রের লাশটা চোখেও দেখলাম না। হুনছি হের লাশ হাসপাতাল থেইক্যা ছিনতাই হইছে। আমার পুতের লাশ দখল করতে গিয়া মরছে আরো তিন মায়ের পুত। পরদিন সভা মিছিল। সরকার বিরোধী। আমারে জোর কইরা নিয়া গেল। দুই সভাতেই গেলাম। চোখ দিয়া পানি পড়ছেই। দুই সভাতেই কান্দলাম ।
আমার বুকের ধন মাণিক রতন ইমান। দুই সভাতেই কইলাম আমার পুত্র হত্যার বিচার চাই ৷ দুই সভার বক্তারাই কইলো ইমানের রক্ত বৃথা যাইতে দিবো না, আমার ইমানের রক্ত বৃথা যাইবো না। হেরা যারা মারছে তাগোর বিচার হইবো। বড় আশা করছিলাম মাগো। কিন্তু তিন দিনের দিন থেইক্যা আইজ পর্যন্ত কোন নেতা-নেত্রীর সাক্ষাৎ পাই নাই। আপনেরা গণতন্ত্রের কথা কন। তো এই রাজনীতির ডামাডোলে আমার পুতের লাশ দেখার কোন অধিকার কি আমার ছিল না?
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
নমু
[বদ্ধ উন্মাদের মতো] না, ছিল না। তুমি দেশের কোন নেতা-নেত্রী নও। তুমি এই দেশের সাধারণ মানুষ। তোমার কোন রাইট নেই কথা বলার। এই দেশে রাজনীতির রাজ আছে কিন্তু নীতি নেই। তোমার ছেলেই সন্ত্রাসের শিকার হবে। কোন নেতা-নেত্রীর ছেলে না। কারণ ওদের ছেলেরা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে না। পড়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি খুশি হতাম যদি দুই নেত্রীর একটা ছেলে মেয়েও এই দেশের যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো।
সন্ত্রাসে, সেশন জটে ওদের কি এসে যায়? এই এই মেয়ে, তুমি কার কাছে কি আশা করছো? সরকার আর বিরোধী দলের অব্যাহত সন্ত্রাসে যখন গুলিবিদ্ধ হচ্ছে দশ তরুণ, তখন ঠিক ঐ সময়েই ক্যারাম বোর্ড খেলছিল এই দেশের সরকার এবং বিরোধী দলের দুই উপনেতা। একটা শব্দ পড়েছিলাম। ফিউডাল লর্ড। জমিদার আর প্রজা।
গণতন্ত্র? বুলশিট, কিসের গণতন্ত্র? কার গণতন্ত্র? এখন এই দেশের রাজনীতিবিদরাই হচ্ছেন জমিদার। আর আমরা সাধারণ মানুষরা হলাম ওদের প্রজা। ওনারা যখন যাই বলবেন, আমরা তা মানতে বাধ্য। (আরো ক্ষিপ্ত) আমি বলতে চাই—ঐ রাজনীতিকের বাচ্চারা, এর পরে এই দেশের একটা মানুষ মরার আগে তোরা অন্ত ত তোদের একটা ছেলেমেয়েকে আদর্শের নামে, সংবিধানের নামে, গণতন্ত্রের নামে কোরবানি দে। আমি আমার হাজার সন্তানকে পাঠাবো যুদ্ধে নামতে।
নবী
নার্স হি ইজ গোয়িং টু বি ম্যাড। ওকে থামাও।
গান
মানুষ বলো কি উপায়
দুঃখে কইলজা ফাইটা যায়।
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়
[নার্স এবং অন্যান্যরা মিলে নমুকে স্ট্রেট জ্যাকেট পরায়]
মার্টিন
উঃ, অদ্ভুত আপনাদের দেশ।
নবী
এ আমাদের দুর্ভাগ্য স্যার।
মার্টিন
আশা মামণি তুমি আমাদের এ বিপদ থেকে রক্ষা করো মা, কিছু না কিছু রিস্ক তো নিতেই হবে।
আশা
গ্যাঞ্জামের মধ্যে আমি নাই।
মার্টিন
একটা কাজ করা যায় ডাক্তার নবী?
নবী
কি কাজ স্যার?
মার্টিন
এই ক্লিনিক থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথে যারা গাড়ি ভাঙচুর করে, তাদের নেতাদের সাথে একটা আলোচনার ব্যবস্থা করা যায় না? তারা যদি ৫ ঘণ্টার নিশ্চয়তা দেয়।
সে ব্যবস্থা আমি করেই রেখেছি। ওনাদেরকে এখানে আসার অনুরোধ জানিয়ে লোক পাঠিয়ে দিয়েছি। [ চারদিক থেকে ঐ ধর ধর মার মার’ বলে চারজন লোক ঢুকে ডাক্তার নবীর ক্লিনিক ভাঙচুর শুরু করে]
নবী
আরে আরে, কি শুরু করেছেন, শুনুন কথা শুনুন।
নার্স
প্লিজ। দয়া করে একটু কথা শুনুন।
ডেভিল
ফর গডস্ সেক। প্লিজ।
নেতা-১
আরে মিয়া, খবর পাঠাইলেন ভাঙচুর করন লাগবো। সময় নষ্ট না কইরা কামে লাইগ্যা পড়ছি । কি কইবেন তাড়াতাড়ি কন, সময় নষ্ট করন যাইবো না। এখান থেইক্যা গিয়া সাড়ে তিনটায় জমাদার রোডে আবার গাড়ি ভাঙচুরের কামে লাগন লাগবো।
নবী
জ্বি, আমি আপনাদের আমার এই ক্লিনিক ভাঙতে বলিনি, একটা বিশেষ বিপদে পড়ে আপনাদের সাহায্য চেয়েছি।
নেতা-২
ও। এটা আপনার ক্লিনিক?
নবী
জি
নেতা-২
আগে কইবেন তো। তো কি কামে ডাকছেন আমাগোরে?
নবী
জ্বি। এই যে শিশুটি। তিনমাস আগে এর ভূমিষ্ঠ হবার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যমান অবস্থায় ও বের হতে সাহস পাচ্ছে না।
নেতা-৩
ধুর মিয়া, কি কন এইসব উল্টাপাল্টা। দোকানপাট, ঘর, বাড়ি, গাড়ি সব ভাঙচুর করন যায়। মাতৃগর্ভ ভাঙচুর করা যায় না। এইটা কাটাছেঁড়ার কাম, আমাগো কাম ভাঙচুরের।
নবী
না, না। আমি আপনাদের ভাঙচুর করতে বলছি না। ভূমিষ্ঠ হলেই সাথে সাথে ওকে আমরা বিদেশে পাঠিয়ে দেবো। শিশুটি এয়ারপোর্ট না পৌঁছা পর্যন্ত কোন ভাঙচুর হবে না—এই নিশ্চয়তা পেলে সে মাতৃগর্ভ থেকে বের হয়ে আসবে। তাই না আশামণি?
আশা
যদি তেনারা গ্যারান্টি দ্যান।
নেতা-১
ও। এই সমস্যা।
নবী
নিন, মোয়া খান নার্স, আয়া ওনাদের মোয়া দাও। [সবাই মোয়া খাচ্ছে।
নেতা-১
কি করন যায় বে কাওলা?
নেতা-২
হেইডাই তো ভাবতাছি।
নেতা-৩
কতক্ষণ লাগবো আপনাগো এয়ারপোর্ট পৌঁছাইতে।
নবী
বোঝেনই তো, যানজট। ধরেন পাঁচ ঘণ্টা।
নেতা-৩
কি? পাঁচ ঘণ্টা।
নেতা-১
অসম্ভব।
নবী
কেন ভাই?
নেতা-১
আরে ভাই, আপনেরা তো আমাগো সমস্যাটাও বুঝবেন গাড়িতো আর এমনি এমনি ভাংগেনা, ইস্যু লাগে। কোন ইস্যুতে দোকান, কোন ইস্যুতে বাড়ি, কোন ইস্যুতে অফিস, কোন ইস্যুতে গাড়ি। এখন ধরেন এই দেশে প্রতি ৫ মিনিটে একটা করে ইস্যু তৈরি হয়। ৫/১০ মিনিট হইলেও কথা ছিল। ৫ ঘণ্টা? অসম্ভব।
আশা
একটা কথা, আপনেরা ভাঙচুর করেন ক্যান?
মার্টিন
Exactly আমারও তাই প্রশ্ন? হয়তো এটা এক ধরনের প্রতিবাদের ভাষা। তা ভাচুর না করে অন্যভাবে করা যায় ?
নেতা-১
মিয়া ভাই কোন দেশের মানুষ।
মার্টিন
আমেরিকা।
নেতা-২
নতুন তো, অহনো টের পায় নাই।
নেতা-১
হুনেন। একসময় আছিল, আমরা ভাংতাম আর পুলিশে পিটাইতো। পত্রিকায় উঠতো— সহিংসতা দমনে পুলিশে লাডিচার্জ করছে। অহন দিন পাল্টাইছে। ভাঙচুর আর সহিংসতার জায়গায় নাই। এইডা এহন রীতিমতন একটা শিল্প। যারে কয় দ্রুত বিকাশমান শিল্প। আগে গাড়ি ভাঙলে পুলিশে পিডাইতো, অহন তো পুলিশ নিজেই গাড়ি ভাঙ্গে। চলেন, আইজকা আমার লগে, ভাইঙ্গা আপনে নিজেও সুখ পাইবেন ।
ডেভিল
ও সব থাক। এখন এই বাচ্চার ব্যাপারে কি সাহায্য করতে পারেন বলেন।
নেতা-৩
তাইতো ভাবতাছি।
মার্টিন
দেখেন আপনারা একমত হলেই এটা সম্ভবপর।
নেতা-২
একমত হওনডাই তো সমস্যারে ভাই।
মার্টিন
কেন?
নেতা-২
আমরাতো এক পার্টির লোক না, চাইরজন চাইর পার্টির। অই হইতাছে গিয়া কোপ্তা পার্টির, আমি ভর্তা পার্টির, হে কিমা পার্টির। আর ও হইতাছে গিয়া সরকারি পার্টির।
মার্টিন
তো, আপনারা একমত হলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়।
নেতা-২
নারে ভাই, সম্ভব না। কইল না আমার দোস্ত, এইখানে ইস্যুর ব্যাপার আছে। আমাগো কার যে কখন কোন ইস্যু পড়ে হেইডা মিলানটাই মুস্কিল। তাছাড়াও মাথার উপর আছে দাদারা। নারে ভাই, আপনাগোরে সাহায্য করতে পারলাম না বইলা দুঃখিত। চল বে, ল যাই।
[ওরা চারজন চলে যায়, ডাঃ গুড়গুড়িয়া ঢোকে]
আশা
ভাইজানেরা, আলোচনা তো ব্যর্থ। আর করনের কিছু নাই। হেরা যার যার মতন আউগাইতাছে, আপনেরাও আউগান। ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরা যান। আমার ঘুম পাইতাছে, ঘুমাই।
ডেভিল
না না তুমি এখন ঘুমাতে যেও না। ঘুমোলেই সর্বনাশ। নিজের চোখেই তো দেখলে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আলোচনা তো এখনো চলছে।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
আশা
কোন লাভ নাই। এই দেশে আলোচনার আলো বহু আগেই নিইভা গেছে। বাকী আছে শুধু চনা। চনা চিবাইয়া তো আলোচনা চলে না।
মার্টিন
সাংঘাতিক ট্যালেন্টেড মেয়ে তো তুমি। পৃথিবীতে না এসেও এত কিছু ও বুঝলো কি করে ?
আশা
কইলাম না, আমার মায়ে দিনে ৪/৫টা পেপার পড়তো। সব খবরই আমি মন দিয়া হুনতাম, হুইন্যা, হুইন্যা কেস বুইঝা ফালাইছি।
গুড়গুড়িয়া
যাক, ওসব বাদ দিন। আমি একটা ব্যবস্থা অলরেডি করে ফেলেছি।
নবী
কি ব্যবস্থা?
গুড়গুড়িয়া
আশামণিকে নিরাপদে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর ব্যবস্থা। নিরাপত্তার যাবতীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে উনারা দায়িত্ব নেবেন। ঐ যে উনি এসে গেছেন। ।
[একজন পুলিশ অফিসার ঢুকে সবার সাথে করমর্দন করে]
গুড়গুড়িয়া
ইনি হচ্ছেন এখানকার পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জনাব ফজলউদ্দীন কুরকুরি।
মার্টিন
থ্যাঙ্ক ইউ মিঃ কুরকুরি, আপনার সাথে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।
কুরকুরি
ধন্যবাদ, আপনাদের আর কোন চিন্তার কারণ নেই। মিস্টার গুড়গুড়িয়া আমাদের সব প্রবলেম সম্পর্কে জানিয়েছেন। সব দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। এখান থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত টোটাল প্রটেকশন আমাদের, তবে প্লেনে উঠিয়ে দেবার পর আমাদের আর কোন দায়-দায়িত্ব থাকবে না।
নবী
ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ মিস্টার কুরকুরি। আপনি আমাকে এক মহাবিপদ থেকে রক্ষা করলেন, কিভাবে যে আপনাকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না ।
কুরকুরি
কি যে বলেন? এতো আমার কর্তব্য ।
মার্টিন
ইয়ে মিঃ কুরকুরি, আমার বিবেচনায় এই শিশুটি অন্য যে কোন শিশুর তুলনায় অনেক বেশি ইন্টেলিজেন্ট এ্যান্ড সেনসেটিভ। ভূমিষ্ঠ হবার আগেই সে আপনাদের দেশের সব হাল হকিকত বুঝে গেছে। তাই আপনাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ডিটেল্সটা যদি বলতেন।
কুরকুরি
একেবারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা আমাদের। আশা বেগমের সামনে থাকবে বারোটা মোটর সাইকেল। তারপরে পরপর দুটো ট্রাক। আশা বেগমের দুই পাশে পানির কামানবাহী গাড়ি এবং পিছনে আরো দুই ট্রাক পুলিশ।
নবী
বাহ্, চমৎকার। আশামণি, এর চেয়ে ভালো নিরাপত্তা আর কি হতে পারে। তুমি ভূমিষ্ঠ হও। ক্লিনিক থেকে একদম সোজা এয়ারপোর্ট। তোমার সামনে পিছনে চারদিকে পুলিশ । কেউ তোমার কেশাগ্রও স্পর্শ করতে পারবে না। কি বলেন, ডাঃ ডেভিল ?
ডেভিল
Beautiful, simply wonderful আশার নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের যে শঙ্কা ছিল তা কেটে গেছে।
মার্টিন
তাহলে আমরা যন্ত্রপাতি রেডি করি, তুমি প্রস্তুতি নাও। নার্স?
নার্স
ইয়েস স্যার
মার্টিন
সবকিছু রেডি করুন।
নার্স
ওকে স্যার।
আশা
খাড়ান। আমার একখান কথা আছে।
গুড়গুড়িয়া
কি কথা?
আশা
আমি থাকুম কোন গাড়িতে?
কুরকুরি
কেন? মাঝখানের গাড়িতে।
আশা
আমার গাড়িতে কেডা কেডা থাকবো?
কুরকুরি
কোন চিন্তা নেই, শুধু তুমি আর পুলিশ ।
আশা
ঐডাই তো সব চাইতে বড় চিন্তা। মাফ করবেন মিয়া ভাই, আমি নাই।
গুড়গুড়িয়া
কেন কেন? অসুবিধাটা কোথায়?
আশা
অসুবিধা মানে? রীতিমত জান নিয়া টানাটানি।
গুড়গুড়িয়া
বুঝলাম না।
আশা
আমি কি?
গুড়গুড়িয়া
কেন, তুমি একটি শিশু।
আশা
সে তো বুঝলাম, কিন্তু আমার জেন্ডার কি?
গুড়গুড়িয়া
জেণ্ডার! ও ইয়ে তুমি নারী।
আশা
তাইলে?
গুড়গুড়িয়া
কি?
আশা
আপনেরা আলাজপুরের কিয়াসমীন হত্যার ঘটনা বুঝি হুনেন নাই? হেই বেচারিওতো পুলিশের ভ্যানে পুলিশ প্রটেকশনে যাইতেছিল। পথের মধ্যেই পুলিশে তারে রেপ কইরা মাইরা ফেলছে।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ২য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
কুরকুরি
আরে না না, ওরকম কিছু হবে না।
ডেভিল
সত্যি এমন কিছুই হবে না।
আশা
নারে ভাই, এই দেশে মাইয়া মানুষের পদে পদে বিপদ। কেউ তারে রেপ কইরা মারে, কেউ ফতোয়া দিয়া মারে, কেউ পাথর ছুঁইড়া মারে। ঝাড়ু দিয়া মারে, এসিড ছুইড়া মারে-
ডেভিল
ঠিক আছে তোমার গাড়িতে ডঃ মার্টিন, আমি এবং ডঃ গুড়গুড়িয়া থাকবেন, তাহলে হবে তো।
আশা
হ্যাঁ, সেইক্ষেত্রে ভরসা করা যায়।
মার্টিন
দেন, অল রইট। আমরা তিনজনেই তোমার সাথে থাকবো। তো আমরা অপারেশনের কাজ শুরু করি?
আশা
ঠিক আছে করেন।
মার্টিন
ডঃ নবী, নার্স, মনিটর স্টার্ট করুন।
কুরকুরি
জাস্ট এ মিনিট। আপনাদের কাছে কাগজপত্র কি আছে?
মার্টিন
কাগজপত্র মানে?
কুরকুরি
আপনাদের এই কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্স লাগবে না? এ শিশুর কি পাসপোর্ট আছে?
নবী
এর মায়ের আছে।
কুরকুরি
তাহলে একটা প্রবলের সলভ হলো। শোনেন, আমি প্রসেসটা বলছি। প্রথমে শিশুর বার্থ সার্টিফিকেট যোগাড় করে ওর ন্যাশন্যালিটির সার্টিফিকেট যোগাড় করবেন।
ডেভিল
বার্থ সার্টিফিকেট থাকলে ন্যাশন্যালিটি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন কি?
কুরকুরি
আছে, আপনার ফাইলটা যত মোটা করতে পারেন ততই ভালো। আপনার তদবিরটা স্ট্রং হবে ।
ডেভিল
আরে ভাই এটা তো তদবির না একটা মানবিক কাজ, একটা জীবন বাঁচানোর ব্যাপার।
কুরকুরি
এই দেশে মানবিক, দানবিক, স্নায়বিক যাই বলেন না কেন— সবটাতেই তদবরি লাগে।
ডেভিল
কিন্তু আমরা একটা মানবশিশুর জীবন বাঁচাতে এসেছি।
কুরকুরি
মানবশিশু বলেন আর ছাগল শিশু বলেন, তদবির ছাড়া আপনি কোন শিশুর জীবন বাঁচাতে পারবেন না। যা হোক, যা বলছিলাম। ফাইলটা মোটা করেন। আপনাদের ভালোর জন্যই বলছি। এর পরে ওয়ার্ড কমিশনার আর লোকাল এমপির প্রশংসাপত্র যোগাড় করে থানার ওসি সাহেবের রিকমেন্ডেশন নিয়ে একজন ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত করুন।
ডেভিল
আমার মাথা ঘুরছে। একটা মানবিক মিশনে এসে আমি বোধহয় পাগল হয়ে যাবো। (চিৎকার করে) আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না আর দু সপ্তাহ দেরি হলে এই শিশু এবং এর মা কেউ বাঁচবেন না। আপনি বুঝতে পারছেন? মানুষ, দু-দুটো জ্যান্ত মানুষ মারা যাবে?
কুরকুরি
আমার বোঝা না বোঝায় কি এসে যায় বলুন? আমি তো নেহায়েত একজন সরকারি কর্মচারী। তবে আমাদের দেশের জনগণ এবং প্রশাসন দুটো বিষয়ে একেবারেই আপোষহীন। সেটা হচ্ছে নিয়ম এবং সংবিধান। এক লক্ষ লোক মরুক কি লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস হোক- সংবিধান এবং নিয়মের প্রশ্নে আমাদের কোন আপোষ নেই ।
ডেভিল
সেলুকাস! কী বিচিত্র এ দেশ। একটা প্রশ্ন করতে পারি?
কুরকুরি
সিওর।
ডেভিল
সংবিধানের জন্য জনগণ? নাকি জনগণের জন্য সংবিধান
কুরকুরি
খুব একটা কঠিন প্রশ্ন করে ফেললেন স্যার। সরকারের কর্মচারী-মুখে কলুপ আঁটা। পুলিশে চাকরি করি বলে সবাই আমাদের খুব অবজ্ঞা আর ঠাট্টার চোখে দেখে। কিন্তু যে সিস্টেমে আমরা কাজ করি তা নিয়ে যদি কেউ রিসার্চ করতো, একটা ইতিহাস হয়ে যেতো স্যার। আপনি জানেন, এই দেশে একটি মুরগি যতো অসহায়, তার চেয়ে বেশি অসহায় পুলিশ। আমরা ক্রিমিনাল ধরি। উপমন্ত্রী বলেন সাইজ করো; প্রতিমন্ত্রী বলেন ছাড়ো।
পূর্ণমন্ত্রী বলেন ব্যালেন্স করো। এই ব্যালেন্স করতে গিয়ে (কেঁদে ফেলে) আমার একমাত্র সন্তান, আমার নয়নের ধন, আমার ছেলেটাকে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করলো। এই দেশের জনগণ পুলিশ বলে আমাকে যতো ঠাট্টা তামাশাই করুক, কিন্তু আমি একজন পিতা। আপনাদেরই মতো একজন পিতা। আমার ছেলেকে হত্যা করে। ওরা আমাকেই টেলিফোনে হুমকি দিয়ে বলে, আমরা প্রটেকশন মিনিস্টারের লোক। অতএব কোন মামলা করা যাবে না [ কান্নায় ভেঙে পড়ো।]
গান
মানুষ বলো কি উপায়
দুখে কইলজা ফাইটা যায়
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়।
মার্টিন
আই অ্যাম স্যরি মিঃ পুলিশ অফিসার
কুরকুরি
স্যরি স্যার।
ডেভিল
আই অ্যাম টায়ার্ড। আপনাদের নিয়মের আর কি কি বাকি আছে?
কুরকুরি
[চোখ মুছে] ও হ্যাঁ, ফাইলটা প্রথমে যাবে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ঐ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয় ক্লিয়ারেন্সের পর ফাইল যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাইল যাবে তিনটি তদন্তকারী এজেন্সির কাছে। তিন তদন্তকারী এজেন্সি তাদের প্রয়োজনীয় ফিল্ড ইনভেস্টিগেশনের পরে আবার ফাইল ফেরৎ পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি ক্লিয়ারেন্স দেয় তবে ফাইল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পৌঁছে যাবে জনশক্তি মন্ত্রণালয়ে। আর যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্লিয়ারেন্স না দেয়, আপনি আপনার বিষয় পুনঃবিবেচনার জন্য আবার আবেদন করবেন। ফাইল আবার যাবে নারী মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে তিন এজেন্সির মাধ্যমে ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন, ফিল্ড ইনভেস্টিগেশন শেষ হয়ে-
ডেভিল
ওহ প্লিজ স্টপ। আমার মাথা ঘুরছে।
গুড়গুড়িয়া
আপনাদের এই টোটাল ফাইল ওয়ার্ক সারতে কতদিন লাগবে?
কুরকুরি
আপনি নিজে ফাইলের পিছনে লেগে থাকলে কম করে হলেও তিন বছর।
ডেভিল
হোয়াট। এই শিশু এবং তার মায়ের জীবনের মেয়াদ আছে আর মাত্র চৌদ্দদিন
কুরকুরি
তবে আপনি যদি এর পিছনে টাকা পয়সা খরচ করে দালালের মাধ্যমে প্রসিড করেন, তবে সময় কম লাগবে। তাও কোন অবস্থাতেই এক বছরের কমে সম্ভব না।
ডেভিল
জেসাস। সেভ মি।
[একটু উঁচু জায়গা থেকে ডেভিল মূর্ছা যায়। অন্যরা তাকে ধরে ফেলে। চারদিকে হৈ চৈ পড়ে যায়। ইম্প্রোভাইজেশনে প্রতীয়মান হবে ডেভিলের প্রেসার দ্বিগুণ বেড়ে গেছে।]
সুত্রধর
সমস্যা। এক সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে আর এক সমস্যা। এবার সমস্যা সমাধানের মধ্যস্থতাকারীর অবস্থা যায় যায়। তো, মিঃ ডেভিলের এখন ট্রিটমেন্ট চলছে। আলোচনায় অচলাবস্থা দেখা দিলেও আলোচনাকারীরা এখনো হাল ছেড়ে দেননি। তো এই ফাঁকে আপনারাও একটু বিড়ি সিগারেট ফুঁকে আসুন।
গান
মানুষ বলো কি উপায়
দুঃখে কইলজা ফাইটা যায়
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়
বার্থ ফ্যান্টাসি নাটক : ৩য় পর্ব
প্রদর্শনীর স্থান : কচিকাঁচা মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : সাজু মোনায়েম
ডা. নবী : মোহাম্মদ বারী
ডা নমু : সেলিম মাহবুব
নার্স : লেমন
আয়া : নাসিমা নওশাদ
কুতকুতি বেগম : শিমুল খান
ডা. মার্টিন : আশরাফ কবীর
ডা. ডেভিল : এজাজ
ডা. গুড়গুড়িয়া : ফেরদৌস আমিন বিপ্লব
আশা : সানজিদা পশারী ইভা
মাস্তান-১ : মেহেদী (বড়)
মাস্তান-২ : পলক রহমান
ভাংচুরকারী-১ : সফিকুজ্জামান সিদ্দিকী ফুয়াদ
ভাংচুরকারী- ২ : জিলানী আখন্দ
ভাংচুরকারী-৩ : জুয়েল
পুলিশ অফিসার : চন্দন রেজা
হুজুর : এস এম সোলায়মান
সহকারী সচিব : কামাল রায়হান
ভগিজগি-১ : কামরুজ্জামান মিল্লাত
ভগিজগি-২ : প্রশান্ত হালদার
ভগিজগি-৩ : মাসুম
* মাদার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : মনোয়ারুল আজিজ দোলন
* সিস্টার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : চন্দন রেজা
* আঙ্কেল ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : আবুল হাসনাত প্রদীপ
* ইবলিশ ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : প্রশান্ত হালদার
কোরাস দলনেতা : স্বর্ণা সরকার, বাবু, শিমুল খান
যন্ত্র-সঙ্গত : সুজন, ওয়ালিউল্লাহ আকন্দ, নাজিমুজ্জামান নিশাত
কোরাস দল : মাসুম, মিল্লাত, সাজু, দোলন, শাহীন, জিলানী, সুকান্ত দে, মিজান, শুভ্র, সারোয়ার, ফুয়াদ, জুয়েল, পলক, আমিন ও মেহেদী(বড়)
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এস এম সোলায়মান
সহকারী নির্দেশক : মোহাম্মদ বারী
মঞ্চ পরিকল্পনা : কামালউদ্দিন কবির
আলোক পরিকল্পনা : ঠাণ্ডু রায়হান
কোরিওগ্রাফি : রিপন
(* চিহ্নিত চরিত্রগুলো মূল পাণ্ডুলিপিতে নেই, পরিচালকের সৃষ্টি)

গান
হাতের বালা গড়াই দে, নাকের নথ বাইন্দা দে
নতুন শাড়ি আলতা-গো আইনা দে তাড়াতাড়ি
না পারলে কপালে তোর আছে ঝাটার বাড়ি ।
আমার চাই কানের দুল সাথে রক্তজবা ফুল
আনবা বেনারসী শাড়ি, এক ডজন রেশমী চুড়ি
তোর নতুন চুড়ি হাতের বালায় ঝাটার বাড়ি ।
আমি রিক্ত অসহায় আমার কোমরে জোর নাই
ইচ্ছা করে সন্ত্রাসী হই ছাইড়া বাপের ঘরবাড়ি
দুই সতীনের জ্বালায় দ্যাশে টিকতে না পারি।
শোন আমার ডিকটেশন আমার জন্য আনবা কিইনা
একখান সুন্দর সংবিধান, তোমায় করলাম গো সাবধান
সংবিধান না গণতন্ত্র আমার একি দোটানা
ভাবতে ভাবতে শুরু হইয়া গেছে পাতলা পায়খানা
আমার কি হবে উপায়
ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি এবার হিমালয়ে যাই
সংবিধান গুইলা বানাইবা একটা গণতন্ত্রের গান
[বার্থ ফ্যান্টাসি ৩য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
সূত্রধর
না। যতটা হতাশ হয়েছিলাম, ইতিমধ্যে তার অনেকটাই একটু হালকা মনে হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ কিম্বা আন্তর্জাতিক যে কোন চাপেই হোক, মোসাম্মৎ আশা বেগমের ব্যাপারে চারদিক থেকেই এক ধরনের পজেটিভ সাড়া পাওয়া গেছে। মন্ত্রী পরিষদের সচিব পর্যায়ে গতকাল এই নিয়ে একটি মিটিং, মানে যাকে বলে জরুরি মিটিং হয়ে গেছে।
দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা তাদের নিদারুণ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে তৎপর হয়েছেন। জনমত রিপোর্টে দেশে শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ এই সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নেবার দাবী জানিয়েছেন। সবচেয়ে আশার কথা-দেশের দুই জনপ্রিয়, পূজনীয় এবং শ্রদ্ধাভাজন অভিনেত্রী মিসেস ফুলবানু এবং কদবানু তাদের সবিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইতিমধ্যে কদবানু এবং ফুলবানুর মধ্যে চিঠি আদান-প্রদান হয়ে গেছে। তো দেখা যাক। সামনে কি হয়?
মার্টিন
ডক্টর নমু?
নমু
জ্বি স্যার?
মার্টিন
সর্বশেষ খবর কি?
নমু
আলোচনা চলছে। আপাতত এইটুকুই অগ্রগতি।
ডেভিল
ডক্টর নবী এতো বিমর্ষ কেন?
নার্স
বিমর্ষ হবে না কেন স্যার? মানুষটা দিনে পনের বিশটা পেট কাটতেন, আজ কতদিন হয়ে গেল পেট কাটতে পারছেন না। ক্লিনিক ব্যবসা লাটে উঠেছে। স্যারের হাত দুটো কি রকম অস্থির হয়ে আছে, দেখছেন না?
[শুরু থেকে নবী অপারেশানের মাইম করতে থাকবে]
গুড়গুড়িয়া
প্রফেশনাল মানুষ তো, একেবারে বেদিশা হয়ে পড়েছেন।
আয়া
একটা মিলাদ পড়ান দরকার স্যার।
ডেভিল
সব ঠিক হয়ে যাবে ডক্টর নবী। একটু ধৈর্য তো ধরবেন।
মার্টিন
আপনার শরীরটা এখন কেমন ডক্টর ডেভিল ?
ডেভিল
প্রেসারটা কনট্রোলে আসায় অনেকটাই ভালো লাগছে।
মার্টিন
যাক। এসব নিয়ে আপনি অত টেনশান করবেন না। শরীরটা আগে।
নার্স
[নবীকে/ স্যার। আপনাকে না জানিয়ে আমি একটা কাজ করে ফেলেছি। করে ফেলেছি কি মানে করতে বাধ্য হয়েছি। আপনার এই মানসিক টানাপোড়েন আমার সহ্য হচ্ছিল না।
[নবী পেটকাটার মাইম করতে থাকে]
নবী
কি? ক-রে-ছো?
নার্স
আমি আমার এক হুজুরকে এখানে আসতে বলেছি। খুব কামেল লোক স্যার। হুজুরের পানি পড়া খেলে দেখবেন বাচ্চা সুড়সুড় করে বের হয়ে আসবে।

নবী
উনাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।
নার্স
স্যার। আপনারা কি বলেন?
মার্টিন
কি বিষয়ে?
নার্স
আমার হুজুরকে আনার ব্যাপারে ।
ডেভিল
এটা একটা মেডিক্যাল সায়েন্সের ব্যাপার। হুজুর এসে এখানে কি করবে?
নার্স
উনি খুব কামেল লোক স্যার।
ডেভিল
দরকারটা কি? আলোচনা তো চলছে।
নার্স
আলোচনা চলছে চলুক। এই পথেও আমরা একটু চেষ্টা করে দেখি। যদি কিছু একটা হয়ে যায় । অন্তত চেষ্টা করতে দোষ কি স্যার?
গুড়গুড়িয়া
ডক্টর ডেভিল, আমার মতে নার্স ঐ পথে একবার চেষ্টা করে দেখুক । এই দেশে স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টের খুব সুনাম শুনেছি। এই কয়েকদিনে এখানকার বহু পত্র-পত্রিকায় এই ধরনের খবর আমার চোখে পড়েছে। কেউ ২৭ বছর, কেউ ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনের শেষে সন্তান লাভ করছে।
৯০ বছরের বুড়োও সন্তান জন্ম দিচ্ছে। ভেরি এক্সসাইটিং। ও ইয়ে মানে আপনি তো জানেনই আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১০ বছর। কিন্তু এখনো আমাদের কোনো সন্তানাদি হলো না। মেডিক্যাল সায়েন্স বলে জীবনেও হবে না। তো আমি চিন্তা করছি, নেক্সট ইয়ারে আপনার ভাবীকে নিয়ে এদেশে একবার ঘুরে যাবো। দেখি স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টে যদি কিছু হয়?
ডেভিল
যার হয় ১০ বছরেই হয়, আর যার হয় না তার ৯০ বছরেও হয় না।
নার্স
স্যার, আমার হুজুর বাইরেই অপেক্ষা করছেন। আপনারা যদি অনুমতি দেন তবে…..
ডেভিল
ডক্টর মার্টিনকে জিজ্ঞেস করুন।
নার্স
স্যার। উনাকে কি ডেকে নিয়ে আসবো?
মার্টিন
ডাকুন।
[নার্স ভিতরে চলে যায়। এক বোরখা পরা মহিলা এবং নার্সকে বগলদাবা করে হুজুর ভিতরে ঢোকে ।]
[বার্থ ফ্যান্টাসি ৩য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
গান
ওঠো আশা জাগিয়া, দুই চক্ষু খুলিয়া
আসিয়াছে ধর্মপুত্র রসে কষ চিবাইয়া
রসমালাই আনছে নাগর আরও সঙ্গে মিষ্টি পান
মিহি সুরে শুনবা ফতোয়ার জবান।
ঘোমটা খোল হাসিয়া, খেমটা নাচে নাচিয়া
আসিয়াছে রসিক নাগর রসেতে ডুবিয়া।
হুজুর
বাড়ি বাড়ি করো মোমিন বাড়ির নাই নিশানা, হাসরের দিন খোঁজ মোমিন খোজ তোমার ঠিকানা।” ইনারা কারা? চিনতে পারলাম না।
নার্স
হুজুর ইনি হচ্ছেন ডাক্তার নবী। উনাকে বিপদ থেকে উদ্ধার আপনাকে করতেই হবে। উনার কষ্ট দেখলে-
হুজুর
হবে হবে হবে। গা হাতটা একটু টিপে দাও। ঘাড়টাও কেমন যেন একটু মোচড়া- মুচড়ি করছে। খিচে খিচে দিও। [টিপছে। বাদ বাকি সব কারা?
নার্স
এই তিনজন হচ্ছেন বিদেশি ডাক্তার। এই কেসের কাজে এই দেশে এসেছেন।
হুজুর
ওয়া তাফতে খোলা ফাতারি। মানে মোবারকবাদ। শোকরানা আপনাদের ভাষায় হবে টা টা বাই বাই । একটু জোরে জোরে টিপ। ঐ যে কোণায় চুপচাপ দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে তামশা দেখছে বেয়াদ্দপটার নামটা কি?
নার্স
দেখলেন? দেখলেন হুজুরের এলেম? এইখানে কোনটা কোন ধরনের মানুষ হুজুর তা একদৃষ্টিতে বুঝে ফেলেছেন। ওটা নমু ডাক্তার হুজুর। ঠিকই ধরেছেন। আস্ত একটা পাগল। সব সময় উল্টা-পাল্টা কথা বলে। ওর কথায় কান দেবেন না হুজুর।
গুড়গুড়িয়া
হুজুর আমার নাম ডক্টর গুড়গুড়িয়া। বরন নাইজেরিয়া। সেটেল্ড কানাডা। আমি আপনার একজন মন্ত্রমুগ্ধ গুণগ্রাহী।
হুজুর
নাহোয নাফুছি জাপরে ওয়ারাস জানরে ওয়ারাস গোয়া বাসা গোয়া বাসা। মানে আপনার কথা শুনে আমি বড় বেশি প্রীত হয়েছি। আমার দোয়া নিও।
গুড়গুড়িয়া
আহা-হা। হুজুরের কি বিনয়? থ্যাঙ্ক ইউ। হুজুর আমাকে আর পর করে রাখবেন না। আমাকেও আপনার দেহ সেবার সুযোগ দিন। [হুজুরের গা টিপতে যায়। হুজুর ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।]
হুজুর
খামোশ। কোন বেগানা পরপুরুষ আমার শরীর স্পর্শ করবে না। কারণ এতে শরীরের তেজ কমে আসে।
নমু
বোঝা গেল। ছোটবেলায় বহু কু-অভ্যাসের রেকর্ড উনার আছে।
হুজুর
এই খামোশ। ছহি সে বাত করো। জোরে টিপ।
গুড়গুড়িয়া
আপনি বাংলা বলুন বাংলা আমি ভালো বুঝি।
হুজুর
বাংলা। তাও আবার ভাষা। মরিন বেগম-
নার্স
জি হুজুর।
হুজুর
পৃথিবীর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কলা কোনটি?
নার্স
জ্বি সাগর কলা।
হুজুর
নিকৃষ্ট কলা কোনটি?
নার্স
বাংলা কলা।
হুজুর
কদুর মধ্যে আসেন। সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কদু হচ্ছে মিষ্টি কদু। নিকৃষ্ট কদুর নাম হচ্ছে বাংলা কদু। মদের কথায় আসেন। খান বা না খান পরের কথা। উৎকৃষ্ট মদ বলতে আমরা বুঝি বিলেতি মদ। নিকৃষ্ট মদ কোনটারে বলে মরিন বেগম?

নার্স
হুজুর। বাংলা মদ ।
হুজুর
তাইলে ঘটনাটা কি দাঁড়ালো? নিকৃষ্ট কলার নাম বাংলা কলা। নিকৃষ্ট কদু হচ্ছে বাংলা কদু । নিকৃষ্ট মদের নাম বাংলা মদ। ঠিক তেমনি পৃথিবীর নিকৃষ্ট ভাষার নাম হচ্ছে গিয়ে বাংলা ভাষা। এই ভাষা মালাউনের ভাষা, এই ভাষা ফেরাউনের ভাষা।
নমু
তো এত বছর ধরে আপনি এদেশে পড়ে আছেন কোন দুঃখে। ছোটবেলায় একটা কবিতা পড়েছিলাম। যে জন বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী, সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি ।
হুজুর
চোপরাও বেল্লিক । কবি এবং কবিতা দুইটাই মুরতাদ ।
গুড়গুড়িয়া
হুজুর! বাদ দেন ওটার কথা। পাগল-ছাগল। হুজুর আমার একটা ব্যবস্থা করেন।
হুজুর
সমস্যা কি?
গুড়গুড়িয়া
ছেলেপেলে হয় না। ডাক্তারি বিদ্যা মানলে হবেও না। কিন্তু আপনার স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টের গুণগান শুনে আবার আশান্বিত হয়ে পড়ছি।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ৩য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
হুজুর
একটু ফাঁকে আস।
গুড়গুড়িয়া
জ্বি?
হুজুর
বলছি। ফাঁকে আস।
[ দু’জনে কোণায় যায়।]
হুজুর
বয়স কত?
গুড়গুড়িয়া
আমার?
হুজুর
তোমার।
গুড়গুড়িয়া
৪০।
হুজুর
বিবিজানের বয়স কত?
গুড়গুড়িয়া
২৭।
হুজুর
শরীর স্বাস্থ্য?
গুড়গুড়িয়া
আমার?
হুজুর
না, বিবিজানের।
গুড়গুড়িয়া
স্লিম। দেখতেও খুব সুন্দরী।
হুজুর
ইয়া মাবুদ!
গুড়গুড়িয়া
৫ ফিট ১০ ইঞ্চি হাইট।
হুজুর
ইয়া আলী।
গুড়গুড়িয়া
অত্যন্ত আকর্ষণীয় ফিগার
হুজুর
হবে।
গুড়গুড়িয়া
হবে?
হুজুর
হতেই হবে। আমার বয়স কত?
গুড়গুড়িয়া
৪৫।
হুজুর
না। ৭৫ । তুমি তো ঐসব দেশের লোক। ফিরি। কাজেই তোমার কাছে লুকাবো না কিছুই। আমার অফিসিয়াল বিবির সংখ্যা চার। আন-অফিসিয়াল কত বলবো না। যৌবন ধরে রাখার টেকনিক জানতে হয়। এই ৭৫ বছর বয়সে অফিসিয়াল আন-অফিসিয়াল সব সামাল দিয়ে যাচ্ছি। আমার অফিসিয়াল ছোট বিবির বয়স ১৮। বিশ্বাস না হয় কথা বলে আসতে পারেন। কোনো কমপ্লেন নেই।
গুড়গুড়িয়া
হুজুর। সত্যিই আমি বিমোহিত হয়ে যাচ্ছি। অসাধারণ আপনার স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্ট। হুজুর! আমাদের স্বামী-স্ত্রীর অন্য কোনো সমস্যা নেই। শুধু একটি সন্তান-
হুজুর
হবে। অবশ্যই হবে।
গুড়গুড়িয়া
আপনার অশেষ দয়া হুজুর। হুজুর। যদিও আমার ছুটি পেতে কষ্ট হবে তবুও। নেক্সট ইয়ার আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে আপনার কাছে স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টের জন্য আসবো।
হুজুর
ধুর মিয়া। অত কষ্ট করে তোমার ছুটিছাটার কাজ কি? তুমি শুধু বিবিজানরে পাঠায়ে দিও। ইনশা আল্লাহ! আমার স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টে তোমার বিবি এই দেশের মাটি থেকে গর্ভজাত হয়ে বিলাতে ফেরত যাবে।
[নবী এগিয়ে আসে।]
নবী
প্যাচাল ছাড়েন। আমার কি করবেন করেন। পারলে করেন, না হয় রাস্তা মাপেন।
হুজুর
পারবো না মানে? কি সমস্যা যেন আপনার?
নার্স
হুজুর। ঐ যে বলেছিলাম? আশা বেগম।
হুজুর
তোমার ব্যবস্থা সব রেডি? কলা গাছের ডগা, সরিষার তেল?
নার্স
সব রেডি হুজুর।
হুজুর
সব নিয়ে আসো।
[মিউজিক বাজে । নার্স সব সরঞ্জাম নিয়ে এক জায়গায় জড়ো করে। মাতৃগর্ভ থেকে আশা বেগম খুব বিরক্ত হয়ে ঘুম থেকে ওঠে।]
আশা
এইসব কোন ধরনের অসভ্যতা? চিৎকার চেঁচামেচি কইরা দিলেন তো আমার কাঁচা ঘুমটার বারোটা বাজাইয়া। আজব দেশ তো আপনাগো । একটা শিশু মাতৃগর্ভেও সুখে ঘুমাইতে পারে না। দিনের বেলায় গাড়ির পোঁ পৌ, মস্তানের ঠুসঠাস, আর ফেরিওয়ালার হাঁকডাক। ঘুমাইতে পারি না। সন্ধ্যায় যাও একটু ঘুমাই, রাত নয়টায় শুরু হয় মাইকে মিলাদ মাহফিল। বারোটায় কাওয়ালি কেন রে ভাই, মিলান কন 1 আর কাওয়ালি কন ৫০০/৭০০-এর বেশি লোকতো হয় না। কিন্তু আপনাগো মাইকিং এনাউন্সমেন্টটা হইতাছে ৭ লক্ষ লোকের জন্য। শুনতে চাই না। তবু শুনতেই হবে। আইচ্ছা, পৃথিবীতে শব্দ দূষণ বলে একটা শব্দ আছে। এইটাও আপনেরা শুনেন নাই।
হুজুর
বড় মুখরা মেয়ে তো। শোন মোসাম্মৎ আশা বেগম। মেয়েমানুষের অত গলা উঁচু করে কথা বলাটা উচিত হচ্ছে না। ভুলে যেও না তুমি এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের জেনানা।
আশা
কপালের কোন জায়গায় লিখা আছে যে আমি মুসলিম পরিবারের জেনানা? নিশ্চই। কারণ পিতামাতা দু’জনেই সাচ্চা মুসলমান হলে তার সন্তানও বিধিমতে মুসলমানই হবে । নম্র হও। বিনয়ী হও। উঁচু গলায় কথা কওয়া তোমার জন্য হারাম। আর পুরুষে উঁচা গলায় কথা কইলে?
[বার্থ ফ্যান্টাসি ৩য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
হুজুর
পুরুষের সাথে নারীর তুলনা চলে না আশা বেগম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের এই দুনিয়াতে পাঠায়েছেন আখিরাতের কাজ করতে। যার যা অবস্থান তাকে সেই অবস্থানে থেকেই কাজ করে যেতে হবে। নারীর অবস্থান গৃহে। পুরুষের অবস্থান বাইরে। এইটাই হচ্ছে আল্লাহর বিধান। আল্লার বিধানের বাইরে যাওয়ার এক্তিয়ার আমাদের কারো নেই। অতএব ভূমিষ্ঠ হও। বিধানের প্রতি অনুগত হও। পর্দার অভ্যন্তরে থাক। স্বামীর সেবা কর। সন্তানাদি মানুষ কর। তোমার কোনো অসুবিধা হবে না।
মার্টিন
মিস্টার হুজুর। আমার একটা প্রশ্ন।
হুজুর
নিশ্চই করুন।
মার্টিন
বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আপনি কোনো খোঁজখবর রাখেন?
হুজুর
সব খবরই রাখি। পত্রিকা পড়িতো কোন খবর জানতে চান বলেন, ফাঁকে আসেন। বলছি। শুনেন। আমি বিলাতের ডায়েনার বিবাহ-বিচ্ছেদের খবর রাখি। ডায়েনা কোন কোন পুরুষের সাথে কি কি করেছে সব মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। আপনাদের দেশের এক প্রাক্তন রাজার বউ, কি নাম যেন ঐ যে গ্রীস দেশের জাহাজের মালিক-
মার্টিন
জ্যাকুলিন গুনাসিস।
হুজুর
হ্যাঁ হ্যাঁ। ঐ জ্যাকুলিন-এর নগ্ন ছবিও আমি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে দেখেছি। কি ফিগার রে ভাই। আর ঐ যে একটা মেয়ে মডেলিং করে। পত্রিকায় পড়েছি ২৭৩ জন পুরুষের সাথে শুয়েছে। কুমিলা প্যাক না কি যেন নাম?
মার্টিন
ক্যামিলা পারকার।
হুজুর
হ্যাঁ হ্যাঁ। কেমিলা ফাকার। আহারে। কি একটা ফিগার। ভাইজান। ওদের সাথে আমার একটু পত্র মিতালি করাইয়া দিবার পারেন? জাস্ট ওরা দুই একটা রসের চিঠি লিখবো, আমিও দুই একটা রসের চিঠি লিখলাম-
মার্টিন
শোনেন। আমি আপনার কাছে বাইরের দুনিয়ার আদিরসের কথা জিজ্ঞেস করিনি। আমি জানতে চাচ্ছি, অর্থনীতি, রাজনীতি, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা আপনি কি বুঝেন? এই পৃথিবীটা, এই সময়ের পৃথিবীটা হচ্ছে প্রতিযোগিতার উৎপাদনের প্রতিযোগিতা। কর্মচাঞ্চল্যের প্রতিযোগিতা। এই পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৫২ ভাগ হচ্ছে মহিলা। এদের বাদ দিয়ে সমৃদ্ধি অর্জন অসম্ভব। তাই সারা বিশ্বে নারী-পুরুষ একসাথে সমানতালে উৎপাদনের প্রতিযোগিতায় এগিয়ে চলেছে। ব্যতিক্রম শুধু আপনাদের দেশ।
হুজুর
ব্যতিক্রম হবে কেন আমাদের দেশ? উৎপাদনের কথাই যদি বলেন- আমরা কম কিসে? ধরেন আমার প্রথম বিবি, তার সন্তান সংখ্যা ১৭। অবশ্য যৌবন যাওয়ার পরে তারে আমি ডাইভোর্স করেছি। দ্বিতীয় বিবি। ছফুরন। পর পর সাত মেয়ে সন্তানের পরে ডাইভোর্স। তৃতীয় বিবি-
মার্টিন
মাদার ফাকার।
হুজুর
আপনি কি আমারে গালি দিলেন? না না আমি কিছু মনে করিনি। হাজার হোক আপনারা হচ্ছেন রাজার দেশের লোক।
মার্টিন
আপনি প্লিজ কি করতে চান করেন। আমাদের প্রচুর কাজ বাকি রয়ে গেছে।
হুজুর
করছি।
[হুজুর তেল ছিটাচ্ছে]
আশা বেগম বের হওনা
তুমি মুসলিম উম্মার জেনানা
এইসব তোমাকে মানায় না
স্বামীর ঘর তোমার ঠিকানা
আশা
মিষ্টি কথায় ভুলবো না
ফতোয়ার ঠেলায় বাঁচবো না
দোররার ভরে আসবো না
হুজুরের কেরামতি পোষায় না ।
হুজুর
চোপরাও বেল্পিক নাফরমান জেনানা ভুলে যেওনা তুমি কার সাথে কথা বলছো। বের তোমাকে হতেই হবে। সবাইকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছো বলে ভেবনা আমাকেও পারবে।
আশা
কি করবেন আপনে আমারে?
হুজুর
বান মারবো বান। আমার পালিত জ্বীনকে চালান করবো। আমার জ্বীনের শক্তি সম্পর্কে তোমার ধারণা নাই বলে বেয়াদ্দবী করার সাহস পাচ্ছে। মাতৃগর্ভ থেকে সে তোমারে ক্ষত-বিক্ষত করে ছিঁড়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু নিতান্ত শিশু বলেই সেই কঠোর পদ্ধতি আমি প্রয়োগ করবো না। কিন্তু প্রয়োজন হলে তাও করবো। তার চেয়ে ভালয় ভালয় বের হয়ে এসো। একমাত্র আমিই পারব তোমার নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা দিতে।
আশা
আপনে আমারে কি নিরাপত্তা দিবেন? উল্টা দোররা মাইরা মাইরা আমার পিঠের চামড়া তুইল্যা নিবেন।
হুজুর
কভি নেহি। যাকতা ফালায়ি জুদায়ি জুদায়ি ঢুকতে শাদী মোবারক আয়ি। কেউ তোমারে দোররা মারতে পারবে না। আমি সবার সামনে জবান দিচ্ছি। তোমার নিরাপত্তার খাতিরে আমার চতুর্থ বিবিরে ডাইভোর্স করে তোমাকে আমার চতুর্থ বিবি হিসেবে ঘরে তুলে নেবো। এর চেয়ে আর বড় নিরাপত্তা কি হতে পারে। বলেন। আপনারাই বলেন ।
আশা
কয় কি রে। এই মাজাভাঙ্গা বুড়ারে আমি করুম বিয়া? এতো জন্মের সাথে সাথে আমারে রেপ কইরা মারবো।
হুজুর
খামোশ। আমার গোস্যা হয়েছে। আমার তালুর রক্ত মাথায় উঠে গেছে। আমার এলেম যদি সত্য হয় বের তোমাকে হতেই হবে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুমি আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করেছো। এই ছেড়ে দিলাম বান। আ যা মেরে লাল জ্বীন। এই হারামজাদী গতরখাকিকে ক্ষত-বিক্ষত করে ধরে নিয়ে আয়। ওর রক্তে আমি সিনান করব। ওর রক্তে আমি আজ আমার বদন ধোব। যা, এই নালায়েক বেল্লিক জেনানাকে ছিন্নভিন্ন করে ধরে নিয়ে আয়। যা যা-
[নানা রকম মন্ত্র পড়ে হুজুর। সাংঘাতিক উত্তেজিত হয়ে ছোটাছুটি করতে করতে এক পর্যায়ে চিৎকার দিয়ে থেমে যায় ।]
মার্টিন
কি হলো?
ডেভিল
ইঞ্জুরড?
নার্স
হুজুর?
নবী
কি হলো? হয়েছেটা কি?
নমু
না। তেমন বিশেষ কিছু হয় নি। ঐ বাচ্চা খেপে গিয়ে হুজুরের পবিত্র মুখমণ্ডলে পেশাব করে দিয়েছে।
হুজুর
কুল্লে তালাক। কুল্লে তালাক। যা । বাইন তালাক।
[ হুজুর পালিয়ে যায়।]
গুড়গুড়িয়া
মিস্টার ডেভিল। আই হ্যাভ চেঞ্জড মাই মাইন্ড।
ডেভিল
কি?
গুড়গুড়িয়া
নেক্সট ইয়ার আপনার ভাবীকে নিয়ে স্পিরিচুয়্যাল ট্রিটমেন্টের জন্য আমি আর এদেশে আসছি না।
ডেভিল
হ্যাঁ। আসবেন না কেন, আসুন। টেস্টটিউব বেবীর পরিবর্তে স্পিরিচুয়াল বেবী।খারাপ কি?
নবী
স্যার। কিছুতেই তো কিছু হচ্ছে না। ডাক্তারি পেশা আমার লাটে উঠেছে। বৌ ছেলেমেয়ে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি পথে বসতে হবে? বলেন স্যার। বলেন, একটা কিছু বলেন।
নার্স
আমার একটা কথা আছে স্যার। আমি আপনার কাছে ন্যায্য বিচার আশা করি।
মার্টিন
কি বিচার?
নার্স
এই বেয়াদ্দপ মেয়েটা মানে আশা বেগম আমার হুজুরের পবিত্র মুখমণ্ডলে যে অপকর্ম করলো, আমি তার একটা সম্মানজনক বিচার আশা করি।
মার্টিন
গর্ভস্থ শিশুর বিচার করা যায় না।
নার্স
নিশ্চয়ই যায় স্যার। আপনি আইনের বিধান খুঁজে দেখুন ।
মার্টিন
পৃথিবীর কোন সভ্য আইন গর্ভস্থ শিশুর বিচার করতে পারে না।
নার্স
আপনি ব্লাসফেমি আইন প্রয়োগ করুন স্যার। কত বড় দুঃসাহস মেয়েছেলেটার। হুজুরের মুখে
মার্টিন
শুনুন। আমি ডাক্তার। বিচারক নই।
নবী
আমার কি করবেন স্যার? আমি কি আত্মহত্যা করবো?
মার্টিন
ডক্টর ডেভিল। আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। কি করা যায় এখন?
ডেভিল
তাইতো ভাবছি।
[ সারা গায়ে স্কচ টেপ লাগানো এক ব্যক্তি ঢোকে।]
লোক
আসসালামু আলাইকুম।
[সবাই লোকটাকে দেখছে।]
নমু
আপনি?
লোক
আমি সচিবালয় থেকে আসছি।
নমু
কি ব্যাপারে?
লোক
আপনাদের ঐ গর্ভস্থ শিশুর ব্যাপারে।
নমু
কিছু মনে করবেন না। আপনার পরিচয়টা
লোক
আমার নাম রমিজ তিনকানওয়ালা। আমি আবর্জনা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব
নমু
তো এখানে কি মনে করে?
লোক
সম্প্ৰতি সচিব পর্যায়ে একটা মিটিং হয়েছিল। উনারা মোসাম্মৎ আশা বেগমের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আবর্জনা সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করেছেন।
[বার্থ ফ্যান্টাসি ৩য় পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান]
ডেভিল
হোয়াট? আবর্জনা? আশা বেগমের কেস আবর্জনা ?
লোক
এই যে ফাইল ।
গুড়গুড়িয়া
স্ট্রেঞ্জ
মার্টিন
এই দেশটা চলছে কীভাবে?
নমু
আল্লায় চালাচ্ছে।
মার্টিন
আপনাদের ফাইলে কোনো গোলমাল হয় নি তো?
লোক
না। এই যে দেখুন। সচিব পর্যায়ের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত।
মার্টিন
সত্যিই এটা অসম্ভব সম্ভবের একটি দেশ।
লোক
সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে অধিক সন্তান উৎপাদনকে ডিসকারেজ করার জন্য গর্ভস্থ বিষয়গুলো আবর্জনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবির চাপের মুখে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।
ডেভিল
যেই মন্ত্রণালয়ই হোক। এই ব্যাপারে আমরা অন্তত একজন সচিব পর্যায়ের ব্যক্তিই আশা করছিলাম ।
লোক
আমাদের মিনিস্ট্রির প্রাইয়োরিটি লিস্টে আপনাদের কেসটা ১৬২ নাম্বারে আছে। সাধারণত প্রাইয়োরিটি অনুযায়ী প্রথম ১৫টি কেস ডিল করেন স্বয়ং সচিব। ১৬ থেকে ৫০ অতিরিক্ত সচিব, ৫১ থেকে ৮০ যুগ্ম সচিব, ৮১ থেকে ১০০ উপ-সচিব, ১০১ থেকে ১৫০ সিনিয়র সহকারী সচিব, ১৫১ থেকে বাকি সহকারী সচিবের আন্ডারে। অতএব সেই হিসাবে আমার এখানে আসা। সহকারী সচিব কম কি?
গুড়গুড়িয়া
আশ্চর্য!
মার্টিন
বুঝলাম। তো, আপনি আমাদের কিভাবে সাহায্য করবেন?
লোক
সত্যি কথা বলতে গেলে আমি আপনাদের কোনো সাহায্যই করতে পারবো না।
মার্টিন
তাহলে এসেছেন কেন?
লোক
পর্যবেক্ষণ করতে ।
ডেভিল
কি পর্যবেক্ষণ করবেন?
লোক
আশা বেগমের ভূমিষ্ঠ হওয়া সংক্রান্ত বিষয়টা বিধিসম্মত হচ্ছে কি না, তা দেখা। কোথাও কোনোভাবে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ করা আমার দায়িত্ব।
নমু
বুঝলেন না স্যার? বিষয়টা হচ্ছে মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো। এই ব্যাটা পদে পদে গ্যাঞ্জাম লাগাবে।
লোক
নারে ভাই। আমি কি গ্যাঞ্জাম লাগাবো। নিজেই আমি গ্যাঞ্জামের মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে সরকারের চাকরি করি। এখন চাকরি করতে গিয়ে জীবন যায় যায় অবস্থা। বুঝেনই তো সারাদেশে এখন হরতাল আর অবরোধের ছড়াছড়ি। বিরোধী দলের কথা শুনতে গেলে চাকরি থাকে না। আর সরকারের কথা শুনতে গেলে শরীর বাঁচে না। ফাটা বাঁশে বিচি আটকায়া গেছে রে ভাই। আমি আর কি গ্যাঞ্জাম করুম পুরা দেশটাই তো একটা গ্যাঞ্জাম। করেন, আপনারা আপনাদের কাজ করেন। আমি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি।
[বড় একটা দূরবীন এবং সংবিধান সামনে রেখে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।]
গুড়গুড়িয়া
জাস্ট কিউরিসিটি। আপনি যে ড্রেসটা পরে আছেন, অদ্ভুত না ডঃ ডেভিল ?
ডেভিল
সারা শরীর স্কচ টেপ দিয়ে মোড়ানো। এটা কি আপনাদের অফিসিয়াল ড্রেস?
লোক
না। এই ড্রেসটার নাম হচ্ছে সেলফ প্রোটেকশন ড্রেস। সম্প্রতি আমাদের দেশে দিগম্বর শিল্প চূড়ান্ত উৎকর্ষ অর্জন করেছে। যেমন ধরেন আমি তিনবার দিগম্বর হয়েছি। হয়েছি মানে দিগম্বর করা হয়েছে। প্রথমবার দিগম্বর হয়েছি দুই মিনিটে। দ্বিতীয় বার পাঁচ মিনিটে। তৃতীয়বার তিন মিনিটে। তো আমার এখনকার ড্রেসটা অত্যন্ত সময় উপযোগী। এই স্কচ টেপ খুলে দিগম্বর করতে কম করে হলেও এক ঘণ্টা সময় লাগবে। সম্ভ্রম রক্ষায় এক ঘণ্টা সময় কিন্তু কম না।
মাটিন
নো নো। জোর করে মানুষকে দিগম্বর করা একটা সাংঘাতিক অমানবিক কাজ । কোনো সুস্থ মানুষ এই কাজ সমর্থন করতে পারে না। আর আপনি এটাকে শিল্প। বলছেন?
লোক
শিল্পই তো স্যার। আপনি দিগম্বর করার নেগেটিভ সাইডটা দেখলেন। পজেটিভ সাইডটা দেখবেন ?
মার্টিন
দিগম্বরের আবার পজেটিভ সাইড আছে নাকি?
লোক
আছে না? ধরেন-একবার দুইবার তিনবার দিগম্বর হতে হতে সবাই ইউজড় টু হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে সবাই দিগম্বর হয়ে অফিস-আদালত, কল-কারখানায় যাচ্ছে। শিল্পী-সাহিত্যিক দিগম্বর হয়ে শিল্পকর্ম করছে। নেতা-নেত্রীরা দিগম্বর হয়ে বক্তৃতা করছে। শিশুকিশোর যুবা বৃদ্ধ সবাই দিগম্বর। এতে করে বস্ত্র খাতে যে বিপুল পরিমাণ ব্যয় হতো, সে ব্যয় শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সারা বিশ্ব এতে উপকৃত হবে।
ডেভিল
বিশ্ব উপকৃত হবে?
লোক
হবে না? নিশ্চয়ই হবে। দিগম্বর সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে। আমরা দিগম্বর হয়ে বিদেশ সফরে যাবো। আমাদের দেখাদেখি সমগ্র মানব জাতি দিগম্বর হয়ে যাবে। কার্ল মার্কস যা করতে পারেন নি তাই আমরা করে দেখাবো। কার্ল মার্কস এক অভিন্ন ঐক্যবদ্ধ মানব জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমরাও এক অভিন্ন ঐক্যবদ্ধ দিগম্বর মানব জাতির সেতুবন্ধন রচনা করবো ।
ডেভিল
অপূর্ব আপনার কল্পনাশকি
লোক
গোবরে পদ্মফুল বলে কথা। আপনারা আমাকে আবর্জনা মন্ত্রণালয়ের লোক বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছিলেন। কিন্তু দেখলেন তো! আবর্জনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পদ্মফুল। ঠিক আছে। আপনারা আপনাদের কাজ করেন। আমি আমার কাজ করি।
গান
টগবগ টগবগ কইরা ছোটে গণতন্ত্রের ঘোড়া
আনাড়ি লোক সওয়ার হইয়া করলো ভারে খোঁড়া
চাপাবাজ আর অস্ত্রবাজরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে
ল্যাংড়া মোড়া দারুণ ভয়ে উল্টো পথে ঘোরে
ঘোড়া আয় আয় আয়, ঘোড়া ওয়াশিংটন দৌড়ায়
ঘোড়া আয় কাছে আয় মোড়া লন্ডনে জিরায়।
ঘোড়া মানুষের কাছে আয় ঘোড়ার টেনশনে ঘুম নাই
জান বাচাতে ল্যাংড়া ঘোড়া দেশ ছেড়ে পালায়
নাইকো মোদের দুঃখ ক্লেশ সবখানে সুখের আবেশ
ল্যাংটা করা খেমটা নাচে চলছে ভালোই দেশ
[লোক দূরবীন নিয়ে কাজ করছে। নবী ফাঁস পরছে। নমু বাঁধা দিচ্ছে।]
নমু
না স্যার না। প্লিজ। এ কাজ করবেন না। প্লিজ স্যার।
নবী
ছেড়ে দিন, ছেড়ে দিন আমাকে। এ জীবন আমি আর রাখবো না।
ডেভিল
ডঃ নবী প্লিজ!
নবী
না। আপনাদের কোন আশ্বাসে আমি ভুলবো না। আমি আত্মহত্যা করবো।
নমু
স্যার প্লিজ।
নবী
আমাকে ছেড়ে দিন বলছি।
গুড়গুড়িয়া
স্যার একটা কিছু করুন। ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাওয়ার আগে একটা কিছু করুন।
মার্টিন
কি করবো। কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
লোক
সংবিধানের ৩১০ গ উপধারা ৩৬ অনুযায়ী আত্মহত্যার প্রচেষ্টা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ ।
মার্টিন
[চিৎকার করে] এই দেশে এমন লোক কি নেই যারা এই সমস্যার সমাধান করতে পারে?
বার্থ ফ্যান্টাসি নাটক : ৪র্থ পর্ব
প্রযোজক দল : থিয়েটার আর্ট (থিয়েটার আর্ট ইউনিট)
প্রদর্শনীর স্থান : কচিকাঁচা মিলনায়তন, ঢাকা
কুশীলব
সূত্রধর : সাজু মোনায়েম
ডা. নবী : মোহাম্মদ বারী
ডা নমু : সেলিম মাহবুব
নার্স : লেমন
আয়া : নাসিমা নওশাদ
কুতকুতি বেগম : শিমুল খান
ডা. মার্টিন : আশরাফ কবীর
ডা. ডেভিল : এজাজ
ডা. গুড়গুড়িয়া : ফেরদৌস আমিন বিপ্লব
আশা : সানজিদা পশারী ইভা
মাস্তান-১ : মেহেদী (বড়)
মাস্তান-২ : পলক রহমান
ভাংচুরকারী-১ : সফিকুজ্জামান সিদ্দিকী ফুয়াদ
ভাংচুরকারী- ২ : জিলানী আখন্দ
ভাংচুরকারী-৩ : জুয়েল
পুলিশ অফিসার : চন্দন রেজা
হুজুর : এস এম সোলায়মান
সহকারী সচিব : কামাল রায়হান
ভগিজগি-১ : কামরুজ্জামান মিল্লাত
ভগিজগি-২ : প্রশান্ত হালদার
ভগিজগি-৩ : মাসুম
* মাদার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : মনোয়ারুল আজিজ দোলন
* সিস্টার ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : চন্দন রেজা
* আঙ্কেল ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : আবুল হাসনাত প্রদীপ
* ইবলিশ ফ্যান ক্লাব প্রতিনিধি : প্রশান্ত হালদার
কোরাস দলনেতা : স্বর্ণা সরকার, বাবু, শিমুল খান
যন্ত্র-সঙ্গত : সুজন, ওয়ালিউল্লাহ আকন্দ, নাজিমুজ্জামান নিশাত
কোরাস দল : মাসুম, মিল্লাত, সাজু, দোলন, শাহীন, জিলানী, সুকান্ত দে, মিজান, শুভ্র, সারোয়ার, ফুয়াদ, জুয়েল, পলক, আমিন ও মেহেদী(বড়)
কলাকুশলী
নির্দেশনা : এস এম সোলায়মান
সহকারী নির্দেশক : মোহাম্মদ বারী
মঞ্চ পরিকল্পনা : কামালউদ্দিন কবির
আলোক পরিকল্পনা : ঠাণ্ডু রায়হান
কোরিওগ্রাফি : রিপন
(* চিহ্নিত চরিত্রগুলো মূল পাণ্ডুলিপিতে নেই, পরিচালকের সৃষ্টি)

বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব
[অডিটোরিয়ামে আলো জ্বলে উঠে। তিনজন লোক চিৎকার করে বলে—
বুদ্ধিজীবী
আমরা পারুম। আমরা পারুম।
মার্টিন
আপনারা কারা?
বুদ্ধিজীবী
আমরা বুদ্ধিজীবী, বুদ্ধিজীবী।
[তিনজনই মঞ্চে ওঠে]
বুদ্ধিজীবী-১
দেন। বিবৃতি দেন।
মার্টিন
বিবৃতি। কিসের বিবৃতি?
বুদ্ধিজীবী-২
বারে৷ বিবৃতিতে সই করন লাগবো না?
মার্টিন
কিসের বিবৃতি?
বুদ্ধিজীবী-৩
বুঝে না। আমরা কারা?
ডেভিল
আপনারা কারা?
বুদ্ধিজীবী-১
আমি ত্যাগী বুদ্ধিজীবী।
বুদ্ধিজীবী-২
আমি যোগী বুদ্ধিজীবী।
বুদ্ধিজীবী-৩
আমি ভোগী-যোগী।
ডেভিল
বাহ্ অপূর্ব। একই অঙ্গে এত রূপ?
মার্টিন
আপনাদের কাজ কি?
বুদ্ধিজীবী-৩
বিবৃতি দেওয়া।
মার্টিন
কিসের উপরে আপনারা বিবৃতি দেন?
বুদ্ধিজীবী-৩
সর্ব বিষয়ে । আমরা কাউরে না করি না।
মার্টিন
কতগুলো বিবৃতি দিয়েছেন এ পর্যন্ত?
বুদ্ধিজীবী-৩
এক লক্ষ ছত্রিশ হাজার চাইরশ বিশ
মাটিন
আপনি?
বুদ্ধিজীবী-১
(তিনকে দেখিয়ে) এই শালার জন্য আমি লাইমলাইটে আসতে পারছি না। কেউ বিবৃতিতে সাইন নেয়ার জন্য গেলে সে আমার বিরুদ্ধে উল্টা-পাল্টা কথা বলে। তারপরেও আমি ২৬০০০ বিবৃতিতে সই দিয়েছি ।
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
বুদ্ধিজীবী-২
আমাকে কেউ টেক্কা দিতে পারবে না। আমি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ভঙ্গ করেছি। আমার বিবৃতির সংখ্যা তিন লক্ষ উনচল্লিশ হাজার। ডেভিল এক্সকিউজ মি। মিঃ ভগিজগি আপনারা আমাদের কিভাবে সাহায্য করতে পারেন?
বুদ্ধিজীবী-১
বিবৃতি দিয়ে।
ডেভিল
কি বিষয়ে বিবৃতি দেবেন ?
বুদ্ধিজীবী-১
আপনাদের সমস্যা কি?
ডেভিল
না জেনেই এসেছেন?
বুদ্ধিজীবী-১
অতশত মনে রাখা কি সম্ভব?
ডেভিল
আমাদের সমস্যা আশা বেগম।
বুদ্ধিজীবী-২
আমরা এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের জন্য ঐ স্বেচ্ছাচারী মহিলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি ।

গুড়গুড়িয়া
কোথায় হত্যাকাণ্ড?
বুদ্ধিজীবী-২
মরে নি?
গুড়গুড়িয়া
মাই গড।
বুদ্ধিজীবী-২
তবে কি নিন্দা প্রস্তাব হবে। তাহলে নিন্দা আপন জ্ঞাপণ করছি।
মার্টিন
নার্স। তুমি উনাদের আমাদের সমস্যার কথাটা বলো
[নার্স তাদেরকে সমস্যার কথা বলে।]
বুদ্ধিজীবী-১
তাই নাকি। সাংঘাতিক ব্যাপার।
বুদ্ধিজীবী-২
এর পিছনে কোনো আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র নেই তো।
বুদ্ধিজীবী-৩
তোমার সব কিছুতেই খালি সন্দেহ।
ডেভিল
এই যে শুনুন আমাদের সমস্যাটা কি বুঝতে পেরেছেন? এটা শুধু আমাদেরই সমস্যা না। এটা আপনাদের জাতীয় সমস্যা। এখন বলেন, আপনারা এ ব্যাপারে কি সাহায্য করতে পারেন।
বুদ্ধিজীবী-২
হ্যাঁ হ্যাঁ। এটা যে মেডিক্যাল সায়েন্সের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমাদের কিইবা করার আছে।
নবী
স্যার! আপনাদের অনেক কিছুই করার আছে। আপনারা হলেন একাধারে ভোগী এবং যোগী। সবাই আপনাদের শ্রদ্ধা সম্মান করে। আপনারা আশা বেগমের সাথে কথা বলেন। আপনারা এত বিবৃতি দিয়েছেন। মায়ের পেটে সে নিশ্চয়ই সেই বিবৃতি শুনেছে। আপনারা হচ্ছেন জাতির বিবেক, আপনাদের কথা ও না করতে পারবে না।
বুদ্ধিজীবী-১
কিন্তু আমাদের ভাষা তো ও বুঝবে না।
ডেভিল
কেন?
বুদ্ধিজীবী-১
বুদ্ধিজীবীদের ইন্টেলেকচুয়্যাল বাংলা ভাষা সাধারণ মানুষ বুঝে না।
ডেভিল
তাহলে সাধারণ মানুষের ভাষাতেই কথা বলুন।
বুদ্ধিজীবী-১
সাধারণ মানুষের ভাষাতে কথা বললে ইন্টেলেকচুয়ালিটির কদর থাকবে? আমরা বুদ্ধিজীবী। আমাদের সাথে কথা বলতে হলে ওকে জানতে হবে দ্বন্দ্ব, উৎপাদন, সামাজিক অবকাঠামোর বিন্যাস। জানতে হবে আরোহণ প্রক্রিয়া। জানতে হবে ইতিহাসের জড়বাদী ব্যাখ্যা জানতে হবে সমাজ মননের অনু পরমাণুর নিয়ামক শক্তিকে।
গুড়গুড়িয়া
এক্সকিউজ মি। আপনারা তো হলেন বুদ্ধিজীবী।
বুদ্ধিজীবী-২
হ।
গুড়গুড়িয়া
কাদের জন্য আপনারা বুদ্ধিজীবী।
বুদ্ধিজীবী-১
সমাজের জন্য জনগণের জন্য।
গুড়গুড়িয়া
আপনাদের সমস্যা হচ্ছে জনগণ আপনাদের ভাষা বোঝে না।
বুদ্ধিজীবী
বোঝে নারে ভাই, বোঝে না। এখানেই তো ভাই আমাদের দুঃখ। অশিক্ষিত, গণ্ড- মুর্খ চামারের দেশ। এত ভালো ভালো কথা বলি। শালার জনগণ বোঝে না। হবে না। কিছু হবে না। যেই দেশের জনগণ পিকাসো বোঝে না, হোমার বোঝে না, সক্রেটিস বোঝে না, সেই দেশের জনগণকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
নমু
স্যার আপনারা ভোগীযোগী। এই বাচ্চা মায়ের পেটে থেকে বহু পত্রিকার খবর শুনেছে। নিশ্চয়ই আপনাদের বহু বিবৃতি ওর কানে ঢুকেছে। আমি নিশ্চিত। খ আপনাদের শ্রদ্ধা করে। আপনারা একটু অনুরোধ করে দেখবেন?
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
বুদ্ধিজীবী-২
সমস্যা আছে।
নার্স
কি সমস্যা স্যার?
বুদ্ধিজীবী-১
আমরা কোনো কিছু নিগোসিয়েট করতে গেলেই প্যাঁচ লেগে যায়।
নার্স
স্যার। চেষ্টা করতে দোষ কি?
বুদ্ধিজীবী-২
তা অবশ্য ঠিক। চেষ্টা করতে দোষ কি সারাজীবন তো চেষ্টাই করলাম। পেলাম না কিছুই। এটাও চেষ্টা করে দেখি? কি বলেন?
বুদ্ধিজীবী-৩
তা অবশ্য ঠিক। চেষ্টা করতে দোষ কি ।
নবী
আশা বেগম। ওঠো ওঠো মামণি। চেয়ে দেখ। দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা তোমার সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। ওঠো মামণি।
আশা
ওহ্ হো। আপনাগো জ্বালায় কি আমি একটু ঘুমাইবারও পারুম না?
বুদ্ধিজীবী-১
না না না। আশামণি। এখন তোমার ঘুমিয়ে থাকার সময় নয়। ওঠো। জেগে ওঠো। কোটি কোটি জনতা দুর্বার প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছে। এশিয়া, ইউরোপ ল্যাটিন আমেরিকার নির্যাতিত নিপীড়িত জনতা এগিয়ে এসেছে তোমার সমর্থনে। যারা তোমার সাথে অন্যায় করেছে, তোমার উপর পাশবিক নির্যাতন করেছে, তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য বীর জনতা—
আশা
আমার উপর পাশবিক নির্যাতন করলো কেডা? এ ছাগলে কয় কি?
নমু
ভোগী ভাই, লাইনে কথা বলেন ।
বুদ্ধিজীবী-২
ব্যাটা আসলেই একটা ছাগল। এটা অন্য কেস
বুদ্ধিজীবী-১
কি যেন ছিল বিষয়টা?
বুদ্ধিজীবী-২
ও হ্যাঁ। কি যেন ছিল আপনাদের সমস্যাটা?
নমু
বাচ্চা মাতৃগর্ভ থেকে বের হতে চাচ্ছে না।
বুদ্ধিজীবী-২
ও হ্যাঁ! বের হতে দিচ্ছে না। কারা দিচ্ছে না?
নার্স
দিচ্ছে না নয়। চাচ্ছে না।
বুদ্ধিজীবী-২
যাচ্ছে না। কে যাচ্ছে না?
নমু
আরে ভাই যাচ্ছে না না। চাচ্ছে না।
বুদ্ধিজীবী-২
ও চাচ্ছে না। বন্ধুরা। পারছে না আজ দিচ্ছে না হয়ে শত শত মানুষের কণ্ঠে উচ্চকিত হয়ে আছে। আমরা চাচ্ছি না বলে কেউ যাচ্ছে না এটা হতে পারে না। পারছে নাই শেষ কথা নয়। দিচ্ছে না বলেই পারছে না। তাই যাচ্ছে না-প্যাচ লেগে গেছে। চাচ্ছে না দিচ্ছে না। ঠিকই তো আছে। চাচ্ছে না বলেই দিচ্ছে না পারছে না বলেই যাচ্ছে না। তাহলে সমস্যাটা কোথায়?

আশা
সমস্যাটা আপনাগো গোবর-ভরা মাথায়। আপনেরা কারা?
বুদ্ধিজীবী-১
আমরা বুদ্ধিজীবী।
আশা
কি কামে আইছেন?
বুদ্ধিজীবী-১
বিবৃতি দিতে
আশা
কিসের বিবৃতি
বুদ্ধিজীবী
সমস্যা সংক্রান্ত বিবৃতি।
আশা
সমস্যাটা কি?
বুদ্ধিজীবী
প্যাচ লেগে গেছে। সমস্যাটা যেন কি?
নমু
দয়া করে আর প্যাচ লাগাবেন না। শুধু দুটো শব্দ উচ্চারণ করেন। গর্ভস্থ ও ভূমিষ্ঠ
বুদ্ধিজীবী
ও হ্যাঁ! গর্ভস্থ ও ভূমিষ্ঠ ।
আশা
ও এতক্ষণে বুঝলাম। আমার কেইসে আইছেন। একটা সত্য কথা কইবেন বেকতে?
মার্টিন
হ্যাঁ হ্যাঁ। নিশ্চয়ই।
আশা
আপনেরা সত্যিই আন্তরিকভাবে চান আমি দুইন্যায় আসি?
মার্টিন
যিশু খ্রীষ্টের দিব্যি।
আশা
বেকতে হুনেন, ঐসব ভোগী যোগী বাদ দিয়া, সমস্যার গোড়ায় আসেন।
ডেভিল
তুমি বলো।
আশা
আমার সাফ কথা । মনুষ্য সমাজের বসবাসযোগ্য একটা স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি না করলে আমি ভূমিষ্ঠ হমু না।
ডেভিল
সমস্যার গোড়াটা কি বলো?
আশা
এই দ্যাশের দুই জনপ্রিয় অভিনেত্রীই পারেন এই দেশে মনুষ্য সমাজের বসবাস যোগ্য একটা স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে।
ডেভিল
তাদের নামটা কি?
আশা
কদবানু আর ফুলবানু। আপনাগো আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ । আমি জবান দিতাছি। আপনেরা খালি কদবানু আর ফুলবানুরে আমার সামনে আনেন। তারা দুইজন যদি আমারে কথা দ্যান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, অরাজকতার বিরুদ্ধে, এই দ্যাশের সম্প্রীতির সপক্ষে, উন্নয়নের সপক্ষে তারা এক সাথে কাজ করবেন—তাইলে আমি এক মিনটের মধ্যে দুইন্যায় ভূমিষ্ঠ হমু। দরকার হইলে আমিও দুই নেত্রীর দুই হাত ধইরা সন্ত্রাস অবরোধের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু কইরা খাড়ামু।
ডেভিল
‘ওয়ান্ডারফুল। পজেটিভ। ভেরি পজেটিভ ডিসিশন।
বুদ্ধিজীবী-১
আমি পারুম। কদবানুতো আমার ফ্যান।
বুদ্ধিজীবী-২
ফুলবানু আমারে সাংঘাতিক ভক্তিশ্রদ্ধা করে। আহারে নিউ ইয়ার ডে তে যে শ্যাম্পেনটা আমাকে খাইয়েছিল এখনও সেই গন্ধ মৌ মৌ করছে।
বুদ্ধিজীবী-৩
কদবানু ফুলবানু দুই অভিনেত্রীই আমার ফ্যান। আমার কথা ওরা কেউ ফেলতে পারবে না।
আশা
এতই যখন আত্মবিশ্বাস। তো একবার চেষ্টা কইরা দ্যাখেন?
বুদ্ধিজীবী-১
ল যাই। আমরাই পারুম।
[ভগিজগিদের প্রস্থান]
সুত্রধর
এতক্ষণে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলা গেল। হবে। এবার নিশ্চয়ই একটা কিছু হবে। দুই অভিনেত্রী যদি সত্যি সত্যি একটা মতৈক্যে পৌঁছে যেতে পারেন, আমরা সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচবো। বহুদিন ধরে বুকের মধ্যে আটকে থাকা বন্ধ নিশ্বাসটা এবার আমরা মুক্ত বাতাসে ছাড়তে পারবো। আশ্চর্য। একটা গন্ধমের এত ক্ষমতা। একটা গন্ধমের জন্য সারাদেশে হানাহানি, সংঘাত, সন্ত্রাস। আশ্চর্য এই যাদুর গন্ধমটি আপাতত কদবানুর দখলে হলেও ফুলবানু এর ফেলে আনা দাবিদার। গন্ধম সংক্রান্ত সংঘাতে এই পর্যন্ত ২৫ জন পুলিশসহ নিহত হয়েছেন ৫০০ মানুষ। আহত হয়েছেন—এই চুপ। কদবানু ফুলবানু আসছেন।
[ আলাদা আলাদাভাবে বেষ্টিত হয়ে কদবানু এবং ফুলবানুর প্রবেশ। গান এবং দুই অভিনেত্রীর উপর পুষ্প বৃষ্টি ]
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
সূত্রধর
অভিনন্দন। অভিনন্দন। পরম পূজনীয় শ্রদ্ধাস্পদ অভিনেত্রী কদবানু এবং ফুলবানু। জাতির এক মহাদুর্যোগময় মুহূর্তে একটি মানবিক মিশনে এগিয়ে এসে যে উদারতা আপনারা দেখিয়েছেন তার জন্য আমরা আপনাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সুপ্রিয় দর্শক। একই সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি শ্রদ্ধেয় কদবানুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জনপ্রিয় অভিনেতা নোলা ভিখারী, জনাব তোতা শিকারী ও জনাব তুলা প্যাচওয়ারী। অন্যদিকে ফুলবানুকে সহায়তা করতে এসেছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় অভিনেতা রুহুল উসখুশ, জনাব হুদুল কুতকুত ও জনাব শ্রীমাভো বান্দিরপুত। তো দেখা যাক এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে কি কি অবিস্মরণীয় ঘটনাগুলো ঘটছে ।
[সহযোগী অভিনেতাদের নাম বলার সাথে সাথে প্রত্যেক স্ব অভিনেত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করে । সব সহযোগীই অথর্ব বৃদ্ধ অথবা বিকলাঙ্গ। দুই অভিনেত্রী মুখোমুখি হয়েই ভেংচি কেটে ঘুরে দাঁড়ায়।

নোলা
প্লিজ! মাদার প্লিজ।
কদবানু
এই! তুই চুপ।
ফুলবানু
জীবন যায় যাক। আমি আপোষ করবো না। ঐ বেটির মুখ আমি দেখবো না।
বান্দির পুত
সিস্টার। এটা তো অন্য ঘটনা ।
ফুলবানু
যেই ঘটনাই হোক। ওর সাথে আমার কোনো কথা নেই। আমার গন্ধম আমাকে না দেয়া পর্যন্ত আমি—
কদবানু
উ। কি আমার গন্ধমওয়ালীরে? আমার এত সাধের গন্ধম ফল-
রুহুল
এক্সকিউজ মি মাদার। গন্ধমটা এককভাবে সিসটার ফুলবানুর। এখানে অন্য কারো দাবি সংবিধান সম্মত নয়।
তোতা
এই ধরনের মনোভাব সুস্পষ্টভাবে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী। জনগণ দীর্ঘদিন সহ্য করেছে। আর নয়। এবার এমন প্যাদানি দেবো-
হুদুল
ঐ ব্যাটা। তুই কি প্যাদানি দিবিরে? খবরদার উল্টা-পাল্টা কথা কবি তো নাকের পানি চোখের পানি এক করে ছাড়বো ।
তুলা
শালা গ্রেট করে। এত বড় সাহস। আয় শালা আয়। দেখি তোর সাহস কত।
[ মারামারি লেগে যায়। সবাই হস্তক্ষেপ করে মারামারি থামাচ্ছে। কনবানু এবং ফুলবানু একে অন্যের দিকে ফুল ছুঁড়ে মারছে।]
কদবানু
ঐ মার মার মার শালারে।
ফুলবানু
ছিইল্যা কাইট্যা লবন লাগাইয়া দে।
ডেভিল
হোয়াট দি হেল ইউ আর ডুইং হিয়ার।
নবী
প্লিজ। কথা শোনেন। প্লিজ।
নোলা
শালারে আইজ শেষই কইরা ফালামু।
বান্দিরপুত
আমার হাতেই আল্লা তোর মরণ লেখছে।
নবী
ছিঃ ছিঃ এসব কি করছেন আপানারা? আপনারা হচ্ছেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। লোকে দেখলে কি ভাববে?
নমু
নিন স্যার। মোয়া খান। মোয়া শরীরের তেজ কমায়।
[সবাই মোয়া খাচ্ছে]
মার্টিন
দেখুন। খুব বিপদে পড়ে আমরা আপনাদের সাহায্য চেয়ে পাঠিয়েছি; আর আপনারা–
ডেভিল
কি নিয়ে গণ্ডগোল হচ্ছিল আপনাদের?
নমু
একটা গন্ধম ফল স্যার ।
ডেভিল
একটা গন্ধম ফলের জন্য এতকিছু? কত হাজার গন্ধম চাই আপনাদের? আমার পুরো দেশটাই হচ্ছে গন্ধমের আড়ত।
নমু
এই গন্ধম ফল তো সেই গন্ধম ফল নয় স্যার। এই গন্ধম ফলের সাথে জড়িয়ে আছে দুই অভিনেত্রীর রক্ত এবং নাড়ির সংযোগ।
মার্টিন
আচ্ছা আচ্ছা বাদ দেন ওসব। ওসব ওনাদের ব্যাপার। এই যে মাননীয়া ফুলবানু কদবানু। আপনারা তো সবই জানেন। আমরা চাই আপনারা যৌথভাবে একটা কিছু করুন।
ফুলবানু
যৌথ? যৌথ কেন? এই কাজে আবার যৌথ লাগে নাকি? আমি একাই যথেষ্ট। কোটি কোটি ফ্যান আমার। আমি সাপোর্ট দিলে বাচ্চা ক্যান বাচ্চার বাপও সুড়সুড় করে বের হয়ে আসবে।
কদবানু
দ্যাখলেন? দ্যাখলেন স্যার। এই বেটির কথার ধরন। ওর কোটি কোটি ফ্যান’ ও সাপোর্ট দিলে বাচ্চা সুড়সুড় করে বেরিয়ে আসবে। আর আমার কোটি কোটি ফ্যান। তখন বসে বসে আঙুল চুষবে?
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
ফুলবানু
কি করবে? কি করবে তারা?
কদবানু
লড়াইয়ের ময়দানেই দেখা যাবে।
নবী
আপনাদের দুটো পায়ে পড়ি । এমনিতেই এক লড়াইয়ে আমি বিপর্যস্ত। এর পরে আপনারা কোটি কোটি ফ্যান নিয়ে লড়াই শুরু করলে এই ক্লিনিকের দরজা জানালা ছাদ সব উড়ে গিয়ে আল্লার আরশ ছুঁয়ে ফেলবে।
ডেভিল
প্লিজ। মাদার এন্ড সিস্টার। আপনারা একটু শান্ত হোন। আমাদের সমস্যাটা প্লিজ একটু বুঝুন ।
কদবানু
কোনো সমস্যা নেই স্যার। আমার সাপোর্ট নেন। কোথাও কোনো প্রোবলেম থাকবে না। কারও বাপের ক্ষমতা থাকবে না কোনো কিছু করার।
ফুলবানু
চ্যালেঞ্জ দিলাম, দেখা যাক।
কদবানু
চ্যালেঞ্জ নিলাম । দেখা যাক। দাঁড়ান। ঐ মেয়ের সাথে আমি নিজেই কথা বলছি। এই মেয়ে নাম কি তোমার?
আশা
মোসাম্মৎ আশা বেগম।
কদবানু
সমস্যা কি তোমার?
আশা
সমস্যা তো আমার না। সমস্যা দেশের।
কদবানু
দেশের সমস্যা তাতে তোমার কি?
আশা
এত সমস্যা নিয়ে ভূমিষ্ঠ হইতে ডর করে।
কদবানু
বেকাতেড়া কথা বলবে না। যা প্রশ্ন করছি সোজাসুজি উত্তর দাও।
আশা
আপনি এত ধমক দিয়ে কথা কন কেন? আদর কইরা কথা কইতে পারেন না। আমি একটা শিশু না!
কদবানু
ধমক না দিলে এই জাতি সোজা পথে চলতে পারে না। ধমকেই চমক। সোজা কথা বল এবং এক কথায় বল তুমি ভূমিষ্ঠ হচ্ছো না কেন?
আশা
ভয়ে ।
কদবানু
কিসের ভয় তোমার?
আশা
নিরাপত্তার ভয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর ভয়।
কদবানু
কোনো ভয় নেই তোমার। তুমি আমার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমার দলে যোগ দাও। তোমার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার। কুইক ডিসিশন নাও। বলো যোগ দেবে আমার দলে?
ফুলবানু
খবরদার বলছি ছেড়ি। ওর দলে যোগ দিলে আমার ভক্তরা বোমা মেরে তুমি সহ তোমার মাতৃগর্ভ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেবে।
আশা
ওরে বাপরে। কিয়ের মধ্যে পড়লাম মাগো।
কদবানু
দেখলেন? দেখলেন স্যার ওর গুন্ডামী।
ফুলবানু
এটা গুন্ডামী নয় । এটা গণজাগরণ।
কদবানু
স্যার। স্বাভাবিক অন্যের প্রশ্নে সহিংসতা সৃষ্টি করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ফুলবানু
গণতান্ত্রিক অধিকার সর্বজনস্বীকৃত। আমি আমার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করছি। শোন আশা বেগম। তুমি আমার দলে যোগ দাও। আমার কোটি তরু বুকের রক্ত ঢেলে হলেও তোমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
আশা
আমার একজনের নিরাপত্তার জন্য কোটি মায়ের বুক খালি কইরা তো লাভ নাই। তার চাইতে আমি এক কাম করি, ও ডাক্তার ভাইরা-
ডেভিল
হ্যাঁ। বলো মামণি।
আশা
আমি দুই দলেরই মেমবার হমু।
ডেভিল
অপূর্ব প্রস্তাব। সুন্দর প্রস্তাব। একটি অনাগত শিশু। তার পরিচর্যায় দুইজন মমতাময়ী মা। ওয়ান্ডারফুল। সিমপ্লি ওয়ান্ডারফুল ।
নবী
ধুর স্যার। এটা হয় নাকি? দুই মা। এর মধ্যে কোনটা সৎ মা আর কোনটা আসল মা এই নিয়েই তো ভজঘট লেগে যাবে। আপনারা দুই অভিনেত্রীর ইগোর ব্যাপারটা দেখবেন না?
নমু
সম্ভব স্যার। আমরা জন্মসূত্রে মাতৃত্বের কথা ভাবছি কেন? ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কিংবা মাদার তেরেসা কি জন্মসূত্র বাদ দিয়ে মাতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন নি। যেখানেই দুঃখ, দারিদ্র, আর্ত মানবতার ক্রন্দন; সেখানেই মমতাময়ী মায়ের স্নেহস্পর্শ নিয়ে এগিয়ে গেছেন মাদার তেরেসা।
আমি বলি আশামণি দুই দলেরই মেমবার হোক। আশা হবে দুই অভিনেত্রীর সেতুবন্ধন ফুলবানুর কোনো ভক্ত নিহত হলে কদবানুর মাতৃহৃদয় শোকাহত হবে। আর কদবানুর কোনো ভক্ত নিহত হলে ফুলবানু উল্লসিত হবেন না, বরং তার দুটি চোখ অশ্রুসিক্ত হবে। আপনারা বুঝতে পারছেন না। আশাকে দুই দলেরই মেমবার হতে দিন। এতে এই অরাজকতার হাত থেকে—
ফুল পক্ষ
ফুলবানুর বীর সন্তান কদবানুর হবে না।
[ শ্লোগান]
কদ পক্ষ
কদবানুর বীর সন্তান ফুলবানুর হবে না।
[শ্লোগান ]
নমু
আমি হতাশ স্যার। এই দেশে যে কোনো ভালো কাজের উদ্যোগ নিতে গেলে প্যাচ লেগে যায়। প্যাচ লেগে যায় মানে কি, কেউ যেন প্যাচটা লাগিয়ে দেয়।
নবী
এখন কি হবে স্যার?
মার্টিন
ঠিক আছে। আশা বেগম কোনো দলেই যাবে না। সেই ক্ষেত্রে যৌথভাবে আপনারা দুজন-
কদবানু
প্লিজ স্যার। ঐ যৌথ শব্দটা উচ্চারণ করবেন না। আমি তো বলেই দিয়েছি। ও আমার দলে নাম লেখাক। নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার।
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
মার্টিন
কিন্তু আপনার দলে গেলে তো উনি মাতৃগর্ভ বোমা মেরে উড়িয়ে দেবেন।
কদবানু
কিছু না কিছু রিস্ক তো নিতেই হবে।
মার্টিন
লাইফ রিস্ক কি নেয়া যায়?
কদবানু
সেটা আপনাদের ব্যাপার।
মার্টিন
[ফুলবানুকে] সিস্টার ফুলবানু। আপনি কিছু করুন।
ফুলবানু
আমি যা করতে পারি তাতো বলেই দিয়েছি। ঐ মেয়েকে আমার দলে ঢুকতে বলেন।
মার্টিন
কোনো দলই ওর জন্য নিরাপদ নয়। তার চাইতে আপনারা দুই অভিনেত্রী এক সাথে বসে-
ফুলবানু
ওই বেটির সাথে বসবো আমি? জীবনেও না।
কদবানু
মরে গেলেও না।
নমু
মা জননীরা। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি। আপনারা সংলাপে বসে একটা সমঝোতায় আসুন। আপনাদের ইগোর সঙ্কটে সারা দেশ তো জাহান্নামে যাচ্ছে। অরাজকতা আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। বারো কোটি মানুষ আজ আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এইভাবে চললে আর কয়েক দিনের মধ্যে এই দেশ ধ্বংস্তূপে পরিণত হবে। মা জননীরা। সবার আগে তো দেশ। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এ দেশ। প্লিজ। আপনারা দেশকে বাঁচান।
কদবানু
ঐ বেটিরে বলেন, হরতাল অবরোধ এইসব বন্ধ করতে। দেশ বাঁচবে।
ফুলবানু
আগে ওকে গন্ধম ফেরত দিতে বলেন। তারপর অন্য কথা।
কদবানু
গন্ধম ফেরত দেব কি? গন্ধম কি তোর বাপের?
ফুলবানু
আমার বাপের না তো কি তোর বাপের?
কদবানু
খবরদার কইতাছি হারামজাদী-
ফুলবানু
চুপ কর ঘুটেকুড়েনির ঝি। তোর হুমকির পরোয়া করি আমি?
কদবানু
তবে রে-
ফুলবানু
আয় আয় । দেখি তোর কত সাহস।
[ দু’জনের মাঝে চুলাচুলি শুরু হয়ে যায়। সবাই মিলে ওদের থামায়। মার্টিন অন্য অভিনেতাদের নিয়ে আড়ালে যায়।]
নবী
ভাইজানেরা! আপনারাওতো এই দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। আপনারা কিছু একটা করুন। অন্তত দুই অভিনেত্রীকে বুঝান। এইভাবে তো একটা দেশ চলতে পারে না।
মার্টিন
আমার মনে হয় আপনারা একটু চেষ্টা করলে দুই অভিনেত্রীকে এক জায়গায় আনা সম্ভব।
নমু
প্লিজ স্যার। দেশ তো আগে। দেশটা বাঁচান ।
রুহুল
সবই তো বুঝিরে ভাই। কিন্তু আমাদের কারো তো কোনো পাওয়ার নাই।
নোলা
আসলেই তাই। অনেক চেষ্টা করছি। বোঝে না।
ডেভিল
আপনারা আপনাদের প্রভাব খাটান।
হুদুল
কোনো লাভ নাই। শুনবে না।
ডেভিল
শুনতে হবে। ইট’স এ ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি। গণতন্ত্রের জন্য
তোতা
ধুর মিয়া। আপনি কন গণতন্ত্র। আমাগো নিজের দলেই গণতন্ত্র নাই, আবার দেশের গণতন্ত্র।
মার্টিন
তাহলে আপনারা এর মধ্যে আছেন কেন?
বান্দিরপুত
থাকতে হয়। থাকি।
মার্টিন
আসলে আপনারা কি?
তুলা
অভিনেতা
মার্টিন
কোন ভূমিকায় অভিনয় করেন আপনারা?
নোলা
মিথ্যে বলবো না। জোকারের ভূমিকায়। আমাদের কোনো পাওয়ার নাই। সে নাই।
ডেভিল
স্ট্রেঞ্জ। আর ইউ অল সিক ম্যান? আপনারা কি অসুস্থ?
রুহুল
আপনারা তো ডাক্তার ডাক্তারের কাছে অসুখ লুকিয়ে লাভ নেই। আসলেই আমরা অসুস্থ।
ডেভিল
কি অসুখ আপনাদের?
বান্দিরপুত
রুহুল ভাইয়া কমু?
রুহুল
ডাক্তার মানুষ। সিক্রেটলি বল ।
তুলা
প্লিজ এই অসুখের কথা যেন জনগণ জানতে না পারে।
ডেভিল
দুই অভিনেত্রী জানেন তো!
রুহুল
আরে ভাই’ জানে বলেই তো আমাদের এই দুর্দশা।
গুড়গুড়িয়া
আপনাদের সমস্যাটা কি?
রুহুল
ওয়াদা করেন। এই অসুখের কথা কখনো জনগণ জানতে পারবে না।
মার্টিন
আই প্রোমিস ।
বান্দিরপুত
আসলে আমরা সব অভিনেতাই ধ্বজভঙ্গ রোগে আক্রান্ত।
ডেভিল
ব্যাড লাক। আই ফিল ফর ইউ।
[দুই অভিনেত্রী এতক্ষণ লক্ষ্য করছে ওরা কথা বলছে।]
ফুলবানু
বান্দিরপুত
বান্দিরপুত
ইয়েস সিস্টার।
ফুলবানু
এইদিকে এসো।
বান্দিরপুত
বলেন সিস্টার।
ফুলবানু
এতক্ষণ কদবানুর লোকের সাথে কি বিষয় নিয়ে কথা বলছিলে?
বান্দিরপুত
না তেমন কিছু না। ঐ বাজার দর, সাদ্দামের নিহত দুই জামাতা— এইসব আর কি
[ফুলবানু বেত নিয়ে প্রহার করে]
ফুলবানু
বদমাইশ। আমার সাথে চুকলামি?
বান্দিরপুত
মাইরেন না গো সিস্টার। মাইরেন না। বয়স আমার আপনার বাপের চেয়েও বেশি ) এই বুড়া বয়সে এত মাইর ধইর সহ্য হয় না।
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
ফুলবানু
চুপ বান্দির পো। দে শ্লোগান দে।
বান্দিরপুত
ধ্বজভঙ্গ রোগীর কতো যে সমস্যা। রুহুল উসখুশ, হুদুল কুতকুত এই দিকে এসো। শ্লোগান ধরো-ফুলবানুর ফুলশয্যায় কদবানু যাবে না।
কদবানু
তোতা শিকারী?
তোতা
ইয়েস মাদার।
কদবানু
এই দিকে আয়।
তোতা
বলেন মাদার।
কদবানু
এতক্ষণ কি কথা হচ্ছিল ওদের সাথে?
তোতা
ঐ জাস্ট দরকষাকষি। আমরা তো বান্দিরপুতকে দুই লাখ টাকার অফার দিয়েছি। আরো এক লাখ টাকা বেশি দিলে দল বদল করবো।
কদবানু
বাহ! চমৎকার! নোলা ভিখারী ও তুলা প্যাচওয়ারী তোমরাও এদিকে এসো।
নোলা
জ্বি মাদার-
তুলা
জ্বি মাদার।
কদবানু
শয়তান কোথাকার। বিরোধীদের সাথে ফুসফাস। মনে কর আমি কিছু বুঝি না?
[তিনজনকে পিটাচ্ছে]
মার্টিন
আরে আরে! এসব কি করছেন মাদার কদবানু, ছাড়ুন।
কদবানু
ব্যাটাদের সাহস কতো। আমার পারমিশন ছাড়া বিরোধীদের সাথে ফুসুর ফুসুর করে। এদেরকে এভাবেই টাইট দিতে হয়। একবার বলেছি না? ধমকেই চমক।
নোলা
(কেঁদে কেঁদে) মারে । খালি মারে।
তোতা
পরশু দিনও এমন মার মারছে। এখনো সারা গা বিষ করছে।
তুলা
এমন পোড়া কপাল। ছাড়তেও পারি না, রাখতেও পারি না।
মার্টিন
মিসেস কদবানু ফুলবানু। একটা ব্যাপারে সত্যিই আপনাদের দারুণ মিল। না, ভালো সহকর্মীই পেয়েছেন দু’জনে।
[দু’জনে ফিক করে হেসে ফেলে]
নবী
হাসলেন। আপনারা দু’জনে হাসলেন? আমার ধারণা ছিল আপনারা কখনো হাসেন না। স্যার। দিস ইজ দ্য চান্স’ দুই অভিনেত্রী এখন আর খিটমিটে মেজাজে নেই। উনারা এখন হাসির মুডে আছেন। এখনই সময়। আপনি আর একবার চেষ্টা করে দেখুন না স্যার।
মার্টিন
লাভ হবে বলে তো মনে হচ্ছে না।
নবী
একবার শেষ চেষ্টা করতে দোষ কি স্যার? মামণি আশা। তুমিও একটু চেষ্টা করো । অতো চটাং চটাং কথা বলা বাদ দিয়ে একটু ইনিয়ে বিনিয়ে বল। হাজার হোক মাতৃহৃদয়। তুমি একটু উনাদের হৃদয়টা ভিজিয়ে তুমি বুঝতে পারছো তো তোমাকে কি করতে হবে? স্যার। শেষ একটা চেষ্টা। করেন।
মার্টিন
ডঃ নমু। এই টেবিলে দুটো চেয়ার দেন। মাদার কদবানু এবং সিস্টার ফুলবানু একটা রিকোয়েস্ট রাখবেন?
কদবানু
কি রিকোয়েস্ট?
মার্টিন
আপনারা দু’জন এই টেবিলে বসুন।
ফুলবানু
ওর সাথে আমার কোনো কথা হতে পারে না।
কদবানু
না না। কথা বলতে হবে না। আপনারা শুধু একবার অন্তত মুখোমুখি বসুন।
কদবানু
আমি বসবো না। ওর মুখ আমার এলার্জি।
ফুলবানু
ওর চোখ আমার এলার্জি।
মার্টিন
শুনুন । জানেনই তো। আমি একজন ডাক্তার। আমার বিবেচনায় আপনাদের সমস্যা যতটা না পলিটিক্যাল, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি সাইকোলজিক্যাল। আপনারা একবার মুখোমুখি বসুন। আমি আপনাদের সাইকেথেরাপি দেবো। দেখবেন, আপনাদের অনেক ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে।
কদবানু
এই ওষুধে কি কাজ হবে?
মার্টিন
মানসিকভাবে আপনারা অনেকটা কাছাকাছি চলে আসবেন। আন্তরিকভাবে একে অন্যের সমস্যাটা বুঝতে পারবেন। সংঘাত নয়, দু’জনের মধ্যে সম্প্রীতির মনোভাব জন্মাবে।
ফুলবানু
মাথা খারাপ? আমি নাই। বান্দির পুত!
বান্দির পুত
জি সিস্টার?
ফুলবানু
গাড়ি স্টার্ট দাও।
কদবানু
তোতা শিকারী?
তোতা
ইয়েস মাদার।
কদবানু
চলো । এইসব পাগল-ছাগলের সাথে থাকলে আমরাও পাগল হয়ে যাবো। চলো।
আশা
না মা জননীরা। আপনারা যাবেন না। প্লিজ।
কদবানু
আ মোর জ্বালা। আবার কি?
আশা
আপনারা যাবেন না। আপনাদের মধ্যে যদি মিনিমাম মাতৃত্ববোধ থাকে, তবে আমার কথা আপনাদের শুনতেই হবে।
কদবানু
প্যাচ না করে যা বলার সোজাসুজি বলো।
আশা
কোন প্যাচ নেই মা। সত্যি কথাই বলি। আপনারাই তো বলেন আইজকার শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। মায়ের মুখে কবিতা পড়তে হুনছি আমি। এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি। আমি তো সেই শিশুই মা জননীরা। পৃথিবী বাদ দিলাম। অন্তত এই দেশটারে শিশুর বাসযোগ্য করে তুলেন মা জননীরা, কেমন লাগে আপনাগো? যখন পত্রিকায় পড়েন আট বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করেছে তিন দুর্বৃত্ত ।
আপনারাও তো নারী। কখনো কি একবারও ভেবেছেন ধর্ষণের সময় ঐ শিশুর কি কষ্টটা হচ্ছিল? আপনারা যদি সত্যিই মা হন, তাইলে তো আমি বেশি কিছু দাবি করতেছি না। একটা স্বাভাবিক পরিবেশ চাইতেছি। যেখানে আমারে ক্ষতবিক্ষত কইরা ধর্ষণ করবো না কোনো দুর্বৃত্ত। প্রতিদিনই সংঘাতে মানুষ মারা যাইতাছে।
মায়ের কোল খালি হইতাছে। এক জনের জীবন মাগো। ঐ সন্তানহারা মায়ের কষ্টটা কি বুঝেন? আপনেরা টেলিভিশন আর সাংবাদিকের ক্যামেরার সামনে শোকাহত মায়ের পাশে পোজ দিয়া দায়িত্ব শেষ করেন। চিৎকার করে আসেন। দুই অভিনেত্রীই এক জায়গায় দাঁড়ান। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। অরাজকতার বিরুদ্ধে।
এরপর কমিটমেন্টটা করেন। আমি এই আশা বেগম আছি আপনাগো সাথে। কেউ গুলি করবে আপনাদের? আমি আমার ছোট্ট এই বুকটা পাইতা দেবো গুলির সামনে। মা জননীরা। দেশতো আগে। দেশটা বাঁচান।
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
গান
মানুষ বলো কি উপায়
দুঃখে কইলজা ফাইটা যায়
স্বপ্ন আশা ভরসা সব সাগরে ভাসায়।
মার্টিন
(চিৎকার) প্লিজ দুই অভিনেত্রী। শুনুন ।
কদবানু
কি হয়েছে?
ফুলবানু
ও হ্যাঁ। ঐ বাচ্চার কি সমস্যা যেন?
[ অডিটোরিয়াম-এ ঢোলের বাড়ি পড়ে]
কদবানু
কি হলো? কিসের শব্দ?
ফুলবানু
ক্যু!
সূত্রধর
চলমান অচলাবস্থার সর্বশেষ সংবাদ। চারশো গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির ৩৫ হাজার শ্রমিক কর্মচ্যুত ।
ফুলপক্ষ
চলবে চলবে। সংগ্রাম চলবে। (শ্লোগান)
কদবানু
তোতা শিকারী
তোতা
ইয়েস ম্যাডাম।
কদবানু
বান্দির বাচ্চারা, বসে বসে তামশা দ্যাখো। হাত লাগাও। শালাগোরে এমনভাবে টাইট দাও….
কদপক্ষ
চলবে না চলবে না সহ্য করা হবে না। (শ্লোগান)
[ঢোলের বাড়ি]
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন-চাল ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম ২৫ ভাগ বেড়ে গেছে। জনজীবন দিশেহারা।
ফুলপক্ষ
চলবে চলবে চলবে চলবে। [ শ্লোগান]
কদপক্ষ
চলবে না। চলবে না। সহ্য করা হবে না। [ শ্লোগান]
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন-অপরাধ সন্ত্রাস চাঁদাবাজি গুমখুন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ফেলেছে।
ফুলপক্ষ
চলবে চলবে। চলবে চলবে।
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন । সামগ্রিক রফতানি ৪০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি ২৫ ভাগ বেড়েছে।
ফুলবানু
বন্ধুরা। জেগে উঠুন। কদবানুর পতন এখন সময়ের ব্যাপার। সাত দিনের কঠোর লাগাতার হরতালের ঘোষণা দেয়া হলো।
ফুলপক্ষ
চলবে চলবে । চলছে চলবে। [শ্লোগান।
কদবানু
বন্ধুরা। আমরা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। আর না। এখন থেকে কঠোর থেকে কঠোরতম পন্থায় দমন করা হবে।
কদপক্ষ
রক্ত রক্ত রক্ত চাই। ফুলবানুর রক্ত চাই। (শ্লোগান)
ফুলপক্ষ
রক্ত রক্ত রক্ত চাই। কদবানুর রক্ত চাই। (শ্লোগান)
[ চারদিকে প্রচণ্ড বোমা এবং গুলির শব্দ। চিৎকার হইচই। হরর মিউজিক। সমস্ত মঞ্চে ভূতুড়ে পরিবেশ। যেন এ এক বিরানভূমি। সমস্ত লাইট কেটে গিয়ে শুধু দুই অভিনেত্রীর উপর স্থির। ওদের ভয়াবহ দুটো মুখোস ওদের কথা শুনে মনে হবে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটে যাওয়ার পূর্বমুহূর্ত এটা ]
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন—বিদেশী বিনিয়োগকারীরা ইতিমধ্যেই এই দেশ থেকে তাদের সমস্ত পুঁজি প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
ফুলবানু
রক্ত চাই। রক্ত চাই। আরো আরো রক্ত চাই। দুই সপ্তাহের জন্য রাজপথ রেলপথ সড়কপথ সব অবরোধ করে দেয়া হলো ।
কদবানু
লাশ চাই । লাশ চাই। লাশ এবং শুধু লাশ। সন্ত্রাস দমন আইনের অধীনে অনেক অনেক বেশি লাশ।
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন। দাতা দেশগুলো এ বছরে তাদের সাহায্যের পরিমাণ ৫০ ভাগ কমিয়ে দিয়েছে।
ফুলবানু
(হাসি) তিন সপ্তাহের লাগাতার হরতাল অচল। সব কিছু অচল করে দেবো।
কদবানু
লাশ চাই লাশ। থোকা থোকা লাশ। অনেক অনেক লাশ। সাদা লাশ। কালো লাশ। পীত লাশ। লাশ। অনেক অনেক লাশ।
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন। দাতা দেশরা এই বছর দেশে সমস্ত প্রকার অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে।
ফুলবানু
রক্ত। রক্ত। আরো আরো রক্ত। দুই মাসের লাগাতার হরতাল।
কদবানু
বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দেয়া হলো।
সূত্রধর
জরুরি বুলেটিন । সারা দেশে দুর্ভিক্ষ। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। একদিনে অনাহারে ১৫০০ লোকের মৃত্যু সংবাদ ।
ফুলবানু
রক্ত। রক। আরো আরো রক্ত। তাজা তাজা রক্ত। অনির্দিষ্ট কালের জন্য হরতাল।
কদবানু
লাশ লাশ লাশ এবং লাশ। ধ্বংস হোক সব জাহান্নামে যাক সব ছাড় নেই। হার নেই। চলুক। যেভাবে চলছে চলুক।
ফুলবানু
রক্ত চাই রক্ত। অনেক অনেক রক্ত।
কদবানু
লাশ চাই লাশ। অনেক অনেক লাশ।
[মঞ্চে স্বাভাবিক হালকা আলো জ্বলে উঠে। কদবানু ফুলবানু কেউ নেই। কুতকুতি চিৎকার করে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে। আশার চোখে অশ্রু । সবাই বিপর্যন্ত ]
মাটিন
তিনদিন। ম্যাক্সিমাম তিনদিন ।
নবী
মারা যাবে? আমাদের এত সংঘাতমুখর আশা মারা যাবে? স্যার। এখন শুধু পেশা না। ব্যবসা না। একটা মায়া জন্মে গেছে। মানবজন্মের মায়া স্যার। আপনারা মেনে নিচ্ছেন? আশা মামণি মারা যাচ্ছে?
[ বার্থ ফ্যান্টাসি ৪র্থ পর্ব [ নাটক ] এস এম সোলায়মান ]
গুড়গুড়িয়া
হ্যাঁ! নো ওয়ে।
ডেভিল
(কেঁদে ফেলে) আই ফিল সরি ফর ইউ মাম। আগামীতে কি হবে তা জানি না কতদিন বাঁচবো তাও জানি না। তবে যে কয়দিন বাঁচবো, একটা অপরাধের দায় মাথায় নিয়েই বাঁচবো।
[নার্স তীব্র চিৎকার করে কাঁদছে]
মার্টিন
গুড বাই মাম। সমগ্র মানব জাতির পক্ষ থেকে আমি তোমার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি। এই দেশের পলিউটেড রাজনীতি আর কিছু করতে পারুক না পারুক, ওরা একটা ভ্রূণকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। মামণি। মানব জাতির পক্ষ থেকে আর একবার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
[নমু এগিয়ে আসে]
নমু
আশা! মানে এক্সপেকটেশন। ধন্য আশা কুহকিনী তোমার মায়ায়। সুপ্রিয় দর্শক আশার জীবনের মেয়াদ তিনদিন। আর তিনদিন। আমি পাগল-ছাগল মানুষ। কিন্তু এটা বুঝি সময় আর তিনদিন। এই সময়টা মাত্র তিনদিন। একেবারে সব কিছু শেষ হওয়ার আগে একটা কিছু করুন। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, কর্মজীবী সর্বস্তরের জনগণ করুন, কিছু একটা করুন।
গান
আশায় আশায় ভবের খেলায়
আশা যে তোর ফুরালো
প্রসাদ বলে ভবের খেলা
যা হবার তাই হলো
এবার সন্ধ্যা বেলায় কোলের ছেলে ঘরে নিয়ে চলো
আশা যে তোর ফুরালো।
আরও দেখুন: