নিপুণ আক্তার, যিনি নিপুণ নামে পরিচিত, বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। ২০০৬ সালে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখার পর তিনি ধীরে ধীরে তার অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে এক বিশেষ স্থান অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী, যার মধ্যে অন্যতম “সাজঘর” এবং “চাঁদের মতো বউ” সিনেমায় তার অসাধারণ অভিনয় ছিল।

ব্যক্তিগত জীবন
নিপুণ আক্তারের জন্ম বাংলাদেশে হলেও তার জীবনের অনেক সময় বিভিন্ন দেশের ভ্রমণের মধ্যে কেটেছে। উচ্চমাধ্যমিকের পর তিনি ১৯৯৯ সালে রাশিয়া চলে যান এবং সেখানে ২০০৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানে শিক্ষা নেন। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কাজ করেন।
অভিনয় ছাড়াও তিনি একটি পার্লারের মালিক, যা তার ব্যবসায়িক দক্ষতার প্রমাণ। এছাড়া, “টিউলিপ এন্টারটেইনমেন্ট” নামক একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। নিপুণের একটি মেয়ে আছে এবং তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে।

অভিনয় জীবন
নিপুণ আক্তারের অভিনয় জীবন ২০০৬ সালে শুরু হয়। তিনি প্রথমবার অভিনয় করেন “রত্নগর্ভা মা” সিনেমায়, যদিও এটি এখনও মুক্তি পায়নি। তবে, তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল “পিতার আসন”, যা তাকে চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠিত করে।
এরপর থেকে নিপুণ একে একে ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলির মধ্যে রয়েছে:
| চলচ্চিত্রের নাম | পরিচালক | বছর |
|---|---|---|
| এইতো ভালবাসা | শাহিন কবির টুটুল | ২০০৭ |
| জান তুমি প্রাণ তুমি | রকিবুল আল রাকিব | ২০০৮ |
| অন্তর্ধান | অহিদুজ্জামান ডায়মন্ড | ২০১০ |
| শোভনের স্বাধীনতা | মানিক মানবিক | ২০২১ |
| পদ্ম পাতার জল | তন্ময় তানসেন | ২০২২ |
| পদ্মা পাড়ের পার্বতী | রফিক শিকদার | ২০২৩ |
এছাড়া, তিনি কলকাতার ‘টলিউড’ সিনেমা শিল্পেও পা রেখেছেন। প্রসেনজিতের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘পরিচয়’ ছবিতে, যা টলিউডে তার এক নতুন অভিজ্ঞতা।
বর্তমানে তিনি শুটিং করছেন “একাত্তরের মা জননী” নামে একটি বাংলাদেশি স্বাধীনতাযুদ্ধ ভিত্তিক সিনেমায়, যা নিপুণের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চলচ্চিত্রে তার অবদান
নিপুণ আক্তারের অভিনয় কেবল বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরে সাড়া ফেলেছে। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন, যেমন মান্না এবং সাকিব খান। তার অভিনয় দক্ষতা এবং চরিত্রে গভীরতা তাকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। নিপুণ বিশ্বাস করেন, তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ হবে “একাত্তরের মা জননী” সিনেমাটি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘটনা ও একটি মায়ের কাহিনী নিয়ে তৈরি।
পুরস্কার
নিপুণ আক্তার তার ক্যারিয়ারে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। প্রথমবার তিনি “সাজঘর” সিনেমায় অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। দ্বিতীয়বার তিনি “চাঁদের মতো বউ” সিনেমায় অভিনয় করে এই পুরস্কারটি অর্জন করেন।
| পুরস্কারের নাম | চলচ্চিত্রের নাম | বছর |
|---|---|---|
| জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | সাজঘর | ২০০৬ |
| জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার | চাঁদের মতো বউ | ২০০৯ |
রাজনৈতিক এবং সামাজিক ভূমিকা
নিপুণ আক্তার ২০১৭ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সমিতির কার্যনিবার্হী সদস্য পদ লাভ করেন। এরপর ২০২২ সালে কাঞ্চন-নিপূণ পরিষদ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, যা তার রাজনৈতিক জীবনেও প্রবেশের সংকেত দেয়। নিপুণ আক্তার চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

নিপুণ আক্তার বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে তার শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন এবং তিনি এখনও তার অভিনয় ও সাংস্কৃতিক অবদানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। চলচ্চিত্রে তার দীর্ঘ যাত্রা এবং বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে তার অভিনয় তাকে জনপ্রিয়তা এবং শ্রদ্ধা এনে দিয়েছে। নিপুণ আক্তার তার ভবিষ্যত চলচ্চিত্র প্রকল্পগুলো নিয়ে আরও অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, যা তাকে একটি আরো শক্তিশালী চলচ্চিত্র তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
