উৎপলেন্দু চক্রবর্তী

উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর জন্ম পূর্ববাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) পাবনায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন এবং পরবর্তীকালে মডার্ন হিস্ট্রিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও লাভ করেন। CPI (ML) নেতৃত্বাধীন বামপন্থী ছাত্র আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। আই পি টির সদস্য লেখক স্বর্ণকমল ভট্টাচার্য উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর মামা, যাঁর লেখা উপন্যাস নিয়ে নিমাই ঘোষের পরিচালনায় ছিন্নমূল (১৯৫০) এবং বিমল রায়ের পরিচালনায় তথাপি (১৯৫০) ছবি তৈরি হয়েছিল। ছাত্রাবস্থায় সাহিত্য রচনায় ব্রতী হন, কিছুদিন একটি লিটল ম্যাগাজিনের সাথেও যুক্ত ছিলেন।

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী

 

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী স্বর্ণ মিত্র ছদ্মনামে গল্প লিখতেন। গল্প সংগ্রহ ‘পলাশ’ প্রকাশিত হয়। কিছুদিন বাংলা, বিহার এবং ওড়িশার সীমান্ত অঞ্চলে আদিবাসী স্কুলে শিক্ষকতার (প্রথাগত নয়) কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালে শারীরিক কারণে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই পর্বে কিছুদিন একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলেন। সংগীতশাস্ত্র এবং অঙ্কনবিদ্যায় তাঁর পারদর্শিতা আছে। নিজের পরিচালনায় ছবিগুলির চিত্রনাট্য এবং সংগীত পরিচালনা তিনি নিজেই করেছেন। ময়না তদন্ত ছবিতে একটি গানের নেপথ্য গায়কও ছিলেন।

 

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী

 

প্রথম ছবি মুক্তি চাই (১৯৭৬)। জরুরি অবস্থা চলাকালীন তিনি এই তথ্যচিত্রটি তৈরি করেন। জরুরি অবস্থা বা তার আগে থেকেই রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন জেলে বিনা বিচারে আটকের বিরুদ্ধে এই ছবি দিয়েই তাঁর চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। প্রথম কাহিনিচিত্র ময়না তদন্ত (১৯৮০) নিজের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি।

প্রথম কাহিনিচিত্রেই তিনি নিজেকে ব্যতিক্রমী চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসাবে তুলে ধরেন। অবহেলিত আদিবাসী মানুষের জীবন সংগ্রাম এবং গ্রামের জমিদার, প্রশাসন এবং সমাজের উচ্চবর্ণের মানুষের সংঘবদ্ধ শ্রেণি অবস্থানের বিরুদ্ধে উৎপলেন্দুর এই ছবি অবহেলিত মানুষদের প্রতি তাঁর সহানুভূতির সংযত প্রকাশ। পরবর্তী ছবি চোখ (১৯৮২) কাহিনি হিসাবে অসাধারণ শক্তিমান এবং তার নিজের লেখা।

এই ছবিতেও উৎপলেন্দু তাঁর শ্রেণি অবস্থান স্পষ্ট করে দেন। এই ছবির ভাষা, সংলাপ, চিত্রগ্রহণ এবং শব্দের ব্যবহারে পরিচালকের এই মাধ্যমটির উপর দখলের প্রমাণ রাখেন। পরবর্তী কাহিনিচিত্র দেবশিশু (১৯৮৫), দেশের মানুষের ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর সচেতন প্রতিবাদ। তাঁর শেষ কাহিনিচিত্র ইন্দনীড় (১৯৮৯) সালে মুক্তি পায়। এই কাহিনিচিত্রগুলি ছাড়াও তিনি দেবব্রত বিশ্বাস এবং সত্যজিৎ রায়ের সংগীতের উপর দুটি তথ্যচিত্র এবং কয়েকটি টলিভিশন চিত্র নির্মাণ করেছেন।

 

উৎপলেন্দু চক্রবর্তী

 

চলচ্চিত্রপঞ্জি—

  • মুক্তি চাই (১৯৭৬, তথ্যচিত্র),
  • ময়না তদন্ত (১৯৮০, কাহিনিচিত্র),
  • চোখ (১৯৮২, কাহিনিচিত্র),
  • দেবব্রত বিশ্বাস (১৯৮৩, তথ্যচিত্র),
  • মিউজিক অফ সত্যজিৎ রে (১৯৮৪, তথ্যচিত্র),
  • দেবশিশু (১৯৮৫, কাহিনিচিত্র),
  • অপরিচিত (১৯৮৬, টেলিভিশন চিত্র),
  • রঙ (১৯৮৬, টেলিভিশন চিত্রা),
  • বিকল্প (১৯৮৮, টেলিভিশন চিত্র),
  • ফাঁসী (১৯৮৯, টেলিভিশন চিত্র),
  • জননী (১৯৮৯, টেলিভিশন চিত্র),
  • দ্বিবচন (১৯৮৯, টেলিভিশন চিত্র),
  • সোনার চেয়ে দামী (১৯৮৯, টেলিভিশন চিত্র),
  • ছন্দনীড় (১৯৮৯, কাহিনিচিত্র)।

 

Google News উৎপলেন্দু চক্রবর্তী
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment