অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্রটি নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা- একটি জনপ্রিয় বাংলা বায়োপিক চলচ্চিত্র যা পরিচালনা করেন অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রটি বিখ্যাত লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় এর গল্প অবলম্বনে নির্মিত। এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭৫ সালে প্রতিভা পিকচারস ব্যানারে মুক্তি পেয়েছিল এবং এই চলচ্চিত্রটি সংগীত পরিচালনা করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রটির মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন উত্তম কুমার, মাধবী মুখোপাধ্যায়, তরুণ কুমার, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়।

পরিশ্রমী, সুদক্ষ, দৃঢ় ব্যক্তিত্বের সদ্য ডাক্তার পাশ করা ছেলের ঘরোয়া কুসংস্কার এর প্রতি যে তীব্র প্রতিবাদ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবির প্রথম দিকে তা অসমান্য। ছবির মূল চরিত্র মানে, অগ্নীশ্বর, তার বিধবা বোনকে বিয়ে দিয়েই সমাজের অনিয়মের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করেছিলেন, তা সে বজায় রেখেছে তার কর্মজীবনে পাওয়া সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে।

কঠোর চরিত্রের লোক বলে হৃদয়ও কঠিন তা নয়, যা ফুটে উঠেছে ইংরেজের স্ত্রী ও তার সন্তানের সারা রাত অক্লান্ত সেবা করে তাদের সুস্থ করে তুলবার মাধ্যমে। এমন সুদৃঢ় ব্যক্তিত্বের মানুষ যারা কখনো কারো প্রেমে পড়েন না! সেই তিনিও প্রেমে পড়লেন তার স্ত্রীর, তবে তার গত হওয়ার পর। সেই ভালোবাসা এতোটাই সুমধুর কঠিন ছিল যে,তার স্ত্রীর সৃতিতে তিনিও মাছ মাংস খাওয়া বাদ দেন, শুধু প্রায়শ্চিত্ব করবেন বলে।

তার মা মরা ছেলের বেলায় যে তিনি নরম কোনোভাবেই ছিলেন না, তা বোঝা যায় ছেলের বিয়ের দিন ছেলে পণ নিচ্ছে বলে, বিয়ের অনুষ্ঠান ছেড়ে আসবার মাধ্যমে। একসময় তিনি ছেলের সংসার থেকে বেরিয়ে পড়েন গ্রামীণ জীবনের দিকে, আর প্রান্তিক মানুষের সেবা করে যে শান্তি ও ভালোবাসা পেয়েছেন, তাতেই তিনি বারবার জন্ম নিতে চেয়েছেন এই বাংলায়।

 

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র

 

  • প্রযোজনা—প্রতিভা পিকচার্স।
  • চিত্রনাট্য ও পরিচালনা — অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ।
  • কাহিনি—বনফুল।
  • চিত্রগ্রহণ —বিজয় ঘোষ।
  • শিল্প নির্দেশনা – সুনীতি মিত্র।
  • সম্পাদনা—অমিয় মুখোপাধ্যায়।
  • শব্দগ্রহণ—শ্যামসুন্দর ঘোষ।
  • সংগীত পরিচালনা— হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।
  • গীতরচনা—দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • নেপথ্য কণ্ঠ—হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়।

 

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র । বাংলা চলচ্চিত্রের অভিধান

 

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্রে যারা অভিনয় করেছেন —

উত্তমকুমার, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়, সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়, সুলতা চৌধুরী, কাজল গুপ্ত, দিলীপ রায়, তরুণকুমার, অসিতবরণ, জহর রায়, হরিধন মুখোপাধ্যায়, পার্থ মুখোপাধ্যায়।

অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্রের কাহিনি—

ইংরেজ শাসনাধীন ভারতবর্ষে ডাক্তার অগ্নীশ্বর মুখোপাধ্যায় (উত্তমকুমার) ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন। এবং চাকরি নেন বিহারের একটি রেলওয়ে হাসপাতালে। সৎ নিঃস্বার্থ এবং উন্নতচেতা অগ্নীশ্বর সমগ্র চাকরি জীবনে একদিকে যেমন নীচ স্বার্থসর্বস্ব লোকেদের দেখেছেন, তেমনি নিঃস্বার্থ ভালো মানুষদের সংস্পর্শেও এসেছেন। তাঁর প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব ও নিঃস্বার্থ সেবায় বিরুদ্ধ পক্ষের লোকজনরাও তাঁর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছে।

 

Google News অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র
গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

অগ্নীশ্বর সুছন্দাকে (সুমিত্রা) অবিবাহিত অবস্থায় গর্ভবতী দেখে মর্মাহত হলেও তার চিকিৎসা করেন, পরে বিপ্লবী খগেনের (দিলীপ) কাছ থেকে জানতে পারেন সুছন্দা তার দেহ বিক্রির টাকায় রিভলভার কিনে তা বিপ্লবীদের হাতে তুলে দিত । তিনি দেখেছেন স্টোরবাবুর (হরিধন) দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সরমা (কাজল) নিজেকে বঞ্চিত করে আগের পক্ষের ছেলেমেয়েদের যত্ন করতে গিয়ে নিজেই টিবিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

তিনি সরমা, সুছন্দার প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হন। বিবাহিত জীবনে অগ্নীশ্বরের ব্যক্তিত্ব তাঁদের দাম্পত্যে কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি করলেও তাঁর স্ত্রী (মাধবী) স্বামীর জন্য গর্বিত ছিলেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর অগ্নীশ্বর ছেলের (পার্থ) সাথে থাকতেন। অন্য জাতে ছেলের বিয়ে তিনি মেনে নিলেও শ্বশুরের অর্থে ছেলের বড়লোক হওয়ার ইচ্ছার প্রতিবাদ করেন।

 

google news logo অগ্নীশ্বর চলচ্চিত্র

 

ছেলেও বাবার আদেশ মেনে নেয়। পরবর্তীকালে অগ্নীশ্বর উপলব্ধি করেন তাঁর প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব ছেলে এবং ছেলের বৌএর স্বাভাবিক দাম্পত্যে অসুবিধা সৃষ্টি করছে। তিনি নিরুদ্দেশ হয়ে অজানা একটি গ্রামে একটি ছোট হাসপাতাল তৈরি করে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। অন্য দিকে দেশ স্বাধীন হয়, স্বাধীন দেশের সরকার একটি নতুন হাসপাতালের দায়িত্ব অগ্নীশ্বরের মতো সৎ মানুষের হাতে দিতে চায়। যখন অগ্নীশ্বরের খবর পাওয়া যায় দেখা যায় একটি ছোট মেয়ের জন্য রক্ত দিতে গিয়ে তিনি নিজেই মারা গিয়েছেন। ছবিটি সমালোচকদের সাথে দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছিল।

অগ্নীশ্বর-উপন্যাসের একটি পর্ব অবলম্বনে তরুণ মজুমদার ‘আলোর পিপাসা’ (১৯৬৫) ছবি তৈরি করেন।

 

আরও দেখুনঃ

Leave a Comment